02/07/2024
রানাদের গ্রামে গিয়ে একটা জিনিস বেশ খটকা লাগছে। এ গ্রামে কেউ মাছ খায় না। মুরগি, খাসি, গরু, ডিম, কচুর লতি, লাউয়ের বড়া সবই খেয়েছি এখানে, কিন্তু মাছ খাইনি এখনো। অথচ আমি জানতাম গ্রামবাংলার মানুষের মাছ খুব প্রিয়, মাছে-ভাতে বাঙালি কথাটাতো এমনি এমনি আসেনি। একদিন থাকতে না পেরে রানাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কিরে, তোদের গ্রামে এতো পুকুর-নদী, মাছ হয়না কোনোটায়?'
রানা বললো, 'হবে না কেন, প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এখানে।'
'তাহলে? তোরা মাছ খাস না কেন?'
'গ্রামে মাছ নেয়া বারণ। মাছ নিলেই তেনারা পিছু নেন।'
আমি হেসে ফেললাম,'তেনারা মানে কি? ভূতেরা?'
'তবে আর কি? তোর খুব মজা লাগছে শুনতে, তুই তো আর এখানের কেউ না। ওদের পাল্লায় যারা পড়েছে তারা জানে। দিন নেই রাত নেই, মাছ সাথে দেখেছে কি পিছু নিবে তোর।'
'তারপর? মাছ না দিলে?'
'আধ হাত কাদার মধ্যে গেড়ে রেখে দিবে। মাথা নিচে, পা উপরে করে। গত বছর ও বাসার মকবুল কাকুর নতুন জামাই শ্বশুরবাড়িতে আসছিলো মাছ নিয়ে, এসব কথা তো আর জানতো না। পরে ঐভাবে ওকে গেড়ে রেখে দিয়েছিলো, বাবা, সেই দৃশ্য কল্পনা করলে এখনো গায়ে কাটা দেয়।' বলতে বলতে রানা সত্যি শিউরে উঠলো।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, 'ধুস, চাপা মারারও তো লিমিট থাকে।'
'দেখ, তুই বিশ্বাস করবি না জানি, কিন্তু কথা সত্যি। এখানে থাকতে আর মাছের নাম নিস না। ঢাকায় গিয়ে যা ইচ্ছা যত ইচ্ছা মাছ খাস, আমি খাওয়াবো তোকে। এখন চুপ থাক।'
আমারও জেদ উঠে গেল। এতো চেষ্টা করেও তো 'তেনাদের' দেখা পাই নি, আজ দেখবো 'তেনাদের' কত দৌড়। রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে তখন সাথে আনা বরশি আর চার্জার লাইট নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সাথে খাওয়ার জন্য এক বোতল পানি।
রানাদের বাড়ি থেকে নদী কিছুটা দূরে। এর আগে কখনো মাছ ধরি নি নদীতে। নদীর কিনারে বসে ছিপে চার বেঁধে ছুড়ে দিয়ে বসে রইলাম। সাথে সাথে মাছ গেঁথে গেল। পকেটে করে নিয়ে আসা কাপড়ের ব্যাগে ভরলাম মাছটা। আবার বরশি ফেললাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাগ ভরে গেল। এই বড় বড় মাছ উঠেছে। আফসোস হচ্ছিলো আরো বড় ব্যাগ আনলাম না কেন। যাই হোক, যা আছে তা নিয়েই বাড়ির পথ ধরলাম।
হঠাৎ মনে হলো, পিছনে পায়ের শব্দ পাচ্ছি। পিছন ফিরে দেখলাম কেউ নই। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। আবার পায়ের শব্দ। এবার পেছনে তাকিয়ে দেখি এক কালো মতো কি যেন, দেখে মনে হচ্ছে যেন ঘোমটা দেয়া কোনো মহিলা, আমার পিছন পিছন আসছে। আমি হাঁক দিলাম, 'কে ওখানে? কি চাই?' কিন্তু কোনো উত্তর এলো