02/10/2025
খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনাকে ঘিরে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, সেটি এখন স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। কথিত ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। অথচ এই সাজানো নাটককে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করে প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে তিনজন মারমা যুবকের। নিরপরাধ এক যুবক শয়ন শীলকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য, বাঙালি ও পাহাড়ি নাগরিক আহত হয়েছেন, দোকানপাট ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবিকা।
অপপ্রচারের কৌশল: অতীত থেকে বর্তমান
এটা প্রথম নয়। পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে একই কায়দায় নাটক সাজিয়ে পাহাড়কে অশান্ত রাখা হয়েছে। কখনো ধর্ষণ নাটক, কখনো গুম-খুনের মিথ্যা গল্প, কখনো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ—সবই একই ধাঁচের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ১৯৭২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ক্রমাগত অপপ্রচার ছড়িয়ে সহাবস্থানের পরিবেশকে ধ্বংস করে চলেছে।
ইউপিডিএফ, জেএসএসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী শুরু থেকেই পাহাড়কে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের কার্যক্রম কেবল রাজনৈতিক স্লোগানেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি—এই তিন জেলায় দীর্ঘদিন ধরে এই চাঁদাবাজির এক ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি চালু আছে।
চাঁদাবাজি ও টোকেন সিস্টেমের কালো অধ্যায়
১৯৭৪ সাল থেকেই তারা টোকেন সিস্টেম চালু করে। প্রথমদিকে ছোটখাটো দল থাকলেও ৭-৮ বছর আগে থেকে তারা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আজকে তারা চারটি গ্রুপে বিভক্ত। কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই—এক ইউনিয়ন থেকে উপজেলা পর্যন্ত ওঠা-নামা করার জন্য গাড়ি থেকে জোরপূর্বক মোটা অংকের টোকেন ফি আদায় করা।
এটি শুধু চাঁদাবাজি নয়; এটি একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক সন্ত্রাস। পরিবহন থেকে শুরু করে কৃষক, দোকানদার, সাধারণ ব্যবসায়ী—কেউই এই কালো টোকেন সিস্টেমের বাইরে নয়। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত এসব গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। যারা টোকেন দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ হামলা, মারধর, এমনকি হত্যাকাণ্ড।
তিন পার্বত্য জেলার ৬০-৭০% জায়গায় প্রশাসনিক উপস্থিতি কার্যত দুর্বল। এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসীরা সহজে চাঁদাবাজি করে, অপপ্রচার ছড়ায়, এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালায়।