23/01/2025
বাংলার ওসামা বললে ভুল হবে না।
মুফতি আব্দুর রউফ আফগানী রহ. একজন সাহসী এবং দূরদর্শী ইসলামী নেতার প্রতীক। তার জীবন ছিল ইলম, জিহাদ এবং ইসলামের খেদমতে নিবেদিত। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে বোঝা যায়, তিনি শুধুমাত্র একজন সাধারণ আলেম ছিলেন না, বরং ইসলামের বিজয়ের জন্য সংগ্রামী একজন মহাপুরুষ ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
মুফতি আব্দুর রউফ আফগানী রহ. বাংলাদেশের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মদপুর থেকে তার প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেন। পরে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার জন্য তিনি ভারতের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ-এ ভর্তি হন। দেওবন্দে তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহসহ ইসলামী বিভিন্ন শাস্ত্রে গভীর দক্ষতা অর্জন করেন এবং ইসলামী চিন্তাধারায় নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলেন।
জিহাদের জীবন
দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মুজাহিদদের পক্ষে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানের মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন এবং সরাসরি জিহাদে অংশ নেন।
খোস্ত প্রদেশের কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ:
তিনি আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে কমান্ডার নিযুক্ত হন। তার অধীনে প্রায় ৪০ হাজার মুজাহিদ একসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। তার বীরত্ব এবং নেতৃত্বের গুণে রাশিয়ার মতো বিশাল সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।
উসামা বিন লাদেনের সাথে সম্পর্ক:
উসামা বিন লাদেন রহ. প্রায় চার ওয়াক্ত নামাজ মুফতি আব্দুর রউফ আফগানী রহ.-এর ইমামতিতে আদায় করতেন। এটি তার ইমামতিগুণ এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের দৃষ্টান্তস্বরূপ।
পাকিস্তানে প্রভাব ও বক্তৃতা
পাকিস্তানে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন ইসলামিক প্রোগ্রামে অংশ নিতেন এবং তার বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষকে দ্বীনের পথে অনুপ্রাণিত করতেন। তার বক্তৃতাগুলো এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, পাকিস্তানের মানুষ এগুলো একত্রিত করে “রউফ কি আজান” নামে একটি বই প্রকাশ করে।
বাংলাদেশে ফিরে আসা
আফগানিস্তানে দীর্ঘ জিহাদ শেষে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার চেষ্টা করেন এবং দেশের বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র
৯০-এর দশক থেকে তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ইসলামের খিলাফত এবং জিহাদের বার্তা ছড়ানোর জন্য তিনি কিছু বিশেষ মহলের বিরাগভাজন হন। তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। ২০০৬ সালে এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জেলখানায় জীবন ও শাহাদাত
তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। তাকে রমনা বটমূল, ২১ আগস্ট হামলাসহ বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর কারাবাস করেন। এই বন্দিজীবনেও তিনি ইসলামের দাওয়াত এবং দ্বীনের খেদমত অব্যাহত রাখেন। অবশেষে, কারাগারেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
উনার ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব
তিনি ছিলেন “আশিদ্দাউ আলাল কুফফার” এই আয়াতের জীবন্ত উদাহরণ।
তার ব্যক্তিত্ব ছিল দুই ধরণের—একদিকে তিনি ছিলেন কোমল এবং শিশুদের স্নেহশীল, অন্যদিকে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে কঠোর।
তার বয়ান এবং তিলাওয়াতের জাদুতে মানুষ তাকে মেনে নিত এবং অনুসরণ করত।
তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকে অসংখ্য ছাত্র দ্বীনের পথে এগিয়ে চলছে।
শেষ কথা
মুফতি আব্দুর রউফ আফগানী রহ. শুধু একজন বীর মুজাহিদ নন, তিনি ছিলেন ইলম, নেতৃত্ব, এবং ইসলামের খেদমতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার মতো মানুষদের জীবন থেকে আমরা শিখি কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা যায়। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দান করুন।