18/08/2025
বসুন্ধরা কিংস বনাম বাফুফে: কে সঠিক, কে ভুল?
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আর ক্লাব ফুটবলের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। তবে এবার আলোচনায় এসেছে দেশের সবচেয়ে প্রফেশনাল ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সিদ্ধান্ত।
কিংস ঘোষণা দিয়েছে, তারা জাতীয় দলের নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য ২০-২২ দিন আগে খেলোয়াড় ছাড়বে না।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি জাতীয় দলের প্রতি উদাসীনতা? নাকি আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাস্তবতা?
ফিফার নিয়ম কী বলে?
প্রীতি ম্যাচ হলে ক্লাব মাত্র ৪৮–৭২ ঘণ্টা আগে খেলোয়াড় ছাড়তে বাধ্য। তার আগে ক্লাব চাইলে ছাড়তে পারে, কিন্তু বাধ্য নয়। (সূত্র: FIFA Regulations on the Status and Transfer of Players)
অর্থাৎ কিংস যদি ২-৩ সপ্তাহ আগে খেলোয়াড় না ছাড়ে, তবে তারা কোনো নিয়ম ভাঙছে না। বরং একেবারে ফিফার আইন মেনেই চলছে।
এটা শুধু বাংলাদেশেই না, বিশ্বের সব দেশেই এভাবেই হয়। লেস্টার সিটি তাদের হামজাকে প্রীতি ক্যাম্পের জন্য আগে ছাড়বে না। কানাডার ক্লাব ক্যাভালারি তাদের সমিতকে ছাড়ছে না। ইতালির অলবিয়া কালচিও ফাহমিদুলকে ম্যাচের আগেই ছাড়বে না।
কারণ? ক্লাবই খেলোয়াড়দের আসল নিয়োগকর্তা। তাদের চুক্তি, বেতন, ফিটনেস, সব ক্লাবের দায়িত্বে।
বাংলাদেশের ব্যতিক্রম, এখানেই মূল সমস্যা।
বাফুফে প্রীতি ম্যাচের জন্যও ১৫-২০ দিনের "জাতীয় দল ক্যাম্প" শুরু করে। অথচ বাস্তবে বিশ্বের কোথাও প্রীতি ম্যাচের জন্য এত লম্বা ক্যাম্প হয় না।
এতে ক্লাব ফুটবলের প্রস্তুতি ভেস্তে যায়, খেলোয়াড়দের ওভারলোড হয়, অথচ জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায় না।
অনেকে মনে করেন, এমন দীর্ঘ ক্যাম্প আয়োজনের আড়ালে থাকে অতিরিক্ত খরচ দেখানো, বাজেট বাড়ানো আর গোপন স্বার্থ হাসিলের পথ।
কিংস সদ্য এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ থেকে ফিরে এসেছে।
সামনে তাদের চ্যালেঞ্জ কাপ + প্রিমিয়ার লিগ, দুটি বড় টুর্নামেন্ট। এই সময় খেলোয়াড়দের ক্লাবের হাতে রাখা খুবই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
তাই তাদের পদক্ষেপকে "জাতীয় দলের প্রতি অবহেলা" নয়, বরং "আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দায়িত্বশীলতা" বলা যায়।
আমাদের বুঝতে হবে, জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ আসবে শক্তিশালী ক্লাব ফুটবলের ভিত্তির ওপর। ক্লাবগুলোর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও প্রফেশনালিজমকে সম্মান না করলে জাতীয় দলের উন্নতি হবে না। বসুন্ধরা কিংস এই বার্তাই দিয়েছে, নিয়ম মানুন, প্রফেশনাল হন, তবেই অগ্রগতি সম্ভব।
তাই সমালোচনা নয়, বরং ধন্যবাদ প্রাপ্য বসুন্ধরা কিংস। তারা বাংলাদেশের ফুটবলে প্রফেশনালিজমের নতুন পাঠ দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এখন কি বাফুফে নিজেদের অপ্রফেশনাল ধারা বদলাবে? নাকি আগের মতোই "ক্যাম্প মানেই সাফল্য" ভেবে চলবে?