28/03/2025
#টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতির আদায় করা যাবে কি?
بسم الله الرحمن الرحيم
টাকা দ্বারা ‘‘ফিতরা’’ দেয়া হাদীস ও ইমামগণের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত
✏ বর্তমানে আমাদের দেশে গায়রে মুকাল্লেদগণ ফাতওয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে যে, ‘‘সহীহ বুখারীর মাঝে আছে ফিতরা দিতে হবে গম, খেজুর, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। টাকা দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না!!’’
তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন-
أغلاها ثمنا وأنفسها عند أهلها
‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’। -সহীহ বুখারী, কিতাবুল ইতক ৩/১৮৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান বাব আফযালুল আমল ১/৬৯
#খেজুর,যব,কিসমিস,পনির বা গম এর পরিবর্তে অন্য কিছু দ্বারা কী সাদকাহ করা যায় না??
উত্তরঃ—
بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ. وَقَالَ طَاوُسٌ : قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ الْيَمَنِ : ائْتُونِي بِعَرْضٍ، ثِيَابٍ خَمِيصٍ أَوْ لَبِيسٍ فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ، وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلّي اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ.
হযরত মুআয {রাজি:} ইয়ামানের অধিবাসীদেরকে বললেন: তোমরা তোমাদের সাদাকার মধ্যে কাপড় নিয়ে এসো খাদ্য দ্রব্যাদির স্থলে। সেটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদীনায় নবীজীর সাহাবীদের জন্য অধিকতর উত্তম।
{সহীহুল বুখারী ১৪৪৮নং হাদীসের পূর্বে }
ইয়ামান বাসীর জন্য কাপড় ছিলো অধিকতর সহজ এবং মদীনাবাসীদের জন্য অধিক উত্তম ও উপযুক্ত ৷ এজন্য তিনি সেটার নির্দেশ দিয়েছেন । আর বর্তমান যুগে টাকা অধিকতর সহজ এবং উপযোগী এজন্য বর্তমানে টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর প্রদান করা উত্তম হবে ৷ বর্তমান পরিস্থিতি হিসেবে আপনি যদি কোন ফকির মিসকিনকে গম বা আটা দেন, তাহলে তার যখন কাপড়ের বা অন্য কোন জিনিসের প্রয়োজন পড়বে, তখন এটা বিক্রি করতে হবে। বিক্রি করতে গিয়ে সে প্রকৃত মূল্যে বিক্রি করতে পারবে না। অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে হবে। এতে তার লাভ হবে না বরং ক্ষতি হবে।
❏ তাছাড়াও ইমাম বুখারী (রহ.), ইবনে আবী শায়বা (রহ.) ও বায়হাকি (রহ.) বলেন, টাকা দিয়ে ফিতরা দিলে আদায় হয়ে যাবে। নিম্মে বিস্তারিত….
❀❖ যদি গম, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করে, তাহলে হয়ে যাবে। তার দলীল বুখারী থেকে-
صحيح البخاري (2/ 130)
1503 – حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَهْضَمٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى العَبْدِ وَالحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاَةِ»
__________
[تعليق مصطفى البغا] (فرض) أوجب أو قدر.
❐ অর্থ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) زَكَاةَ الفِطْرِ সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আবশ্যক করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬।
صحيح البخاري (2/ 131)
1506 – حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي سَرْحٍ العَامِرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الخُدْرِيَّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: «كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ»
❐ অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী(রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে زَكَاةَ الفِطْرِ সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬।
✏ উল্লেখ্য যে, উক্ত দুটি হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, কোন ব্যক্তি চাইলে মাল দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবে। কিন্তু টাকা দ্বারা আদায় করা ভুল এধরনের কোন আলোচনা নেই।
❖ আর زَكَاةَ الفِطْرِ সাদাকায়ে ফিতর হলো ওয়াজিব। এখন প্রশ্ন জাগে তাহলে ইমাম বুখারী অনুচ্ছেদের মাঝে ফরয শব্দ ব্যবহার করেছেন আর হাদীসের মাঝেও ফরয শব্দ এসেছে, তাহলে ওয়াজিব কোথা থেকে আসলো?
❖ তার উত্তরে বলা হবে, ইমাম বুখারী (রহ.) এর নিকট ওয়াজিব আর ফরয দুটি এক। তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হলো ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীর মাঝে এক অনুচ্ছেদ এভাবে বলেন- باب وجوب الحج অর্থাৎ এ অনুচ্ছেদ হজ্ব ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে! (অথচ আমরা সকলেই জানি হজ্ব ফরয। তাহলে ইমাম বুখারী ওয়াজিব বললেন কেন? তার জবাব হলো ইমাম বুখারীর নিকট ফরয ও ওয়াজিব একই) ।
আর হাদীসের মাঝে ফরয শব্দ ব্যবহার হলেই সর্ব স্থলে তার দ্বারা ফরয উর্দ্দেশ্য নয়। কেননা হাদীসের পরিভাষা দেখলে দেখা যায় ফরয শব্দটি কখনো أوجب قدر عين بين অথাৎ ওয়াজিব, নির্ধারণ, বর্ণনা, ব্যাখ্যা ইত্যাদি অর্থেও প্রয়োগ হয়। (অতএব ফরযের দাবী করে উত্তাল হয়ে যাওয়ার সুযোগ কোথায়?) দেখুন নিম্মে তার কিছু দৃষ্টান্ত-
صحيح البخاري (5/ 63)
3912 – حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا هِشَامٌ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ فَرَضَ لِلْمُهَاجِرِينَ الْأَوَّلِينَ أَرْبَعَةَ آلَافٍ فِي أَرْبَعَةٍ، وَفَرَضَ لِابْنِ عُمَرَ ثَلَاثَةَ آلَافٍ وَخَمْسَ مِائَةٍ، فَقِيلَ لَهُ هُوَ مِنَ المُهَاجِرِينَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ مِنْ أَرْبَعَةِ آلاَفٍ، فَقَالَ: ” إِنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أَبَوَاهُ يَقُولُ: لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ ”
__________
[تعليق مصطفى البغا] [ ش (فرض) عين من مال بيت المال.
صحيح البخاري (6/ 156)
{قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ، وَاللَّهُ مَوْلاَكُمْ وَهُوَ العَلِيمُ الحَكِيمُ} [التحريم: 2] __________
[تعليق مصطفى البغا] [ ش (فرض) بين.
সহীহ বুখারী-৫/৬৩, হাদীস-৩৯১২, সহীহ বুখারী-৬/১৫৬।
❀❖ #টাকা দ্বারা সাদকা আদায়ঃ—
ইমাম বুখারীর উস্তাজ ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শাইবা রহঃ “মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা” এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫০৭ নং পৃষ্ঠায় শিরোনাম এনেছেন فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ তথা টাকার বিনিময়ে সদকায়ে ফিতির প্রদান করা।
এর অধীনে তিনি একাধিক আছার উল্লেখ করেছেন:—
ফিতরা’’ টাকা দ্বারা আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। তার দলীল-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
فِي إِعْطَاءِ الدَّرَاهِمِ فِي زَكَاةِ الْفِطْرِ
10371 – حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: «أَدْرَكْتُهُمْ وَهُمْ يُعْطُونَ فِي صَدَقَةِ رَمَضَانَ الدَّرَاهِمَ بِقِيمَةِ الطَّعَامِ»
অর্থ : হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১। এটির সনদ সম্পূর্ণ সহীহ তথা প্রমাণযোগ্য।
যুহাইর থেকে তাবেঈ আবু ইসহাকের বর্ননা সহীহ ৷
(দেখুন ইবনুল কাইয়ূমের রহ: তাহযিবুস সুনান ১/২৭৯পৃষ্ঠা এবং সিলসিলাতুস সহীহা ২০৫৫ নং হাদীসের আলোচনা)
সহীহুল বুখারী-
৪০,,১৫৬,,২৫২,,২৫৪,,১০২২,,১৬৭৫,,২৯৩০,,৩০৩৯,,৩৫৫২,,৩৯৫৭,,৩৯৬০,,৩৯৮৬,,৪০৬৭,,৪১৫১,,৪৪০৪,,৪৪৮৬,,৪৫৬১,,৪৮৭১,,৫০১১ ইত্যাদি ইত্যাদি হাদীসে যুহাইর রহ: তাবেঈ আবু ইসহাক রহঃ থেকে হাদীস বর্ননা করেছেন ৷৷
✏ তেমনিভাবে ইবনে আবী শায়বার মাঝে টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে রয়েছে হযরত হাসান বসরী (রহ.) এর আসার-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10370 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ هِشَامٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «لَا بَأْسَ أَنْ تُعْطِيَ الدَّرَاهِمَ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ»
অর্থ : হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোন সমস্যা নেই। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭১, ১০৩৭০]
✏ অনুরুপ ভাবে রয়েছে এ বিষয়ে হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহ.) এর চিঠি-
مصنف ابن أبي شيبة (2/ 398)
10369 – حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ قُرَّةَ، قَالَ: جَاءَنَا كِتَابُ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فِي صَدَقَةِ الْفِطْرِ «نِصْفُ صَاعٍ عَنْ كُلِّ إِنْسَانٍ أَوْ قِيمَتُهُ نِصْفُ دِرْهَمٍ»
তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ এর ফরমান আসলঃ “প্রত্যেক লোক থেকে আধা সা’ বা অর্ধেক দিরহামের সমমূল্য সদকায়ে ফিতির আদায় করার। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৬/৫০৮, বর্ণনা নং-১০৪৭০„ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯]
আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে–بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ. অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।
✏ তাছাড়াও রাসূল (সা.) এর যুগেও زَكَاةَ الفِطْرِ ও زكوة ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হলো-
صحيح البخاري (2/ 116)
وَقَالَ طَاوُسٌ قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ الْيَمَنِ ائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ أَوْ لَبِيسٍ فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدْ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الْفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا فَجَعَلَتْ الْمَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ مِنْ الْعُرُوضِ
তাউস (রহঃ) বলেন, মু‘আয (ইবনে জাবাল) (রাঃ) ইয়ামনবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এস। ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী (সাঃ) এর সাহাবীগণের জন্যও উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা) এর ব্যাপার হলো এই যে, সে তার বর্ম ও যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছে। (মহিলাদের লক্ষ্য করে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তোমাদের অলংকার থেকে হলেও সাদকা কর ।
[ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণাদ্রব্যের যাকাত সেই পণ্যে দ্বারাই আদায় করতে হবে এমন নির্দিষ্ট করে দেননি। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও গলার হার খুলে দিতে আরম্ভ করলেন, [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন,] সোনা ও রূপার বিষয়টি পণাদ্রব্য থেকে পৃথক করেননি (বরং উভয় প্রকারেই যাকাত স্বরূপ গ্রহন করা হত)।
সহীহ বুখারী-২/১১৬। সহীহ বুখারী (ইফাঃ)হাদিস নম্বরঃ ১৩৬৪
টাকা দিয়ে সাদকাহ আদায় করা কী বিদআত ??
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، قَالَ : حَدَّثَنِي ثُمَامَةُ ، أَنَّ أَنَسًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، حَدَّثَهُ أَنَّ أَبَا بَكْرٍرَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَتَبَ لَهُ الَّتِي أَمَرَ اللَّهُ رَسُولَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " وَمَنْ بَلَغَتْ صَدَقَتُهُ بِنْتَ مَخَاضٍ وَلَيْسَتْ عِنْدَهُ، وَعِنْدَهُ بِنْتُ لَبُونٍ فَإِنَّهَا تُقْبَلُ مِنْهُ، وَيُعْطِيهِ الْمُصَدِّقُ عِشْرِينَ دِرْهَمًا أَوْ شَاتَيْنِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ عِنْدَهُ بِنْتُ مَخَاضٍ عَلَى وَجْهِهَا وَعِنْدَهُ ابْنُ لَبُونٍ فَإِنَّهُ يُقْبَلُ مِنْهُ، وَلَيْسَ مَعَهُ شَيْءٌ ".
{كما في صحيح البخاري رقم الحديث 1448}
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
আবূ বকর (রাঃ) আনাস (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা’আলা যাকাত সম্পর্কে যে বিধান দিয়েছেন সে সম্পর্কে লিখে জানালেন, যে ব্যক্তির উপর যাকাত হিসেবে *বিনতে মাখায ওয়াজিব হয়েছে কিন্তু তার কাছে তা নেই বরং *বিনতে লাবূন রয়েছে, তা হলে তা-ই (যাকাত স্বরূপ) গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় যাকাত আদায়কারী যাকাত দাতাকে 💢বিশটি দিরহাম 💢বা দুটি বকরী দিবে।
আর যদি বিনতে মাখায না থাকে বরং ইব্নু লাবূন থাকে তা হলে তা-ই গ্রহণ করা হবে। এমতাবস্থায় আদায়কারীর যাকাত দাতাকে কিছু দিতে হবে না।
নোটঃ
*বিনতু মাখায অর্থ হচ্ছে যে যে উট এক বছর পূর্ণ হয়ে সবেমাত্র দ্বিতীয় বর্ষে পতিত হয়েছে।
*বিনতু লাবূন অর্থ যে উট দু’বছর পূর্ণ হয়ে সবে মাত্র তৃতীয় বর্ষে পতিত হয়েছে।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৪৪৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
এই হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ {স:} যাকাতে ওয়াজিব হওয়া বস্তুর বিনিময়ে টাকা (দিরহাম) দিয়ে আদায়ের প্রতি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ৷
অর্থাৎ, সাদকাহ আদায় হওয়াটা জরুরী, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো বস্তু দ্বারাই আদায় জরুরী নয় ৷৷
✏ উল্লেখ্য যে, সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি-
فتح الباري لابن حجر (3/ 312)
(قَوْلُهُ بَابُ الْعَرْضِ فِي الزَّكَاةِ)
أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ……الخ
…..আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষন করেছেন….। ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২।
✏ ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহঃ বলেন:—
لا يشترط إخراج التمر أو الشعير أو البر في زكاة الفطر بل لو أخرج قيمتها مما هو أنفع للفقير جاز لأن المقصد منها إغناء الفقراء عن المسألة وسد حاجتهم في هذا اليوم
খেজুর, গম বা যব দিয়ে সদকায়ে ফিতির আদায় করা আবশ্যক নয়। বরং যদি এর মূল্য দ্বারা আদায় করা হয়, যা গরীবদের জন্য অধিক উপকারী, তবে তা জায়েজ আছে। কেননা, সদকার দ্বারা মূল মাকসাদ হল, গরীবদের দারিদ্রতা দূর করা এবং তার সেদিনের প্রয়োজন পূর্ণ করা। [মাউসূআতু ফিক্বহি সুফিয়ান সাওরী-৪৭৩]
টাকা দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায়ের মত ব্যক্ত করেছেন, ইমাম আবূ হানীফা রহঃ, ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহঃ, উমর বিন আব্দুল আজীজ রহঃ, হযরত হাসান বসরী রহঃ, ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ, ইমাম তাহাবী রহঃ, ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াই রহঃ, ইমাম আবু সাউর রহঃ। [যাকাতুল ফিতরি আহকামূহা ওয়া নাওয়াজিলুহা, মুহাম্মদ বিন আব্দুল গাফফার শরীফকৃত-১২৫]
قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ
ইবনে রশীদ বলেন, ইমাম বুখারী রহঃ এ মাসআলায় [টাকা দিয়ে সদকায়ে ফিতির আদায় করা] হানাফীদের সাথে সহমত পোষণ করেছেন। [ফাতহুল বারী-৩/৪৯৭]
✏রাসুলুল্লাহ সঃ কী কী দিয়ে আদায় করতে বলেছেন,সেই নির্দেশটা দেখুনঃ—
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَرَضَ زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ عَبْدٍ، ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى، مِنَ الْمُسْلِمِينَ.
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ হতে সদকাতুল ফিতর হিসেবে #খেজুর_অথবা_যব-এর এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয করেছেন।
[সহিহ বুখারী, বর্ণনা নং ১৫০৪,১৫১২]
✏এবারে রাসুলুল্লাহর সঃ জীবিত থাকাবস্থায় সাহাবীদের আমল দেখিঃ—
حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو عُمَرَ، عَنْ زَيْدٍ، عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كُنَّا نُخْرِجُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ. وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ.
আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ঈদের দিন এক সা’ পরিমাণ খাদ্য সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, আমাদের খাদ্যদ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনির ও খেজুর।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫১০]
প্রসঙ্গঃ- টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় হবে কি না ??
গরীবের অধীক উপকার দিক বিবেচ্যে আমাদের দেশে যাকাতুল ফিতর আদায় করা হয় টাকা দিয়ে। আর টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় সালাফ রাঃ থেকে প্রমাণিত। তাই আমাদের দেশের বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলিম-উলামা টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায়ের পক্ষে ফতোয়া দেন।
🔴 টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করলে, তা হয়ে যাবে। ফতোয়া প্রদানে সৌদি আরবের প্রথম সারীর দক্ষ ও বিজ্ঞ আলিম শায়খ আব্দুল আজীজ তুরাইফী হাফিজাহুল্লাহ। আমি আপনাদের বুঝার স্বার্থে ভাবানুবাদ তুলে ধরছি
শায়খ তুরাফীঃ- আসল হচ্ছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ সূত্রে রাসূল সাঃ খাজুর, শস্য ইত্যাদি দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায় করা ফারজ করেছেন। যা মূলত যে কোন খাদ্যদ্রব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে।
বাদবাকি, টাকা দিয়ে যাকাত যাতুল ফিতর আদায় করলে তাও হয়ে যাবে। কেননা, টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায়ের কথা অনেক সালাফ থেকে বর্ণিত এমনকি কিছু সাহাবা থেকেও বর্ণিত আছে, যা তাদের গবেষণাকর্ম ছিলো।
বর্ণিত আছে, উমার বিন আব্দুল আজীজ রাহিমাহুল্লাহ উনার কর্মচারীদেরকে খাদ্য অথবা তার সমমানের মূল্য দিয়ে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে চিঠি লিখেন।
এছাড়াও, হাসান বসরী রাঃ,ইসহাক রাঃ সহ আরো অসংখ্য কূফা ইমামদের থেকে এমনটি বর্ণিত আছে, যারা প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া, ইমামে আজম আবু হানিফা রাঃ টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর আদায়ের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। এমনি একটি ফতোয়া ইমামে আহমদ রাঃ থেকেও বর্ণিত আছে।
উনারা সবাই আমাদের সালাফ। তারা গবেষণা করে গরীব ও অসহায়ের অধীক ফায়দার দিকটা বিবেচনা করে টাকা দিয়ে যাকাত আদায়ের ফতোয়া প্রদান করেন। এমনকি, এরকম একটা গবেষণা রাসূলের সাহাবা থেকে পাওয়া যায়, তারা শাম ও মদীনার খাদ্য দিয়ে যাকাত আদায়ের মধ্যে পার্থক্য করেন, যা গরীবের ফায়দার দিক বিবেচনা করে,,,,, !
মোদ্দাকথা, শায়খ তুরাইফী হাঃ এর ফতোয়া হচ্ছে, টাকা দিয়ে যাকাতুল ফিতর দিলে তা আদায় হয়ে যাবে । আর এটা মূলত মাকাসিদ ও ইস্তেনবাত ( গবেষণা) এর ফতোয়া, যা গরীবের অধীক ফায়দার দিকটা বিবেচনা করা হয়েছে। এরকম আমল রাসূল(সাঃ) এর সাহাবা ও সালাফগণ থেকে প্রমাণিত।