16/05/2025
শেষ ট্রেন
একটি ব্যর্থ ভালোবাসার গল্প
ছোট একটা পাড়ার দুই ঘর পাশাপাশি--তিশা আর অনিকের বাসা। স্কুলে যাওয়ার পথে একসাথে হাঁটা, বৃষ্টির দিনে এক ছাতার নিচে দৌড়ে পালানো, ঈদের আগে নতুন জামা দেখানো—-সবই ছিল তাদের বন্ধুত্বের অংশ।
তাদের বন্ধুত্ব এমনই ছিল, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা একে অপরের পাশে।।
তিশার মা বলতেন,
-- "তোমাদের দুজনকে দেখলে মনে হয় ভাই-বোন!"
তিশা তখন হেসে ফেলত, কিন্তু তার মনে এক অদ্ভুত খচখচে অনুভূতি হতো। ভাই-বোন নয়, অনিক তার কাছে অন্য কিছু—অন্য রকম কিছু।
তিশার অনুভূতিটা প্রথম স্পষ্ট হয় ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। একদিন হঠাৎ অনিক স্কুলে আসেনি। সেদিন ক্লাসে তার মন বসেনি, অকারণেই খারাপ লাগছিল। বাসায় এসে যখন জানল অনিক জ্বর নিয়ে শুয়ে আছে, তখন তার বুকের ভেতর কেমন যেন হালকা হয়ে গেল।
তারপর থেকে প্রতিদিনের সকাল, বিকেল, রাত—সবই অনিক দিয়ে শুরু আর অনিক দিয়ে শেষ।
কিন্তু অনিক?
সে ছিল হাসিখুশি, প্রাণবন্ত। দারুণভাবে খেলত, গান গাইত, আর সবার বন্ধু ছিল।
তিশার ওপর তার একরকম নির্ভরতা ছিল—সব সমস্যার সমাধান তিশা। কিন্তু সে কখনোই বোঝেনি যে এই বন্ধুত্বের ছায়ায় তিশা একা দাঁড়িয়ে আছে, ভালোবাসার গোপন একটা জায়গায়।
---
একদিন
এইসব চলতে চলতেই হঠাৎ একদিন অনিক জানায়,
— “আমি ঢাকায় যাচ্ছি, ভর্তি কোচিং। আব্বু বলেছে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে।”
তিশার মুখ শুকিয়ে যায়।
সে বোঝে না, অনিক চলে গেলে প্রতিদিন সন্ধ্যার আড্ডা, রিকশাভ্রমণ, পাড়ার ফুটবল খেলা—সব কিছু থেমে যাবে।
কিন্তু সে কিছু বলে না, শুধু বলে—
“কবে যাচ্ছিস?”
— “এই শুক্রবারে, শেষ ট্রেনে।”
---
প্রস্তাব
বৃহস্পতিবার রাতে, তিশা সাহস করে ছাদে ডাকে অনিককে। আকাশটা ছিল তারাভরা, আর তার বুকের ভেতর ছিল ঝড়।
সে ধীরে ধীরে বলে ফেলে,
“অনিক, আমি তোকে ভালোবাসি।”
একটা দীর্ঘ নীরবতা।
তারপর অনিক শুধু বলে,
“তুই তো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু… কিন্তু আমি তোকে কখনও সে চোখে দেখিনি।”
তিশা শুধু মাথা নাড়ে, কাঁদে না।
সে বলে,
— “ঠিক আছে… তোকে শেষ ট্রেনটা দেখতে আসব না। বিদায় জানালে ভাঙা মুখ পড়ে যাবে মুখে।”
অনিক তাকায়, কিছু বলে না।
---
শেষ ট্রেন
পরদিন রাতে, স্টেশনে মানুষের ভিড়। শেষ ট্রেনের হুইসেল বাজে। অনিকের চোখ খুঁজে ফেরে পরিচিত মুখ—তিশা আসেনি।
তিশা তখন ছাদে বসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে। সে ভাবে, "শেষ ট্রেন হয়তো তাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু কিছু অনুভূতি কোনো ট্রেনেই চাপতে পারে না।"
---
বছর চার পর...
ফেসবুকে একদিন তিশা দেখে—
অনিক বিয়ে করেছে। পাশে এক সুন্দরী মেয়ে, ক্যাপশন: "Finally, my forever begins!"
তিশা পোস্টটা দেখে। হাসে।
তারপর মোবাইলটা রেখে দেয় টেবিলে।
তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়, আকাশের দিকে তাকায়।
তেমনিই এক তারাভরা রাত।
কিন্তু আজ তিশার হৃদয় নিঃসঙ্গ নয়—বরং সে জানে, কেউ কাছে না থাকলেও নিজের ভালোবাসাটুকু সে নিজের মতো বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
শেষ ট্রেন চলে গেছে,
কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে ভালোবাসার সেই আসন আজও খালি,
শুধু বসার কেউ নেই।