14/11/2025
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহরত শেষে ‘রঙ্গনা’ নামে নতুন একটি সিনেমার শুটিং শুরু করেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। বিরতির পর নতুন সিনেমার শুটিংয়ের ফেরার খবরে শাবনূর–ভক্তরা ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত। ভক্তদের উচ্ছ্বাসে শাবনূরও বেশ অনুপ্রাণিত ছিলেন, আনন্দিত ছিলেন। কিন্তু এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অসম্পূর্ণ সিনেমার ফুটেজ ইউটিউব ও ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে! এ ঘটনায় প্রযোজকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শাবনূর। আজ শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে শাবনূর তাঁর ক্ষোভের বিষয়টি তুলে ধরেন।
১৯৯৩ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মধ্য দিয়ে ঢালিউডে পথচলা শুরু হয় শাবনূরের। একটানা ২০১৩ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেছেন। এই সময়ে শাবনূর দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। একটা সময় পর অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। পারিবারিক প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া-আসার কারণে এই অনিয়মিত হওয়া। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ঢাকায় এলে এর কয়েক মাস পর ‘রঙ্গনা’সহ তিনটি ছবির ঘোষণা আসে।
ফেসবুকে শাবনূর লিখেছেন, ‘আপনারা অনেকেই জানেন, আমি “রঙ্গনা”সিনেমায় অভিনয় করতে সম্মত হয়েছিলাম। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছবিটির মহরত অনুষ্ঠিত হয় এবং সবাই তখন এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিল। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আমিও আশাবাদী ছিলাম যে নতুনদের সাথে কাজ করছি, নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। মহরতের কিছুদিন পর দেশে ফিরে আমি প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও কয়েক দিন শুটিং করি। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তখন ছবিটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রযোজকের সঙ্গে আমার কথাবার্তা ছিল দেশে ফিরে বাকি অংশের শুটিং শেষ করে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে।’
‘রঙ্গনা’ ছবিটির পরিচালক আরাফাত হোসাইন। এম এস ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত এই ছবির প্রযোজনায় ছিলেন মৌসুমী আক্তার।
পরিচালক ও প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ এনে শাবনূর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রযোজনা ও পরিচালনার সাথে যুক্ত যাঁরা ছিলেন, শুরু থেকেই তাঁরা অপেশাদার আচরণ করেছেন। কাজ শুরুর আগেই তাঁরা একটি নিম্নমানের পোস্টার প্রকাশ করেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। শুটিং চলাকালেও ইউনিটে ছিল অগোছালো ও অব্যবস্থাপনায় ভরা। আমাকে শুরুতে বলা হয়েছিল, কিছু দৃশ্য ও গানে শুটিং বিদেশে হবে এবং সম্পাদনার কাজও হবে দেশের বাইরে, কিন্তু বাস্তবে তাঁদের কথার কোনো প্রতিফলন দেখিনি। তবু আমি আমার প্রতিশ্রুতি রাখতে চেয়েছিলাম এবং ডিসেম্বরে বাকি শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখি, সিনেমার অসম্পূর্ণ ফুটেজ ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে! যে সিনেমা বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা, সেটি এখন বিনা মূল্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে! আমি বড় পর্দার অভিনেত্রী। আমার কাজ ইউটিউবে বিনা মূল্যে দেখানোর জন্য নয়। যদি আমি আগে জানতাম এই প্রজেক্টটি সিনেমা হলের বদলে ইউটিউব কনটেন্ট হিসেবে প্রকাশিত হবে, তবে আমি কখনোই এতে অংশ নিতাম না।’
মাঝে একটা খবর রটেছিল, ছবিটির শুটিং আর করবেন না শাবনূর। ফেসবুক পোস্টে সেই প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।
শাবনূর পোস্টের একেবারে শেষে লিখেছেন, ‘আমি কখনোই বলিনি যে “রঙ্গনা” ছবিতে আর কাজ করব না। তাহলে কেন আমার অনুমতি ছাড়াই ছবির অসম্পূর্ণ ক্লিপগুলো ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রকাশ করা হলো! এখন আবার বলা হচ্ছে, পুরোনো সব দৃশ্য বাদ দিয়ে নতুন করে শুটিং হবে, যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও হতাশ। আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ও পেশাগত মর্যাদা এতে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটি শুধু আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, পুরো বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের জন্যও এক দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা। আমার অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী এই ঘটনার প্রতি যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন, তাঁদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা সব সময় আমার পাশে থেকেছেন, তাঁদের ভালোবাসা, সমর্থন ও প্রেরণাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’
শাবনূর জানালেন, দক্ষ পরিচালক ও পেশাদার প্রযোজকের অভাবে মানসম্মত সিনেমা তৈরি হচ্ছে না।
‘রঙ্গনা’ এর একটি উদাহরণ হয়ে থাকল। শাবনূর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকের চলচ্চিত্রজগতে পেশাদারত্ব, শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক সম্মানের অভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। দক্ষ পরিচালক ও পেশাদার প্রযোজকের অভাবে মানসম্মত সিনেমা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে শিল্পের মূল্য না বুঝে সহজ পথ বেছে নিচ্ছেন। ফলে নষ্ট হচ্ছে চলচ্চিত্রের মান, আর শিল্পীরা হারাচ্ছেন তাঁদের প্রাপ্য সম্মান।’