
17/04/2024
আনন্দের সঙ্গে পাঠককে জানাচ্ছি, ২০২৫ মেলায় অ্যানভিল পাবলিকেশন্স আনছে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েন্সটেনের বেস্টসেলার ‘দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি’র বাংলা অনুবাদ। বইটি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছে, হয়েছে বিভিন্ন ভাষান্তর। বাংলা সংস্করণের ব্যাপারে অ্যানভিলের সঙ্গে বইটির প্রকাশনা এজেন্সি যাইটগাইস্ট এজেন্সির একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। লেখক অ্যান্টোনি লোয়েন্সটেন একটি পৃথক ভূমিকাও লিখছেন বাংলা সংস্করণের জন্য।
লেখকের অনুমতির প্রশ্ন, প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তির প্রশ্নকে উপেক্ষা করে যেনতেনভাবে অনুবাদ বই প্রকাশের যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে বিদ্যমান (ব্যতিক্রম আছে); অ্যানভিল তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চায়। সেজন্যই আমরা সমস্ত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর বইটি অনুবাদের ঘোষণা দিলাম। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে বইটি অনুবাদের বৈধ কর্তৃপক্ষ অ্যানভিল।...................................................................................................
২০২১ সালের মে মাসে গাজায় ১১ দিন যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল বলেছিল: ওই যুদ্ধ ছিল তাদের প্রথম 'এআই যুদ্ধ'। এই যুদ্ধে যান্ত্রিক ভাষা ও উন্নততর গণনাকৌশল ব্যবহারের তথ্য দিয়েছিল জায়নবাদীরা। প্রধান ও বিকল্প ধারার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও বড় পরিসরে ব্যবহার করছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। তাদের তৈরি এআই-চালিত নিশানা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা 'দ্য গসপেল'-কে ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের নিশানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েল আড়াল করতে পারেনি যে, গাজায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের নেপথ্যে রয়েছে এই প্রযুক্তির ‘ভুল নিশানা’ নির্ধারণ। এতে নিশ্চয় ইসরায়েল বিচলিত নয়। আসলে ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে 'দ্য গসপেল' আসলে ক্রমে ক্রমে নিশানা নির্ধারণে অব্যর্থ হয়ে উঠবে। তারপর রফতানি হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এভাবেই ৫০ বছরের বেশি সময়ের দখলদারত্ব অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলিকে ইসরায়েলি অস্ত্র এবং নজরদারি প্রযুক্তির পরীক্ষাগার হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনকে পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করে জায়নবাদীরা জনগণকে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি-প্রকরণকে নিখুঁত করে চলেছে আর সেই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। অ্যান্টনি লোয়েন্সটেন ইসরায়েলের দখলদারিত্ব-প্রয়োগকারী প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী এই নৃশংস বাণিজ্যিকীকরণ এবং প্রসারের বাস্তবতাকে প্রকাশ্যে এনেছেন। “The Palestine Laboratory: How Israel Exports the Technology of Occupation around the World” নামের বইতে তিনি প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছেন, কীভাবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তির প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিকাশের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতা হয়ে উঠছে।
দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরিকে আপনি বলতে পারেন একটি বৈশ্বিক তদন্ত প্রতিবেদন, যেখানে উন্মোচিত গোপন নথি, সাক্ষাৎকার আর সরেজমিন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে লেখক দেখান, ২১ শতকে ক্রমবর্ধমান গোষ্ঠী জাতীয়তাবাদের (এথনো ন্যাশনালিজম) পরিসরে কীভাবে ইসরায়েল একইসঙ্গে স্বৈরাচার ও সাম্রাজ্যবাদীদের দখলদারি ও নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত পাকাপোক্ত করার প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। নজরদারি পুঁজিবাদের এই নয়া দখলদারিত্বের জামানায় গুপ্তচরবৃত্তির প্রযুক্তি সরবরাহের বিনিময়ে কীভাবে ইসরায়েল দুনিয়াজুড়ে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কূটনীতি জারি রেখেছে; তাও জানা যাবে এই বই থেকে। সেই অর্থে এই বই আপনাকে জায়নবাদের বৈশ্বিক বিস্তৃতিরও ইশারা দেবে।
বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নজরদারি ও দমন-পীড়নমুক্ত স্বাধীন নাগরিক পরিসর এবং ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রশ্নকে বুঝতে গেলে “ফিলিস্তিন ল্যাবরেটরি” প্রকল্পকে বুঝে নেওয়ার বিকল্প নেই। বইটি নিশ্চয় পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।