21/08/2024
প্রায় সময়ই মাথায় চিন্তা আসে যে ভারত কি আমাদের বন্ধু না শত্রু। বন্ধু বলবো না শত্রু বলবো তা বুঝে উঠতে পারছি না।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে প্রচুর সাহায্য করেছে। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়া আর কত কি না করেছে। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো।ভারত পাশে না থাকলে তখন বাংলাদেশ হয়ত স্বাধীন হত না।আমাকে ভুল ভাববেন না।কারণ পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের থেকে অনেক বেশি সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত কিন্তু ছিল। আর আমাদের তো পঙ্গু আগেই বানিয়ে ফেলেছিল। তখন চিন্তা করি ভারতের মত এমন বন্ধু রাষ্ট্র কে না চায়।
কিন্তু তারপরও মনে প্রশ্ন জাগে মানুষতো স্বভাবতই স্বার্থপর। ভারত কি তাহলে আমাদের নির্স্বাথ সহায়তা করেছিলো? ছোট একটা ঘটনা মনে পড়ে; রাস্তায় দুই জন ঝগড়া করছে। অন্য মানুষেরা তাকিয়ে তামাশা দেখছে কিন্তু তাদের ঝগড়া মিটমাট করার জন্য খুব কম লোকই তাদের কাছে যাচ্ছে। কারণ তাদের ঝগড়া মিটমাট করতে গিয়ে দু-চারটে ঘা আবার সে না খেয়ে বসে। এই ঝগড়া মিটমাট করতে সেই যাবে যার কিছু লাভ হবে। নির্স্বাথ ব্যক্তির সংখ্যা খুব কম এই পৃথিবীতে। প্রসঙ্গে ফিরে আসি, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক কার অজানা আছে। ১৯৬৯ সালে ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধের ক্ষত ভারতের হৃদয়ে তাজা না থাকলে ভারত কি বাংলাদেশকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতো তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ভারতের নাকি শর্ত ছিল যে বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না। একটা স্বাধীন দেশের নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না এটা কেমন কথা। যাই হৌক পরে আর সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া আরও অনেক শর্ত ছিল ভারতের যাতে তারা বাংলাদেশকে একটা তাবেদার রাষ্ট্র বানিয়ে রাখতে পারে।
ফারাক্কা বাঁধের প্রসঙ্গে আসি। ১৯৭০ সালে এর কাজ সমাপ্ত হয় এবং ৫ বছর পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে দশ দিনের জন্য গঙা হতে অনুমতি দেয় পরীক্ষামূলকভাবে পানি অপসারণ করার। সেই শুরু এবং তারপর ভারতকে পানি অপসারণে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়ে, বাংলাদেশ এই বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপন করে। দুই দেশের মধ্যে বৈঠক আর চুক্তি হলেও তা কাগজে কলমেই রয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে গঙার পানি অপসারণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক লোকসানের সম্মুক্ষিন হতে হয়।
টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে ফারাক্কা বাঁধের মতই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে তাই আর কিছু বলছি না।
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীর উৎপত্তিস্থল কিন্তু ভারতে। ভারত সরকারের পরিকল্পনা ছিল ৩০ টি আনর্জাতিক নদী একত্রীকরনের মাধ্যমে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল হতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি সরবরাহ করা হবে। একই সাথে ভারতের নদী সংযুক্তি প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিলো ৩৪ হাজার মেঘাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ যে মরুভূমি হয়ে যেত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
©https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/nafis69/29023927