17/06/2025
টঙ্গী আলমী শুরার পুরানো সাথীদের জোড়ে মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা সাহেব হাফিঃহ’র শেষ রাতের বয়ানের সারসংক্ষেপ । ২/১২/২০২৪ ঈসায়ী।
আল্লাহ ﷻ এর হামদ ও সালাতের পরে।
১। দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত। জান, মাল ও সময় ইত্যাদি আল্লাহ ﷻ ই দিয়েছেন। এই দায়িত্বকে বুঝা ও পুরা করা।
২। দুটি বিষয়-নেয়ামত ও হুকুম।
যাকের-হুকুমের জন্যে যিকিরকারী হও। অর্থাৎ আল্লাহ ﷻ এর হুকুমের সাথে এর সম্পর্ক। যাকেরের বিপরীত হলো গাফলত।
শাকের-নেয়ামতের জন্যে শুকরিয়াকারী হও। অর্থাৎ আল্লাহ ﷻ এর নেয়ামতের সাথে এর সম্পর্ক।
এদুটি বিষয়ই সর্বদা আমাদের উপর আসে।
রাসূল ﷺ একটি দুআ শিখিয়েছেন-
উমর (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন- ❝নিজেকে নেয়ামত থেকে এমনভাবে বাঁচাও, যেভাবে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো।❞
কারণ যখন মানুষ নেয়ামতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ ﷻ এর যিকির ছুটে যায়। অর্থাৎ গাফলত পয়দা হয়।
৩। উলামায়ে কেরাম বলেন, ❝যাকের কে ? যে আল্লাহ ﷻ এর হুকুমকে স্মরণ করে তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করে। এর সীমার বাহিরে সে যায় না। সে ই আল্লাহ ﷻ এর যিকিরকারী অর্থাৎ যাকের। শুধুই তাসবীহ পড়ার মধ্যেই যিকির সীমাবদ্ধ নয়।❞
৪। আমরা আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন তথা ইবাদাত করি ইখলাসের সহিত।
৫। এতায়াতের জন্যই নবীদের পাঠানো হয়েছে। যাতে তাঁরা আল্লাহ ﷻ এর হুকুক মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
৬। রাসূল ﷺ এর মুয়াজ (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে আল্লাহ ﷻ এর হুকুক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তারপর বলেন আল্লাহ ﷻ এর হক্ব হলো তাঁর ইবাদাতে কাউকে শরীক না করা।
৭। জীবন কিভাবে পরিচালিত হবে ? এই প্রশ্নের উত্তরই এতায়াত। ঈমান, ইসলাম ও এতায়াত পরস্পর পরিপূরক।
৮। আল্লাহ ﷻ কে না দেখে বিশ্বাস করা ঈমান। এবং তাঁর কথার উপর নিজের জীবনের প্রতিটি কাজ করাই এতায়াত।
৯। ঈমানের রুকনগুলোকে পরিপূর্ণ হক্ব জানা। এটা আল্লাহ ﷻ এর এতায়াত। আল্লাহ, নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব, ফেরেশতা, মৃত্যু, হাশরের ময়দান, জান্নাত ও জাহান্নামকে হক্ব জানা ও বিশ্বাস করা।
আল্লাহ ﷻ ওয়াদা করেছেন তাঁর ইবাদাতের বিনিময়ে আমাদের জান্নাত দিবেন। আর আল্লাহ ﷻ এর বন্দেগী না করলে জাহান্নামের ওয়াদা করেছেন।
আল্লাহ ﷻ এর সাক্ষাৎ করা ছাড়া কেউ বেঁচে যাবে না। অবশ্যই প্রত্যেককে আল্লাহ ﷻ এর সামনে উপস্থিত হতে হবে।
১০। হে মানুষ শুনে নাও, আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা সত্য। আল্লাহ আমাদের উপর শর্ত দিয়েছেন, সেটা পুরা করার দায়িত্ব আমাদের। আর আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা অর্থাৎ পুরষ্কার আমাদের জন্যে, তা পুরা করার দায়িত্ব আল্লাহর।
উদাহরণ-বাজারের কেনা-বেচা। পয়সার বিনিময়ে পন্য দেয়া।
আমাদের উপর আল্লাহ ﷻ এর পক্ষ থেকে শর্ত- তাঁর উপর ঈমান, এতায়াত, ইনসাফ করা, তাক্বওয়া অবলম্বন করা।
আর আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা- আমাদের ঈমান ও আমলের বিনিময়ে জান্নাত দিবেন।
১১। আল্লাহ ﷻ বলেন, ‘তাঁর চেয়েও সত্য কথা বলনেওয়ালা আর কে আছেন’ ?
১২। এই দুনিয়ার সমস্ত কিছু আল্লাহ ﷻ আমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যখন দুনিয়াতে আসে তখন সে আরাম ও কষ্ট নিজেই অনুভব করে। এর জন্যে নবী রাসূল পাঠানো হয়নি। নবী-রাসূলদের আখেরাতের আরাম ও কষ্টের ব্যাপারে মানুষকে জানানো। এজন্যই তাদেরকে পাঠানো হয়েছে।
১৩। আখেরাত দুনিয়ার চেয়ে উত্তম। এজন্যই আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেও আখেরাতের জন্যই বানিয়েছেন।
দুই রকমের মানুষ-
এক. নেয়ামতওয়ালা মানুষ- যারা আখেরাতে আরামে থাকবে। যারা আল্লাহ ﷻ এর হুকুম দুনিয়াতে পুরা করেছে।
দুই. কষ্ট মুসিবতওয়ালা মানুষ- যারা আখেরাতে কষ্টে থাকবে। যারা আল্লাহর নিষেধকৃত জিনিস থেকে বিরত রাখেনি।
ঈমানদার ও মুত্তাকীদের সাথে আল্লাহ ﷻ এর আখেরাতের মুআমেলাহ আলাদা হবে।
১৪। ঈমান ও তাক্বওয়ার তাকাযা-
ঈমানের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন করা, এতায়াত করা। আল্লাহ ﷻ এর হুকুমের সীমারেখায় জীবন যাপন করে।
তাক্বওয়ার তাকাযা- নফসকে গুনাহ থেকে দূরে রাখা। আল্লাহ ﷻ এর নিষেধকৃত কাজ থেকে দূরে থাকা।
দুই জিনিস শিখানোর জন্যই নবীরা আসছেন। আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন করা এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তু থেকে দূরে থাকা। কুফর ও কুফরি আমল থেকে বাঁচানোই নবীদের দাওয়াত। এটার উপরই আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা।
১৫। আল্লাহ ﷻ এর কুদরত ও খাজানা অফুরন্ত। যে পরিপূর্ণভাবে তাঁর অনুসরণ করে, আল্লাহ ﷻ তাঁর খাজানা (ভান্ডার) থেকে তাদের কুদরতের ফায়সালা করেন। যারা আল্লাহ ﷻ কে ভয় করবে, আল্লাহ ﷻ এর কুদরত তাদের সঙ্গী হয়ে যাবে। যারা আমলকে সুন্দরভাবে করে, আল্লাহ ﷻ তাদের মুহব্বত করেন। নবীদের দাওয়াত- ঈমান, ইবাদাত ও এতায়াত।
১৬। যে আল্লাহ ﷻ কে ভয় করে, নিজেকে নাফরমানী থেকে বাঁচায় এবং নিজের করা আমলের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয় অর্থাৎ নিজের আমলের দোষত্রুটি খুঁজে বের করে।
এর প্রথম শর্ত- নিয়ত ঠিক করা। ঈমানও ইখলাস একই বিষয়।
১৭। আল্লাহ ও বান্দার হক্বের ব্যাপারে এতেদাল-
আল্লাহর ব্যাপারে-ইখলাস। আমলের সৌন্দর্য। যে ব্যক্তি মুখলিস, সে হেদায়েতের চেরাগ বা নূর। তার দ্বারা বহু ফেতনা দূর হয়। ফেতনার সাথে দুনিয়ার স্বার্থ যুক্ত হওয়া আগ্রাজ জন্ম দেয়। ইখলাস আল্লাহ ﷻ ছাড়া কেউ জানেন না। ইখলাস থাকলে অল্প আমলই যথেষ্ট।
ঘটনা-হযরত আবু হুরায়রা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) একবার নিজ শাগরেদদের জিজ্ঞেস করেন, এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়েও জান্নাতে যাওয়া ব্যক্তি কে ?
লোকেরা উত্তর দিলো আমরা জানিনা।
তখন আবু হুরায়রা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আনসারদের একটি কবিলা বনু আব্দুল আশহালের যুবক উসাইরিম [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু]। যিনি নিজে নিজেই ঈমান আনার পরে উহুদের ময়দানে শহীদ হয়ে যান। অথচ তখন এক ওয়াক্ত নামাজও তার উপর ফরজ হয়নি।
বান্দার ব্যাপারে- ইনসাফ, ইহসান।
১৮। উমর (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন, ‘আমাকে আল্লাহ ﷻ তাক্বওয়া দিয়েছেন’। তাক্বওয়ার কারণে পেরেশানি দূর হয়ে যায়। আমাদের উপরে থাকবে হেদায়েত কিন্তু ভিতরে থাকবে তাক্বওয়া।
১৯। ইলম ও যিকিরের তাকাযা-
ইলমের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুম জানা। জিজ্ঞেস করাও দ্বীন। প্রথমে ফাযায়েলের ইলম জানা। যে ফাযায়েলের ইলম জেনেছি সেটার দাওয়াত দেয়া।
যিকিরের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুমকে জেনে নবী ﷺ এর তরিকায় আমল করা। যে আমল জেনেছি তার উপর নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা।
২০। যে কাজই করিনা কেন, সেটার ইলম আলেমদের জিজ্ঞেস করো। দুনিয়ার সব কাজ মানুষ কিছু পাওয়ার আশাতেই করে। সেজন্যই প্রথমেই ফাযায়েলের ইলম হাসিল করা।
২১। মোবাইল ইনফেরাদি সময় আপদ হিসেবে ধরা দেয়। কারণ তখন শয়তান মানুষকে প্রভাবিত করে।
২২। হযরত আবু হুরায়রা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইবনে উমার (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) কে জানাযার নামাজের ফজিলত শুনালে তিনি আফসোস করেন। কারণ ইতোপূর্বে ইবনে উমার (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) শুধুই জানাযার নামাজ পড়তেন কিন্তু দাফন কাজে শরীক হতেন না। পরে দাফনের ফজিলত শুনে আফসোস করেন।
২৩। আমাদের মেহনত শুধুই আল্লাহর রাস্তায় ঘুরাফেরা করা নয়। বরং এই মেহনতের দ্বারা দ্বীন, ঈমান, তাক্বওয়া ইত্যাদিকে শিখা। পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে জেনে আমল করা। উলামায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করে করে চলা। শুধুই খুরুজ এই মেহনতের উদ্দেশ্য না। সামগ্রিকভাবে ইসলামকে ধারণ করা।