05/07/2025
#মা_ফাতেমার_কোরবাণী
একদিন হুজুর আকরাম (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেলেন। প্রিয় নবীজী (সা.) কোন খবর না পেয়ে সাহাবী ও আহলে বাইতগন অস্থির হয়ে চতুর্দিক খুঁজতে লাগলেন। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাহাড়ের উপর নবীজী (সা.)-কে পাওয়া গেল। সবাই গিয়ে দেখলেন তিনি সিজদায় পড়ে ‘ইয়া উম্মতি, ইয়া উম্মতি’ বলে বেহুঁশ বেকারর হয়ে কাঁদছেন। সাহাবীগণ অনেক চেষ্টা করলেন হুজুর (সা.) কে সিজদা থেকে তুলে বাড়ি নিয়ে আসতে। কিন্তু না, সরকারে কায়েনাত কিছুতেই মাথা উঠালেন না, কেবলই ‘ইয়া উম্মতি, ইয়া উম্মতি’ বলে কাঁদছেন আর কাঁদছেন। সাহাবীরা অপারগ হয়ে চিন্তা করলেন মা ফাতেমার (সা.) কথা। একমাত্র মা ফাতেমাই (সা.) পারেন দয়াল নবী (সা.) কে বাড়ী ফেরাতে। তৎক্ষণাৎ মা ফাতেমা (সা.)-কে খবর দিয়ে আনলেন। পিতার এ অবস্থা দেখে তিনিও সিজদায় পড়ে কাঁদতে লাগলেন। তবুও প্রিয় নবীজী (সা.) মাথা তুলছেন না দেখে মা ফাতেমা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন, ওগো, দয়াময়, দয়াল নবী (সা.)’র উম্মতের নাজাতের বদলে আমার নয়নমণি হাসান ও হোসাইনকে তোমার রাহে সদকা হিসাবে কোরবাণ করে দিলেও যদি তুমি রাজি হও তবুও আমার কোন আপত্তি নেই। দয়া করে আমার এ কোরবাণী তুমি কবুল কর, তবুও নবীজী (সা.)’র উম্মতকে তুমি মুক্তি দাও।’ অতঃপর দয়াল নবী মাথা তুললেন। এ সদকা দেওয়ার কারণেই আওলাদে রাসুল ( সা.)-এর সদকা হিসাবে কিছু খাওয়া কেয়ামত পর্যন্ত নিষেধ হয়ে গেল। আর একদিন দয়াল নবী ফজরের নামায আদায় করে ‘ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি’ বলে কাঁদতে লাগলেন। জিবরাঈল (আ.) এসে নবীজী (সা.)-কে বললেন, ‘হে হাবীবে খোদা (সা.) পরওয়ার দেগার আপনার কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনি কি উম্মত চান, নাকি আপনার দুই নয়নের মণি হাসান-হোসাইনকে চান? যদি উম্মতের নাজাত চান তাহলে হাসান-হোসাইনের কোরবাণী কবুল করে নিন। কারণ আপনার মেয়ে খাতুনে জান্নাত আপনার উম্মতের বদলে আপনার নাতিদ্বয়কে আল্লাহর রাহে কোরবাণ করে দিয়েছেন।
[দেখুনঃ- তাবারী, ওফেদী, ইবনে খলদুন, শিররুশ শাহাদাতাইন ( শাহ আঃ আযীম মুহাদ্দেস দেহলভী) ইত্যাদি অনেক কিতাব। ]
বিশ্ব দুলালী নবী নন্দিনী
খাতুনে জান্নাত ফাতেমাজননী।
হাসান, হোসাইন তব উম্মত তরে মাগো,
কারবালা প্রান্তরে দিলে বলিদান।
বদলাতে তার রোজ হাশরে,
চাহিবে মা মোর মত পাপীদের ত্রাণ।
#নজরুল
মেশকাত শরীফে ( কেতাবুল আদাব) উল্লেখ আছে, ‘মা-খাতুনে-জান্নাত যখন নবী করীম (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হতেন তখন প্রিয় নবীজী ( সা.) দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাত ধরে চুম্বন দিয়ে নিজ আসনে বসাতেন।’ -এ হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর হাবিবের কাছে মা খাতুনে আতহারের মর্যাদা।
‘হায়দারী হাঁক হাঁকি দুলদুল আসওয়ার,
শমসের চমকায় দুশমন ত্রাসবার।
খসে পড়ে হাত হতে শক্রর তরবার,
ভাসে চোখে কেয়ামতে আল্লাহর দরবার।’
“নিঃশেষ দুশমন, ওকেরণ শান্ত,
ফোরাতের নীরে নেমে মোছে আঁখি প্রান্ত।
কোথা বাবা আসগর? শোকে বুক ঝাঁঝরা,
পানি দেখে হোসাইনের ফেটে যায় পাঁজরা।
ধুকে ম’লো, আহা তবু পানি এক কাৎরা,
দেয় নিরে বাছাদের মুখে কমজাতরা।
( নজরুল )
[ সূত্রঃ- কারবালা ও মুয়াবিয়া, সৈয়দ গোলাম মোরশেদ ]