30/06/2025
বাংলাদেশে অনেক মন্ত্রী এসেছেন, গেছেন, কেউ হয়েছেন কোটি টাকার মালিক, কেউ হয়েছেন মামলার আসামি। কিন্তু এক বিশেষ নেতা আছেন যিনি সব জায়গায় একটু করে ছিলেন, আর সব কথায় পুরোটা ছিলেন। তাঁর নাম—ওবায়দুল কাদের। পদে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, কথায় ছিলেন “নেত্রীর মুখপাত্র”, আর আচরণে ছিলেন “স্বৈরাচারের দর্জি”—যে নেত্রীর মাপে মিথ্যা ও মেকআপ সেলাই করেন।
পদযাত্রার প্রতীকঃ তিনি এমন একজন মন্ত্রী যিনি মাথায় হেলমেট, পায়ে সাদা কেডস পরে রাস্তা পরিদর্শনে যেতেন। তাঁর হাঁটার চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতো, যেন দেশ হেঁটে উন্নয়নশীল হচ্ছে।
একবার সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো:
— "সড়কে এত দুর্ঘটনা হচ্ছে কেন?"
তিনি বললেন,
— "এটা বিএনপির ষড়যন্ত্র।"
অর্থাৎ, রাস্তায় গর্ত থাকলে সেটা বিএনপি কোপ দিয়েছে, ব্রিজ ভাঙলে বুঝতে হবে বিএনপি শিকল কেটেছে।
হাসপাতালের রাজনীতি
২০১৯ সালে যখন তিনি অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর গেলেন, তখন দেশবাসী ভাবলো, একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ অবসর নেবেন।
কিন্তু না, তিনি ফিরেই বললেন—
“নেত্রী আমাকে সুযোগ দিলে আমি আবার কাজ করবো।”
এই ‘সুযোগ’ শব্দটাই তাঁর রাজনীতির মূল—
নেত্রী বললে তবেই আমি আছি।
নেত্রী চুল কাটলে উনিও স্টাইল পাল্টান, নেত্রী চোখ টিপলে উনিও মাইক্রোফোনে চোখ মারেন।
সবজান্তা মুখপাত্র
কাদের সাহেব দেশের একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি সকালে বলেন
— “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী,”
আর বিকালে বলেন
— “আপনারা বেশি কথা বললে অ্যাকশনে যাবো।”
তিনি এতটাই নেত্রী-কেন্দ্রিক, যে একবার সাংবাদিক প্রশ্ন করলো,
— “ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্বে কে আসবেন?”
তিনি বললেন,
— “এটা নেত্রীর বিষয়, আমি জানি না।”
অথচ, দল তাঁকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছে!
ভাবা যায়? অফিসের চাবি তাঁর কাছে, কিন্তু তিনি জানেন না জানালাটা কবে খুলবে!
উন্নয়ন কাগজে, বাস্তবে কাদা
কাদের সাহেব সব সময় বলেন,
“আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে।”
কিন্তু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে গেলে দেখা যায়—
গর্তে রিকশা পড়ে যায়,
বাস চালক চায় খোদা,
আর মানুষ ভাবে—
“এই রাস্তার ঠিকাদার কি কাদের ভাইয়ের ভাগ্নে?”
তাঁর ভাষায় উন্নয়ন মানে—
ফ্লাইওভারে নেত্রীর ফটো,
ব্রীজের নাম নেত্রীর নামে,
আর বিলবোর্ডে “দৃষ্টি রাখুন, উন্নয়ন চলছে।”
ব্যক্তিগত জীবনে শুনা যায়, ওবায়দুল কাদের সাহেব একসময় ছিলেন সাংবাদিক।
ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করতেন, কিন্তু শেখ হাসিনার নৌকায় উঠার পর
“ডানপন্থী বাহাদুরি” শিখে ফেলেন।
তিনি কবিতা লেখেন, বই বের করেন,
তবে বইয়ের ভেতরে থাকে—
“নেত্রীর চোখ দুটি নদীর মতো”
বা
“আমার নেত্রী, তুমি আমার পথের দিশারী।”
(কে জানে, উনি প্রেমের কবিতা লিখতেন কি না!)
সত্যি কথা বলতে কি, কাদের সাহেবের বক্তৃতা এখন একই স্ক্রিপ্টে ঘোরে—
“বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে।”
“নেত্রী উন্নয়ন করছেন।”
“আওয়ামী লীগ জনগণের দল।”
(আর জনগণ কোথায়? তারা খুঁজে ফিরছে চাল, ডাল আর গণতন্ত্র।)
শেষ কথা: ওবায়দুল কাদের সাহেব একজন নেত্রীকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রতীক—
যেখানে নিজের চিন্তা গুটিয়ে গেছে, আর নেত্রীর প্রশংসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
তিনি রাস্তায় হাঁটেন, কিন্তু গণমানুষের পাশে হাঁটেন না।
তিনি বলেন "আমরা ভুল করি না", কিন্তু জনগণ প্রতিদিন তার সেই ভুলে ঠেকে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ওবায়দুল কাদের হয়তো থাকবেন—
“যিনি মন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু সিদ্ধান্তহীন ছিলেন।
যিনি মুখপাত্র ছিলেন, কিন্তু নিজের কোনো কথা ছিল না।
আর যিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, কিন্তু জনগণের নয়, কেবল নেত্রীর।