13/10/2025
কবি গোলাম মোস্তফা বাংলা সাহিত্যে মুসলিম রেঁনেসার কবি নামে পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গোলাম মোস্তফা এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। আধুনিক বাংলাসাহিত্যে ইসলামী ভাবধারার সাহিত্য রচনায় রয়েছে তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব। বাঙ্গালী মুসলমানের জাতীয় জাগরণ তাঁর সাহিত্যেকর্মের মূল উদ্দেশ্য।
কবি গোলাম মোস্তফা একাধারে গবেষক,অনুবাদক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন,তবে কবি হিসেবেই তাঁর মুখ্য পরিচয় ছিল। রক্তরাগ (১৯২৪), খোশরোজ (১৯২৯), কাব্য-কাহিনী (১৯৩২), সাহারা (১৯৩৬), হাস্নাহেনা (১৯৩৮), বুলবুলিস্তান (১৯৪৯), তারানা-ই-পাকিস্তান (১৯৫৬), বনিআদম (১৯৫৮), গীতিসঞ্চালন (১৯৬৮) ইত্যাদি তাঁর মৌলিক কাব্য এবং মুসাদ্দাস-ই-হালী (১৯৪১), কালামে ইকবাল (১৯৫৭), শিকওয়া ও জওয়াব-ই-শিকওয়া (১৯৬০) অনুবাদকাব্য।
এছাড়া, তিনি প্রকাশ করেন ‘নওবাহার’ নামে একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা। পত্রিকার ‘উদ্দেশ্য’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল : "আমাদের তহজীব ও তমুদ্দনের রূপায়ণ হইবে ‘নওবাহারের’ অন্যতম লক্ষ্য। যা বাঙ্গালী মুসলমানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে শক্তিশালী প্রভাব রেখেছিল।
পাশাপাশি, তিনি আল-কুরআনও (১৯৫৮) অনুবাদ করেন। তাঁর গদ্যরচনার মধ্যে বিশ্বনবী (১৯৪২), ইসলাম ও কমিউনিজম (১৯৪৬), ইসলাম ও জেহাদ (১৯৪৭), আমার চিন্তাধারা (১৯৫২), পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ইত্যাদি প্রধান। কবি গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী গ্রন্থখানি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এতে তিনি হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে ঐতিহাসিক মহামানব হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন।
কবি গোলাম মোস্তফার সমকালে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এর প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশেও পড়ে। এতে অনেক তরুণ বাঙালি মুসলিম মার্কসবাদ-লেলিনবাদের কমিউনিজম আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উঠে। এ প্রেক্ষাপটে গোলাম মোস্তফা ইসলাম ও কমিউনিজম নামে একটি রাজনৈতিক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মার্কসবাদ ও লেলিনবাদের অসারতা প্রমাণ করেছেন। পাশাপাশি ইসলামই যে মুক্তির একমাত্র পথ সে কথাও তিনি তুলে ধরেছেন।
১৩ অক্টোবর, ১৯৬৪ সালে কবি গোলাম মোস্তফা ইন্তেকাল করেন। আজ তার ৬১ তম মৃত্যুবার্ষিকী।