17/07/2025
স্কুল ছুটির ঘণ্টা পড়েছে। সবাই হইচই করে বেরিয়ে যাচ্ছে ক্লাসরুম থেকে। কিন্তু মীমের চোখ খুঁজছে একটাই মানুষ—রায়হান।
রায়হান ওর এক ক্লাস ওপরে পড়ে, কিন্তু পরিচয় হয়েছে গত বছরের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। দু’জনেই আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। সেদিন মীমের কাঁপা কাঁপা গলায় কবিতা পড়ার সময় রায়হানের চোখে পড়েছিল মেয়েটার অদ্ভুত এক দৃঢ়তা। সেই শুরু।
প্রথম দিকে কথা হতো খুব কম। লাইব্রেরির বই নেওয়ার সময়, কিংবা প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে এক-আধটু হাসি বিনিময়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই হাসির মধ্যে মিশে গেলো এক অদেখা টান। এখন একদিন কথা না হলে যেন দিনটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
আজ মীম অপেক্ষা করছিল স্কুলের বারান্দায়। হঠাৎ করেই রায়হান পাশে এসে দাঁড়ালো। হাতে একটা ছোট খাম। বলল,
"তোমার জন্য কিছু লিখেছি। পড়ো, তবে পরে।"
মীম কিছু না বলেই খামটা ব্যাগে রাখল। দুই চোখে হাসির ছায়া।
সন্ধ্যায় ব্যাগ খুলে খামটা বের করল সে। ভিতরে একটা চিঠি। সুন্দর হাতের লেখা—
"তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু আমি চুপ থাকি।
তোমার হাসি যখন দেখি, আমার মনে হয় পৃথিবীর সব দুঃখ মুছে যায়।
আমি জানি, আমরা এখনো স্কুলে পড়ি। অনেক কিছু শেখা বাকি।
তবু যদি বলো, একসাথে শিখতে চাই—তাহলে আমি সবসময় পাশে থাকবো।"
চিঠির শেষে নাম নেই, কিন্তু দরকারও নেই। মীম জানে, রায়হান লিখেছে।
পরদিন স্কুলে মীম ওকে কিছু না বলেই একটা ছোট্ট কাগজ ধরিয়ে দিলো। তাতে লেখা—
"আমার গল্পে তুমি আছো, ছিলে, থাকবেই।
আমরাও একসাথে শিখবো, সময়কে বন্ধুর মতো করে।"
সেদিন থেকে স্কুলের রংটা মীমের কাছে একটু আলাদা হয়ে যায়। প্রতিদিনের ক্লাস, হোমওয়ার্ক, টিফিন—সবকিছুর মাঝেই থাকে এক চুপচাপ ভালোবাসা, যা মুখে না বললেও চোখে পড়ে।
আর সেই ভালোবাসা—একটা স্কুল পড়ুয়া ছেলে আর মেয়ের জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়ে যায়।