27/10/2025
আবুল কালামের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে আজ কাদঁতে কাদঁতে বলেছে, “আজ আমার ওকে বিদায় দিতে মন চাচ্ছিলো না। তাই (কালাম চলে যাবার পর) দরজা লাগাতেও যাইনি...! আমার বাচ্চাদের এখন কি হবে?”
আমি বাটারফ্লাই ইফেক্টে খুব বিশ্বাস করি, আমি আমার চারপাশে প্রতিদিন এটা দেখতে পাই।
আমি ভদ্রমহিলার এই কথা শুনে আফসোস করছিলাম এটা ভেবে যে, আজ যদি সে তার স্বামীকে এগিয়ে দিতে দরজা পযন্ত আসতো, এবং তাকে হাসি মুখে বিদায় জানাতো - তাহলে হয়তো তার স্বামী আজ জীবিত থাকতো।
আবুল কালাম আজ ঘরে থেকে বের হতে মাত্র ১০ সেকেন্ড লেট করলে হয়তো সে আজ বেঁচে থাকতো তার স্ত্রী-সম্তানদের মাঝে!
আমার ধারনা এই কথা তার স্ত্রীও ভাবছে এখন! আহারে, বেচারী আজীবন এই তীব্র মানসিক কষ্টটা বুকের ভেতর পুষবে!
আবুল কালাম তার স্ত্রী ও দুইটা বাচ্চা ছেলে নিয়ে থাকতেন নারায়নগঞ্জে। গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরে।
কাজ করতেন একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে। বেতন হয়তো খুব বেশী না।
কোনো একটা জরুরী কাজে ফার্মগেট এসেছিলেন।
সেখান থেকে অন দা স্পট তার মৃত্যু ঘটে, রক্তাক্ত দেহটা অনেকক্ষন পরে থাকে ফুটপাতের উপরে।
এরপর পুলিশ এসে তার লাশ নেয়া হয় নিকটস্থ সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে।
পত্রিকায় আবুল কালামের একটা ছবি ছাপা হয়েছে, তার মৃত্যু সংবাদের সাথে।
আমি দেখলাম আবুল কালাম বেশ সুদর্শন এক যুবক ছিলেন।
তার ছোট ছেলেটা হয়তো তার মতোই হয়েছে দেখতে, কি মিষ্টি বাচ্চা! ছবিটা দেখেই আমার ইচ্ছে করছিলো মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে!
গতকাল বিকেলে আবুল কালাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলো যে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে তার ইচ্ছে করছে...
স্রষ্টা মাত্র ১৬ ঘন্টার মধ্যে তার এই ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
আবুল কালাম আজীবনের জন্য তার জীবন থেকে পালিয়ে গেছেন, আর কোনোদিন ফিরবেন না!
এই দেশে আবুল কালামের মতো হাজার হাজার পথচারী স্রেফ রাস্তা দিয়ে হাটঁতে হাটঁতে হুট করে মারা গেছে!
হয়তো ফুটপাথে গাড়ি বা ট্রাক উঠে গেছে, কিংবা ম্যানহোলে পড়ে, কিংবা বিদ্যুুস্পষ্ট হয়ে, কিংবা নির্মানাধীন ভবনের উপর থেকে ভারী বস্তু পড়ে, কিংবা আজ যেভাবে আবুল কালাম মারা গেছেন সেভাবে।
আসলে মারা যায়নি, কারণ এটাকে হত্যাও বলা যায়!
এই দেশে প্রতিদিনই মানুষ খুন হচ্ছে, স্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে তার তুলনায় অনেক অনেক কম।
হয়তো একটা সময় এই দেশে কারো বাধর্ক্যজনিত কারণে মৃত্যু হবে না।
কারণ বার্ধক্য পর্যন্ত কেউ বেচেঁই থাকবে না, তার আগেই হয়তো আমাদের আবুল কালামের মতো মৃত্যু হবে...
আমাদের দাবীঃ আবুল কালামের পরিবারকে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। সেই সাথে তার স্ত্রীকে সরকারী চাকুরী এবং তার বাচ্চা দুটোকে ১৮ বছর পযন্ত ভরণ পোষনের দায়িত্ব নেয়া হোক।
এবং যাদের গাফিলতিতে আজ এই তরতাজা প্রাণের মৃত্যু ঘটলো, তাদেরকে খুজেঁ বের করে সমুচিত শাস্তি দেয়া হোক, এবং ক্ষতি পূরণের টাকা তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হোক।