01/04/2023
আমি পেশায় ব্যবসায়ী, আমার ২ -৩ টি ছোট ব্যবসা রয়েছে।
আমার একটি সার্ভিস হল এডুকেশনাল কনসালটেন্সি- মেডি এন্ট্রি বাংলাদেশ। www.medientrybd.com বিগত পাঁচ বছর ভারতের ছাত্র-ছাত্রীদের কে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তিতে সহায়তা প্রদান করছে।
আমার অতি অল্প অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, ডলার/রেমিটেন্স আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের ডাক্তারি পড়া একটি নতুন সম্ভাবনাময় খাত। প্রতিবছর আমরা ইতিমধ্যেই এই খাত থেকে প্রায় 120 মিলিয়ন ডলার আয় করি কিন্তু এই খাত থেকে আমরা বছরে প্রায় 500 মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারি যা আইএমএফ এর ঋণের ৪৫০ মিলিয়নের ডলারের চেয়েও বেশি।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমরা সবাই জানি ডলারের অভাবে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে,জ্বালানিতে আমরা কিছুটা সংকটে আছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সরকারিভাবে এই খাতটি নিয়ে যথেষ্ট পর্যালোচনা বা খাতটির সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের মিডিয়াগুলো যথেষ্ট অবগত নয়। তাই, আমাদের ছোট ছোট কিছু নীতিগত ভুলের কারণে এ বছর থেকে এই খাতের আয় ১২০ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশ কম হবে।
ভারতের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলাদেশের ডাক্তারি পড়ার জন্য খুবই আগ্রহী। তাদের আগ্রহী হওয়ার অন্যতম কারণ হলোঃ
১। ভারতের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়তে যেখানে আশি থেকে এক লক্ষ ২০ হাজার রুপি খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে মাত্র 35 থেকে 40 লক্ষ রুপি খরচ হয়। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ২০০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী ডাক্তারি পড়তে আসে।
২। প্রতিবছর ভারতের প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ শিক্ষার্থী ডাক্তারি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় কিন্তু ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সর্বমোট আসন সংখ্যা মাত্র এক লক্ষ। বাকি ছয় থেকে সাত লক্ষ শিক্ষার্থী মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডাক্তারি করতে যায়। যাহার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া,ইউক্রেন, জর্জিয়া, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র প্রতিবছর ১০ হাজার শিক্ষার্থী ইউক্রেন এবং রাশিয়াতে ডাক্তারি পড়তে যেত কিন্তু বর্তমানে রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক শিক্ষার্থী অন্যান্য দেশে ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে।
৩। বাংলাদেশের এম বি বি এস কোর্সের সিলেবাস, ইন্টার্নশিপ ও ভারতের এমবিবিএস কোর্স এবং ইন্টার্নশিপ অলমোস্ট সিমিলার। এজন্য, বাংলাদেশ থেকে উত্তীর্ণ ভারতীয় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ভারতে গিয়ে লাইসেন্সিং পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি ভালো ফলাফল করে।ভারতে লাইসেন্সিং পরীক্ষায় যেখানে বাংলাদেশের পার্সেন্টেজ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ, সেখানে রাশিয়া, ইউক্রেন বা অন্যান্য দেশের পাশের পার্সেন্টেজ মাত্র ১০ থেকে ৩০ শতাংশ।
৪। ভারতের সাথে আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা স্বল্পমূল্য ও সহজ, আবহাওয়া, খাদ্য অভ্যাস অলমোস্ট একই। এছাড়াও ভারতের মুসলিম শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর বহু সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমায়। বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যায়
কিন্তু আশার কথা হল বিগত ১০ বছর আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল থেকে বহু সংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ডাক্তারি পড়তে আসে।
সম্ভাবনাময় এই খাতটিতে যদি সরকার বিশেষভাবে নজর দেয় তাহলে এই খাতটি সামনে আরো অনেক বিকশিত হতে পারে। এই খাতটিকে বিকশিত করার জন্য শুধুমাত্র দরকার সরকারের কিছু নীতিগত সহায়তা । ডলার আহরণের জন্য অন্যান্য খাতকে উৎসাহিত করতে সরকারের ভর্তুকি প্রদান করতে হয় কিন্তু এই খাতে সরকারের কোন ভর্তুকির প্রয়োজন নেই। দরকার শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন সমূহের প্রো - একটিভ এপ্রোচ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি চিকিৎসা শিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সহজতর করে তাহলে প্রতিবছর দুই হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থীর বদলে প্রায় ৫ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী বাংলাদেশে চিকিৎসায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আসতে পারবে। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশন সমূহ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য এডুকেশন ফেয়ার আয়োজন করা, স্বল্প সময় ও সহজে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদান করা, সর্বোপরি এই খাতটিকে ডলার আহরণের একটি অন্যতম খাত বিবেচনা করে এ খাত সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা করা।
এই খাতটি বিকশিত হলে শুধুমাত্র ডলার আয় ই হবে না তার সাথে সাথে আমাদের দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহ চিকিৎসা শিক্ষায় নিজেদেরকে আরো উন্নত ও তাদের হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন করতে পারবে যার ফলে স্থানীয় রোগীরা স্বল্পমূল্যে ভালো চিকিৎসা সুবিধা পাবে।