06/08/2025
একজন পুরুষের উদ্দেশ্যকে পূরণ করার জন্য, নিজের কর্মকে পূরণ করা অথবা নিঃশেষ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকা উচিত এবং সেই অনুযায়ী তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা শিখতে হবে।
নিজের জীবনের সাথে কী করতে হবে সে নিয়ে তার অজ্ঞতা থাকতে হবে, এই অজ্ঞতার অন্ধকারে থেকে কোনো আলোর জন্য অথবা কোনো উদ্দেশ্যকে আবিষ্কার করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিজের সত্যের শিথিলতায় কর্মকে স্তরে স্তরে নিশ্চিহ্ন করতে থাকা একজন পুরুষের জন্য এই শক্তিশালী ক্রিয়ার আবর্তন এবং বর্তমান নিয়ে অজ্ঞতা স্বাভাবিক।
আপনি যখন নিজের সীমার সাথে নিজেকে উন্মুক্ত করেন, তখন আপনার অন্তরের উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে স্পষ্ট হওয়া শুরু করে। এর সাথে স্তরে স্তরে কাজের পর কাজের অভিজ্ঞতা আপনার হবে, যার প্রত্যেকটা আপনাকে আপনার অন্তরের উদ্দেশ্যকে কাছাকাছি করতে থাকবে। আপনার সত্তার কেন্দ্রস্থলে আপনার অন্তরের উদ্দেশ্য, একে ঘিরে একটার পর একটা ক্রমবর্ধমান কাজের স্তর ঘিরে আছে এমনটা ভাবতে পারেন। এই প্রতিটা স্তরকে চিরে কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হওয়াটা হচ্ছে আপনার জীবন।
আপনার বাইরের উদ্দেশ্যগুলো বংশানুক্রমে, বাবা মা থেকে অথবা আপনার বাল্যকালের অভিজ্ঞতা থেকে আসে। আপনার বাবা একজন পুলিশ, আপনিও সেটা হতে চেয়েছেন। অথবা সেটার সাথে মিলিয়ে আপনি হতে চেয়েছেন একজন গোয়েন্দা। যেকোনো ক্ষেত্রে আপনার বাইরের যে উদ্দেশ্যগুলোকে জীবনের শুরুতে মিলিয়ে নিতে চান সেগুলো হতে পারে আপনার অন্তরের গভীরের উদ্দেশ্যকে চিনে নেয়ার চাবিকাঠি। আল্লাহকে বুঝা এবং তার ধ্যান করা যদি আপনার অন্তরের গভীরের উদ্দেশ্য হয়, তাইলে নিজেকে পুরোপুরি কাজে উৎসর্গ করার আগে যৌনসঙ্গী, মাদকদ্রব্য, বিয়ে, বাচ্চার লালন পালন, ক্যারিয়ারের উন্নতি এসব দেয়াল আপনার ভেদ করতে হবে, শেষ পর্যন্ত আপনার মোহকে দূর করে নিজের পুরো সময়টাকে ধ্যান ভাবনায় ব্যাবহার করতে হবে।
আপনি যতই আপনার বাধাগুলোকে ভেদ করে নিজের অন্তরের দিকে এগোতে থাকেন, আপনি ততই আপনার গভীর থেকে গভীরতর উদ্দেশ্যকে উপভোগ করতে পারেন, শেষে প্রতিটা মুহুর্তে আপনি আপনার হৃদয়ের গভীরতম উদ্দেশ্য অনুযায়ী বাঁচতে পারবেন, সে যাই হোক না কেন। তবে হয়তো আপনি এখনো আপনার গভীরতর উদ্দেশ্যে বেঁচে থাকা শুরু করেননি। আপনার কর্মকে পরিণতি দেয়া আর নিজের বর্তমান চাহিদাগুলো পূরণ করতে হতে পারে কারণ এগুলো আপনাকে মনযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এবং মোহগ্রস্থ করে।
নিজের জীবন নিয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হওয়াটা স্বাভাবিক। সফলতা সবসময় আপনার জন্য তৃপ্তিকর নাও হতে পারে। কিন্তু এর একটা কারণ আছে। একটা মোটামুটি সফলতা পেলে বেশি সময় ভালো লাগবে না, কারণ এর মাধ্যমে আপনি আপনার গভীরতর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাত্র। প্রতিটা উদ্দেশ্য, প্রতিটা মিশনের ভেতরে শুন্যতা, বিরক্তি এবং অর্থহীনতা খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেসবের মাঝে পুরোপুরি বেঁচে থাকতে হবে। এটি আপনার উন্নতির লক্ষণ, যেটিকে আপনি ব্যর্থতা ভেবে ভুল করতে পারেন।
উদাহরণস্বরুপ আপনি একটা বিজনেস প্রজেক্ট নিতে পারেন, সেটা নিয়ে কয়েকবছর কাজ করতে পারেন, হঠাৎ দেখবেন আপনার আগ্রহ একেবারে কমে গেছে। আপনি জানেন আপনি এই প্রজেক্টটা নিয়ে আরো কিছু সময় দিলে আরো বেশি লাভ করতে পারতেন যেটা প্রজেক্ট বাদ দিলে হতো না। কিন্তু এই প্রজেক্ট আপনার আর ভালো লাগে না। আপনি যতদিন এই প্রজেক্টের সাথে কাজ করেছেন ততদিনে এই প্রজেক্টের জন্য আপনার দক্ষতার উন্নয়ন করেছেন কিন্তু এই প্রজেক্ট এখনো পূর্ণতা পায়নি। আপনি ভাবতে পারেন, আপনার দক্ষতা আছে, তাই বলে এই প্রজেক্টে আগ্রহ না থাকলেও সফলতার আগ পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে?
সম্ভবত, কাজটায় লেগে থাকা উচিত। এমনও হতে পারে আপনি তাড়াতাড়ি হার মেনে নিচ্ছেন, আপনার সাফল্য বা ব্যর্থতাকে ভয় পাচ্ছেন অথবা আপনার অলসতার জন্য অধ্যাবসায়ে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। আপনি আগ্রহ হারাচ্ছেন, সাহসের অভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন অথবা আপনার প্রজেক্ট শেষ করতে আপনি ভয় পাচ্ছেন এ নিয়ে আপনার বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তারা যদি বলে আপনি তাড়াতাড়ি পিছিয়ে যাচ্ছেন, তাইলে প্রজেক্টের সাথে লেগে থাকুন।
এমনও হতে পারে, আপনি সম্ভবত আপনার কর্মকে এখানে পরিণতি দিয়েছেন। এমন হতে পারে আপনার উদ্দেশ্যকে অর্জনের একটি স্তর এর মাঝে অতিক্রম করেছেন। এটি আপনার গভীরতর উদ্দেশ্যকে কাছে পাওয়ার জন্য পরবর্তী স্তরে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে।
উদ্দেশ্যের পূর্ণতা পাওয়ার চিহ্ন অথবা একটা স্তর অতিক্রম করার চিহ্নগুলো এমন হতে পারে:
১। যে প্রজেক্টে আপনাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিতো, সেই প্রজেক্টে হঠাৎ করেই আপনার আগ্রহ কমেছে।
২। প্রজেক্ট শেষ করা বা শুরু করা নিয়ে আপনার কিছুই আসে যায় না, আপনার কোনো অনুতাপ হয় না।
৩। আপনি এর পরে কি করবেন তা নিয়ে বিন্দুমাত্র জানা না থাকলেও আপনি পরিষ্কার বুঝতে পারছেন, আপনার কোনো ভ্রান্তি নেই এবং নিজেকে বাধাহীন মনে হচ্ছে।
৪। প্রজেক্টের সাথে আপনার সম্পৃক্ততা কমার সাথে সাথে আপনি একটা শক্তি অনুভব করছেন।
৫। প্রজেক্টটা আপনার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে। যেন জুতোর ফিতে সংগ্রহ করা বা বিদ্যুৎ বিল দিয়ে নিজের দেয়াল সাজানোর মতো। আপনি অবশ্যই পারেন। কিন্তু কেন করতে যাবেন?
এসব চিহ্নের দেখা পেলেই আপনার উচিত প্রজেক্টের কাজ বন্ধ করা। সুন্দরভাবে আপনার সাথে প্রজেক্টের সম্পৃক্ততা শেষ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, প্রজেক্ট বাদ দিতে গিয়ে আপনার যাতে বড়সড় কোনো ক্ষতি না হয় বা আপনার কারণে প্রজেক্টে সম্পৃক্ত অন্য কারু জীবনে যেন নেতিবাচক কোনো প্রভাব না আসে। এতে বেশ সময় লাগতে পারে, তবে এই স্তরকে আপনার পরিষ্কারভাব শেষ করতে হবে। এমনভাবে শেষ করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আপনাকে বা অন্য কাউকে চাপে ফেলে আপনার নতুন কোনো কর্ম বা দায় নিতে না হয়।
আপনার পরবর্তী স্তরের উন্মোচন মুহুর্তেই স্বতস্ফূর্তভাবে স্বচ্ছতা পেতে পারে। অধিকাংশ সময় আবার তা হয় না। উদ্দেশ্যের একটা স্তরকে অতিক্রম করার পর আপনি আপনার জীবন নিয়ে কী করবেন তা আপনার জানা নাও থাকতে পারে। আপনি জানেন আপনার আগের প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেছে কিন্তু এর পরে কি হবে তা আপনি জানেন না। এই পর্যায়ে আপনার একটি ইঙ্গিতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এখানে তাড়াহুড়ো করার কিছুই নেই। হয়তো আপনার এই পর্যায়কে অতিক্রম করার জন্য মাঝামাঝি কোনো একটা কাজ করতে হবে যাতে আপনার উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হয়। এমনও হতে পারে, অপেক্ষা করার মতো যথেষ্ট রসদ আপনার আছে। কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রে পরবর্তীতে কী হবে সেটার ইঙ্গিতের দিকে নিজেকে উন্মুক্ত করে রাখতে হবে। আপনার গভীরের উদ্দেশ্যকে জানার ইঙ্গিতের জন্য নিজের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। টিভি দেখে বা কম্পিউটারে গেমস খেলে সময় কাটাবেন না। আপনার বন্ধুদের সাথে বাংলা খাওয়ার জন্য রাতে বাইরে যাবেন না বা মেয়েদের সাথে সময় কাটাবেন না। একদম সহজ কথা, অপেক্ষা করুন। আপনি অনেক দূরে কোথাও যেতে পারেন এবং একা থাকতে পারেন। আপনি যাই করুন না কেন, নিজেকে উন্মুক্ত রাখুন এবং কোনো ইঙ্গিতের জন্য অপেক্ষা করুন। এটি অবশ্যই আসবে।
যখন আপনি ইঙ্গিত পাবেন, তখন সেটা স্পষ্ট নাও হতে পারে। আপনি কোনদিকে যাবেন তা হয়তো বুঝতে পারবেন, কিন্তু এর বাস্তব পদক্ষেপগুলো স্পষ্ট নাও হতে পারে। যখনি আপনার এসবে ঝোঁক আসবে, তখনি কাজ করা শুরু করুন। বিস্তারিত কিছুই জানতে হবে না, আপনি যেটা করতে চান যাচাই বাছাই করে সেটা শিখতে থাকুন।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আপনার কোনো একটা স্তরকে অতিক্রম করেছেন। আপনি কিছু টাকাকড়ি কামিয়েছেন, এখন আপনার পরবর্তী স্তরে যাওয়ার জন্য কোনো ইঙ্গিতের অপেক্ষা করছেন। তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করে জীবনে কী করবেন ভেবে ভেবে মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আপনি হয়তো দেখবেন অন্য কাউকে সহায়তা করার কথা মনে হবে। আপনি নিজের অর্থনৈতিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অন্যদের ব্যবসাকে গড়ে তোলার কল্পনা করতে পারেন। আপনার কিছু বন্ধু আছে ব্যবসায়ী, যাদের ইচ্ছে আছে দুনিয়াকে নিয়ে কিছু করার কিন্তু তারা দক্ষ ব্যবসায়ী না, তাই তারা উঠে দাঁড়াতে পারছেনা। আপনি তাদেরকে ডেকে সহায়তা করার কথা বলতে পারেন।
আপনি তাদেরকে সহায়তা করতে করতে আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনাকে প্রায়ই খোঁচা দেবে। আপনার শুরুটা ভালো নাও হতে পারে। কিন্তু আপনি আস্তে করে কয়েক ডজন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেয়ার জন্য ফোন কল পেতে পারেন। এমন মনে হবে যে বিশ্বজগৎ আপনাকে এই পথে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি জানেন না যে আপনি এই পথে আয় করতে পারবেন কীনা। কিন্তু এখন এটা করাই ঠিক মনে হচ্ছে। তাই আপনি নিজেকে পুরোপুরি এই কাজে সম্পৃক্ত করুন। আপনি নিজের শতভাগ উপহার এখানে দিন এবং আর পিছে ফিরে তাকাবেন না।
হতে পারে কোনো একজন ধনী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন খুব শীঘ্রই। তিনি আপনার উদ্যম ও দায়িত্ববোধের প্রশংসা করতে পারেন। তিনি আপনার পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারেন। এখন আপনি প্রস্তুত। আপনার ভালো আয় আছে, আপনি আগ্রহের সাথে কাজ করছেন এবং অন্যদেরকে সহায়তা করছেন। আপনি আপনার কাজকে ভালোবাসেন, তাই আপনার সংস্পর্শে এলে অন্যরাও আপনার কাজকে পছন্দ করা শুরু করে। আপনার জীবন পরিপূর্ণ মনে হয়।
তারপর কয়েক বছর কেটে যাবে। কোনো একদিন এসব শেষ হয়ে যাবে। এই দেয়াল ভেঙে যাবে, এই স্তরকে আপনি অতিক্রম করবেন। এবং এই চক্রটি আবার শুরু হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজের অন্তরের উদ্দেশ্যকে আবিষ্কার না করেন। তখন আপনি সেই উদ্দেশ্যকে পূরণ করার চেষ্টা করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটির পূর্ণতা আর ভালোবাসায় আপনি হারিয়ে যান।
- The way of the superior man, David Deida