16/08/2025
পাকিস্তানের আকস্মিক বন্যায় ৩০০ জনের মৃত্যু, কবর খোঁড়ারও লোক নেই নিখোঁজ অসংখ্য
বদরুজ্জামান (সুজন বাহাদুর) সম্পাদক দৈনিক শীর্ষ সংবাদ #আজকেরখবর #খবরআজকের #নিউজ #বাংলাদেশ #ঢাকা #ব্রেকিংনিউজ #খবর #সংবাদ #প্রবাসী
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বুনের জেলার পীর বাবা সাহেব উপজেলার বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার ফলে অন্তত ৩০৭ জন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৭৯ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন পুরুষ, চারজন নারী এবং দুই শিশু।
বেশন্ত্রি গ্রামের মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল সামাদ বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে গ্রামবাসী ও তাঁর পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তখন নফল নামাজে মগ্ন ছিলেন। নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তাঁর বাড়ি ভেসে গেছে। ওই সময় তাঁর পরিবারের পাঁচজন সদস্য ঘরের ভেতরে ছিলেন, যারা এখনো নিখোঁজ।
পীর বাবা সাহেব উপজেলার প্রাক্তন কর্মকর্তা (তহসিল নাজিম) আশফাক আহমদ তখন ইসলামাবাদে অবস্থান করছিলেন। বাড়ি থেকে বন্যার খবর পেয়ে তিনি দ্রুত পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গ্রামে পৌঁছে তিনি দেখেন সর্বত্র ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন, আহত ও মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে। তাঁর বাড়িতে ১৪ জন ছিলেন; তাঁদের মধ্যে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে, আর বাকি ১০ জন এখনো নিখোঁজ।
বুনেরের ব্যবসায়ী নূর ইসলাম এবং বিদেশ থেকে ছুটিতে আসা মুহাম্মদ ইসলাম দুর্গত এলাকায় ছুটে যান। নূর ইসলাম বলেন,
আমি দুপুর ১টার দিকে বেশন্ত্রি গ্রামে পৌঁছাই। তখন একটি বাড়িও অক্ষত ছিল না। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি বহু জানাজায় অংশ নিয়েছি। কতগুলো জানাজা পড়েছি মনে নেই, তবে ছয়টি কবর খোঁড়ায় সাহায্য করেছি।”
তিনি জানান, আকস্মিক বন্যার পানিতে পুরো গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। আহতরা মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল, স্থানীয় লোকজন এবং উদ্ধারকারীরা মৃতদেহ তুলতে ও আহতদের হাসপাতালে নিতে ব্যস্ত ছিলেন।
শিশু ও নারীরাই বেশি নিখোঁজ রয়েছে,জরুরি উদ্ধার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বেশন্ত্রি গ্রামে প্রায় এক হাজার মানুষের বসবাস ছিল। এখনো অগণিত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। স্থানীয়রা জানান, কোনো বাড়ি এমন নেই যেখানে পরিবারের সদস্য নিখোঁজ নেই। এক পরিবারের ৯ জন সদস্য নিখোঁজ, বেঁচে গেছেন কেবল গাছে ওঠা দুই সদস্য।
মুহাম্মদ ইসলাম জানান,দুপুর আড়াইটায় আমি গ্রামে পৌঁছাই। মনে হচ্ছিল মৃত্যুপুরী। সব ঘরবাড়ি ধ্বংস, মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই। শত শত মানুষ এগিয়ে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতদেহ উদ্ধার ও কবর খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত ছিল।”
উদ্ধার কার্যক্রম ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছে,বুনের জেলা ছাড়াও সোয়াত, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাংলা এবং বটগ্রাম জেলায়ও ভারী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পিডিএমএ জানিয়েছে, কেবল বুনের জেলাতেই ৭৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১১টি সম্পূর্ণ ধ্বংস।
উদ্ধারকারী সংস্থা রেসকিউ ১১২২-এর কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জানান,পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক। রাতের অন্ধকার, দুর্বল মোবাইল সিগন্যাল ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। মৃতদেহ ও আহতদের ঢল সামলাতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।”
পিডিএমএ ইতোমধ্যেই হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বাজাউর ও বুনেরে জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য ৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুনেরে ১৫ কোটি, বাজাউর, বটগ্রাম ও মানসেহরায় ১০ কোটি করে এবং সোয়াতে ৫ কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কেয়ামতের দৃশ্য দেখছে সেখানকার মানুষ,স্থানীয়দের ভাষায়, এটি ছিল এক কেয়ামতের মতো দৃশ্য। বন্যায় শুধু ঘরবাড়িই নয়, অসংখ্য প্রাণ হারিয়েছে। মৃতদের দাফনেও সমস্যা হচ্ছে; জানাজা ও কবর খোঁড়ায় পাশের গ্রামের মানুষদের সাহায্য নিতে হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা দিয়েছে ,আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চলমান ভারী বর্ষণ আগামী ২১শে আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কর্তৃপক্ষ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে ,
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এক ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাতকে ‘ক্লাউড বার্স্ট’ বলা হয়। একে বাংলায় বলা হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। এটি হলে স্বল্প সময়ে নদী-খাল ও জলাশয় ভরে গিয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়, যা প্রাণহানি ও ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এভাবেই খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বেশন্ত্রি গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আকস্মিক বন্যা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন, কিন্তু এখনো বিপুল সংখ্যক মানুষ অজানার অন্ধকারে।
#আমাদের সংবাদ আপনাদের ভালো লাগলে পেইজে লাইক দিন, শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিতে পারেন এছাড়াও সংবাদটি সম্পর্কে কমেন্টে আপনার মতামত লিখতে পারেন। #আন্তর্জাতিক #পাকিস্তান #বন্যা