HouSe CollaPus

HouSe CollaPus Descendants of warriors, a band of storytellers who tell stories by Film and by War.

অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, এবং সঙ্গীতশিল্পী কিনু চার্লস রিভস, নিউইয়র্কের একটি ক্লাবে নির্ধারিত সময়ের কুড়ি মিনি...
18/12/2024

অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, এবং সঙ্গীতশিল্পী কিনু চার্লস রিভস, নিউইয়র্কের একটি ক্লাবে নির্ধারিত সময়ের কুড়ি মিনিট দেরিতে পৌঁছলেন। ক্লাবটিতে যে-পার্টিটা চলছে, সেটি তাঁর নতুন মুভি'র প্রতি উৎসর্গ করা। ক্লাবের বাইরে, অঝোর বৃষ্টির নিচে, দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, চুপচাপ। ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে, সিকিউরিটি গার্ডরা চিনতে পারেনি। এর ক'দিন পরে, ক্লাবটির মালিক বলেছিলেন— "আমি জানতামই না কিনু ক্লাবের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, কবে তাঁকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেবে কেউ সে-আশায়! কাউকেই তিনি পরিচয় দেননি।"

কিনু। চিরকাল যাতায়াত করলেন গণপরিবহনে চড়ে, সময়ে ঝুলেঝুলে। রাস্তার ধারে ভিক্ষে করছে ঘরবাড়িহীন কোনো নিঃস্ব, কিনু তার পাশে গিয়ে বসে থেকেছেন, গল্প করেছেন, উঠে আসার আগে দুখী মানুষটির মুঠোয় গুঁজে দিয়েছেন অপ্রত্যাশিত পরিমাণের অর্থের নোট। কেউ জানে না, কে এই লোক? আপনি যদি তাঁকে চিনে থাকেন, প্রায়ই আপনার চোখে পড়বে— পার্কের বেঞ্চিতে বসে হটডগ চিবুচ্ছেন তিনি, অপরিচিত বুড়োবুড়ি-শিশুদের হলাহলের পাশে।

কিনু। দুনিয়ার বিস্ময়কর চলচ্চিত্র 'দ্য ম্যাট্রিক্স'-এর একটি সিক্যুয়েল শেষে, চলচ্চিত্রটির প্রত্যেক স্টান্টম্যানকে একটি করে মোটরবাইক কিনে দিয়েছিলেন। তাঁকে বলতে শুনেছিলাম আমরা— "এঁদের স্কিলই, এই মুভির প্রাণ।"

'দ্য ম্যাট্রিক্স'-এর কস্টিউম ডিজাইনার ও কম্পিউটার সায়েন্টিস্টদের বেতন তাঁর কাছে মনে হয়েছিলো— চলচ্চিত্রটির উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তা এবং এর নেপথ্যে ওই উল্লিখিত ব্যক্তিদের মেধা ও শ্রমের তুলনায় যথার্থ নয়। অতএব, সেই মুভি থেকে প্রাপ্ত তাঁর পারিশ্রমিকের সিংহভাগ তিনি তুলে দিয়েছিলেন এঁদের হাতে।

তাঁর মুভি 'দ্য ডেভিল'স অ্যাডভোকেট'-এ কিংবদন্তী অভিনেতা আল পাচিনোকে আমন্ত্রণের খরচ যোগাতে, তিনি কমিয়ে ফেলেছিলেন নিজের বেতন।

'দ্য লেক হাউজ' চলচ্চিত্রটায় অভিনয়ের সময়, দু'জন কস্টিউম সহকারীর আলাপ তাঁর কানে এসেছিলো ফিসফাসে, যাদের একজন কাঁদছিলো হুহু করে, পরদিন কুড়ি হাজার ডলার শোধ করতে না-পারলে ঋণের ঘরটি হারিয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে বলে। সেই পরদিন, লোকটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকাটি জমা হয়ে গিয়েছিলো। হ্যাঁ, কিনু রিভস।

প্রত্যেকেই মানুষ হিসেবে জন্মায়, কিন্তু মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে— অল্প ক'জন।

১৯৬৪'র সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ জন্মেছিলো শিশুটি। বয়স যখন তিন বছর, বাবা পরিত্যাগ করলো তাকে। এরপর, ছেলেটি বড়ো হয়েছিলো তিনজন সৎপিতার ভিন্ন তিন বাড়িতে। ছেলেটির ডিসলেক্সিয়া। তার স্বপ্ন ছিল হকি প্লেয়ার হওয়ার, যে-স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় মারাত্মক একটি দুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি পড়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ। জন্মমুহূর্তেই তাঁর কন্যাশিশু মারা যায়। ক'দিন পরেই মারা যান সেই কন্যার মা, গাড়ি-অ্যাক্সিডেন্টে। প্রায় একই সময়ে মারা যান তাঁর প্রাণের বান্ধব, সুখদুঃখের সাথী— রিভার ফিনিক্স। তাঁর বোনের শরীরে ধরা পড়ে লিউকেমিয়া।

ভেঙ্গে পড়েননি কিনু। বোনের চিকিৎসা চলাকালীন ওই দীর্ঘ সময়ে, কোনো চলচ্চিত্রেই অভিনয় করলেন না তিনি, বসে থাকতেন বোনের বিছানার পাশে। একদিন, বিখ্যাত 'দ্য লিউকেমিয়া ফাউন্ডেশন' গড়ে তুললেন কিনু, বোনের চোখের ভিতরের বেদনা বুকের ভিতরে বয়ে; যে-ফাউন্ডেশনে নিয়মিত অর্থ যোগান দেওয়ার প্রয়োজনে আজও অভিনয় করে চলেন লোকটি। শুধুমাত্র 'দ্য ম্যাট্রিক্স' মুভির আয় থেকেই, সাড়ে সাত কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন কিনু, বিভিন্ন হাসপাতালে, এবং অন্যান্য চ্যারিটিতে, মানুষের জন্য।

বডিগার্ড? নেই। বিলাসবহুল একটি বাড়ি? না, নেই। নিউইয়র্ক শহরের রাস্তায়, সাবওয়েতে, গণপরিবহনে, আজও আপনি দেখতে পাবেন, দুনিয়ার দুর্ধর্ষ এক চলচ্চিত্র অভিনেতাকে, মিলিয়োনিয়ার, তীব্র প্রতিভাধর, ঝুলছেন গাড়ির ভিতরে দাঁড়িয়ে, হাঁটছেন ফুটপাত ধরে, পৃথিবীর মানুষকে দেখছেন তিনি, দেখছেন মানুষের বিচিত্র জীবনগুলোকে, অবাক দৃষ্টিতে, জলভরা চোখে। হ্যাঁ, তিনি কিনু রিভস। ইচ্ছে করলেই যিনি জগতের সবচেয়ে দামী প্লেনটি কিনে পৃথিবী ঘুরতে পারেন।

২০১০ সাল। কিনু'র জন্মদিন। ফুটপাত ধরে হাঁটতে-হাঁটতে, একটি ছোট্ট বেকারির সামনে এসে, ঢুকে পড়লেন তিনি। কিনলেন ছোট্ট একটি পেস্ট্রি-বান, এবং একটি মোমবাতি। মোমবাতিটি বানের উপরে বসিয়ে, বেকারি থেকে বেরিয়ে, সামনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি নিয়ে খেলেন। এবং, তাঁকে চিনতে পেরে যে-ই দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো করমর্দনের কিংবা সামান্য হাই-হ্যালোর ইচ্ছেয়, প্রত্যেককেই এক কাপ করে কফি পানের অনুরোধ করলেন তিনি। অথচ, সেদিন দুনিয়ার সব মিডিয়া জুড়ে তাঁর জন্মদিন পালিত হচ্ছে হইহল্লায়, তাঁর ঘরে গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়। তিনি নেই। ফুটপাত ধরে হাঁটছেন, মানুষের বুকের ধার ঘেঁষে।

১৯৯৭ সালের এক সকালে, লস এঞ্জেলেসের একজন ফটোসাংবাদিক একটি আকস্মিক ছবি তুলে হইচই ফেলে দিয়েছিলো— দুনিয়া-কাঁপানো অভিনেতা কিনু রিভস মাফলারে মুখটি ঢেকে রেখে একজন গৃহহীন লোকের পাশে বসে খাচ্ছেনদাচ্ছেন, গল্প করছেন, হাসিঠাট্টায় মেতে রয়েছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে!

মাঝেমাঝে, খুব ভাগ্যবান হোন যদি, আপনি সেইসব মানুষের সাক্ষাৎ পাবেন, যাঁরা বুকের ভিতরে তীব্র ভাঙন নিয়ে বেঁচে আছেন, এবং বেঁচে আছেন দুনিয়ার অন্য কাউকেই অমন ভাঙনের মুখে পড়তে না-দেওয়ার তীব্র বাসনায়। তাঁরা ভাঙাচোরা মানুষ, তাঁরা মানুষের জন্য ছুটতে থাকা মানুষ।

কিনু চার্লস রিভস। এই ভদ্রলোক পৃথিবীর যে-কোনোকিছুই কেনার ক্ষমতা রাখেন; কিন্তু, প্রতি ভোরে ঘুম থেকে জেগে, তিনি একমাত্র তা-ই ছুঁতে ছোটেন, যা, কেনা যায় না।

লেখা -Salah Uddin Ahmed Jewel

জীবনানন্দ শুধু একজন কবি নয় তার কবিতার ভিতরে রয়েছে গভীর দর্শনবোধ। আমার বরাবরই মনে হয়েছে  একজন নিহিলিস্ট। Nihilism হলো এমন...
10/11/2024

জীবনানন্দ শুধু একজন কবি নয় তার কবিতার ভিতরে রয়েছে গভীর দর্শনবোধ। আমার বরাবরই মনে হয়েছে একজন নিহিলিস্ট।

Nihilism হলো এমন এক দর্শন যেখানে মনে করা হয় এই জীবনের কোন অর্থ নেই, সিসিফাসের পাহাড়ে পাথর তোলার মতো অর্থহীন জীবনে আমরা দায়িত্বের অদৃশ্য পাথর বয়ে বেড়াচ্ছি। নিহিলিজমের দ্বিতীয় কথা হলো জীবন দুঃখময় তো এই অর্থহীন, দুঃখময়, অনাকাঙ্ক্ষিত জীবন নিয়ে কবি কী বললেন!

'জানি তবু জানি
নারীর হৃদয়,প্রেম,শিশু,গৃহ নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে

ক্লান্ত— ক্লান্ত করে;
লাসকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই"

আমাদের জীবনে অর্থ,সম্মান,প্রেম সবকিছু পেলেও তা কী অর্থপূর্ণ? এসব কিছু পাওয়ার পরও কী মন আবার নতুন কিছু পাওয়ার জন্য উতলা হয় না? এই অর্থহীনতার চক্র জীবনবাবু উপলব্ধিকৃত বিপন্ন বিষ্ময় যা আমাদের ক্লান্ত করে, এই ক্লান্তি থেকে মুক্তির উপায় মৃত্যু ছাড়া আর কী।

"মৃত্যুর আগে চেয়েছি কয়েকটা দিন
বাঁচিবার জন্যে;
শান্তির জন্যে নয়, শুধু কয়েকটা দিন!
আবার সেই অনন্ত শূন্যতায় ফিরে যাব।"

আমরা অনন্ত শূন্যতা থেকে আসি আবার অনন্তকালের জন্য সেই অনন্ত শূন্যতায় ফিরে যেতে হয়। তাহলে সাময়িক সময়ের জন্য এই জীবন নামক দুঃখ কেন?

'ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন'

প্রতিদিনের একই কাজ; অর্থ, সম্মান অর্জনের সংগ্রাম, পারিবারিক কলহ,মানসিক যন্ত্রণা,খাওয়া-দাওয়া,যৌনতা এসবে আমাদের প্রাণ ক্লান্ত হয়ে যায়, মনের মৃত্যু ঘটে। কবির ভাষায়

'শরীর রয়েছে তবু মরে গেছে আমাদের মন
হেমন্ত আসেনি মাঠে হলুদ পাতায় ভরে হৃদয়ের বন।'

এবং পরিশেষে নিহিলিজমকে (শূন্যবাদ) এই কয় লাইনের মধ্যে আটকে ফেললেন তিনি।

"সব কাজ তুচ্ছ হয়—পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা—প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।"

তো জীবনানন্দ স্বীকার করে নিচ্ছেন এই অর্থহীনতাকে এবং এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পরম শান্তিদাতা মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন যে ভালবাসতে ভালোবাসতে ক্লান্ত যে প্রাণ সে এবার মৃত্যুকে ভালোবাসুক।

'সব ভালোবাসা যার বোঝা হলো
দেখুক সে মৃত্যু ভালোবেসে'

ফ্রান্ৎস কাফকা কখনো বিয়ে করেননি এবং তাঁর কোনো সন্তানাদিও ছিল না। তাঁর বয়স যখন ৪০, তখন একদিন তিনি বার্লিনের পার্কে হাঁটছি...
01/11/2024

ফ্রান্ৎস কাফকা কখনো বিয়ে করেননি এবং তাঁর কোনো সন্তানাদিও ছিল না। তাঁর বয়স যখন ৪০, তখন একদিন তিনি বার্লিনের পার্কে হাঁটছিলেন। এমন সময় তিনি একটি ছোট্ট মেয়েকে দেখলেন যে তার প্রিয় পুতুলটি হারিয়ে কাঁদছিল। সেই মেয়েটি এবং কাফকা, দু’জনে মিলে খুব খুঁজলেন হারিয়ে যাওয়া পুতুলটিকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না তা।
কাফকা মেয়েটিকে পরের দিন আবার সেখানে আসতে বললেন। উদ্দেশ্য, আবার তাঁরা দু’জনে মিলে হারিয়ে যাওয়া পুতুলটি খুঁজবেন সেখানে।
কিন্তু পরের দিনও পুতুলটিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন কাফকা ছোট্ট মেয়েটিকে একটি চিঠি দিলেন। আর বললেন, ‘এই চিঠিটি তোমার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের লেখা’। সে চিঠিতে লেখা ছিল, ‘দয়া করে তুমি কেঁদো না। আমি পৃথিবী দেখতে বেরিয়েছি। আমি আমার রোমাঞ্চকর ভ্রমণকাহিনী তোমাকে নিয়মিত লিখে জানাব।’
এভাবেই শুরু হয়েছিল একটি গল্পের, যা চলেছিল কাফকার মৃত্যু পর্যন্ত।
ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে কাফকার নিয়মিত দেখা হতো। আর যখনই দেখা হতো তখনই কাফকা একটি চিঠি দিতেন মেয়েটিকে, বলতেন সেই একই কথা, ‘চিঠিটি তার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের লেখা’, এবং পড়ে শোনাতেন তার প্রিয় পুতুলের বিশ্ব-ভ্রমণের রোমাঞ্চকর সব বর্ণনা খুব যত্নের সাথে, যে বর্ণনাগুলো মেয়েটিকে ভীষণ আনন্দ দিত।
এর কিছুদিন পর একদিন কাফকা একটি পুতুল কিনলেন এবং মেয়েটিকে দিলেন। বললেন, ‘এই নাও, তোমার হারিয়ে যাওয়া সেই পুতুল।’
মেয়েটি বললো, ‘এই পুতুলটি মোটেও আমার হারিয়ে যাওয়া পুতুলের মতো দেখতে নয়।’
কাফকা তখন মেয়েটিকে আরও একটা চিঠি দিলেন যেটাতে তার প্রিয় পুতুলটি তাকে লিখেছে, ‘ভ্রমণ করতে করতে আমি অনেক পাল্টে গিয়েছি।’
ছোট্ট মেয়েটি তখন নতুন পুতুলটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল এবং অপার আনন্দে ভাসল।
এর এক বছর বাদে কাফকা মারা যান।
বহু বছর বাদে, সেই ছোট্ট মেয়েটি যখন অনেক বড় হয়ে গেছে, তখন সে সেই পুতুলটির ভিতরে একটি ছোট্ট চিঠি পায়। কাফকার সই করা ছোট্ট সে চিঠিটিতে লেখা ছিল, ‘Everything you love will probably be lost, but in the end, love will return in another way . ’ .........

ফ্রান্ৎস কাফকা ছিলেন একজন জার্মান ভাষার উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক। স্বল্পায়ু নিয়ে জন্মানো এই লেখক সম্বন্ধে এই লেখাটি আজ ইন্টারনেটে পড়লাম। পড়ার পর আচ্ছন্ন হয়ে রইলাম অনেকটাক্ষণ। তারপর ভাবানুবাদ করলাম যারা এখনও গল্পটি পড়েননি তাদের জন্য।

পৃথিবীর সবচেয়ে শাদা পূর্ণিমা হয় শরৎকালে। রূপালী আলো দেখতে আসে চন্দ্রাহত ইলিশ জুটি। সেই আলো মেখেই তাদের শরীর এত ঝলমলে হয়।...
24/09/2024

পৃথিবীর সবচেয়ে শাদা পূর্ণিমা হয় শরৎকালে। রূপালী আলো দেখতে আসে চন্দ্রাহত ইলিশ জুটি। সেই আলো মেখেই তাদের শরীর এত ঝলমলে হয়। চাঁদ উঠলেই তাই জেলেদের মুখেও রূপালী হাসি ফোটে। ইলিশ বিয়ানো জোছনায় তারা জাল ছড়ায় সাগরে।

হারভেস্ট মুন বা ফসল তোলার চাঁদ— শারদ শশীকে এসব নামেই বেশি চেনে মানুষ। অন্য সব পূর্ণ চন্দ্রের সাথে এর বেশ পার্থক্য আছে। এই চাঁদ উত্তর গোলার্ধের মানুষকে বলে— ‘শীত আসছে। কন্যাকে ছেড়ে তুলায় সংক্রমিত হচ্ছেন সূর্য। রাত বড় হচ্ছে। গ্রীষ্মের ফসল ঘরে তোলো। শীতের সঞ্চয় করো। লেপ–কাঁথা রোদে দাও।’

একটা কাঁচা ডিমকে মসৃণ তলের ওপর সোজা দাঁড় করাতে পারলে সৌভাগ্য লাভ হয়। বছরে দুই বার ডিম দাঁড় করানোর খেলা হয় চীনে। দ্বিতীয়বার, শরৎকালে। চীনা চান্দ্র পঞ্জিকার ষোড়শ সৌরপদ— ‘ছিউফেন’। ডিম দাঁড় করানোর উত্তম সময়। জলবিষুবের প্রথম দিনে দক্ষিণ চীনের মানুষ দল বেঁধে ছিউছাই ফুল তুলতে যান। মাছের সঙ্গে ফুল মিশিয়ে হয় ‘ছিউথাং’ স্যুপ। খেলে যকৃৎ ও অন্ত্র ভালো থাকে। ক্রিসেনন্থিমাম বা চন্দ্রমল্লিকাও ফোটে এই সময়ে।

পৃথিবীর মাঝ বরাবর কল্পিত বিষুব রেখাটি একে উত্তর ও দক্ষিণ দুই গোলার্ধে ভাগ করেছে। আমরা উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দা। বছরে দুইবার সূর্যের আলো একদম লম্বভাবে এই বিষুবরেখার দুটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়লে দিন রাত সমান হয়। একবার উত্তরায়ণে, যখন সূর্য নিজ কক্ষপথে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। উত্তর গোলার্ধে তখন বসন্তকাল, তারপর দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে, গরমকাল আসন্ন, নতুন বছর শুরু হয় নানান জাতির। সেটা বসন্ত বিষুব বা মহাবিষুব। আরেকবার দক্ষিণায়নে, যখন সূর্য তুলা রাশিতে সংক্রমিত হয়। উত্তর গোলার্ধে তখন শরৎকাল, দিন ছোট হবে ক্রমশ, শীতকাল আসন্ন। এর নাম জলবিষুব বা শারদ বিষুব (অটাম ইকুয়েনক্স)।

সূর্যের আলো লম্বভাবে পড়াকে বলা হয় সৌরপদ। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই সৌরপদ অনুসারে নিজেদের জীবনযাপন ও কৃষিকাজ করছে, খাবার ও পোশাকে পরিবর্তন আনছে। সূর্যের আলো অনুসারে এটাই সহাবস্থানের শিক্ষা। আলোর এই হিসাবই পৃথিবীর সকল সমাজের লোকজ, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠানের ভিত্তি।

চীনা দর্শনে বলা হয়, বিশ্বে দুই ধরনের শক্তি বিরাজ করে। ইন— নেতিবাচক ও নিষ্ক্রিয় এবং ইয়াং— ইতিবাচক ও সক্রিয়। প্রাচীন গ্রন্থ— The Detailed Records of the Spring and Autumn Period বলছে— জলবিষুবে ‘ইন’ ও ‘ইয়াং’ এর ভারসাম্য বিরাজ করে। দিন ও রাত সমান হয়, শীত ও গরম থাকে সমান। জাপানী ও চীনারা জানেন— ঠিক এই সময় কাঁকড়া খেতে সবচেয়ে মজা। হয়তো কাঁকড়ারাও জানে এটাই ধরা দেওয়ার সময়।

সেই বছর একে একে দশটা সূর্য উঠেছিল। রোদে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছিল মানুষ আর মাঠের ফসল। তখন হৌয়ি— বিখ্যাত তীরন্দাজ, তীরের আঘাতে নয়টা সূর্য ডুবিয়ে দেয়। গ্রামের লোক প্রাণে বেঁচে তাকেই রাজা ঘোষণা করে। সবাই তাকে ত্রাণকর্তা ভাবত। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে হৌয়ি। মানুষের আনুগত্য তাকে জুলুমবাজ করে তোলে। এর মধ্যে আবার গ্রামদেবীকে সন্তুষ্ট করে অমৃত বর পায় সে। রাজা হৌয়ির বউ চাঙয়ি, খবর পেয়ে ভাবে— এখনই এত অত্যাচার করছে অমরত্ব পেলে না জানি কী করবে। তাই সে চুরি করে অমৃত খেয়ে ফেলে। এই খবর পেয়ে হৌয়ি তাড়া করে তাকে। তীর ছোঁড়ার সাথে সাথেই চাঙয়ি আকাশে উড়ে চলে যায় চাঁদের খরগোশের কাছে। ধবধবে সাদা ওই খরগোশ যখন লেজ–কান গুটিয়ে ঘুমায় তখনই গোল সাদা পূর্ণিমা দেখা যায় পৃথিবী থেকে।

এক সময় গ্রামের লোক জানতে পারে তাদেরকে বাঁচানোর জন্যই চাঙয়িকে চাঁদে চলে যেতে হয়েছে। তাই প্রতি শরতে যখন সবচেয়ে শাদা পূর্ণিমা হয় তারা চেঙয়ির জন্য গোল মুনকেক উৎসর্গ করে। খায় আর আনন্দ করে। বাংলা ভাষায় চাঁদের আরেক নাম শশধর। শশ মানে খরগোশ। চাঁদের খরগোশ আর দেবী চাঙয়ির জন্য সেই চৌ রাজবংশ আমল থেকে মুনকেক উৎসর্গ করার প্রথা চলে আসছে।

এখন থেকে ইরান, আফগানিস্তানে শুরু হবে আনারের চাষ। ইরানী ভাষায় মেহের শব্দের অর্থ তুলা। মেহেরগান— তুলা রাশিতে সূর্য সংক্রমণের উৎসব। প্রাচীন পারস্যে মেহেরগান বা জশন-ই-মেহর শুধু ফসল কাটার নয় বরং রাজকর আদায়েরও সময়। পারস্য সাম্রাজ্যের প্রজারা রাজার জন্য উপহার নিয়ে আসত এই সময়। রেওয়াজ ছিল যদি দাতার পরবর্তীকালে অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে রাজকোষাগার উপহারের দ্বিগুণ ফেরত দেবে। মেহেরগানের সময় রাজা একটি পশমের পোশাক পরতেন এবং তার গ্রীষ্মের পোশাক দান করে দিতেন। সাসানিয়ান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ছিল এই জশন-ই-মেহর। জলবিষুবের সময় ইয়াজাতাদের (উপাস্য) মধ্যে মিথ্রাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। তিনিই শক্তির সঙ্গে সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটান।

মহাবিষুব আর জলবিষুবের দিন দুপুরবেলা মায়ান পিরামিডের ওপর সূর্যের আলোতে তৈরি হয় ছায়ার লেজ। সারা বছর কেবল মাথা নিয়ে বসে থাকা কুকুলকান মূর্তি পেছনের সিঁড়িতে খাঁজকাটা সর্পিল শরীর ফিরে পায়। বছরে মাত্র দু বার। কাঠপাহাতরু— দৈব্য গাছ। তামিল ভাষায় তালগাছের এই নাম। এই দৈব্য ফলও পাকে শরৎকালে। ভাদ্র মাসে খাওয়া চাই তাল। নইলে পরে জুটবে নাকো অন্ন-নুন–ডাল।

শরৎকালেই তাঁতীরা পালন করেন বিশকরম ব্রত আর ভারতবর্ষে হয় বিশ্বকর্মা পূজা। দিন ছোট হয়েছে। আলো কম তাই কৃষিরও গতি কমেছে। হাতের কাজ, কারিগরি আর কুটির শিল্পের সবচেয়ে ভালো সময় এখন। সময়ের শুরুতেই তাই কারিগরের দেবতা বিশ্বকর্মার পূজা করে নিতে হয়। সাতক্ষীরায় শরৎকালে হয় গুড়পুকুরের মেলা। তাতে বিধবা নারীরা বেহুলার গান করে প্রণামি নেন। বরিশাল-কুয়াকাটা-খুলনা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে চলে মনসা বন্দনা। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার জেলেরা এ দিন কবিগান করেন। তার নাম পাল্টামনসা। টাঙ্গাইল-জামালপুরে হয় ওঝাদের ভাসান গান। সিলেট-মৌলভীবাজার-রাঙামাটি-বান্দরবানের চা বাগানে চলে বিষহরি বন্দনা।

মহিষের শিঙের বাঁশিতে আচ্ছিক মান্দি আর মান্দিরা মেঘালয় থেকে মধুপুর অবধি জুড়ে যায় শারদ বিষুবে। গ্রীষ্মের ফসল তোলার পর ‘মিশি শালজঙ’ কে কৃতজ্ঞতা জানাতে তিন দিনের ওয়ান্না বা ওয়ানগালা পালন করে গারো আদিবাসীরা। ওঁরাও, সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, কড়া—এসব আদিবাসীদের গ্রামে এখন চলছে ভাদুই আর কারাম ব্রত। প্রবীণ কারাম বৃক্ষকে সাক্ষী রেখে সহস্র বছরের বিবর্তনশীল সামাজিক জ্ঞানধারা মাদলের বাদ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ছে।

শরৎকালে আউশ ধান কাটতে কিষাণিরা গান আউশের জারি। ওপারে হাজারদুয়ারী প্রাসাদের সামনে তোপখানা থেকে কামানদাগা মাত্রই দড়ি কাটে। বাঁশ ও কলাগাছের ভেলা চলতে থাকে হেলেদুলে। মুর্শিদাবাদের লালবাগ থেকে মহীনগর পর্যন্ত ভাগীরথী আর গঙ্গার তীর আলোকময় হয়ে ওঠে খিজিরের নামে। এপারে চাঁদপুরের বেলতলি, ঢাকার মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া, মানিকগঞ্জ আর আড়িয়াল বিলের মানুষও পানির পীর খোয়াজ খিজিরের বেড়া ভাসান। শীত জুড়ে যেন ঠিকঠাক পানি পাওয়া যায়।

বেহুলার ভেলা কিংবা খিজিরের বেড়া— দুইই যেন কোনো ধারাবিনাশী বাঁধে না আটকে ঠিকঠাক পৌঁছে যায় অন্যলোকে। বর্ষার বানে আমাদের নদীরা যেন ততখানি মুক্তধারা হয়। এই তো চাওয়া শরতের।

আশ্বিনে রান্দে কার্তিকে খায়।

যে বর মাগে সেই বর পায়।

গাসসি, গাড়ু সংক্রান্তি বা গারু হারকাইন। আশ্বিন মাসের শেষদিন ভাত-তরকারি রান্না করে রেখে দেয়া হয়। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাটা নিমপাতা-হলুদ-গিলা-মেথি-মেহেদি শরীরে মেখে গোসল করা হয়। ভেজা গায়ে উঠানে বসে বেতের ডাটি, পেরেক, কাচা হলুদে কামড় দিতে হয়। বাসি ভাত-তরকারি খাওয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় আচার। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর চারিদিকে চর্মরোগ ও পেটের রোগের উপদ্রব দেখা দেয়। সমাজের সকলে মিলে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক উপাদান গ্রহণের আচারই হয়ে উঠেছে গাসসি উৎসব।

পানিতে গেরস্তের উনুনও ডুবে ছিল হয়তো। তাই শুক্লা পঞ্চমীতে উনুনকে ঘিরে চলে মঙ্গলকামনা। উনুনের ভেতর ধানগাছ ও কচু রেখে, সিঁদুরের তিনটি ফোঁটা দেওয়া হয়। আলপনা দিয়ে সাজানো হয় পাকঘর। আগের দিনে সেরে নেওয়া হয় সমস্ত রান্নাবান্না। পরদিন বাড়ির নারীরা সেসব ধান-কচুগাছ তুলে পুকুরে বিসর্জন দিয়ে শেষ করেন আখা পালনী ব্রত।

ভাদ্র মাসে কম করে ১৫ দিন স্বামীদের মুখ দেখবে না স্ত্রী। তাতে অমঙ্গল। আবার এ মাসে মামীর হাতে ভাত খেলে বাকি মাস ভালো থাকা যায়। এই ভাদর কাটানী করতে তাই ছেলেমেয়ে নিয়ে গৌরিরা চলেন নাইওরে। পকেটে তখন সদ্য পাট বেচা, আখ বেচা টাকা, শীতের বীজ বুনতেও ঢের বাকী। মায়ের বাড়ি যাওয়ার এর চেয়ে ভালো সময় আর কী!

শরৎকালে বঙ্গদেশে জলবিষুব পালন হয় নবপত্রিকার পূজা দিয়ে। বর্ষার জল থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো নতুন পাতাদের এই মহা পূজায় এসে একদিন মিলে গেলেন বসন্ত বিষুবের এক দেবী। শারদ বিষুবের দিন বাসন্তী বিষুবের দেবী মাহাত্ম্য উচ্চারণে তার নাম হলো অকাল বোধন। অ–রণ্যে প্রবেশ করল কৃষি সমাজ। সে গল্প অন্যদিন।

সকলকে শুভ শারদীয়া..

লেখক ও গবেষক : নুসরাত জাহান।

লন্ডন শহর থেকে ট্রেন দিয়ে দেড় ঘন্টা দূরে গেলেই পাওয়া যাবে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটি ছোট শহর যার নাম Cotswolds. চারদিকে...
19/09/2024

লন্ডন শহর থেকে ট্রেন দিয়ে দেড় ঘন্টা দূরে গেলেই পাওয়া যাবে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটি ছোট শহর যার নাম Cotswolds. চারদিকে সবুজ ঘাস, ফুল আর ছোট ছোট হিল আর পাহড়ে সাজানো গুছানো। 💛

📸 Destination Cotswolds

16/05/2024
Ahhh Vacation!
10/05/2024

Ahhh Vacation!

In a hole in the ground there lived a hobbit.
04/05/2024

In a hole in the ground there lived a hobbit.

Romanticize a quiet life.
03/05/2024

Romanticize a quiet life.

আমি আমার জন্য ঠিক এমনই একটা বাড়ি চাই...
02/05/2024

আমি আমার জন্য ঠিক এমনই একটা বাড়ি চাই...

Address

Road/7, Block/C, Mirpur/12, Dhaka/
Dhaka
1216

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when HouSe CollaPus posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to HouSe CollaPus:

Share