10/10/2025
বাড়ির সবাই ব্যস্ত—মা মেয়ের গায়ে হলুদের আয়োজন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে, খালা-ফুপুরা মেহেদি লাগাতে বসেছে, অথচ মেহজাবিনের মনে বারবার ঘুরছে একটা কথাই—
আমি কি সত্যিই এই বিয়ে করতে যাচ্ছি...??
সে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকাল, আকাশে পূর্ণ চাঁদ, হালকা বাতাসে শাড়ির পাড় উড়ছে, সেই চাঁদটা দেখে তার মনে
পড়ল রিদয়ের কথা......
রিদয়—একজন সাধারণ ছেলে, কিন্তু মেহজাবিনের
চোখে সে ছিল পুরো পৃথিবী.....
তারা পরিচিত হয়েছিল কলেজে, প্রথমে তর্ক-বিতর্ক, তারপর বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্ব একসময় পরিণত হয় ভালোবাসায়.....
রিদয় মেহজাবিনকে একদিন বলেছিল,
তুই যদি একদিন হারিয়ে যাস, আমি তোকে খুঁজতে খুঁজতে
শেষ নিঃশ্বাস ফেলব.......
আর মেহজাবিন হেসে বলেছিল,
তাহলে আমি কখনোই হারাব না.....
কিন্তু জীবন তো গল্পের মতো হয় না.....
মেহজাবিনের বাবা ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, তাঁর কাছে ‘সম্মান’ আর ‘সম্পর্ক’ মানে ছিল অর্থ, প্রতিপত্তি, আর সমান মর্যাদার পরিবার। তাই রিদয়ের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে তিনি মেনে নিতে পারেননি....
যেদিন তিনি রিদয়ের সঙ্গে মেহজাবিনের সম্পর্ক জানতে পারেন, সেদিনই সব ভেঙে পড়ে......
এই সম্পর্ক শেষ করবি, না হলে আমি তোকে আমার
মেয়ে বলে মানব না— কঠিন কণ্ঠে বলেছিলেন বাবা.....
মেহজাবিন কেঁদেছিল, অনুরোধ করেছিল, কিন্তু কেউ শোনেনি। কয়েক দিনের মধ্যেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে—যাকে সে কোনোদিন দেখেইনি...
রিদয়কে সে খবর দিলে রিদয় বলেছিল,
তুই যদি রাজি থাকিস, আমি তোকে নিয়ে পালিয়ে যাব, কোথাও চলে যাব—যেখানে কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না....
সেদিন মেহজাবিন চুপ করেছিল, পালানো মানে শুধু পরিবার হারানো নয়, সমাজ, সম্মান, সব কিছু হারানো, কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে, নিজের আয়নায় প্রতিফলিত মুখটা দেখে মনে হলো—
“যে জীবনে ভালোবাসা নেই, সেই জীবনই বা কিসের...??
রাত তখন বারোটা ছুঁই ছুঁই, ঘরে সবাই ঘুমিয়ে, হালকা বৃষ্টির শব্দ জানালায় টুপটাপ পড়ছে, মেহজাবিন ধীরে ধীরে আলমারি খুলে, একটা ছোট ব্যাগে কিছু কাপড়, কিছু টাকা আর ফোনটা রাখল, বুকের মধ্যে ধুকপুক শব্দ বাড়ছে, কিন্তু সে জানে—আজ না গেলে আর কোনোদিন পারবে না......
মোবাইলে মেসেজ লিখল—
আমি প্রস্তুত, তুই কোথায় আছিস...??
রিদয়ের রিপ্লাই এল সাথে সাথেই—
গেটের বাইরে, কালো বাইক নিয়ে। ভয় পাস না....
মেহজাবিন দরজার তালা ধীরে খুলল, পা টিপে টিপে নিচে নামল, সিঁড়ির নিচে মা ঘুমোচ্ছে, পাশে মেহেদির বাটি, সেই হাতের দিকে একবার তাকিয়ে থেমে গেল সে। চোখে জল চলে এলো.....
মা, আমাকে মাফ করে দিও…
ফিসফিস করে বলল সে.....
তারপর গেট খুলে বাইরে বেরোল, রিদয়ের বাইকটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে, হেডলাইট নিভানো, ছেলেটার চোখে ভয় আর ভালোবাসা—দুটোই একসাথে....
বাইকটা ছুটল অন্ধকার রাস্তায়, পিছনে ফেলে রঙিন আলো, শোরগোল, আর এক পৃথিবী যেখানে তাদের জায়গা ছিল না।
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল তারা, কিন্তু দুজনের মুখে একরকম শান্তি। যেন এতদিনের বন্দি জীবনের শিকল আজ ভেঙে গেছে.....
মেহজাবিন রিদয়ের কাঁধে মাথা রাখল, বলল,
তুই জানিস, আমি সব কিছু হারালাম…
রিদয় উত্তর দিল,
তুই কিছু হারাসনি, তুই ফিরে পেয়েছিস নিজেকে.....
বাইকটা শহর ছাড়িয়ে গ্রামীণ পথে ঢুকে পড়ল, রাত গভীর হচ্ছে, কিন্তু তাদের চোখে আলো, সামনে অজানা ভবিষ্যৎ, কিন্তু সেই অজানার দিকেই তারা দৌড়াচ্ছে....
দূরে বজ্রপাত হলো। বাতাসে ভেসে এল আজানের সুর...
মেহজাবিন বলল,
রিদয়, আমরা কোথায় যাচ্ছি..??
রিদয় মৃদু হেসে বলল,
যেখানেই যাই, তুই থাকলেই তো সেটাই ঘর....
বৃষ্টি থামল, কিন্তু আকাশের মেঘের মতোই তাদের জীবনের পথ এখনো অনিশ্চিত...!!
゚viralシfypシ゚ ゚ ゚