
09/04/2024
কেন আমরা সৌদি আরবের একদিন পরে ঈদ পালন করি: বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
*********************
১। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ইফতার করো। যদি আকাশ তোমাদের কাছে মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে তোমরা ৩০ দিন পূর্ণ করো। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৯; মুসলিম, হাদিস : ১০৮১)। সুতরাং নিজে খলি চোখে চাঁদ না দেখে অন্য দেশের সাথে মিলানো যাবে না।
২। সৌরবর্ষ অনুযায়ী সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা এগিয়ে। এতে বাংলাদেশ ৩ ঘণ্টা আগে চাঁদ দেখার কথা। কিন্তু তা তো হয়ই না, উল্টো সৌদি আরবে একদিন আগে রমজান, ঈদ শুরু হয়ে যায় । এর কারণ হল সৌর হিসেবে সৌদি আরবের সাথে আমাদের পার্থক্য মাত্র ৩ ঘণ্টা হলেও চন্দ্রের হিসেবে সৌদি আরব ও আমাদের পার্থক্য ২১ ঘণ্টার!
প্রশ্ন আসতে পারে যে এটা কিভাবে সম্ভব! আসলে পৃথিবীর গতির কথা তো জানিই। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রতিনিয়ত ঘুরে চলেছে, যাকে আমরা আহ্নিক গতি বলি। গতিটা সহজে বোঝা যাবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক বা অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ (Anti Clockwise) বললে। ঘড়ির কাঁটা পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে ঘুরে, আর পৃথিবী নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘুরে। মূলত সে কারণে আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যেতে দেখি।
এখন চাঁদ বেশ ধীরে নিজ অক্ষে আবর্তনরত। চাঁদের আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সমান ২৭-২৯ দিন। ফলে প্রতিদিন পশ্চিমের দেশসমূহ সবার আগে চাঁদের উন্মোচন দেখতে পায়। আমরা তো জানিই, সূর্যোদয় হয় পূর্ব থেকে,তবে চাঁদের ক্ষেত্রে উল্টো। যদিও চাঁদও পূর্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়, তবুও পশ্চিমারা চাঁদের আলো সবার আগে পায়।
কেন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলেও অন্য দেশে দেখা যেতে দেরি হতে পারে। কেননা খালি চোখে চাঁদকে দেখতে হলে চন্দ্র আর সূর্যের মাঝে ১০.৫ ডিগ্রি কোণ থাকতেই হবে, এবং যে পরিমাণ দূরত্ব অর্জন করলে এই কোণ তৈরি হবে, সে পরিমাণ যেতে যেতে চাঁদের ১৭ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ কারণেই আজ আমেরিকাতে চাঁদ দেখে গেলেই যে বাংলাদেশেও দেখা যাবে, সেটা ভুল ধারণা। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই কোণ অর্থাৎ ১০.৫ ডিগ্রি অর্জন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাবে না। একই বিষয় সৌদি আরব ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই সংকট কোণকে ইলঙ্গেশন (Elongation) বলে। তাই চাঁদের বয়স কত সেটা আদৌ আসল কথা নয়, সেই কোণ হয়েছে কিনা সেটার উপর নির্ভর করে চাঁদ দেখা যাবে কিনা। ফলে আমরা সৌদি আরব থেকে ৩ ঘণ্টা সূর্যের হিসেবে এগিয়ে থাকলেও, চাঁদের হিসেবে ২১ (২৪-৩=২১) ঘণ্টা পিছিয়ে আছি। ২১ ঘণ্টা প্রায় ১ দিন। অর্থাৎ আমরা প্রায় একদিন পিছিয়ে আছি। সেজন্যই সৌর বছরের হিসেবে বাংলাদেশে আমরা সৌদি আরবের একদিন পরে চাঁদ দেখি, আর একদিন পরে ঈদ উদযাপিত হয়।
৩। ভৌগলিক angle সম্পর্কে আগে জানুন। এইজন্য ছবি upload করেছি। আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ভূগোল পড়েন, ভূগোলের মানচিত্র দেখেন। সব এলাকার angle এক নয়। এইজন্য বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় চাঁদ দেখা যায়।
*** সব কিছুর উপর হাদিস। হাদিস অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখে ঈদ পালন করতে হবে। অন্যথায় হবে না।
(সংগ্রহীত)