10/01/2025
**তাকদির, ভালোবাসা, আর জীবনের অনিশ্চয়তা।**
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অনিশ্চিত। আজকের সম্ভাবনার গাছপালা কাল হয়তো ঝড়ে ভেঙে পড়বে, আবার একফোঁটা পানিতে অনুর্বর জমি হয়ে উঠতে পারে সবুজে সমৃদ্ধ। আমাদের জীবনের উঠানামা তাকদিরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, আর তাকদির কেবল আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার হাতে। তাই, মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো চেষ্টা করে যাওয়া, ধৈর্য ধরা, আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা।
ইসলামে বলা হয়েছে, **"তোমাদের মধ্যে যিনি কারও ভালোবাসার যোগ্য, তাকে বিয়ে করো।"** নবীজী (সাঃ) বলেন, ভালোবাসা আল্লাহর দেওয়া একটি অমূল্য নিয়ামত, যা হালাল পথে রক্ষা করা মানুষের দায়িত্ব। ভালোবাসা যদি শুদ্ধ হয়, নেক নিয়তে হয়, তবে সেটি আল্লাহর রহমত হিসেবে পরিণতি পেতে বাধ্য।
কিন্তু আমাদের সমাজে অনেক সময় জীবনের এই সুন্দরতম সম্পর্কটি তৈরি করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় 'বর্তমান পরিস্থিতি' কিংবা 'সেটেল্ড ক্যারিয়ার' এর মতো বিষয়। এটি শুধু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে না, বরং ভালোবাসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অথচ আল্লাহ বলেছেন, **"তোমরা তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস রাখো, কেননা তা তোমার জীবনকে পরিচালিত করে।"**
একজন মানুষ জীবনে অনেক স্বপ্ন দেখে, অনেক চেষ্টা করে। আজ হয়তো তার হাতে তেমন কিছু নেই, কিন্তু কাল আল্লাহ চাইলে তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। ঠিক যেমন আমরা দেখি, অনেক ধনী মানুষ এক মুহূর্তে নিঃস্ব হয়ে যায়, আবার অনেক অসহায় মানুষ আল্লাহর রহমতে একদিন সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যায়। আমাদের কাজ হলো একজন মানুষের 'ইচ্ছাশক্তি', 'ধৈর্য' এবং 'প্রতিভা'কে মূল্যায়ন করা।
ইসলামে মা-বাবার সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত নয়, যদি তাদের সন্তানের ইচ্ছা ও ভালোবাসা সঠিক এবং হালাল পথে থাকে। একজন মা-বাবার উচিত সন্তানের ভালোবাসাকে বুঝতে চেষ্টা করা এবং তাদের জীবনের সিদ্ধান্তে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া। ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি, যা আল্লাহর ইচ্ছায় গড়ে ওঠে এবং তাঁর ইচ্ছায় পূর্ণতা পায়।
মায়েদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, পৃথিবীতে কেউই এক মুহূর্তে সবকিছু পায় না। প্রতিটি বড় সফলতার পেছনে থাকে কঠোর পরিশ্রম আর অগাধ ইমান। আজকের পরিস্থিতি দিয়ে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। একজন মানুষের ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ়তা তার ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সেই মানুষটি যদি নিজের চেষ্টা, নেক নিয়ত, আর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন গড়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে তাকে আপনার সন্তানের জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
প্রতিটি ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার যোগ্য, যদি তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে থাকে। মায়েদের কাছে অনুরোধ, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আজকের অনিশ্চয়তাই হয়তো আগামী দিনের সবচেয়ে সুন্দর সুখের কারণ হতে পারে। আমরা মানুষ, আমাদের ক্ষমতা সীমিত, কিন্তু আল্লাহর রহমত সীমাহীন। তাই, সিদ্ধান্ত নিন ইমানের ভিত্তিতে, ভালোবাসার ভিত্তিতে, এবং তাকদিরের প্রতি আস্থার ভিত্তিতে। ✍️
**সমাজ, মানুষ, এবং ভালোবাসার একান্ত সত্য**
"সমাজ কি বলবে?"—এই একটি প্রশ্ন আমাদের জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অথচ আমরা ভুলে যাই, সমাজ চিরদিনই কিছু না কিছু বলবে। সমাজ কখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয় না, কারণ মানুষের মন পরিবর্তনশীল, এবং তাদের কথা আমাদের জীবনের প্রকৃত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করার যোগ্য নয়। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরআনে বলেছেন, **"তোমরা কেবল আমার কাছে জবাবদিহি করবে, মানুষের কাছে নয়।"** (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৬৯)
প্রথমত, সমাজের কথাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নিজের জীবন এবং ভালোবাসার প্রতি অন্যায় ,অবিচার,করে বসি। ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, **"আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যখন এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার চরিত্র ও দ্বীন তোমাদের সন্তুষ্ট করে, তাকে বিয়ে দিয়ে দাও।"** (তিরমিজি, হাদিস ১০৮৪)। এখানে সমাজের কথা নয়, বরং মানুষের চরিত্র, দ্বীনদারি এবং নিয়তকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
আজ যাকে সমাজ প্রশ্ন করছে—"সে কি করে?"—সম্ভবত সেই মানুষটিই কাল আল্লাহর রহমতে সমাজের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। একজন মানুষকে তার বর্তমান পরিস্থিতি দিয়ে বিচার করা অযৌক্তিক। কারণ আমাদের জীবন আল্লাহর হাতে, এবং তিনিই জীবন পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন। **"তিনি যার ইচ্ছা তাকে সম্মানিত করেন এবং যার ইচ্ছা তাকে অপমান করেন।"** (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ২৬)
সমাজের কথা নিয়ে চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সমাজের কথাই কি আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি হতে পারে? মানুষ একসময় রাসুল (সাঃ)-কেও কটূক্তি করেছে, কিন্তু তাঁর জীবন আল্লাহর পরিকল্পনার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় উঠেছে। সমাজ তো কেবল বাহ্যিক বিষয় দেখে, কিন্তু একজন মানুষের পরিশ্রম, নিয়ত, এবং আল্লাহর প্রতি ভরসার কথা তারা কখনই বুঝতে পারে না।
একজন মা হিসেবে সন্তানের জন্য আপনি নিশ্চয়ই ভালো কিছু চান। তবে ভালোবাসা এবং তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে বলা হয়েছে, **"তোমরা আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতগুলো গ্রহণ করো এবং ভালোবাসাকে সম্মান করো।"** ভালোবাসা এবং সংসার তৈরির ইচ্ছা যদি হালাল পথে হয়, তবে তাতে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।
সমাজের মুখের কথা নিয়ে ভাবার আগে একজন মা হিসেবে আপনার সন্তানের সুখ এবং ভবিষ্যৎ স্থায়িত্ব নিয়ে ভাবা উচিত। মানুষ হয়তো আজ প্রশ্ন করবে, কিন্তু কাল আল্লাহর ইচ্ছায় তারাই প্রশংসা করবে। আমাদের কাজ হলো চেষ্টা করা, পরিশ্রম করা, এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, **"তোমাদের কেউ যেন জীবিকার কারণে হালাল ভালোবাসাকে বাদ না দেয়।"** (তিরমিজি)
আজ হয়তো আপনার সামনে প্রশ্ন, "সে কি করে?" কিন্তু আপনার সন্তানের ভালোবাসার মানুষটি তার ভবিষ্যৎ গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সফল হবে। জীবনে সফলতা এবং স্থিতি আসে ধৈর্য, পরিশ্রম, এবং আল্লাহর ইচ্ছার মাধ্যমে। আপনার সন্তানও সেই ভালোবাসার মাধ্যমে একটি সুন্দর জীবন গড়তে পারবে।
মায়েদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আজকের অনিশ্চয়তা হয়তো আগামী দিনের সবচেয়ে বড় সুখের বার্তা নিয়ে আসবে। সমাজ তো চিরকাল কিছু না কিছু বলবেই, কিন্তু আপনি যদি আপনার সন্তানের পাশে দাঁড়ান, তবে সেটাই হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। আল্লাহ আপনার সিদ্ধান্তে কল্যাণময় বরকত দান করুন। আমিন। আমিন।
লেখক: MD Siamul Islam Tamim ✍️
January 10, 2025 at 10:27 PM