23/05/2025
নারী-পুরুষ সমান অধিকার- ইসলাম কী বলে, আর আমরা কী করছি?
আজকাল একটা কথা খুব শোনা যায়— নারী-পুরুষ সমান অধিকার চায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি আমরা সমান হতে চাই? নাকি শুধু সুযোগের জায়গায় সমান হতে চাই, দায়িত্বের জায়গায় না?
দেখেন, ইসলাম কখনো নারীকে পুরুষের নিচে রাখেনি। বরং অনেক জায়গায় নারীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, কন্যা হিসেবে—প্রতিটা সম্পর্কেই ইসলাম নারীর পাশে থেকেছে।
একবার এক সাহাবি নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কার হক সবচেয়ে বেশি?
তিনি বললেন, "তোমার মা"।
তিনবারই বললেন, "তোমার মা", তারপর বললেন, "তোমার বাবা"।
এখন আসি ‘সমান অধিকার’-এর কথায়। আজকাল অনেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের মতোই সবকিছু করব”—চমৎকার কথা! কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি পুরুষের সব দায়িত্বও নিচ্ছি?
যখন ঘরে আয়-রোজগারের কথা আসে, তখন বলি, “স্বামী দায়িত্ব নেবে।”
কিন্তু বাইরে কাজের সুযোগে বলি, আমাদের ঠেকানোর অধিকার কারও নেই।
মানে সুবিধাটা চাই, কিন্তু দায়িত্বটা? সেটা যেন শুধু পুরুষের।
ইসলাম কখনো নারীকে শ্রমিক বানায়নি। বরং বলেছে, স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে, আর স্ত্রী যদি ইচ্ছা করে আয় করে—তবে সেটা তারই সম্পদ। কী চমৎকার ভারসাম্য, তাই না?
আর আজকের অনেক তথাকথিত আধুনিকতা নারীকে “মুক্তি” দিয়েছে, কিন্তু সেই মুক্তি এনে দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার কাজের বোঝা, নিজের সম্মান হারানোর ভয়, আর একরকম গ্ল্যামার-প্রেশার।
তখন কি সত্যিই নারীর লাভ হচ্ছে, নাকি ওকে শুধু আরেকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে?
এখন একটু বাস্তব কথা বলি—
আমরা যতই বলি “সমান অধিকার”, আসলে নারী-পুরুষ সমান না—বরং আলাদা বা ভিন্ন।
আর এই ভিন্নতাটাই শ্রেষ্ঠত্ব।
একজন পুরুষ অনায়াসে রাতভর কবর খুঁড়তে পারে,
দুর্ঘটনায় লাশ টেনে তুলতে পারে,
নর্দমা পরিষ্কার করতে পারে,
আতঙ্কের মাঝেও রাস্তায় একা হাঁটতে পারে।
আপনি কখনো শুনেছেন, কোনো নারী কয়লার খনিতে নিচে নেমে কাজ করছেন?
বা মাঝরাতে নদীর মাঝখানে নৌকা বেয়ে মালামাল টেনে আনছেন ট্রলার চালিয়ে মৃত ব্যক্তিকে বহন করে কবরস্থানে নেওয়া, জানাজা পড়ানো ও দাফন করা?
→ নারীরা এমন কাজে থাকে না, থাকেও না। ইসলামে এর ব্যাখ্যাও আছে। কারণ এগুলো নারীদের কাজ নয়।
এসব কাজ প্রতিদিন হাজার হাজার পুরুষ করেই যাচ্ছে—কারো চোখে পড়ে, কারো পড়ে না।
তারা করে যাচ্ছেন, কারণ তাদের শরীর, মন, ধৈর্য, শক্তি—সবকিছু সেই কাজের উপযোগী করেই আল্লাহ বানিয়েছেন।
কেউ রাত ৩টায় অ্যাম্বুলেন্স চালায়,
কেউ কনস্ট্রাকশনের কাজ করে ৪০ ডিগ্রি রোদের মধ্যে, কেউ বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপরে উঠে ঝুঁকি নিয়ে তার মেরামত করে।
নারী এইসব কাজ করতে না পারায় সে ছোট না—
বরং তার কাজ অন্যরকম।
সে কোমল, সে মমতাময়ী, সে মায়াবতী।
সে ঘর সাজায়, পরিবার আগলে রাখে, সন্তানকে মানুষ করে। সে চোখে পানি নিয়ে বাবার জন্য দোয়া করে,
স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস দেয়।
একটা পরিবারে শান্তি আসে নারীর হাসিতে, নারীর দোয়ায়, নারীর ভালোবাসায়। এই কাজগুলো পুরুষ পারবে না।
এখন নারী যদি ভাবে, তাকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে পুরুষের মতো হয়ে—তাহলে সে নিজের নারীসত্তাকেই অস্বীকার করে ফেলছে।
কারণ নারী হওয়াটাই এক গর্ব, এক সৌন্দর্য, এক সম্মান।
পুরুষ যা পারে, তা জেনেই সে পুরুষ। আর নারী যেটা পারে, আল্লাহ তাকেই তো বানিয়েছেন বিশেষ করে।
ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে। বলেছে, তুমি বাইরে যেয়ো—যদি প্রয়োজন হয়, নিরাপদভাবে, ইজ্জত রক্ষা করে।
আসলে নারীকে আল্লাহ প্রতিযোগী নয়, পরিপূরক বানিয়েছেন। নারীকে শ্রেষ্ঠ হতে পুরুষের মতো হতে হয় না। তার নিজস্ব একটা সম্মান আছে, মর্যাদা আছে—যেটা তার ভেতরের কোমলতায়।
একটা পরিবারে মা তার জায়গায়, বাবা তার জায়গায়—এটাই ভারসাম্য।
যখন সবাই নিজের জায়গায় থেকে দায়িত্বটা পালন করে, তখনই সমাজ সুন্দর থাকে।
না হলে, একদিকে ভার বেশি হলে যেমন একটা নৌকা উল্টে যায়, সমাজটাও ঠিক সেভাবেই ডুবে যায় বিশৃঙ্খলায়।
✍️ Warisa Rifat