28/09/2025
কিছুদিন আগে কলকাতায় এক পরোটা বিক্রেতা ভাইরাল হইছিল। নাম রাজু দা। রাস্তার পাশে বড় একটা সসপ্যানে সবজি আর পরোটা বিক্রি করে ছেলেটা। এই পাবলিক হুদাই ভাইরাল হইছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা কিছিমের লোক আইসা রাজুদার লগে ভিডিও বানায়। উদ্ভট সব কর্মকাণ্ড। রাজুদা পরোটা বিক্রি করছে আর পেছনে দাঁড়িয়ে একজন নেচে ভিডিও বানাচ্ছে। কোন মেয়ে এসে সামনে আইটেম ড্যান্স দিচ্ছে। কেউ হুড়োহুড়ি করে সবজির ডেগচি ফেলে দিচ্ছে, রিলস বানাতে বানাতে সবজির মধ্যে কারো মোবাইল পড়ে যাচ্ছে।আরো কত কি! রাজুর বিরক্তির শেষ নাই।
তখন ভেবেছিলাম কলকাতার লোকজন বিরাট ছ্যাচড়া /ছাপড়ি।
কিন্তু এইবার আমার ধারণা পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছে আমাদের দেশের অসভ্যগুলা।
আগারগাঁওয়ে রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে ভাত তরকারি বিক্রি করে মিজান নামে এক দরিদ্র লোক। তার দোকানে কোন কর্মচারী নাই বিধায় সে একটা সিস্টেম চালু করছে দোকানে। অনেকটা বুঁফে টাইপ। কাস্টমার নিজ হাতে ভাত তরকারি প্লেটে নিয়ে খাবে আবার খাওয়া শেষে নির্দিষ্ট ডিব্বায় টাকা রেখে যাবে। যাদের টাকা নাই তাদের টাকা দিতে হবে না। এই নিয়ে কোন এক টিভিতে প্রতিবেদন দেখানোর পর শুরু হইছে গজব।
দুনিয়ার লোকজন হুমড়ি খায়া পড়ছে মিজানের দোকানে। এমনিতেই মিজান কিছুটা ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের আর তার কথাবার্তাও কিছুটা লাগামছাড়া। অবশ্য সে যাদের কাছে বিক্রি করে তাদের জন্য সুন্দর কথা গুরুত্বপূর্ণ না। কিন্তু এখন এইসব টিউমারদের নানামুখী অত্যাচারে অতিষ্ট সে। কাল দেখলাম খুন্তি দিয়া এক মেয়েকে মারতে নিছে।
এই ইউটিউবার ওরফে ইউটিউমাররা মিজানের গলায় ডজনখানেক তাবিজ কবজ (মাইক্রোফোন) পরাই দিছে তারা। গরিবের এই হোটেলে স্যুট টাই পরা লোকজন গিয়ে ধুমসে খাচ্ছে। এজন্য আবার রিক্সাওয়ালা শ্রেণির লোকজন বেজায় বিরক্ত।
এমনকি এক মাওলানা গেছিলো মিজানকে অর্থ সহায়তা দেয়ার উছিলায় ভিডিও করতে। মিজান তারে যাচ্ছেতাই অপমান করায় হুজুর হাদিস কোরআন শুনাই দিছে।
এক পোলা কী জানি গিফট দিতে চাইছিল মিজানরে। মিজান নেয় নাই। তাই ওই যুবক অভিশাপ দিছে- এক মাস পর এই দোকানে কুত্তাও আইবো না।
মিজানের দোকানের নতুন সিস্টেম- ১০০ টাকায় আনলিমিটেড ভাত, এক পিস গরুর মাংশ আর আনলিমিটেড আলু! কাস্টমার নিজ হাতেই তুলে পাতে নিবে। এখন একেকজন প্লেট ভরে মাংসের তরকারি থেকে আলু আর ঝোল নিচ্ছে। একজনে দুই টুকরা মাংস নেয়ায় মিজান দৌড়ে গেছে তারে মারতে।
এক বিরিয়ানির দোকানদান দুই ডজন মেলামাইনের প্লেট গিফট করছে। এক আইনজীবী এসে মিজানকে যাবতীয় আইনি সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
এক সুন্দরী তরুণী ফুল নিয়া আসছে মিজানের জন্য! সে মিজানের ভাতের হোটেলের অনেকগুলো শাখা দেখতে চায়।
এক লাল শাড়ি লাল লিপস্টিক দেয়া মেয়ে আসছে মিজানকে রান্নায় হেল্প করতে। জোড় করে রান্না করবে। তারপর তার আবদার মিজানকে সে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিবে!
এক বৃদ্ধা আসছেন। মিজান জিগায়- কিল্লিগা আইছেন? আমার এইখানে নাটক টকশো চলবো না...
বৃদ্ধা কয়- দোয়া করতে আইছি। তুমি মানুষরে ফ্রি খাওয়াও তাই।
মিজান- আপ্নে খাইবেন?
কেউ চুলা কিনে দিছে, কেউ নতুন হাড়ি। একজন দেখলাম গ্যালন ভর্তি সয়াবিন তেলও দিছে।
এক চাইনিজ লোকও দেখলাম মিজানের লগে বইসা ভাত খাইতাছে।
ওইযে ইংলিশের বই বেচে ধবল টিপু সুলতান বুইড়া মিজানরে ১০ হাজার টাকা দিছে মিজানের মালামাল ক্যারি করার খরচের জন্য।
লালশাড়ি পরা মেয়েটা এখনো আছে। মিজানকে প্রথমে বাপ ডাকছে। তারপর ভাই ডাকছে। মেয়ে হিসেবে/ছোট বইন হিসেবে তার একটাই আবদার- মিজান যেন তারে এক লোকমা খাইয়ে দেয়।
কীয়েক্টাবস্থা!!!