মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ

মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চার প্রতি মমত্ত্ববোধ ও আগ্রহ।

https://youtube.com/channel/UC-dkQrLuNq3F1IXJ7zsySgw

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি র*ণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভ...
03/09/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি র*ণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যু*দ্ধ করেছেন নারী মুক্তিযোদ্ধারাও। নারী মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে র*সদ, গো*লাবা*রুদ, অ*স্ত্র পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। আবার অ*স্ত্র হাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হয়েছেন সম্মুখ সম*রেও। তেমনই এক দু*র্ধর্ষ, দুঃসাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল। যিনি একজন নারী হয়েও যু*দ্ধ করেছিলেন পুরুষের বেশে।

শিরিন বানুর জন্ম ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনায়। তার মা সেলিনা বানু ছিলেন পাবনা জেলার ন্যাপের সভাপতি এবং পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য। বাবা খন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ছিলেন পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত। তার মামারা ছিলেন গান্ধীর অসহযোগ আ*ন্দোলনের কর্মী। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া শিরিন বানু মিতিলের রাজনীতিতে যোগদান ছোটবেলাতেই। তার মা তাঁকে নীহার কুমার সরকারের ‘ছোটদের রাজনীতি’ ও ‘ছোটদের অর্থনীতি’ পড়তে দিয়েছিলেন। যদিও তখন ওই বই পড়া নি*ষিদ্ধ ছিল।
১৯৬৯ সালে গণআ*ন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন শিরিন বানু মিতিল। পাবনা এবং কুমিল্লা, দুই জায়গাতেই কাজ করতেন তিনি। পারিবারিক কারণেই তাকে এই দুই জায়গায় যাতায়াত করতে হতো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শিরিন বানু মিতিল ছিলেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। একইসঙ্গে ছিলেন পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী।

২৫ মার্চ রাতে পাবনাতেও হাম*লা করেছিল পাকিস্তানী হা*না*দার। ২৭ মার্চ রাতে পাবনা পুলিশ লাইনের যু*দ্ধ শুরু হয়৷ সেই যু*দ্ধ রূপ নেয় জনযু*দ্ধে৷ ঘরে ঘরে মেয়েরাও যু*দ্ধে নামার কথা ভাবতে শুরু করে৷ তাদের অ*স্ত্র ছিল গরম পানি, অ্যাসি*ড বা*ল্ব, ব*টি আর দা*৷

২৮ মার্চ পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে হা*নাদারের সঙ্গে তুমুল যু*দ্ধে অংশ নিয়েছিলেন শিরিন বানু মিতিল। এই যু*দ্ধে মিতিলই একমাত্র নারী ছিলেন। এই যু*দ্ধে ৩৬ হা*না*দার সেনার সবাই নিহ*ত হয়েছিল। শহীদ হয়েছিলেন দুই মুক্তিযোদ্ধা। শিরিন বানু মিতিলের মতো সংগ্রামী মেয়েদের মানসিকতা ছিল ‘মে*রে ম*রবো’।

মিতিলের দুই চাচাতো ভাই জিন্দান ও জাহিদ হাসান জিঞ্জির যু*দ্ধের ময়দানে রওনা হয় তাদের মায়ের নির্দেশে৷ এই মা তার ছেলেদের বলতেন, ‘তোমাদের কী মানুষ করেছি ঘরে থেকে অসহায়ভাবে ম*রার জন্য? ম*রতে হলে যু*দ্ধ করতে করতে ম*রো৷’

একদিন তার চাচাতো ভাই জিঞ্জির এসে বললেন, প্রীতিলতা তো প্যান্ট শার্ট পরতো তুই তো পরতে পারিস। তখন তিনি তার ভাইদের প্যান্ট, শার্ট ও জুতা নিলেন। তার চুল আগে থেকে ছাঁটা ছিল ছেলেদের মতো। সুতরাং তাকে দেখে অচেনা কেউ ছেলে হিসেবেই ভেবে নিত।

চাচাতো ভাই জিঞ্জিরের কাছ থেকে মাত্র আধা ঘণ্টায় থ্রি* ন*ট থ্রি* চালনা শিখে ফেললেন শিরিন বানু মিতিল। একজন নারী হয়ে সে সময়কার সমাজে সম্মুখ যু*দ্ধে যাওয়া ছিল ভীষণ দুঃসা*হসিক কাজ। তাই শিরিন বানু মিতিল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি পুরুষের পোশাক পরে পুরুষ বেশে যু*দ্ধে যোগ দেবেন। যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে।

৩১ মার্চ পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি কন্ট্রোল রুম বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাবনার নগরবাড়ি ঘাটের কাছে এক ভ*য়াবহ যু*দ্ধ হয়। সে সময় কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয় শিরিন বানু মিতিলকে। এছাড়া নগরবাড়ী ঘাট, আতাইকুলা ও কাশীনাথপুরের যু*দ্ধে দো*র্দণ্ড প্রতাপে যু*দ্ধ করেছিলেন শিরিন বানু মিতিল। পাকিস্তানি হা*না*দার বা*হিনীর আক্র*মণ শুরু হয় আকাশপথে৷ পাবনার পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায় তখন প্রতিরোধ প্রায় ভেঙে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা তখন চুয়াডাঙ্গার দিকে চলে যাচ্ছেন।
পাবনার ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইকবালের দল একটি গাড়িতে করে কুষ্টিয়া হয়ে চুয়াডাঙ্গার দিকে রওনা হয়৷ গাড়িতে জায়গা না হওয়ায় মিতিল ও তার এক ভাই থেকে যান কুষ্টিয়ায়৷ পরে কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাদের। কিছুদিন পর ভারতের দ্যা স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক মানস ঘোষ মিতিলের ছবিসহ সাক্ষাৎকার ছেপেছিলেন৷ ফলে পুরুষ সেজে আর যু*দ্ধ করার আর সুযোগ পাননি মিতিল৷
একদিনের ঘটনা আজীবন নাড়া দিত মিতিলকে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যখন কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিলাম৷ তখন একদিন গভীর রাতে আমাদের দলটিকে পথের মাঝে আটকানো হয়৷ মূলত ওই অঞ্চলে পাকস্তানি সে*নাদের প্রতিরোধ করতেই সতর্কতামূলক পাহারায় যারা ছিল তারা আমাদের পরিচয় জানতে চায়৷ আমরা পরিচয় দিলেও তারা প্রথমে সেটা বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না৷ কারণ আমাদের সঙ্গে যিনি আরআই ছিলেন তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের৷ ফলে তার ভাষার টান ছিল বি*হারিদের মতো৷ তাই আমরা যে সত্যি মুক্তিযোদ্ধা তার প্রমাণ চাইল৷ তখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমাদের একজন বলতে বাধ্য হলো যে, ‘আপনারা কি আকাশবাণীতে শিরিন বানুর কথা শুনেছেন?’ তারা বলল যে, ‘হ্যাঁ, আমরা তাঁর কথা শুনেছি৷’
‘তখন বলা হলো, আমাদের সঙ্গে সেই শিরিন বানু আছে৷ সেই সময় আমি খুব সন্দিহান ছিলাম যে, এতো বড় দলের ভেতরে ছদ্মবেশে একজন মেয়ে আছে, এটাকে তারা হয়তো অন্যভাবে দেখবে৷ কিন্তু, আমার পরিচয় জানার পরেই দেখা গেল, তারা সবাই আমাকে ঘিরে ধরল৷ তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ পিতা আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘মা আমরা আর ভয় করি না৷ আমাদের মেয়েরা যখন আমাদের সঙ্গে অ*স্ত্র হাতে যু*দ্ধ করে তখন বিজয় আমাদের হবেই৷’ তার কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম এবং তখন মনে হয়েছিল, সারাদেশের মানুষ কীভাবে স্বাধীনতার জন্য উদ্দীপনা ও উৎসাহ নিয়ে পরস্পরের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে৷’
মানস ঘোষ এক জায়গায় লিখেছিলেন, ‘শিরিনকে আমার অসামান্য লেগেছিল। আমি যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহীর বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের খবর যোগাড় করতে গিয়ে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি। কিন্তু কোনো তরুণী আমার নজরে পড়েনি। আমি রোজ অফিসের গাড়ি করে দর্শনা হয়ে চুয়াডাঙ্গা যেতাম। চুয়াডাঙ্গা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পশ্চিমাঞ্চলের সদর দপ্তর। কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী ছিলেন ওই অঞ্চলের প্রধান। একদিন সেখানে গিয়ে দেখা হলো পাবনার ডিসি বা ডেপুটি কমিশনার নুরুল কাদের খানের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় তিনি অ*স্ত্রশ*স্ত্র গো*লাবা*রুদ নিতে এসেছেন। কেন না পাকস্তানি বা*হিনী পাল্টা আ*ক্রমণের ছক কষে পাবনা পুনর্দখল করতে চাইছে।... অতঃপর একটা প্রায় অকেজো বা*ষ্পচালিত ইঞ্জিন যোগাড় করে তার সঙ্গে দুটি রেলের বগি জুড়ে স্তূপীকৃত অ*স্ত্রশ*স্ত্র নিয়ে ঈশ্বরদীর পথে পাড়ি জমালাম। সে ছিল রু*দ্ধশ্বাস পরিক্রমা বা অভিজ্ঞতা। ভোর পাঁচটায় ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছে দেখি প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা। তখনই আমার চোখে পড়ে শিরিনের ওপর। শারীরিকভাবে রফিকুল ইসলাম বকুল বা ইকবালের মতো বলিষ্ঠ মুক্তি সে নয়। বরং সে খুব শীর্ণ ও লাজুক প্রকৃতির। আমার কাছে এসে বলল, ‘নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত।’ আমার হাত থেকে প্রায় জোর করে এয়ার ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে সে জিজ্ঞাসা করল, ‘দামী কিছুই নেই তো?’ উত্তর দেয়ার আগেই সে বলে ওঠে, ‘যুদ্ধের খবর করতে এত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পাবনায় এসেছেন। আমাদের মেহমানদারি করতে দিন।’

এর কিছুদিনের মধ্যেই দীর্ঘ প্রশিক্ষণের জন্য ভারত চলে যান শিরিন বানু মিতিল। এসময়ে শিরিন বানু মিতিল নাচোল বি*দ্রো*হের জননী ইলা মিত্রের বাসায় ছিলেন কিছুদিন৷ প্রথমে কয়েকজন নারী বিভিন্ন আশ্রয় শি*বিরে ঘুরে ঘুরে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল গঠন শুরু করেন৷ পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে যোগ দিলে মোট ৩৬ জন নারী নিয়ে ভারতের গোবরা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়৷ এক পর্যায়ে সদস্য ছিল ২৪০ জনের বেশি।

অ*স্ত্রের অভাব থাকায় নারীদের গ্রুপের হাতে অ*স্ত্র সরবরাহ করা সম্ভব ছিল না৷ তাই প্রথম দলের একটি অংশ আগরতলায় যায় মেডিকেল কোরের সদস্য হিসেবে৷ বাকিরা বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে সশ*স্ত্র যু*দ্ধে অংশ নেন৷ পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কলকাতায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য, কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শিরিন বানু মিতিল।

সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো- দেশ স্বাধীনের পর আমরা এই অসামান্য মুক্তিযোদ্ধাকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাতে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। জীবিত থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থগিত করে রাখা হয়েছিল তাঁর নাম। যদিও তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কিংবা সম্মানের আশা কখনোই করেননি।

আজ ২ সেপ্টেম্বর, কিংবদন্তি এই মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিলের জন্মদিন। জন্ম দিবসে নত চিত্তে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাকে।

তথ্যসূত্র: আহমাদ ইশতিয়াক/ দ্যা ডেইলি স্টার বাংলা
সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা
01/09/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   আজ ২৯ আগষ্ট,১৯৭১ সালের এই দিনে আল বদর নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ইনফরমারের দেওয়া তথ্যে ...
29/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


আজ ২৯ আগষ্ট,
১৯৭১ সালের এই দিনে আল বদর নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ইনফরমারের দেওয়া তথ্যে পাকস্তানিদের কাছে ধরা পড়েন এবং পরবর্তীতে শহীদ হন ক্রাক প্লাটুনের অন্যতম গেরিলা যোদ্ধা—

শহীদ বদিউল আলম বদী, বীর বিক্রম
শহীদ শফি ইমাম রুমি, বীর বিক্রম
শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল, বীর বিক্রম
শহীদ বাকের, বীর প্রতীক
শহীদ আলতাফ মাহমুদ
শহীদ সেকান্দর হায়াত
শহীদ হাফিজ
শহীদ মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ
শহীদ আবদুল্লাহ-হিল-বাকী

বাংলার এই সূর্যসন্তানরা আর ফিরে আসেননি
— শ্রদ্ধায় স্বরণ করি বাংলার সূর্য সন্তানদের।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   একটি ডকুমেন্ট। "১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১৫ তারিখ।ভারতের কোলকাতার গড়িয়ায় একটি চায়ের দোকানে...
27/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


একটি ডকুমেন্ট।
"১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১৫ তারিখ।

ভারতের কোলকাতার গড়িয়ায় একটি চায়ের দোকানে আড্ডা আলোচনার মূল বিষয় ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। এই আড্ডাতেই জন্ম কালজয়ী সেই গানটির। ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে/ লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/ আকাশে-বাতাসে ওঠে রণী।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় গানটি যুদ্ধের সেই দিনগুলোতে মুক্তিকামী মানুষদের প্রেরণা যুগিয়েছিল।

গানটির গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার
সুর ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন অংশুমান রায়।"
গানটি লেখা হয়েছিল ১৫ এপ্রিল ১৯৭১

© Ratan Kumar Majumder

25/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

#গণহত্যা

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস
25/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

ইসহাক দারের এ কেমন মিথ্যাচার ? ক্ষমা চাওয়ার বদলে উল্টো বাঙালিকে হৃদয় সাফ করার পরামর্শ ! Ishaq Darইসহাক দারের এ কেমন মিথ্.....

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস    #গণহত্যা নীচের তিন নারী হলেন পরস্পর জা। অর্থাৎ তাঁদের স্বামীরা ছিলেন তিন ভাই। তিন ভা...
24/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

#গণহত্যা

নীচের তিন নারী হলেন পরস্পর জা। অর্থাৎ তাঁদের স্বামীরা ছিলেন তিন ভাই। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবাই ছিলেন আবার সম্মুখসারির মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের আজকের দিনে তথা ২৪ আগস্টে এই তিন মুক্তিযোদ্ধার উপর প্রচণ্ড নির্যাতনের চালিয়ে তাদের দিয়ে গর্ত খুঁড়িয়ে তারপর তাদের গুলি করে হত্যা করে সেই গর্তেই তাঁদের মাটিচাপা দিয়েছিলো পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী হারা এই তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জায়াই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।
তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী ছোট সাতবাড়িয়া গ্রামে।
মুক্তিযুদ্ধের এপ্রিল-মে মাসে তিন ভাই এহছাক মিয়া, আবুল কাশেম ও মোকসেদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।
প্রশিক্ষণ শেষে তিন ভাই ফিরে এসে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের একপর্যায়ে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় রাজাকারদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমলে তাঁরা তিন ভাই কয়েকদিন বাড়িতে এসে রাতে থাকছিলেন।
এমন সময় প্রায়ই বিভিন্ন গ্রামে রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিতই লুটপাট চালাতো পাকিস্তানি সেনারা।
২৩ আগস্ট চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দিঘি পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে আগত পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল রাজাকারদের নিয়ে লুটপাটের জন্য ছোট সাতবাড়িয়ায় আসে। পাকিস্তানি সেনাদের আগমন সম্পর্কে কিছুই টের পাননি এই তিন মুক্তিযোদ্ধা। একপর্যায়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে ছাগল, হাঁস মুরগি কবুতর লুট করার পর পাকিস্তানিদের একটি দল এই তিন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতেও যায়। কিন্তু পাকিস্তানিরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তাঁরা তিন ভাই যে মুক্তিযোদ্ধা।
পাকিস্তানি সেনারা বাড়িতে আসতেই তিন ভাই দেখলেন মহা বিপদ। যেভাবেই হোক বাঁচতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য ছিল লুটপাট। তিন ভাই কোনরূপ বাধা না দেয়ায় পাকিস্তানিরা তাদের বাড়ি থেকে হাঁস,মুরগি, ছাগল লুট করে একপর্যায়ে ক্যাম্পের দিকে ফিরতি রওয়ানা হয়। প্রাণে বেঁচে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তিন মুক্তিযোদ্ধা সহোদর।
পাকিস্তানি সেনারা যখনই চিওড়া বাজারে এসে পৌঁছে তখনই রাজাকারেরা জানতে চায় ওরা কোথা থেকে জিনিসপত্র নিয়েছে। সেনাদের মুখ থেকে শুনে রাজাকারেরা বুঝতে পেরে জানায়, তারা যেসব বাড়ি থেকে লুট করেছে তার মধ্যে একটি বাড়ি তিন মুক্তিযোদ্ধাদের। কয়েক দিন যাবত তারা গোপনে বাড়িতে অবস্থান করছে। যদি আজই তাদের ধরিয়ে না দেয় তাহলে সেই মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বেঁচে যাবেন।
রাজাকারেরা তখন মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি সেনাদের কাছে সবিস্তারে খুলে বলে। রাজাকারদের কথামতো সেনারাও তখন দেরী না করে এহছাক মিয়ার বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। এদিকে এই তিন মুক্তিযোদ্ধা ভাবলেন পাকিস্তানি সেনারা যেহেতু চলে গেছে, সন্দেহ করেনি তাই তারা নিশ্চিন্ত।
চুপিসারে সে বাড়িতে পৌঁছে মুহূর্তেই মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সেই বাড়ি ঘেরাও করেন। পালাতে চাইলেও শেষপর্যন্ত ধরা পড়েন সেই তিন সহোদর মুক্তিযোদ্ধারা।
তাদের মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানিদের জগন্নাথ দিঘী ক্যাম্পে। সেখানে সেদিন পুরো রাত্রিতে তাঁদের উপর চালানো হয়েছিলো অবর্ণনীয় পাশবিক নির্যাতন।
টানা দেড় দিন প্রচণ্ড নির্যাতনের একপর্যায়ে ২৪ আগস্ট ধরা পড়া সেই তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভাইকে দিয়ে গর্ত খোঁড়ানো হয়। পরে সেদিন সন্ধ্যার দিকে সেই গর্তের সামনে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে সেনারা মাটিচাপা দিয়ে দেয়।
স্বামীদের হারিয়ে সেই চরম শোক ও আঘাত সহ্য করতে না পেরে তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। আজো সেই তিন শহীদের স্ত্রীরা কিছুই বলতে পারেন না। জিজ্ঞেস করলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন প্রশ্নকর্তার দিকে।
ঘটনার পরবর্তীতে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারা সেই খোঁজ দেয়া রাজাকার দালালকে খুঁজে বের করে হত্যা করেছিলেন।
দেশ স্বাধীনের পরে জগন্নাথ দীঘির পাড়ের সেই গর্ত থেকে তিন সহোদর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার দেহাবশেষ উদ্ধার করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীতে তিন ভাইকে সমাহিত করা হয় তাঁদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে
ঐ তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কোন ছবি পাইনি। শহীদ জায়াদের এই ছবিটি বাশার খানের তোলা।

মুক্তিযুদ্ধের অসীম সেই ত্যাগ স্বীকারকারী নারী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।🙏🙏

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে -স্মরণ -      বাংলাদেশের প্রথ...
24/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে -

স্মরণ -

বাংলাদেশের প্রথম নারী শহীদ
কবি মেহেরুন্নেসা
---------------------------------------------------
কবি মেহেরুন্নেসার জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার খিদিরপুরে।

মেহেরুন্নেসার কবি প্রতিভার প্রকাশ ঘটে খুব ছোট বেলায়।

১৯৫২ সালে মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন তাঁর খুরধার লেখনীর মাধ্যমে এবং জায়গা করে নেন সংগ্রাম, ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তান, অনন্যা, কাফেলা, বেগম, যুগের দাবিসহ তৎকালীন প্রায় সকল পত্রিকায়।

মাত্র দশ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে তাঁর ‘চাষী’ কবিতা সংবাদ এর ‘খেলাঘর’ পাতায় প্রকাশিত হয়। তিনি বড়দের জন্য লেখা শুরু করেন ১৯৫৪ সালে ‘কাফেলা’ পত্রিকার মাধ্যমে।

কবি মেহেরুন্নেসার রুচি, ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য ও কবিতা সমান্তরাল। তাঁর কর্ম, বিশ্বাস এবং বিবক্ষাই তাঁর কবিতা।

প্রথমে তাঁর কবিতায় ফররুখ আহমদের প্রভাব, ইসলামী ভাবধারা, আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। জাগে মখলুখ জাগে ফুল পাখি জেগেছে স্বর্ণ সুরুজ ইত্যাদি।

তাঁর বেশিরভাগ কবিতা প্রকাশিত হয় ‘বেগম’ পত্রিকায়। বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের পরামর্শে তিনি স্বদেশ, প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ে আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার বর্জন করে কবিতা লিখতে শুরু করেন।

তিনি রানু আপা নামে ‘পাকিস্তানি খবর’ এর মহিলা মহল পাতার সম্পাদনা করতেন। কবি হিসেবে তিনি ছিলেন সত্যিকার কবিতাকর্মী।

খুব আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা তাঁর কবি প্রতিভা আদায় করে নিয়েছিল কবি সুফিয়া কামালের স্নেহ আনুকূল্য।

১৯৬১ সালে যোগ দেন ফিলিপস রেডিও কোম্পানিতে। এছাড়া তিনি ইউএসআইএস লাইব্রেরিতেও অনুলিখনের কাজ নিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, সে সময় ফিলিপস ইংরেজি ও উর্দুতে মুখপত্র ছাপাতো। কবি মেহেরুন্নেসার চেষ্টায় বাংলা ভাষায় রচিত পত্রিকাও প্রকাশে বাধ্য হয় ফিলিপস কর্তৃপক্ষ।

কবিতার প্রতি ভালবাসা, বাংলা সাহিত্যের প্রতি অকৃত্রিম আকর্ষণ তাঁকে সাহিত্য চর্চা থেকে দূরে থাকতে দেয়নি।

'রানু আপা' ছদ্মনামে রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখেছেন ৬৯ এর আইয়ুববিরোধী উত্তাল গণআন্দোলনে।

নিজের চেষ্টায় তিনি মিরপুরের ৬ নং সেকশনে, ডি ব্লকের ৮ নং বাড়িটি বাবার নামে বরাদ্দ পান।

১৯৬৩ সালে কবি মেহেরুন্নেসা সপরিবারে বসবাসের জন্য ওই বাড়িতে ওঠেন। ১৯৬৫ সাল থেকে তাঁরা থাকতে শুরু করেন মিরপুরে। সে সময় মিরপুর ছিল বিহারী অধ্যুষিত এলাকা।

বাঙালি পরিবার বিহারীদের তুলনায় নগণ্য। এর কিছু দিনের মধ্যে তাঁর বাবা অসুখে পড়েন। তখন তাঁকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয় পরিবারের জন্য।

৭১ এ বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে কবি কাজী রোজীর (প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য) নেতৃত্বে এ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন কবি মেহেরুন্নেসা।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লেখক সংগ্রাম শিবির আয়োজিত বিপ্লবী কবিতা পাঠের আসরে হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন কবিরসহ অন্য কবিদের সঙ্গে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন মেহেরুন্নেসা।

এ আসরে সভাপতিত্ব করেছিলেন ড. আহমদ শরীফ। সেই অনুষ্ঠানে তিনি 'জনতা জেগেছে' কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে তিনি ও তাঁর পরিবার অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে ছিলেন মুক্তিকামী বাঙালি হিসেবে।

২৭ মার্চ এলো, দুদিন আগেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তখন একতরফা গণহত্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

কবি মেহেরুন্নেসা বিহারীদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে, তাঁর দুই ভাই মিরপুর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রফিক ও টুটুলকে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২৩ মার্চ সকাল ১০টায় মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লক, ১২ নম্বর রোডে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

এবং ওইদিন বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা শেষ কবিতা (তাঁকে মারার মাত্র তিন দিন পূর্বে)। আর এই অপরাধে কাদের মোল্লার নির্দেশে ২৭ মার্চ তাঁর মা, দুই ভাই ও তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ঊনত্রিশ বছর।

মেহেরুন্নেসার ছোট দুই ভাইয়ের কাটা মাথা দিয়ে ফুটবল খেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী মিরপুরের আলী আহাম্মদের ভাষ্য মতে কবি মেহেরুন্নেসাকে চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে।

মেহেরুন্নেসার কাটা মাথার বেণী করা চুল ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেয়া হয়। উল্লাস করা হয় কাটা মস্তকের রক্ত ছিটিয়ে। এভাবেই কবি মেহেরুন্নেসা হন স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মহিলা কবি।

মিরপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে তাঁর নাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কিন্তু এই মহান কবির বাংলাদেশে এক বোন ছাড়া কোন আত্মীয় নেই এবং তাঁর বোন মোমেনা বেগম রক্ষণশীল পরিবারের গৃহবধূ হওয়ায় মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করা হয়নি। শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তথ্যসূত্রঃ 'দৈনিক জনকণ্ঠ'
২৭ মার্চ ২০০৯
অনুলিখনঃ -- মেসবা খান

#বঙ্গকথা
আমাদের কন্ঠে,আপনার কথা।

22/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস

#গণহত্যা

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   একাত্তরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় তখন। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে তখন পাকিস্তানের রাষ্ট্...
22/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


একাত্তরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় তখন। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে তখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন বাঙালি রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহ।
বাঙালিদের মধ্যে তখন তিনিই সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রাষ্ট্রদূতের আলিশান জীবনে কোনকিছুর কমতি নেই। এক নিশ্চিন্তের জীবন।
আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের রাজধানী তেহরানে পাকিস্তানের আঞ্চলিক রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকের আহ্বান করেন। এর পাশাপাশি তেহরানে তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় জোট সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশনের একটি বৈঠকও হবে। সেখানেও উপস্থিত থাকতে হবে রাষ্ট্রদূত আবুল ফতেহকে।
আবুল ফতেহ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিলেন। অনেক কিছুই তৈরি করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং তেহরানেও পাঠালেন। ১৫ আগস্ট অফিসের গাড়িতে করেই বাগদাদ থেকে তেহরান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ফতেহ। বাগদাদ থেকে তেহরানের সড়ক পথে দূরত্ব ছিল প্রায় ৯০০ কিলোমিটার।
নির্দিষ্ট দিন রওয়ানা দেয়ার আগে আবুল ফতেহ ভাবলেন দূতাবাসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা তুলতে হবে। দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিলো রাফিদায়িন ব্যাংকের কারাদাৎ মরিয়ম শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাষ্ট্রদূত হওয়ায় আবুল ফতেহ নিজের সই দিয়ে একাউন্টের লেনদেন করতে পারতেন।
আবুল ফতেহ ব্যাংকের ম্যানেজারকে জানালেন যে, দূতাবাসের তহবিল থেকে তাঁর টাকা তোলা দরকার। এবং ব্যাংক বন্ধ হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে তিনি আসবেন।
কিন্তু ব্যাংক বন্ধ হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পরে আবুল ফতেহ ব্যাংকে গেলেন। তিনি জানতেন, ব্যাংক ম্যানেজার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের জন্য অপেক্ষা করবেন এবং এক ঘণ্টা দেরিতে সেখানে গেলে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত হবে।
বিষয়টি কিছুটা সন্দেহপ্রবণ হলেও ব্যাংক ম্যানেজার তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি ইরাকি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেননি। পাকিস্তানী দূতাবাসের ব্যাংক একাউন্টে থাকা প্রায় ২৮ হাজার পাউন্ডের পুরোটাই উত্তোলন করলেন আবুল ফতেহ।
নির্দিষ্ট দিনে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসের গাড়ি নিয়ে তেহরানে যাওয়ার জন্য রওয়ানাও হলেন আবুল ফতেহ। সঙ্গে তাঁর গাড়ি চালক। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা যেতে চাইলেও তিনি না করলেন। ইরান সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছাতেই আবুল ফতেহ গাড়ি চালককে বললেন তাঁর বুকে ভীষণ ব্যথা করছে। ব্যথা কিছুতেই কমছে না।
গাড়ি চালক ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। আবুল ফতেহ বললেন, ‘এই শারীরিক অবস্থায় যাওয়া সম্ভব না। আমাদের বাগদাদে ফিরতে হবে। তাঁরা রাতে পুনরায় বাগদাদে ফিরে এলেন। বাগদাদের আল মনসুর শহরের কাছাকাছি আসতেই ফতেহ গাড়িচালককে বললেন, ‘এখন আমার অনেকটা ভালো লাগছে। আর আমি আগামীকাল বিমানেই তেহরান যাবো। যেহেতু আমি বিমানেই যাচ্ছি তাই তোমার আর আমার সঙ্গে যেতে হবেনা।’
বাগদাদে ফিরে আবুল ফতেহ যা করলেন তা অবিশ্বাস্য। বাসায় ফিরে তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের জানালেন আমার ভালো লাগছে না। কিছুক্ষণ পর তিনি বাসার দুই কাজের লোককে সিনেমা দেখতে ছুটি দিয়ে দিলেন। কাজের লোকরা যখন তাদের কোয়ার্টারে চলে গেল আবুল ফতেহ’র স্ত্রী পিছনের দরজা লাগিয়ে দিলেন। আবুল ফতেহ তাঁর ছেলেদের বললেন, আমরা আজ রাতেই ইরাক ছাড়বো। কারন আমাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে হবে।’
এরপর আবুল ফতেহ ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় তাঁদের মালামাল একটি ভ্যানে ভারতীয় দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেই রাতেই ফতেহ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের একটি গাড়িতে করে কুয়েতের সীমান্তের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৬ আগস্ট ভোরে তাঁরা কুয়েত সীমান্তে পৌঁছান। গোয়েন্দা কর্মকর্তা গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে ফতেহ’র পরিবারের পাকিস্তানি কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে নেন।
এদিকে ফতেহ’র পরিবারের সবাই আতঙ্কিত এই ভেবে যে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের পাসপোর্ট ভারতীয় কূটনৈতিক পাসপোর্টের পাশে রাখলে সীমান্ত বাহিনীর কর্মকর্তারা কি ভাববে? একপর্যায়ে তাঁরা গাড়িতে বসে না থেকে ডেস্কে কি হয় তা ভেবে উঠে গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে নিরাপত্তা চৌকিতে ঢুকলেন।
সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তাঁদের অভিনন্দন জানায় এবং পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়। ঐ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান তিনি একজন পাকিস্তানী। ফতেহ’র পরিবারের সদস্যরা কিছুটা আতংকিত হয়ে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই গোয়েন্দা জানালেন তিনি পাকিস্তানী হলেও ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন। এই যে আবুল ফতেহ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা যে সীমান্ত অতিক্রম করছেন তাঁর কোন প্রমাণই রাখা হলোনা।
সেদিন খুব ভোরে দুটি কূটনৈতিক গাড়ি ঐ সীমান্ত তল্লাশি চৌকিতে কেন তা জানার আগ্রহ থেকেও ভাগ্যক্রমে কোনো ইরাকি কর্মকর্তা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
কুয়েত সিটিতে পৌঁছে আবুল ফতেহ ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের স্থানীয় কার্যালয়ে যান। ম্যানেজারকে আগেই বলা হয়েছিলো কয়েকজন বিশেষ যাত্রী এখান থেকে যাবে। কিন্তু তাদেরকে সাধারণ মানুষের নজরের বাইরে রাখতে হবে। এরপর সেখান থেকে তাঁরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য কুয়েত বিমানবন্দরে যান।
কুয়েত বিমান বন্দরে বিওএসির এক প্রতিনিধি যাত্রীদের নামের তালিকার সঙ্গে আবুল ফতেহ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট মিলিয়ে দেখতে শুরু করলেন। কিন্তু যাত্রীদের নামের তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তখন একজন ভারতীয় দৌঁড়ে ডেস্কে গিয়ে ওই প্রতিনিধির দিকে হাত নাড়েন। তিনি কুয়েতে বিওএসি'র সহকারি ব্যবস্থাপক। যাত্রীদের তালিকায় তাঁদের নামের বদলে চারটি ভুয়া নাম দেওয়া হয়েছিলো।
কুয়েতে বহু ইরাকি এজেন্ট ছিলো এবং কুয়েত বিমান বন্দর থেকে যাত্রার বিষয়টি পুরোপুরি গোপন রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
লন্ডনে পৌঁছে আবুল ফতেহ এরপর ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে আবু সাঈদ চৌধুরী মুজিবনগর সরকারের কাছে তারবার্তায় এই সংবাদ পাঠান।
২১ আগস্ট লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে আবুল ফতেহ ঘোষণা দেন, ‘আমার মাতৃভূমি আর যুদ্ধবিধ্বস্ত। বাংলার প্রতিটি প্রান্তে আজ পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালিয়ে শ্মশানে পরিণত করেছে। আমার এই মুহূর্তে দায়িত্ব আমার সদ্য স্বাধীন মাতৃভূমির পাশে দাঁড়ানো। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার নিয়ে যে প্রহসন চলছে আমার দেশে যেভাবে গণহত্যা চালানো হচ্ছে এরপর আমি আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারিনা। এখন আমার একমাত্র দায়িত্ব, আমার দেশের জনগণকে হানাদার মুক্ত করা।
আবুল ফতেহ’র স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন পাকিস্তানের গোটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো বটেই পুরো পাকিস্তানকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন তাঁকে বলেছিল জেমস বন্ডের মতো ঠাণ্ডা মাথার অপারেশনাল কমান্ডার।
মুক্তিযুদ্ধে যেসব বাঙালি কূটনীতিক বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবুল ফতেহই ছিলেন সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

মুজিবনগর সরকার শুরুতে আবুল ফাতেহকে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেয়। অগাস্টে তিনি প্রবাসী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তিনিই বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন।
আবুল ফতেহ ছিলেন মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুলের কলেজ জীবনের সহপাঠী। ১৯৪৩ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে দুজনে একসঙ্গেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছিলেন। এরপর দুজনে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবুল ফতেহ ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগে আর সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইতিহাস বিভাগে। দুজন থাকতেনও একই হলে তথা সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে।
একাত্তরের এপ্রিল মাসে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাঁর বন্ধু আবুল ফতেহকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল এমন, প্রিয় বন্ধু এখন আমাদের মাতৃভূমির পক্ষে লড়াই করে শত্রুমুক্ত করার সময়। নিশ্চয়ই তুমি এই সুযোগ জীবনে দ্বিতীয়বার পাবেনা।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণের পর ১৮ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আটজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিলো। উদ্দেশ্য বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
ওই দলে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের সচিব রুহুল কুদ্দুস সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। আর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধিত্ব করছিলেন আবুল ফাতেহ।
২২ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত আবুল ফাতেহই ছিলেন দেশের মাটিতে সরকারের প্রধান প্রতিনিধি।
.
১৯৭২ সালে আবুল ফতেহ’র সঙ্গে প্যারিসে ইরাকের রাষ্ট্রদূতের দেখা হয়েছিলো। একাত্তরে এই ইরাকি রাষ্ট্রদূত ছিলেন ইরাকের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কর্মরত।
আবুল ফতেহকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের কি ভয়ঙ্কর পরিণতি হতো সে বিষয়ে আপনার কোনো ধারণাই ছিলো না। পাকিস্তান সরকার জোরালোভাবেই সন্দেহ করতো, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু আপনারা কোথায় গেছেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দি বিদ্রোহীরা আপনাদের অপহরণ করেছে।
তখন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেশের মধ্য থেকে আপনাদের খুঁজে বের করতে ইরাকের পুরো গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। সেসময় বাগদাদ বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া বিমানগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়েছিলো এবং যেসব বিমান অল্প সময় আগে ছেড়ে গিয়েছিলো সেগুলোও ফিরিয়ে এনে সেগুলোতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিলো।
আজ থেকে ৫৪ বছর আগে ২১ আগস্ট লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনে আবুল ফতেহ যা দেখিয়েছিলেন তা অবর্ণনীয়। শ্রদ্ধা জানাই কিংবদন্তী আবুল ফতেহ’র প্রতি।
ছবিতেঃ কিংবদন্তী আবুল ফতেহ।

 #মুক্তিযুদ্ধ  #বাংলাদেশেরইতিহাস   একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা!
21/08/2025

#মুক্তিযুদ্ধ
#বাংলাদেশেরইতিহাস


একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা!

Address

Dhaka

Telephone

+8801716813947

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মো. শওকত আলীর কথা ও কণ্ঠ:

Share