31/05/2025
১. পথশিশু কারা?
পথশিশু বলতে সেইসব শিশুদের বোঝানো হয়, যারা রাস্তায় বসবাস করে বা কাজ করে এবং যাদের অধিকাংশেরই নেই স্থায়ী ঠিকানা, পরিবারের সহায়তা বা শিক্ষার সুযোগ। তারা সাধারণত বস্তি, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, মার্কেট এলাকা বা ফুটপাতে সময় কাটায়। দারিদ্র্য, পরিবার ভাঙন, নির্যাতন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব শিশুর পথশিশু হয়ে ওঠার প্রধান কারণ।
২. শিক্ষা লাভে প্রধান বাধাসমূহ
অর্থনৈতিক সমস্যা: অধিকাংশ পথশিশু নিজের খরচ নিজেই চালাতে বাধ্য হয়।
স্থায়ী ঠিকানা ও পরিচয়ের অভাব: ফলে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সমস্যা হয়।
খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাহীনতা: মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দিতে পারে না।
সামাজিক অবহেলা ও আত্মসম্মানবোধের অভাব: বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে একীভূত হতে দ্বিধা থাকে।
৩. শিক্ষা প্রদানের কার্যকর পদ্ধতি
ক. বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন
অলাভজনক সংস্থা, সরকার ও সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক খোলা স্কুল বা "ব্রিজ স্কুল" চালু করা যেতে পারে।
এই স্কুলগুলোতে সময় নমনীয় ও বাস্তবমুখী পাঠদান হওয়া উচিত।
খ. চলমান/ভ্রাম্যমাণ স্কুল
ভ্যানে বা বাসে তৈরি মোবাইল স্কুল রাস্তায় ঘুরে ঘুরে শিশুদের পড়ায়। এটি অনেক দেশে কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে (যেমন: ভারত ও ব্রাজিলে)।
গ. প্রণোদনার ব্যবস্থা
খাবার, জামাকাপড়, খেলনা কিংবা চিকিৎসাসেবা দিয়ে শিশুদের স্কুলমুখী করা যেতে পারে।
শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে হালকা কাজের সুযোগ দিলে শিশুরা আগ্রহী হয়।
ঘ. শিক্ষক ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ
পথশিশুদের মনস্তত্ত্ব বোঝে এমন সহানুভূতিশীল ও ধৈর্যশীল শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।
ঙ. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
সমাজে পথশিশুদের অধিকার, গুরুত্ব এবং তাদের জন্য দায়িত্ববোধ তৈরির জন্য গণসচেতনতা কর্মসূচি চালানো দরকার।
৪. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশে কিছু এনজিও যেমন বিদ্যানন্দ, আপন, ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (FED) ইত্যাদি পথশিশুদের জন্য বিকল্প শিক্ষা কেন্দ্র চালু করেছে। তবে সরকারের অংশগ্রহণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।