23/03/2025
বাংলাদেশে এমন অনেক ক্রাইম ঘটে, যা দুনিয়ার নামকরা ক্রাইম থ্রিলার মুভি বা উপন্যাসকেও ম্লান করে দেয়। তেমনই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে।
দিনের আলোয় খুবই সাধারণ একটি অপরাধ। ইজিবাইক চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে রিফাত নামে এক যুবক। বয়স মাত্র ২৩। উত্তেজিত জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, তাই কেউ খুব একটা আমলে নেয়নি।
কিন্তু এরপর যা ঘটল, তা ছিল সাধারণ কাহিনীতে এক ভয়ঙ্কর টুইস্ট!
থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ যখন নিয়মমাফিক রিফাতের মোবাইল চেক করছিল, তখন তারা এমন কিছু দেখল, যা তাদের রক্ত হিম করে দিল। মোবাইলে একটি ভিডিও—এক তরুণীকে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে!
তৎক্ষণাৎ রিফাতকে চেপে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও, জায়গামতো ডান্ডার বারি খেয়ে সে সব স্বীকার করে নেয়।
গত জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ, ঢাকাগামী "একতা এক্সপ্রেস" ট্রেনে রিফাতের পরিচয় হয় এক তরুণীর সঙ্গে। সে কৌশলে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মেয়েটিকে নামিয়ে আনে আটোয়ারীর কিসমত স্টেশনে। সেখান থেকে রিফাত খবর দেয় তার দুই বন্ধুকে।
এরপর তিনজনে মিলে ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা ফাঁদে। তারা মেয়েটিকে গোপন এক জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে। সারা রাত পালাক্রমে ধর্ষণ করে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়! শারীরিক চাহিদা মেটার পর শুরু হয় বিকৃত মস্তিস্কের উন্মাদনা। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেয়েটির যৌনাঙ্গ, স্তনসহ পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। এবং পুরো ঘটনাই তারা নিজেদের মোবাইলে ভিডিও করে রাখে, যেন পরবর্তীতে সেই ভিডিও দেখে বিকৃত আনন্দ নেওয়া যায়!
তাদের নির্মম অত্যাচারে ভোরের দিকে মেয়েটি মারা যায়। এরপর তিনজনে মিলে লাশটা নিয়ে রেললাইনে ফেলে রাখে। পরদিন পুলিশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন একটা লাশ উদ্ধার করে রেললাইন থেকে, কিন্তু কেউ তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারে না।
ঐসময় ঠাকুরগাঁও থেকে কাছাকাছি বয়সের একটা মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির পরিবার এই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহটিকে নিজেদের মেয়ের লাশ ভেবে দাফন করে ফেলে। এতদিনে জানা গেল যে তারা আসলে ভুল করেছিল! মনে প্রশ্ন জাগে—দেশে মানুষের সংখ্যা বেশি, নাকি লাশের? অবস্থা এমন হয়েছে যে, একটা লাশ পাওয়া গেলেই পরিবারের নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ ভেবে কবরে শুইয়ে দিচ্ছে মানুষ!
এই ঘটনায় এখনো দুইটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে!
এক: ঠাকুরগাঁও থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি তাহলে কোথায় আছে?
দুই: রিফাতদের নির্যাতনে মারা যাওয়া এই মেয়েটির আসল পরিচয় কী?
এটা কোনো সিনেমার গল্প না, কোনো দুর্দান্ত ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাসের পটভূমি না। এটা চরম বাস্তব। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে নরপশুরা সব জেগে উঠেছে, আর আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে!
চলছে মার্চ মাস। জুলাই আর খুব বেশি দূরে না। মনে হচ্ছে, আরেকটা রক্তাক্ত জুলাই আসন্ন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পচন ধরেছে, সেই পচন সারাতে আরেকবার আমাদের পথে নামতে হবে!