06/10/2025
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন অবমাননার দায়ে অপূর্ব পালের বিরুদ্ধে যে ধারায় FIR করা হয়েছে সেটি ২৯৫-এ। (৫ই অক্টোবর, ২০২৫;জাগোনিউজ২৪)
১৯২৭ সালে যোগ করা এই ধারায় মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে কারও ধর্মীয় অনুভূতি আহত করা হলে মামলা দায়ের হয়। আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা, বা জরিমানা অথবা উভয়ই শাস্তি হতে পারে।
এই ধারা প্রমাণে বাধাগ্রস্থ করতে পারে পেনাল কোডের ধারা ৮৪ (Act of a person of unsound mind)। এই ধারা অনুসারে,অপরাধের সময় যদি অভিযুক্ত মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে এবং অপরাধের প্রকৃতি, পরিণতি বা নৈতিকতা বুঝতে অক্ষম হয়, তাহলে সে দোষমুক্ত। (Chapter IV & XV, The Penal Code, 1860)
এই জায়গায় NSU-এর কিছু শিক্ষক ও ব্যাক্তি বিশেষ অপূর্ব পালকে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত (যেমন ড্রাগ অ্যাডিকশন এবং অস্বাভাবিক আচরণ) হিসাবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করেছে।
তবে এটি প্রমাণে কয়েক পর্যায়ের পরীক্ষাসহ কোর্ট অর্ডার্ড ইভালুয়েশনের জন্যে মেন্টাল স্ট্যাটাস এক্সামিনেশন (MSE) রিপোর্ট প্রয়োজন হবে।
যদি মানসিক বিকারগ্রস্ততা (৮৪-ধারা) প্রমাণিত হয়, তাহলে কোনো শাস্তি হয় না—অভিযুক্তকে দোষমুক্ত মনে করা হয়। ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোড অনুসারে আদালত তাকে নিরাপদ স্থানে (মেন্টাল হাসপাতাল বা কাস্টডি) রাখবে যতক্ষণ না সে সুস্থ হয় এবং সমাজের জন্যে নিরাপদ হয়।
মজার বিষয় হল এটি কোন শাস্তি নয়, বরং দোষীর জন্যে একটি সুরক্ষার নিশ্চিয়তা করা।
তবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট (CSA), ২০২৩- ধারা ২৮ এ বলা আছে ,(১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উস্কানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এইরূপ কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ২(দুই) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে,বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। (সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩)
এবার দেখি অপূর্ব পালের নিজের করা ভিডিওতে কি দেখা গিয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় সে স্পষ্টতই আমাদের পবিত্র কুরআনুল কারীমকে নিজ হাতে ছিঁড়ছে, এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে (নাউযুবিল্লাহ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে।
একজন মানুষ মাতাল, উদ্ভ্রান্ত, মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সে আর কোন বই আর কোন কিতাব চিনবে না কেবল ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থকেই চিনবে এইটা আবার কিসের বিকার?
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে প্রায় ৪৯,৬০০ বই, রিপোর্ট এবং বাইন্ডেড জার্লাল হার্ড কপিতে আছে। অপূর্ব এমন এক বিকারে আক্রান্ত যে সে ৪৯,৬০০ বইয়ের উপর তার বিকার প্রয়োগ করেনি করেছে মুসলমানদের প্রাণ পবিত্র কুরআনের উপর।
অপূর্বের ধর্মীয় অবমাননার ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপ বা আন্তর্জাতিক প্রভাবের কারণে এসব মামলায় ধারা ২৯৫-এ প্রায়ই কার্যকর শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না।
যদিও ফরেনসিক এনালাইসিস ও ইনভেস্টিগেশন করে ধারা পরিবর্তন সম্ভব তবে শুরুতেই তাকে মানসিক বিকারগ্রস্থ প্রমাণে বিভিন্ন স্টেটমেন্টই প্রমাণ করে এই ঘটনা ধারা ৮৪-র দিকে চলে যাবে।
বস্তুত, এই দেশে ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম অবমাননার কোন প্রকার শাস্তিই আজ পর্যন্ত হয়নি।
১৯৭৩ সালে দাউদ হায়দার (কবি) বিরুদ্ধে রাসূল (সাঃ), ইসা (আঃ) ও গৌতম বুদ্ধের অবমাননার দায়ে অভিযোগ উঠলে তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সে ভারতে পালিয়ে যায়।(Amnesty International Report, ১৯৭৩)
১৯৯৩ সালে তসলিমা নাসরিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালে ইউরোপে পালিয়ে যায়। ২০০২ সালে আদালত তার অনুপস্থিতিতে মাত্র ১ বছরের কারাদণ্ড রায় দেয়।(Human Rights Watch, “Bangladesh: Persecution of Writers”, ২০০২)
১৯৯৫ সালে হুমায়ুন আজাদ ধর্মীয় অবমাননা করলেও কোন বিচার হয়নি। (মিডিয়া রিপোর্ট, ১৯৯৫; বাংলাদেশ প্রকাশনা ইতিহাস)
২০০৭ সালে আলপিনে কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকার দায়ে ২০০৯ সালে তার অনুপস্থিতে মামলার রায়ে মাত্র ২ মাসের কারাদন্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা হয়। (দৈনিক প্রথম আলো, ২০০৯,“কার্টুনিস্টের শাস্তি”)
২০২৫ সালের জানুয়ারীতে প্রান্ত তালুকদার ইসলাম অবমাননা করলেও কোন শাস্তি হয়নি। এছাড়া ২০২৫ সালের আরও কয়েকটি ঘটনার তদন্ত চলমান।
এবং এই রেকর্ডগুলোর মতই এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে অপূর্ব পালের মামলার ভবিষ্যৎ বিভিন্ন মানবতাবাদিদের কথিত বিকারগ্রস্থের প্রতি ভালবাসার আড়ালে চাপা পড়ে যাবে।