06/04/2024
'রাজকুমার' কিন্তু.....??
তিনি বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় সুপারস্টার। তার জনপ্রিয়তার সিকিভাগও আর কোন তারকা অর্জন করতে পারেনি। অনেকেই অভিনয়ের মাপকাঠিতে তাকে চঞ্চল চৌধুরীর পেছনে রাখেন, কিন্তু আমি বলবো শাকিব খান যা পারেন, চঞ্চল চৌধুরী সাধ্য নেই পর্দায় সেইভাবে নিজেকে বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করার!
শাকিব খান এমন এক তারকা যাকে সর্বক্ষেত্রেই দুর্দান্তভাবে উপস্থাপন সম্ভব, সেটা হোক আর্টফিল্ম কিংবা টপনচ কোন ডার্ক থ্রিলার অথবা ধুন্ধুমার অ্যাকশন ফিল্ম! সেইক্ষেত্রে শাকিব খান চঞ্চল চৌধুরী বলেন কিংবা অন্য তাবড়-তাবড় অভিনেতা, তাদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে! গুডলুকিং থেকে জাত অভিনয়, যার মাঝে এতো কিছুর সমন্বয় আছে, সে কেনো প্রতিবারই সিনেমা নির্বাচনে এতো সমালোচনায় থাকেন?
~ সত্যিই 'আফসোস' শব্দটার সঠিক প্রয়োগ বোধহয় শাকিব খানের সাথেই যায়! তার যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা, যেভাবে প্রতিটি ভক্ত শত বিপর্যয়েও তাকে আগলে রেখেছে, সেইদিক বিবেচনা করলে তিনি এক ইতিহাস! কিন্তু তিনি কি পেরেছেন তার এমন নিবেদিত ভক্তদের খুশি করতে?
~ না! পারেননি! কারণ, তার তুমুল জনপ্রিয়তা এবং ফিল্মি ক্যারিয়ার বিবেচনায় যে রুচিশীলতা থাকার কথা, তার ছিঁটেফোঁটাও শাকিব খানের নেই! অনেকেই এতে দ্বিমত পোষণ করলেও এটাই ধ্রুব সত্য বাক্য!
একজন শাকিব খান যখন শিকারী, নবাব, চালবাজ, ভাইজান সিনেমা করেন, তখন তার নিন্দুকেরাও চোখ বড় করে তাকিয়ে 'ওয়াও' শব্দটা উচ্চারণ করতে বাধ্য হয়!
~কিন্তু কেনো?
কারণটা শুধুমাত্র সঠিক ডিরেক্টর আর স্ক্রিপ্ট নির্বাচনের জন্য! কলকাতার ডিরেক্টরদের প্রফেশনালিজম দেখলে চমকে উঠতে হয়! যে শাকিব দেশী সিনেমায় ট্রলের শিকার হোন, সেই শাকিব চমকে দেন কলকাতার নির্মাণে! কি অদ্ভুত না?
ঐসব সিনেমার নির্মাণশৈলীটাই কেমন যেনো অসাধারণ! প্রতিটি লুক এতো যত্ন করে নেয়া, দেখলেই চোখে ও মনে আরাম লাগে! কিন্তু যখন থেকে এই শাকিব খান কলকাতার সিনেমা ছেড়ে লোকাল সিনেমায় আবার মন দিলো, দুঃখজনক হলেও সত্য একটাও ভালো কাজ হয়নি! দেখা গেছে, গানগুলো ভালো কিন্তু গল্প থেকে উপস্থাপন পাতে তোলার মতো নয়! ঠিক একই হাল হতে যাচ্ছে এবারের ঈদের সিনেমা রাজকুমারের ক্ষেত্রেও! হিমেল আশরাফের মতো আনাড়ি পরিচালকের কাছে শাকিবের মতো লিড তারকার এভাবে জুড়ে যাওয়া কোনভাবেই আশাব্যঞ্জক নয়! কারণ, ওনার চিন্তা হওয়ার কথা ছিলো কিভাবে আন্তজার্তিক সীমারেখা পেরিয়ে নিজেকেই নিজে ছাড়িয়ে যাওয়া যায় দুর্দান্ত নির্মাণ আর চোখধাঁধানো উপস্থাপনে, কিভাবে নিজের ভালো কাজের সংখ্যাটা বাড়ানো যায়, কিভাবে ভক্তদের আবেগ ও অনুভূতিকে সঠিক মূল্যায়ন করা যায়, তা না করে শাকিব খান যতোই সময় যাচ্ছে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েই যাচ্ছেন!
এখন তার যে বয়স, তার গল্পের ধরণ হওয়া উচিত ডার্ক থ্রিলার, ক্রাইম, সাইকোলজিক্যাল ড্রামা, সৌসাল ম্যাসেজ, সার্ভাইভাল, ট্রু ইভেন্ট এমন ধরণের সিনেমা! পরিচালক হিসেবে নির্বাচন করা উচিত এক একজন তুখোড় চিন্তাভাবনার কাউকে! দেশী সিনেমা করলে শুধুমাত্র রায়হান রাফির সাথে আলাদাভাবে শাকিব খানের বন্ডিং বাড়ানো উচিত, রাফির সাথে তার প্রডাকশন হাউজকে যুক্ত করা উচিত, তাহলে লোকাল কাজেও শাকিব বড়সড় ব্লাস্ট করতে পারবে!
এছাড়া, তাকে কোনভাবেই আর লোকাল কাজে যুক্ত হওয়া উচিত নয়! সব পরিচালক, কম্পোজার ও আর্টিস্ট কলকাতার নেয়া উচিত, দরকার হলে সেখানকার লোকাল প্রডাকশনের সাথে শাকিবের প্রডাকশন হাউজ কোলাবোরেইট করতে পারে! এতে শাকিব দিন দিন নিজেকে গ্লোবালি উপস্থাপন করার সঠিক দিশা খুঁজে পাবে!
অন্যথায় রাজকুমারের মতোই এভাবে প্রতিটি কাজের মাধ্যমে তিনি তার ভক্তদের হতাশায় ডুবিয়ে রাখবেন!
~ আমি শাকিব খানের একটু ভিন্নধারার ভক্ত! আবার একইভাবে, আমি ওনার সবচেয়ে বড় ক্রিটিকও! আমি ভালো কাজগুলোর ফ্যান, নিম্নমানের কাজের নয়! আমি তাকে ভাবিও ছকের বাইরে গিয়ে! 'আমার স্বপ্ন তুমি, সমাধি, কঠিন প্রেম, সুভা, শিকারী, নবাব, চালবাজ' এইসব সিনেমায় তার অভিনয় সবসময় পছন্দের! কিন্তু তার ব্যতিরেকে আর ভালো কাজ আমি দেখি না! একজন শাকিব হতে পারতেন দারুণ এক শৈল্পিক তারকা! আর্টফিল্মে শাকিবকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে অর্জন করা যেতো বহু আন্তজার্তিক পুরস্কার! একজন প্রসেনজিৎ কিংবা একজন যিশু সেনগুপ্ত কিভাবে নিজেদের খোলস বদলে গোটা ইন্ডাস্ট্রির ফিল্মের ধারাই বদলে দিলেন, কিভাবে তারা আজ রুচিশীল ও দামী তারকায় রূপান্তর হলেন, শাকিবও ইন্ডাস্ট্রি বদলে দেয়ার সেই সহযাত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখতে পারতেন অনেক আগে থেকেই! কিন্তু ভুল গল্প নির্বাচন, একই অভিনেত্রীর গন্ডিতে আটকে থাকা, সেকেলে চিন্তাভাবনা, সর্বক্ষেত্রে নিজেকে ডমিনেট করা শাকিবকে সেই আসনটা তৈরি করতে দেয়নি! কেনো শাকিবের মতো তারকার পুরো ক্যারিয়ার আলোচনায় আনলে ১০ টার মতো দুর্দান্ত গল্প লিস্টে আসে না, এটা যেমন দুঃখজনক, আবার ওনি কেনো সময়ের আবহটা ধরতে পারছেন না, ভক্তদের চিন্তাভাবনার গুরুত্ব দিচ্ছেন না সেটাও আরেক হতাশার!
~ কেনো শাকিবের ক্যারিয়ারে প্রাক্তন, ২২ শে শ্রাবণ, চতুঃষ্কোণ, দৃষ্টিকোণ, অটোগ্রাফ, এক যে ছিলো রাজা, হাজার বছর ধরে, শ্রাবণ মেঘের দিন এমন সব গল্পপ্রধান সিনেমা নেই?
~ কেনো কমার্শিয়াল ছকেই তিনি রেখে দিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারকে, কেনো ভক্তদের বের করতে পারছেন না সেই পুরনো ধাঁচের গল্প থেকে, কেনো সে নিজেকে যুক্ত করছেন না ব্যতিক্রমী, চ্যালেঞ্জিং সব চরিত্রে?
~ কেনো পুষ্পা, KGF, সালারের যুগে এসে তাকে রাজকুমারের মতো সিনেমা ও টিম নির্বাচন করতে হবে?
প্রশ্নগুলো সিনেপ্রেমী ভক্তদের কাছেই থাকলো!
আমি গত সপ্তাহে মালায়াম সুপারস্টার পৃথ্বীরাজের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'দ্যা গোট লাইফ' দেখলাম! আমি হতবাক হয়ে গেছে এই সিনেমায় পৃথ্বীরাজের অভিনয়, তার ডেডিকেশন দেখে! তিনি একটা চরিত্রকে বাস্তবসম্মত ও চমকপ্রদ করে তুলতে যেভাবে তার শরীরের উপর অত্যাচার চালিয়ে চারিত্রিক রূপান্তর করেছেন গল্পের ভাঁজে ভাঁজে, তা সত্যিই স্যালুট দেয়ার মতো! রুদ্ধশ্বাস গল্পের প্রতিটি ফ্রেম দেখে স্তব্ধ হতে হয়েছে!
~ কবে এমন গল্পে আমাদের শাকিব খানকে পাবে তার দর্শক?
বেলায় বেলায় সময় ও বয়স ফুরিয়ে যাচ্ছে! আজও যদি তার কোন সিনেমাকে ঘিরে ভক্তকুল সমালোচিত হয়, সেটার দায় কি তিনি নিবেন না?
~ শেষ করবো শাকিব ভক্তদের বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে! এই প্রথম আপনাদের এতোটা ভালো লাগছে! তারকার দুর্বল কাজে প্রতিবাদ করাটা সত্যিই যুগান্তকারী কাজের অংশ হিসেবেই থেকে যাবে! এভাবেই যদি আগে থেকেই আপনারা সোচ্চার হতেন, তবে শিকারী, নবাব, চালবাজ, ভাইজানের মতোই গল্প পেতেন! ঐ সমস্ত গল্পগুলোতে তার উপস্থাপন তার নিন্দুকদেরও ফ্যান বানাতে বাধ্য করেছিলো, কিন্তু তার পরবর্তী ধাপে শুধুই হতাশার ইতিহাস লিখলেন স্বয়ং শাকিব খান! আর ভক্তরা তাকে দুর্বল নির্মাণে সাপোর্ট করে আরও তাকে ভুল পথে চালিত করে গেছে! এখন সময় এসেছে নিজেদের বদলে ফেলার! নিজেরাই প্রতিবাদী হোন, ভালোবাসার সঠিক মূল্যায়ন আদায় করে নিন! ভক্তরা জাগলে একজন তারকা বাধ্য ভুল থেকে ফুল হতে! আশা করছি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে! শুভ কামনা 'দরদ' আর 'তুফান' সিনেমার জন্য! এই দুটি সিনেমা নিঃসন্দেহে সাঁড়া ফেলে দেবে! কারণটা সঠিক টিম ও ডিরেক্টর নির্বাচন! এমন কাজের সংখ্যাটা বাড়তে থাকুক এটাই চাই! সঠিক স্ক্রিপ্ট, ডিরেক্টর ও সার্বিক দক্ষ টিম নির্বাচন করে শাকিব খান তার সুপারস্টার তকমার সঠিক মর্যাদা দিক! অন্যথায় লম্বা সময় ধরে জনপ্রিয়তার আষ্টেপৃষ্টে জুড়ে থেকেও মাণহীণ কাজের তলানীতে হারিয়ে যাবেন তিনি!
(Collected)