30/07/2024
বাড়ী ফেরা
জীবনের নিঃশ্বাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। বার বার শুধু চোখের সামনে ভেসে আসছে মায়ের মুখের সেই কথার স্মৃতি, মা আমায় নিজ হাতে ভাত খাওয়াচ্ছে আর আমার তেল দেওয়া, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছে,
মাঃ বাবা মাত্র কয়টা বছর পড়ালেখা শেষ হলেই তুই বাড়ী ছেলে বাড়ী ফিরে আসবি। আবার মায়ের হাতে ভাত মাখানো খাবি। ভরদুপুরে পুকুরে সাঁতার কেটে গোছল করবি, পড়ন্ত বিকেলে মাঠে খেলা করবি, বাড়ীর গাছের পাকা পাকা ফলগুলো পেড়ে খাবি। নদীতে বাবার সাথে মাছ ধরবি সবই করবি। মাত্র কয়টা বছর। একটু কষ্ট করে মেসে থেকে লেখাপড়াটা শেষ কর বাবা। নাইন-টেনটা ভালো করে পড়বি, তাহলে ঝ.ঝ.ঈ. পরীক্ষাটা ভালো হবে। পরীক্ষা শেষ হলেই তুই বাড়ী।
আমি মায়ের বাধ্য ছেলের মতো হয়ে মজা করে ভাত খাচ্ছি আর মাথা নাড়ছি।
সে দিন বিকেলে বাবা আমাকে নিয়ে যায় রাজশাহী শহরে। মায়াবতী মা আমার শাড়ীর আঁচল দিয়ে বারবার চোখ মুছছে আর মা’র কান্না দেখে আমার চোখের পানিও ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমিও বারবার চোখের পানি মুছতে মুছতে ঝ.ঝ.ঈ পাশ করে বাড়ী ফিরব সেই ভাবনা ভেবে ভেবে চলে যাই রাজশাহী শহরে। ভালোভাবে পড়ালেখা শেষ করে ঝ.ঝ.ঈ. পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরে আসি। মায়াবীনি মা আমার সেইদিন খুব খুশি হয়েছিল। আমার পছন্দের খাবার রান্না করেছিল। বেশ ভালো লাগছিলো। কিন্তু এই আনন্দ বেশীদিন স্থায়ী হলো না, এর মধ্যে আমার ঝ.ঝ.ঈ. পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়। আমি ভালো নাম্বার নিয়ে পাশ করি। বাবা সেদিন খুব খুশি হয়েছিল। গ্রামের সবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়। তারপর আবার আমি বাড়ী ছাড়া এবার মিশন ঐ.ঝ.ঈ. পরীক্ষা। আবার মেসের জীবন আরম্ভ। তেল, নুন, ঝাল, ছাড়া এক ঘেয়েমী খাবার। প্রতিবার খাওয়ার সময় আমার ¯েœহময়ী মায়ের হাতে রান্নাকে খুব বেশী মিস করতাম “কিন্তু বাবাকে খুশি করার জন্য মন দিয়ে লেখাপড়া করি।
তারপর ঐ.ঝ.ঈ পরীক্ষা দিয়ে আমার ময়নামতি মা’র আঁচলের বাড়ী আসি। কিন্তু বাবা আমাকে বাড়ীতে থাকতে দিলো না। বাবা বলল, তোকে এবার মেসে থেকে কোচিং পড়তে হবে। তোকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে। বাবার কথা শুনে একবুক ব্যাথা নিয়ে চলে আসি মেসে।
সেইদিন আমার সাথে আমার দায়িত্বশীল বাবাও আসে। বাবা এসে সকল কোচিং সেন্টার দেখে। তারপর বাবা সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী নয়। আমাকে ঢাকায় কোচিং পড়তে হবে। যেই কথা সেই কাজ। আমার প্রাইমারী মাষ্টার বাবা বেতনের জমানো টাকা হতে, ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে আসে ঢাকায়। নতুন এক শহর, নতুন এক জায়গা, বাড়ী হতে অনেক দূরে মনে হচ্ছিল আমি মনে হয় আর বাড়ী ফিরতে পারব না। এক আতঙ্ক, এক ভয় আমাকে আকড়ে ধরছিল, কে জানতো সেই ভয় জীবনের শেষ প্রান্তে শেষে সত্য হলো।
যাই হোক আমার হাতে খড়ি গুরু বাবা আমাকে সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে চলে যায়। সেই দিন বাবার চোখের কোনাও অশ্রু দেখিছিলাম আমি। আর আমি বার বার ভাবি আমার হৃদয় হরণকারী মায়ের কথা লেখাপড়া ভালোভাবে শেষ হলেই আমি বাড়ি ফিরতে পারব।
আবার মন দিয়ে লেখাপড়া আরম্ভ করি। ভালভাবে পরীক্ষা দিই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এক সময় আমার লেখাপড়া শেষ হয়ে যায়। বাড়ীর ছেলে বাড়ী যাই।
কিন্তু এবার আমার কমলমোতী মায়ের কাছে সেই কোমলতা নেই। মা আমার অনেক ব্যস্ত। এখন আমরা দুজন নয় চারজন ভাইবোন। প্রথম যখন আমি বাড়ী থেকে যাই তখন আমি ১৪ বছরের ছেলে আর আমার ছোট ভাই ৭ বছরের ছেলে। আমার যাওয়ার পর আরেক ভাই ও আরেক বোন হয়। সব মিলে মা আমার দিশাহারী মা।
সব মিলিয়ে আমার বার বার মনে হচ্ছিল লেখাপড়ার পিছনে ছুটতে গিয়ে আমি আমার চোখের মনি মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছি। মা আর ভাত মেখে খাওয়ায় না। মাথায় আর হাত বুলায় না।
এর মধ্যে আমার নিষ্ঠাবান বাবা এসে আমাকে বলল তুমি ঢাকায় যাও। গিয়ে ই.ঈ.ঝ. এর জন্য প্রস্তুত হও।
বাবার একথায় সেই দিন আমি চলে আসি। কিন্তু এবার আর আগের মতো লেখাপড়া করি না। শুধু ভাবি লেখাপড়া আমার জীবনের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মনে মনে ভাবি আর করব না লেখাপড়া।
ই.ঈ.ঝ. পরীক্ষা দিই ঠিকই। কিন্তু চাকরী হয়না। আমার আদর্শ বাবা ঢাকা এসে আমাকে বলল, তুমি আমাকে অনেক কিছু ভালো ভালো রেজাল্ট দিয়েছো। তোমার প্রতি আমার কোন আক্ষেপ নাই। তবে জানো কি? তোমাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তাই তোমাকে নিয়ে আমি নিরাশ হবোনা। আমি জানি, আমি মানি জীবনের এক দরজা বন্ধ তো হাজার দরঝা খোলা। তুমি আমার গর্ব। তুমি আমার অহংকার। তাই তোমাকে আমি ভেঙ্গে যেতে দিতে পারি না।
বাবার কথাগুলো শুনে সেদিন খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমার ই.ঈ.ঝ পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পরও বাবা আমার সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করল না।
বরং ধৈর্য্য সহকারে আমাকে সান্তনা দিচ্ছে। নিজের উপর খুব কষ্ট হচ্ছে। মা’র সাথে করা নিরব অভিমান আমি কি বাবার উপর ঝাড়লাম।
বাবা আমার গায়ে হাত দিতেই সকল ধ্যান ভেঙ্গে যায়, আমি অবুঝ শিশুর মতো বাবার কথা শুনি।
বাবা আমাকে বলল, তোকে আমি স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে পাঠাবো তুই পিএইচডি করবি, আমার মাথা উচু করবি।
বাবার আদর্শ ছেলে হয়ে ঘাড় নাড়িয়ে রাজি হয়ে যাই।
তারপর একটু পরে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলি, আচ্ছা বাবা তুমি এতো টাকা পাবে কোথায়?
বাবা আমার মুচকি হেসে বলল, কেন রে, বাবা আমার চাকরী জীবনের একটি টাকাও সংসারে খরচ করি নাই। সব টাকা তোদের লেখাপড়ার জন্য রাখি শুধু তাই নয় প্রতি বছরে ধান বিক্রি করে যে টাকা পাই তাও ব্যাংকে রাখি। বাবার তৈরী পুরানো সেই বাড়ীতে থাকি। বাড়ীটা পুরানো হয়ে গেছে। তবে চিন্তা করিন না তোদের লেখাপড়া শেষ হলে তখন টাকা জমিয়ে বাড়ীটা নতুন করে নির্মাণ করে। তোর মাকে নিয়ে শেষ জীবনে শান্তিতে থাকব। তবে জানিস তোর ছোট ভাই-বোন গুলো লেখাপড়ায় তোর মতো ভালো না। তুই আমার আশা বাবা।
বাবাকে সান্তনা দিলাম আর বললাম বাবা আমি তোমার সকল স্বপ্ন পূরণ করব।
বাবার চোখের স্বপ্ন নিয়ে এবার দেশের মাটি ছেড়ে চলে এলাম লন্ডন শহরে।
মন দিয়ে লেখা-পড়া করে এবার বিদেশের মাটিতে ইউনিভার্সিিিট ফাস্ট হলাম বিধায় লন্ডনেই আমার ভালো একটা চাকরী হয়ে যায়।
আজ বাবা আমার মহা খুশি। দিন শেষে প্রতিদিন রাতে ঘুমানো আগে বাবার সাথে কথা বলি। এভাবে দিন পার হতে থাকে।
ছুটির দিনগুলোতে নিজেকে খুব অসহায় লাগে তাই ফ্লোরিডা নদীর কাছে ছুটে যাই। একটু ভালোলাগার জন্য। কারণ আমি আজ একা বড় একা।
এরই মধ্যে ফ্লোরিডা নদীর পাড়ে আমার পরিচয় হয় ইলোরা নামের একটা মেয়ের সাথে। সে লন্ডনী মেয়ে। ধবধবে সাদা, সোনালী রং এর চুল, ছিমছাম পাতলা লম্বা, নীল রং তার চোখ। সব মিলে সে এক অপরূপ তরুণী। লম্বা চিকন নাকের নিচে পাতলা ঠোঁটের মধ্যে চিড়িচিড়ি ছোট ছোট দাঁতের মিষ্টি মিষ্টি হাসি আমার হৃদয় কেড়ে নেয়।
লেখা-পড়া চাপে কখনও কোন মেয়ের দিকে দৃষ্টি গোচর করা হয়নি। সব সময় একটাই চিন্তা ছিল বাড়ী ফিরব। তা আর হলো কোথায়?
আজ আমি ইলোরাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না। বার বার শুধু মনে ইলোরা আমার জীবন। আমার নিঃশ্বাস, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
ইলোরা আমার মনের ভাষা পড়তে পারত, তাই তো যে ভালোবাসার কথা আমি ইলোরাকে বলতে পারিনি। কিন্তু ইলোরা সেই গোপন কথা ইলোরার বাবা-মাকে বলে এবং বুঝায় আমি ইলোরাকে কতটা ভালোবাসি। আমাকে বিয়ে করলে ইলোরা জীবনে সুখী হবে।
ইলোরার বাবা-মাও রাজী হয়ে যায়। আমার আর ইলোরার চার হাত এক করে দেয়।
আমার বাবাকে ইলোরার কথা বলতে বাবাও খুশি মনে রাজী হয়ে যায়। মা আমার রাজী ছিল না। কিন্তু মায়ের প্রতি এত জমানো অভিমান ছিলো যে, মায়ের কথা মূল্য দেওয়ার মতো আমার কোন মন ছিল না।
এলোরাকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়ে জীবনের সব কিছু পেয়েছি। আজ জীবন নিয়ে কোন কষ্ট নেই।
এলোরা একজন ভালো জীবন সঙ্গীনী। আমার কত যতœ করে। আল্লাহর কাছে সব সময় শুকরিয়া করি। এলোরা আজ মুসলিম। ও আমার সাথে একসাথে নামাজ পড়ে। রোজা রাখে।
এলোরা আমার নিকট হতে রাজশাহীর গল্প শুনে বাংলাদেশে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়।
তাইতো আমার সহধর্মিনীর কথা রাখতে এক শীতকালীন ছুটিতে বাড়ী আসি। বাবা আমার মহা খুশি। সে প্রচুর বাজার করে। আমার পাঠানো টাকা দিয়ে বাবা একটা নতুন বাড়ী করেছে কোনরকম। আজ বাবা চাকরীটা নেই। আমার পাঠানো অর্থের উপর নির্ভর। বাবার জন্য কিছু করতে পেরে হৃদয়ে এক প্রশান্তির বাতাস বইছে।
আমার গ্রাম জুড়ে সে এক তান্ডব। দল বেধে সবাই বিদেশী বউ দেখতে আসে। আমার বউ সবার সাথে বাংলায় কথা বলে এবং বাংলা ভাষা ভালোভাবে বুঝে। সবাই অবাক এবং মহা খুশি।
শুধুমাত্র আমার মা ছাড়া। বিষয়টা আমার বউ বুঝতে পারে তাইতো মা’র সাথে সব সময় থাকে এবং সকল কাজে মাকে সাহায্য করে। একপর্যায় মাও এলোরাকে আপন করে নেয়।
এরই মধ্যে ছুটি শেষ আমরা চলে আসি লন্ডনে। বাংলাদেশ থেকে আসার পর এলোরা প্রায়ই বাঙ্গালী রান্না করে। ওর হাতের বাঙ্গালী রান্না খুবই সুস্বাদু।
দেখতে দেখতে বছর পর বছর পার হয় আমি এখন সন্তানের বাবা। আমার ছেলে ইলোয়ান এবং মেয়ের নাম ইলমা। আর আমি ইমরান।
আজ আামি আমার সন্তানদের অনেক ভালোবাসি। তাই লেখাপড়ায় সন্তানদের দূরে কোথায় পাঠাই না। যে শহরে আমরা থাকি সেই শহরের বাচ্চারা লেখা-পড়া করে।
কারণ আমি জানি বাড়ি ছেড়ে থাকাটা কতটা কষ্টের।
ইলোরা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বিয়ের পরও একই শহরে থাকার কারণে ইলোরা নিয়মিত বাবা-মার দেখাশুনা করতে পারে। এবং বাচ্চা যখন ছোট ছিল ইলোরা বাবা-মার কাছে রেখে চাকরীটা ঠিকঠাক মতো করতে পেরেছে। বাবা-মার কাছে থাকায় সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করেছে।
যা আমার খুব ভালো লাগতো।
কোন গ্রীষ্মের ছুটিতে ইলোরা বায়না ধরলো ছেলেমেয়েক নিয়ে রাজশাহী বাংলাদেশে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। আমার রাজশাহীতে। গ্রামে আবার আনন্দ মুখর পরিবেশ। কিন্তু আমরা সন্তানেরা গরমে অস্থির। বাড়ীতে এসি নাই। আর বাড়ীর পরিবেশটা সেই শান্ত নেই। আমার ছোট দুই ভাই বিয়ে করেছে। তাদেরও সন্তান হয়েছে। কেমন জানি হিজিবিজি পরিবেশ। বাচ্চাদের কি বলব আমারই ভালো লাগছিলো না। তাইতো বাড়ীতে না থেকে রাতে শহরের হোটেলে থাকতে হয়। বাবা সব কিছু বুঝে বলল, আমার ভুল হয়েছে, তোদের জন্য আলাদা একটি বাড়ী করতে হবে। সুন্দর করে। তুই আমাকে প্রতি মাসে ভালোই টাকা দিস। তাইতো শেষ বয়সে এসে শান্তিই আছি। তা না হলে কি যে হতো। তোর মা তো শুধু জানতে চায় তুই কবে টাকা পাঠাবি। টাকার খবর পেলেই তোর তোর ভাই-বোনদের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলে। ওরা একজনও মানুষের মতো মানুষ হয়নি। বউগুলোও সুবিধার না। অন্য দিকে তোর বউ কত ভালো। সংসারের কাজ করে আবার চাকরী করে।
বাবাকে থামিয়ে বললাম, বাবা এলোরাকে কারো সাথে তুলনা করবে না। ও পৃথিবীর সবার থেকে ভিন্ন। অনেক বড় মনের অধিকারীনি।
বাবা শুধু হ্যাঁ বলে, চুপ হয়ে যায়।
সে বছর মাসের ছুটিতে বেড়াতে গেলেও ১৫ দিনের মধ্যে আবার লন্ডনে চলে আসি। হৃদয়ের মাঝে হাজারো অভিমান নিয় আসা। গর্ভধারিনী মা কি বুঝতে পারে আমার অভিমান। মা আমার বুঝুক না বুঝুক এলোরা সব বুঝে গেছে।
তাইতো লন্ডনে আসার পর নিজ অর্থায়নে শ্বশুড়কে দিয়ে চার বেড রুমের একটি ফ্ল্যাট বাড়ী করে যা আমি জানতে পারি যখন অসুস্থ বাবাকে রাজশাহী দেখতে যাই। আমি বাড়ি যাওয়ার মাত্র দুই ঘন্টা পরই বাবা মারা যায়। মনে হলো আমার মাথার উপর হতে দীর্ঘ বছরে ছাতাটা হারিয়ে গেছে। যে কিনা দূরে থেকে সারা জীবন তাহার পাশে ছিল।
বাবার মৃত্যুর পর সকল ধর্মীয় কর্মকান্ড অর্থ খরচ আমি আর ইলোরা মিলে করলাম। অন্য ভাই-বোনদের যেন কোন অবদানই নাই। অন্য দিকে ইলোরা ওর বাবা-মা এবং আমার বাবা-মা এর মধ্যে কোন পার্থক্য কখনও করে নাই। একটা মানুষ এতটা ভালো কি করে হয়? আমি ভেবে পাই না। ইলোরা ছেলেমেয়েদেরও বাড়ী থাকার অভ্যাস করে নেয়।
সমস্যা হলো চলে আসার আগে। মা সকল সম্পত্তি ভাইদের মধ্যে ভাগ করে দিতে বলল এবং কি আমার জন্য বাবার এবং ইলোরার দেওয়া বাড়ী টাও। সব কিছু ভাইদের নামে লিখে দিতে বলল মা। আমি ভেবে পাই না মা এসব কি বলছে? আমি কি মায়ের সেই আদরের সন্তান না। আমিতো কোন সম্পত্তি নিয়ে লন্ডনে যাইনি। সবই তো বাংলার রাজশাহীতে। তবে লিখে দিতে হবে কেন? আর মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে থাকার জন্য যে ঘর আমার সেও ওদের দিব কেন? মনে মনে এসব ভাবছি। এর মধ্যে মা বলে, তোর ভাইরা ভালো নেই। মেঝ অনেক টাকা ঋণে আছে। ওর ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পথে। তোর বাবা নেই। তাই বলে তুই টাকা পাঠানো বন্ধ করিস না। আমার নামে একাউন্ড করে যা। এখন থেকে প্রতি মাসে আমার একাউন্টে টাকা পাঠাবি। বড় ভাই বাবার মতো। তুই যদি ছোট ভাই-বোনদের না দেখিস তবে কে দেখবে। তোর বোনের ছেলের লেখাপড়ার খরচ এতোদিন তোর বাবা দিত। এখন থেকে তুই দিবি।
মার মুখে এসব কথা শুনতে আমার একটুও ভালো লাগছিলো না। আর ভাইদের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল আমি যেন সম্পত্তি নিতে আসছি। আমি ঘর থেকে বাড়ির পুকুরে পাড়ে চলে আসি। ইলোরা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আমার কাছে এসে বসে মেঘ মুক্ত আকাশের চাঁদ। তারা ¯িœগ্ধ বাতাস দেখায়, মনটা ভালো হয়ে যায়।
ইলোরাকে নিয়ে হাসি মুখে আবার ঘরের মধ্যে আসি। আমাদের দেখে সবাই চুপসে যায়, মনে হয় কিছু একটা বলছিল। ভাইয়েরা মুখ কালো করে নড়ে চড়ে বসে। মা বলে কি সিদ্ধান্ত নিলি। আমি ইলোরার মুখে তাকালাম। ইলোরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চোখ ইশারা করলো। ইলোরার এই হাসি আর ইশারা দেখে আমরা ভাইয়ের খুব রাগ করল এবং বলল কিভাবে সম্পত্তি আদায় করতে হয় তা আমাদের ভালো করে জানা আছে। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে, আঙ্গুল একটু বাঁকা করতে হয়। আমি বললাম মানে কি? তোরা কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস।
আমার ছোট ভাই দাঁড়িয়ে বলল, ভয় দেখাচ্ছি না বলছি, আগামীকাল সম্পত্তি রেজি: করে দিবে নতুবা তোমার দুই ছেলেমেয়েকে ঘরে বন্দী করে রাখব।
আমার ছোট ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে ইলোর অবুস্থ শিশুর মতো করে কেঁদে দিল। আমার জীবনে প্রথম ইলোরার চোখে জল দেখলাম।
ইলোরা দৌড় দিয়ে বারান্দায় বাচ্চাদের কাছে যায় এবং বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে অনবরত কাঁদতে থাকে। ইলোরার কান্না দেখে আমার মা ইলোরাকে উদ্দেশ্য করে বলে। এমন কিছুই হবে না। তুমি শুধু শুধু কেঁদ না। সম্পত্তি তো তোমাদের লাগবে না। তাই ওদের নামে লিখে দেওয়াই ভালো। বলে চলে যায়।
আর আমার ভাই-বোনের জানল সবই আমাকে কালকের জন্য তৈরী থাকতে বলে একে একে চলে যায়।
আমি দুই বাচ্চাসহ ইলোরাকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেই। কিন্তু কিছুতেই ইলোরার কান্না থামাতে পারছিলাম না।
ইলোরা আমাকে বলল সম্পত্তি নেওয়ার হলে, ওরা আবার সন্তানদের জিম্মি করে আরো অনেক কিছু চাইতে পারে, ওরা মানুষ না। ওরা মানুষ নামে নরপশু। আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমি আর কখনও বাংলাদেশে আসতে চাইব না।
সেই রাতটা ছিলো জীবনে সব থেকে ভয়ঙ্কর রাত। বারবার মনে হচ্ছিল সকাল হলেই ওরা না জানি কি করে আমাদের সাথে। কারণ আমরা এখন ওদরে কাছে জিম্মি। সকল চিন্তার অবসান করে। আমি ফোনে একটি গাড়ী ঠিক করে গ্রামের শেষ সীমানার রাখি। তারপর গভীর রাতে স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে পালিয়ে আসি। পালিয়ে আসার সময় ভয়ে আমার সমস্ত শরীর ধর ধর কাঁপছিল যদি ধরা পড়ে যাই।
যাই হোক ভালোভাবেই স্ত্রী সন্তান নিয়ে লন্ডনে আসতে পারি। লন্ডনে আমার পড়ে ইলোরার চোখের পানি বন্ধ হয়েছে।
লন্ডনে এখান ভালোই আছি। বাংলাদেশ থেকে আসছি রাত সাত বছর হয়েছে। বাংলাদেশ নামক দেশের কথা ভুলে যাই। আজ বাচ্চারা বড় হয়েছে কিন্তু আমার স্ত্রী এবং আমি সন্তানদের কাছে কাছে রাখি। এক অজানা ভয় আমাকে তাড়া করে বেড়ায। মনে হয় কেউ যদি দূরে চলে যায় তাহলে সে পর হয়ে যায়।
এত কিছু পরেও ইলোরার সাথে আমার মায়ের সম্পর্ক ছিল। ইলোরা আমার মা কে প্রতিমাসে কিছু কিছু হাত খরচ দিত। যা আমি জানতাম না। একমাত্র পৃথিবীর বুকে ইলোরাই জানত আমি আমার জন্মদাত্রী মাকে খুব ভালোবাসি। মায়ের উপর আমার একরাশ অভিমান। তাইতো মায়ের প্রতি অভিমান ভাঙ্গানোর প্রচেষ্টায় মাকে লন্ডনে আনার প্রস্তাব দেয় ইলোরা। আমার মা প্রস্তাবে রাজি হয় তবে ইলোরাকে কিছু শর্ত দেয়। ইলোরা শর্তে রাজি হয়। শর্ত হলো মা লন্ডনে আসার আগে দিতে হবে ত্রিশ লক্ষ টাকা। আর লন্ডন এসে যাওয়ার সময় দিতে হবে আরো ত্রিশ লক্ষ টাকা। ইলোরা আমার একটু আনন্দের জন্য সব করতে রাজি হয়।
একদিন অফিস থেকে এসে রাতে যখন খাবার টেবিলে বসি দেখি সব আমার মায়ের প্রিয় খাবারগুলো রান্না করে টেবিলে সাজানো খাবারগুলো দেখে আমি দাঁড়িয়ে যাই আর ভাবি মাকে দেখতাম ইলিশ মাছ দিয়ে শর্শে পাতলা ঝোল পেলে মা আমার তৃপ্তি করে খেত। চোখের কোনে এর মধ্যে জল এসে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে এর মধ্যে আমার চোখের সামনে মার মুখ খানি দেখছি। এলোরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কাকে দেখছো? বলতো।
আমি বললাম ও কিছু না। ভুল দেখছি।
এলোরা একগাল হাসি দিয়ে বলল। ভুল দেখছ না। মা সত্যি মা
আমি সে দিন এতো সুখি হয়েছিলাম যে, মনের আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খাই। দীর্ঘ ৪০ বছর পর মাকে জড়িয়ে ধরি। মা মা গন্ধ হৃদয় শীতল করি। আমার মনে হতে লাগলো আমি আবার হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়েছি নিজের করে। মাও আমাকে জড়িয়ে ধরে, কপালে চুমা খায়। আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়। আমার মনে হলো, আমার পৃথিবীতে সব আছে। আমি সুখি। এলোরা আমার খুশি দেখে দুই বাচ্চাকে নিয়ে মিটি মিটি করে হাসছে।
মাকে নিয়ে আমার সুখের সংসার। রোজ তাড়াতাড়ি করে বাসায় এসে মাকে সাথে নিয়ে ছোটবেলার পুরানো গল্পগুলো ঝালিয়ে নিই। সাথে ইলোরার হাতের বাঙ্গালী ছোলা মুড়ি মাখা, পিয়াজু, বেগুনী, লুচি ইত্যাদি সব খাবার খাওয়া খুবই মজা। আবার প্রতি সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া। কতই না সুখী আমি। এভাবে তিন মাস পার হলো। এর মধ্যে একদিন আমি বাসায় এসে দেখি মা ইলোরাকে কাছে বলছে আমার বাকি ৩০ লক্ষ টাকা দেও আমি বাড়ী চলে যাব। আমার আর ভালো লাগছে না। আমি শুধু টাকার জন্য এখানে আসতে রাজি হয়েছি। তুমি তা ভালো করেই জানো। তা না হলে আমি কখনও লন্ডনে আসতাম না।
আমার বউ ইলোরা মাকে হাত জোড় করে অনুরোধ করছে মা আর দুই মাস থেকে যাও না। আপনার ছেলে খুব খুশি হবে। ওর খুব ভালো লাগবে। ও আপনাকে অনেক ভালোবাসে।
মা প্রতি উত্তরে ইলোরাকে বলে, আমার ছেলে আমি ওকে তোমার থেকে ভালো করে চিনি। ও আমাকে মোটেই ভালোবাসে নাই। যদি ভালোবাসত তাহলে বাংলাদেশ হইত পালিয়ে আসত না, আর আমাকে ভুলে যেত না। আমার এমন ছেলের চেহারাই দেখতে মন চায় না। শুধু তোমার কথা রাখতে আসছি।
মার মুখে এসব কথাগুলো আমার ভীষণ রাগ হলো ইলোরার উপর। আমার জন্য ও মার সাথে টাকার চুক্তি করেছে। তাহার সাথে প্রতারণা করছে।
নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি সেদিন। হাতের ব্যাগটা রেখে ইলোরার সামনে। ইলোরা চুপসে গেল। ইলোরাকে কিছু বলার আগেই ইলোরার গালে টাস টাস করে দুটো চড় বসিয়ে দিলাম ইলোরা চড় খেয়ে চেয়ারের উপর পড়ে গেল। ইলোরা মাথায় আঘাত পেলো। ইলোরার কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে। ইলোরার রক্ত দেখে আমার হুস ফিরে এলো আমি কি করলাম। ইলোরাকে মারলাম। তাও আমার মার জন্য। আর মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, মুখে কোন কথা নাই, আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব, মনে হলো যে হাত দিয়ে আমার বউকে মেরেছি সেই হাত আজ কেটে ফেলব। আমি দৌড়ে রান্না ঘরে যাই। ছুরি নিয়ে হাতে আঘাত করি। কিন্তু ইলোরা কখন এস যে আবার হাতখানা সরিয়ে নিজের হাত রেখেছে বুঝতে পারি নি। ছুড়ি দিয়ে আঘাত করার পর দেখি ইলোরার হাতে আঘাত। আমি ইলোরার হাত চেয়ে ধরি আর বলি তুমি একি করলে, ইলোরা বলল আমি তো তোমাকে চিনি আমাকে আঘাত করে তুমি আমার থেকে বেশী ব্যাথা পেয়েছো। আমি দুঃখিত। তোমাকে না জানিয়ে লুকিয়ে এসব করার জন্য আমার মনে হচ্ছিল তোমার আর মার সম্পর্কটা আগের মতো করার উচিত। আমি এলোরার মুখে হাত দিয়ে ইলোরাকে থামিয়ে বলি, তুমি যা করেছো আমার ভালোর জন্য করেছো। তোমার কোন দোষ নেই। তুমি নিজেকে দোষারোপ করোনা। এতো কিছু হচ্ছে আমার কোন হাত নেই। আমি ইলোরাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ীতে উঠে হাসপাতালে যাচ্ছি আর ছেলেমেয়েকে ফোন করে বিষয়টা জানাই। ইলোরাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই ইলোরা চিকিৎসা চলছে। আমরা ছেলেমেয়েরা তাহাকে ঝড়ৎৎু বলল কারণ মার লন্ডনের আমরা বিষয়টা ওরাও জানতো শুধুমাত্র তোমাকে বলেনি কারণ ইলোরা বলতে নিষেধ করেছে। হাসপাতালের বিছানায় ইলোরাকে দেখে আমার এত কষ্ট হচ্ছিল যে ভেবে পাচ্ছিলাম না।
ইলোরা আমাকে কাছে ডেকে বলল, তুমি মা’কে বাংলাদেশে পাঠায়া দাও। আর ৩০ লক্ষ টাকাও দিয়ে দিও।
আমি মাথা নিঁচু করে হ্যাঁ জানালাম।
ইলোরাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ী নিয়ে এসে পরদিনেই মাকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিই। মা আমার মহা খুশি ৩০ লক্ষ টাকা যে পেয়েছে। ইলোরার আঘাতে তার কিছু আসে যায় না। আমি ভেবে পাই না একটা মানুষ এতটা স্বার্থপর কিভাবে হয়। মাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে নিজেকে খুব হাল্কা মনে হচ্ছিল।
ইলোরা সেই যে অসুস্থ হলো আর সুস্থ হলো না। কারণ ইলোরার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ইলোরা এখন চাকরী করে না। বাসায় থাকে বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে।
ইলোর মন ভেঙ্গে পড়েছে। তাইতো ইলোরা দ্রুত ছেলেমেয়ের বিয়ে দেয়। বাড়ী ভরা মানুষ, বাড়ীর সামনের ফুলের বাগানে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কারণ ইলোরা বাড়ী থেকে গাছগুলোর বাড়তী যতœ নেয়। ইলোরাকে ছেড়ে থাকতে আবার ভালো লাগে না। বাচ্চারা বুঝতে পেরে আমাকে অবসরে আসতে বলে। আমিও ভেবে দেখলাম অবসরে গেলে কোন সমস্যা নাই। নিজেদের সুন্দর একটা গুছানো বাড়ী আছে। এলোরার মার বাড়ী ভাড়া দিয়ে মাসে একটা টাকা আসে। আরও দুই ফ্ল্যাট ভাড়া আসে। তাছাড়া একটা হোটেল ভাড়া আসে। তাছাড়া ছেলেমেয়ে, ছেলের বউমেয়ের জামাই সবাই কর্মজীবী। জীবনে তার অর্থের প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন শুধু ইলোরার ভালোবাসা। তাইতো আমিও জীবন শেষে অবসর নিয়ে নিলাম।
এখন আমি আর ইলোরা নিবির ভাবে দুজন-দুজনকে সময় দিচ্ছি। বাংলাদেশ নামক দেশটার কথা ভুলে গেছি। ইলোরাও এখন বাংলাদেশের কথা বলে না। বাংলাদেশের ও কারও সাথে কোনরূপ যোগাযোগ নেই। মনে হয় টাকা নিয়ে ভালোই আছে।
এভাবে চলে যাচ্ছে কয়েক বছর। এর মধ্যে হঠাৎ ইলোরার শরীর খুব খারাপ হয়েছে। ইলোরা আজকাল বিছানা থেকে উঠতে পারে না। আমিও ইলোরার বিছানার পাশেই থাকি সারাক্ষন। আর অতীত মধুর স্মৃতি স্মরণ করি। এর মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত করতে করতে কোন এক শুক্রবার সকালে ইলোরা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ইলোরাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। তাই ইলোরার কবর বাড়ীর পাশেই দেই। যাতে আমি সকাল বিকাল ইলোরার কবরের কাছে গিয়ে কথা বলতে পারি। যেই কথা সেই কাজ।
ইলোরার কবরের পাশেই আমার এখন সময় কাটে। কবরের পাশেই কোরআন তেলাওয়াত করে সকল কথা বলে সময় কাটে।
এর মধ্যে কোন একদিন গ্রাম থেকে ফোন আসে আমার মা মারা গেছে। বহু কষ্টে মারা গেছে। আমার ভাইয়ের খুব কষ্ট দিয়েছে। এই সংবাদ আজ আমার হৃদয়ে কোন নাড়া দেয়নি। কারণ আমার মা আমার কাছ থেকে অনেক পূর্বেই মারা গেছে। চুপচাপ ফোন রেখে দেই। তারপর ইলোরার কবরে গিয়ে সব কথা বলি। আমার সাথে আমার সন্তানেরা ও ইলোরার কবরের কাছে সময় পেলেই আসে, সময় কাটায়।
আজ তিন বছর হয়ে গেছে। ইলোরা মারা গিয়েছে। এক বছর হলো মা মারা গিয়েছে। ইলোরার কবরের পাশে সূরা মূলক পড়তে পড়তে এসব ভাবি। এর মধ্যে আমার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। জীবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছি। আর মাকে বলছি মা আমার আর বাড়ী ফিরা হলো না। মাঝে শুধু ইলোরা ছিল জীবনে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।