
17/06/2025
Halo everyone! Welcome to a new epilogue today. I'm going to talk about a perfect western book.
আমার মতে 'বুলেট কিংবা ভালোবাসায়' A perfect western. কেন A perfect western বলছি? তা নিয়ে আলাপ করতে গেলে আগে বলতে হবে উপন্যাসের ধরণ নিয়ে। ওয়েস্টার্ন জনরা মূলত আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের রুক্ষ মরুভূমির ১৮ ও ১৯ শতকের জীবনাচরণের গল্প বলে। আমরা ওয়েস্টার্ন মানে শুধুই বন্দুকবাজি ভাবলেও এই জনরায় রোমান্টিক, সামাজিক এই জাতীয় গল্পও আছে বা লেখা সম্ভব। কিন্তু মানুষ সাসপেন্স বেশি পছন্দ করে দেখেই সম্ভবত ওয়েস্টার্ন থ্রিলারই বেশি পরিচিত পাঠককূলের মাঝে। তবে ওয়েস্টার্ন থ্রিলারকে পাঠককূল শুধুই বন্দুকবাজি, গান মাজল থেকে ফুলকি উড়া, বুলেটের সংখ্যা, স্পার ওয়ালা বুট দাবিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাউবয়দের দৌড়ের মাঝে সীমাবদ্ধ ভেবে ফেললেও ওয়েস্টার্ন আসলে তা নয়।
ওয়েস্টার্ন আমাদের জীবনের গল্প বলে, ওয়েস্টার্ন আমাদের একটা সময় ও অঞ্চলের জীবনপ্রবাহের ধারণা দেয়। বিজ্ঞানের আগের রূপ থেকে বর্তমান প্রযুক্তিগত রূপে ট্রান্সফরমেশনের মাঝামাঝি সময়কালের প্রেক্ষাপট থাকে বেশিরভাগ ওয়েস্টার্ন গল্পের উপজীব্য হিসেবে। নতুন নতুন চিন্তাধারার বিকাশে মানুষের জীবনাচরণ কীভাবে পালটে যাচ্ছে, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় রুক্ষ মরুভূমিতে কীভাবে পুঁজিবাদ এর ছাপ বসছে এবং কীভাবে সহজ সরল র্যাঞ্চারদের জীবনে আসছে জটিলতা, রাজনীতি ও আধুনিকতার জোয়ার সেই চিত্র আমরা এই জনরায় ফুটে উঠতে দেখি। গল্প মোটাদাগে থ্রিলার হলেও আমরা ওয়েস্টার্ন এর মাঝ দিয়ে ওয়েস্টের প্রকৃতির পালাবদলের গল্প দেখতে পাই। আর সহজ সরল সেই মানুষগুলো যখন তাদের শহর বা ছোট অঞ্চলে আসা শিল্পপতি ও বুর্জোয়া পুঁজিপতিদের হাত থেকে শহরকে রক্ষা করতে চায়, চায় শহরটা থাকুক আগের মতোই শান্ত তখন সেই গল্প আর শুধু থ্রিলার থাকে না। গল্পটা হয়ে যায় আদিম থেকে চলে আসা শাসকের সাথে শোষিতের লড়াইয়ের গল্প। যেই গল্পে শোষিত মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই শেষ হবে না।
বুলেট কিংবা ভালোবাসায় বইটি তেমন একটি শহরের গল্প। রোডস নামের একটি শহরে বহিরাগত শত্রুরা হানা দেয় দখল করার জন্য। যার সাথে সম্পর্কিত থাকে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি, কুটিল রাজনীতি আর ঔপনিবেশিক শোষণের প্রতিবিম্ব। এমনকি গল্পের কিছু চরিত্রের মাঝ দিয়ে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে চলমান ব্রিটিশ শাসন ও সিপাহি বিদ্রোহের সাথেও যোগসূত্র স্থাপন করেছেন লেখক। শোষকদের হাত থেকে নিজেদের শহরকে রক্ষা করতে প্রৌঢ় কর্নেল এবারডিন ফিনিগান রুখে দাঁড়ান আরেকবার। তার হাতে গড়া শহরকে বারবার তিনিই ছায়া দেন শত্রুর কাছ থেকে বটগাছের মতো। এই যে বুনো পশ্চিমের ফ্লেভার ধরে রেখে, বইয়ের থিম অক্ষুণ্ণ রেখে, গল্পকে একটুও ঝুলে যেতে না দিয়ে প্রায় ৬০০ পেজের বেশি কলেবরের উপন্যাসে সাসপেন্স ধরে রাখতে পেরেছেন ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ, তাও আবার একেবারে মৌলিক গল্প দিয়ে সম্পূর্ণ বাংলা শব্দে- সেজন্যই আমি বইটিকে বাংলা ভাষায় লেখা Perfect Western বই হিসেবে অভিহিত করবো।
বাংলায় মৌলিক ওয়েস্টার্ন লেখা কিন্তু মোটেও সহজ বিষয় নয়। আমরা যা পড়ে এসেছি আগে তার বেশিরভাগই রূপান্তর বিদেশি গল্প থেকে বা এডাপ্টেশন বাইরের কাহিনীর। সেই জায়গায় প্রথম ওয়েস্টার্ন লিখতে বসেই কাসা দিয়াবলো ও বুলেট এর মতো চমৎকার দুইটি মৌলিক গল্প দিয়ে ফেলেছেন ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ। ফাহাদ ভাই প্রায়শই বলেন কিংবদন্তী ওয়েস্টার্ন লেখক রওশন জামিলের শিষ্য তিনি। গুরুর কাছ থেকে নিয়েছেন সাহিত্যচর্চা ও ওয়েস্টার্ন জনরায় তামিল, আর সেই শিক্ষার প্রয়োগ ঘটাতে যেয়ে তিনি দ্বিতীয় বইতেই গুরুকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন অনেকাংশে এমনটাই বলবো আমি।
তবে এক্ষেত্রে প্রকাশনীর ভূমিকাও উল্লেখ করতে হবে। তারা চমৎকার সম্পাদনার কাজ দেখিয়েছেন বইটিতে যার ফলে প্রাথমিক ড্রাফট এর মেদ ঝরে গিয়ে বইয়ের শব্দসংখ্যা ১ লাখ শব্দ থেকে একটু কম হয়েছে। তবুও বুলেট কিংবা ভালোবাসায় বাংলা ভাষায় লেখা ওয়েস্টার্ন এর মাঝে সবচেয়ে বড়। এর চেয়ে বড় ওয়েস্টার্ন আপাতত বাংলায় লেখা হয়নি।
তবে সম্ভবত সম্পাদনা ও কাটছাটে মেদ ঝরাতে গিয়েই কিছু চরিত্র ঠিকঠাক প্লাটফর্ম পায়নি। অসংখ্য ছোট বড় চরিত্রে ভরা এই বইতে আসলে সবাইকে ঠিকঠাক সময় দিতে গেলে বইয়ের আকার আরও অনেক বড় হয়ে যেত। কিন্তু পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে বড় হলে মন্দ হতো না একেবারে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুখ আরও বেশি স্পেস ডিজার্ভ করে এই উপাখ্যানে।
মৌলিক বই হিসেবে লিখতে গিয়ে আসলে পশ্চিমের ইতিহাস নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে লেখককে। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা ও তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকলে শুধু ভাসা ভাসা জ্ঞানে এত বড় কলেবর তৈরি করা অসম্ভব। এই সব ইতিহাস ও রাজনীতির সাথে আবেগ, বুনো ফ্লেভার, রোমান্স ও ভালোবাসা মিলেমিশে উপন্যাসটি শেক্সপিয়রের ট্র্যাজিক থিমের মতোই থিম নিয়ে শেষ হয়েছে। আবেগি পাঠক যারা তারা বই শেষ করার সময় চোখের কোণায় এক ফোঁটা পানি খুঁজে পেলে অবাক হবেন না।
বইয়ের ভাষাশৈলী ও বর্ণনারীতিতেও চমক পাবেন যারা অনেক দিন পর ওয়েস্টার্ন পড়তে বসবেন তারা। কেননা বাংলায় লেখা ওয়েস্টার্নের প্রচলিত স্টাইলের সাথে ফাহাদ ভাইয়ের লেখার অমিলই বেশি। তিনি সম্পূর্ণ বাংলা শব্দ ব্যবহার করেই পশ্চিমের কথার টোন ও ফ্লেভারে হিউমার ব্যবহার করেছেন সংলাপে, এদিকে বর্ণনায় ব্যবহার করেছেন সাহিত্যিক অলংকার। উপমা, রূপক ও অলংকারের ব্যবহার অনেক জায়গায়ই বর্ণনাকে পাঠকের চোখে কাব্যিক করে তুলতে পারে যা রুক্ষতার গল্পে হয়তো অনেকে আশা করবেন না।
এত সবের মিশেলে তৈরি হওয়া বুলেট কিংবা ভালোবাসার গল্পে শেষ পর্যন্ত ভালো লাগার বিষয় ছিল গল্প স্কিপ করার ইচ্ছা করেনি কোথাও। ঝুলে গেলে হয়তো বিরক্তিতে বই বন্ধ করে উঠতে হতো বা কিছু পৃষ্ঠা স্কিপ করে এগোতে হতো, যা করা লাগেনি এত বড় উপন্যাসে। আর এই সাসপেন্স ধরে রেখে গল্পের পারফেক্ট সমাপ্তি দেয়ার জন্য ফাহাদ ভাইয়ের প্রতি প্রত্যাশার পারদ উঁচু হয়ে গেল অনেকটাই।
বইটায় টুকটাক শাব্দিক যা ভুল ছিল, তা আশা করি পরবর্তী সংস্করণে ঠিক করে নেয়া হবে। শুভ কামনা রইলো বাংলা ওয়েস্টার্নের নতুন নক্ষত্র ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ এর জন্য। আশা করি শোষিতর লড়াইয়ের গল্প আপনার হাতের ওয়েস্টার্নে উঠে আসবে বারবার।
পরবর্তীতে বইটি নিয়ে পেজে এপিলগ আসবে ভিডিও আকারে। সেখানে থাকবে আরও আলোচনা। পাঠকেরা পেজের সাথেই থাকুন।
বই: বুলেট কিংবা ভালোবাসায়
লেখক: ফাহাদ আল আব্দুল্লাহ
প্রকাশনী: BengalBooks
প্রথম প্রকাশ: মে, ২০২৫
প্রচ্ছদ: আজহার ফরহাদ
মুদ্রিত মূল্য: ৩৮০ টাকা