07/07/2023
অন্ধবিশ্বাস থেকেই জগতের অধিকাংশ সমস্যার সৃষ্টি। তাই বিশ্বাসের রঙিন চশমাটাকে খুলে রেখে নিজেকে এবং জগতটাকে দেখতে অনুরোধ করছি। সহমত?
একেবারে পুরোপুরি সহমত। আসুন, অন্ধ-বিশ্বাস ত্যাগ করে, জগতটাকে দেখি। সহজেই কোনকিছু বলে ফেলা যায়। কিন্তু কাজটা করা বেশ কস্টকর। যত কস্টই হোক না কেন - আজকে আমরা কাজটি করবো। অন্ধ বিশ্বাস ত্যাগ করবো। আসুন, ধাপে ধাপে কাজটি করি -
১ম ধাপঃ বাংলা ভাষার ভেতরে ইংরেজী শব্দ এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, একজন অশিক্ষিত মানুষও ৫০+ ইংরেজী শব্দ জানে। ঠিক তেমনই প্রযুক্তির এই যুগে, অশিক্ষিত মানুষও ২০-২৫টা বৈজ্ঞানিক সত্য জানে। আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ। আপনি কয়েকশত বৈজ্ঞানিক সত্য জানেন। আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র হন, তাহলে কয়েক হাজার বৈজ্ঞানিক সত্য জানেন। ওই বৈজ্ঞানিক সত্যগুলো আপনি কিভাবে জানেন? বই পড়ে জানেন। আপনি যতগুল বৈজ্ঞানিক সত্য জানেন, সেটার মাত্র ৫% ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখার সৌভাগ্য আপনার হয়নি।
আপনার বিজ্ঞানের জ্ঞান পুরোটাই - অন্য কেউ আবিস্কার করেছে। সেই ঘটনাটা জেনে, আপনি সেটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছেন।
২য় ধাপঃ আপনি লেখাপড়া করে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। বই পড়ে আপনি জেনেছেন, মাউন্ট এভারেস্ট ৮,৮৪৯ মিটার উচু। আপনি বই পড়ে জেনেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে উচু বিল্ডিং ৮৩০ মিটার উচু।আপনি বই পড়ে জেনেছেন, বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। আপনি জেনেছেন, সুর্য ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। এগুলো কোনটাই আপনি নিজে মেপে দেখেন নি। এমনকি যারা মেপেছে, তাদেরকে আপনি চেনেনও না।
বিভিন্ন বিষয়ে যা (সাধারন) জ্ঞান আছে, তার সবই আপনি অন্যের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছেন।
৩য় ধাপঃ সবাই সামান্য হলেও ইতিহাস জানে। মাঝে মাঝে বিভিন্নভাবে ইতিহাস বিকৃত করা হয়। ইতিহাসের নায়ককে মাঝে মাঝে ভিলেন বানানো হয়। মাঝে মাঝে ভিলেনকে নায়ক বানানো হয়। এমন ধরনের বিকৃতি হলেও, ইতিহাসে কখনো তারিখ বিকৃত হয় না। যেটার যত তারিখ, সেটাই লিখে রাখে। ইতিহাসে লেখা আছে ১৬৩২ সালে তাজমহল তৈরি হয়েছিলো। লেখা আছে ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধ হয়েছিলো। ইতিহাসে লেখা আছে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ (স) মারা গিয়েছেন। অতীতে গিয়ে সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়। যারা এমন ইতিহাস লিখেছে, তাদেরকে আপনি চেনেন না।
ইতিহাস বিষয়ক আপনার জ্ঞান পুরোটাই - আপনি অন্যের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছেন।
৪র্থ ধাপঃ ইদানং সময় করে সংবাদপত্র পড়া লাগে না। অনলাইনে থাকলে, এমনিতেই বিভিন্ন সংবাদের লিঙ্ক পাওয়া যায়। কোন দেশে কি হয়েছে, সেই সংবাদ আপনার কাছে পৌছাতে এক ঘন্টারও কম সময় লাগে। আপনি সারা জীবনে যত সংবাদ পড়েছেন, সেগুলো কোনটাই আপনি ওখানে গিয়ে দেখেন নি। যারা সংবাদ লেখে, তারা আপনার বিশ্বস্ত লোক নয়। তাদেরকে আপনি চেনেনও না।
আপনি সারা জীবনে যত সংবাদ পড়েছেন বা দেখেছেনে, সবই - আপনি অন্ধভাবে অন্যের কথা বিশ্বাস করেছেন।
শেষ ধাপঃ সিনেমাতে দেখা যায়, নায়ক বড় হয়ে জানতে পারে, সে একজন পালিত সন্তান। যাদেরকে মা-বাবা বলে জানে, তারা তার আসল মা-বাবা নয়। কিছু সিনেমাতে এমন ঘটনাও দেখা যায় - একজন নারীর প্রতিবেশীর সাথে গোপন সম্পর্ক থাকে। তার সন্তানটি আসলে প্রতিবেশীর সন্তান। এই সত্যটি তার স্বামীও জানে না। স্বামী ওই বাচ্চাটিকে নিজের সন্তান মনে করে বড় করে। এতক্ষন তো সিনেমার ঘটনা বলেছি, এবার বাস্তব বলছি - আমেরিকাতে একবার একটা গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছিলো, প্রতি বছর কয়েক হাজার নবজাতক শিশু (ভুল করে) হাসপাতালে বদল হয়ে যায়।
আপনার ক্ষেত্রে যে তেমন ব্যাতিক্রম ঘটেনি, সেটার কি গ্যারান্টি আছে? যাকে বাবা বলে ডাকেন, সে আপনার আসল বাবা কিনা, সেটা নিশ্চিতভাবে জানার চেস্টা করেছেন? না, আপনি কখনো সেই চেস্টা করেন নি। অন্যরা বলেছে, সেটা শুনেই আপনি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে বাবা চিনেছেন।
এতগুলো ধাপ দেখেয়ে, শুধুমাত্র একটা বিষয় প্রমান করছি - আপনার পুরো জীবনটাই একটা অন্ধ-বিশ্বাস। আপনি নিজে একজন অন্ধ-বিশ্বাসী। অন্যকে অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করার কথা বলে নাটক করেন কেন?