
06/07/2025
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সকলেই আরবি মহররম মাসে এসে পৌঁছেছি। এই মাসের ৯ ও ১০ তারিখে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নফল সিয়াম পালন করি।
অনেকেই ভাবি, এই দিনে কারবালার প্রান্তরে প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় নাতি ইমাম হুসাইন (আঃ) এর নির্মমভাবে শহিদ হওয়ার শোকে মুসলিমরা সিয়াম পালন করে।
কিন্তু অবাক হলেও সত্য এই যে, আশুরার দিন সিয়াম পালন করার পেছনে এই ইতিহাসটি একেবারেই সত্য নয়। তাহলে কেন আমরা আশুরার দিনে সিয়াম পালন করি? কেন এই মাসটিকে “আল্লাহর মাস” বলা হয়? আশুরার সিয়াম পালনের ফজিলতই-বা কি? রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে এই বিষয়ে কি বলে গিয়েছেন, চলুন জেনে নিই-
আল্লাহ সুবাহান তায়ালা সুরা তাওবার ৩৬ নাম্বার আয়াতে বলেছেন: “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই মাসসমূহের সংখ্যা হল বারো মাস। এর মধ্যে চারটি মাস হল নিষিদ্ধ ( অর্থাৎ পবিত্র)। এটাই সরল বিধান। অতএব তোমরা এ মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি জুলুম (ঝগড়া-ফ্যাসাদ) করো না।’’
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিনটি মাস ক্রমান্বয়ে জিলকদ, জিলহাজ্জ ও মুহাররাম। আর চতুর্থ মাসটি হল রজব।
(বুখারঃ কিতাবুত তাফসীর সূরা তাওবাহ পরিচ্ছেদ, মুসলিম ক্বাসামাহ অধ্যায়)।
আর রমজান মাসের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো আল্লাহর মাস মুহররম মাস।’’(মুসলিমঃ২/৮২১)
মহররম মাসে সিয়াম পালন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন- আশুরার দিনের সিয়াম গত এক বছরের পাপ মার্জনা করে।’’ (মুসলিমঃ২/৮১৯)
এই তথ্যগুলো থেকে আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি এই মাসটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এটি কেবল নফল সিয়াম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এতটা সজাগ ছিলেন যে, আশুরার আগের দিন থেকেই সাহাবা কারিমদের রোজা রাখার ব্যাপারে স্মরণ করিয়ে দিতেন এবং অধিক হারে উৎসাহ দিতেন অতঃপর আশুরার দিন রোজা রাখা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে খবরাখবর নিতেন।(মুসলিমঃ ১১২৮)
“আল্লাহর মাস” হওয়া ছাড়াও সিয়াম পালনের আরো একটি কারণ ছিলো। কি সেই রহস্য?
কোরআন আর সুন্নাহ বাছাই করে দেখলে এ রহস্যের পেছনে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও নির্ভরযোগ্য যে কারণটি উদ্ঘাটন হয় তা হলো-
মহানবী (সাঃ) যখন হিজরত করে মদিনা পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইয়াহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে।
তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আঃ) ও বনি ইসরাইলকে ফিরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফিরআউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে সাগরে (লোহিত) ডুবিয়ে মেরেছিলেন
এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মুসা (আঃ) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি।
তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন, “হযরত মুসা (আঃ)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা মুসলিমরা তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার।” অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। (বুখারি-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)
এই থেকে বুঝা যায় আশুরার দিনে সিয়াম পালনে কারবালার মর্মান্তিক ও নেক্কারজনক ঘটনার কোন যোগসাজস নেই। ইসলামিক গবেষকগণ দাবি করেন, কেউ যদি কারবালার শোকের নিয়তে এইদিন সিয়াম পালন করেন এবং তাজিয়া মিছিলে যোগ দেন তাহলে তার ঈমান থাকবে না। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক।
এর কারণ হিসেবে সম্মানিত স্কলারগণ জানান, যেহেতু ইসলামে ৩ দিনের বেশি শোক জ্ঞাপন করা, তারসাথে মুখে প্রহার করা, গাল চাপড়ানো, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা ও শোকে নিজের মাথার চুল কামিয়ে ফেলা অথবা চুল লম্বা করা একেবারে হারাম সেহেতু কারবালার ঘটনায় তাজিয়া মিছিল বের করে অনুরুপ কাজ করা অবশ্যই বেদায়াত এবং ঈমান হারানোর জন্য যথেষ্ট।
(মুসলিমঃ ৩৫৯১, বুখারীঃ ৪৮৯২, ১২৯৪, বায়হাকী- ৪/৬৪, আবু দাউদঃ ৩১১৯)
অতএব, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আশুরার এই দিনে মূলত মুসা (আঃ) আল্লাহর কুদরতে বিজয় লাভ করেন, সেই খুশিতেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পথ অনুসরণ করে আমরাও আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালন করবো, আর তা ৯ ও ১০ মহররম তারিখে,
ইন শা আল্লাহ। (মুসলিম-১১৩৪)
সাথে সাথে ইমাম হুসাইন (আঃ) কে হারানোর বেদনারও আমাদের মনে-প্রাণে অবশ্যই কাজ করবে। সে জন্য সিয়ামরত অবস্থায় আমরা আল্লাহর কাছে রোজ হাশরের দিন হ*ত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রার্থনা করবো।
আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম আক্বিদার অধিকারী হবার তৌফিক দিক। আল্লাহুম্মা আমিন।