25/07/2025
এএফসি’র মেডিক্যাল বেঞ্চমার্কে বাংলাদেশ 🇧🇩
-বসুন্ধরা কিংসের হাত ধরে ইতিহাসের অংশ!
২০১৯ সালের শেষ ভাগে যখন বসুন্ধরা কিংস প্রথমবারের মতো এএফসি কাপ ২০২০-তে অংশ নিতে যায়, তখন ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে মিডিয়া ও মার্কেটিং ম্যানেজার আহমেদ শায়েক অংশ নেন একটি তিন দিনের এএফসি ক্লাব ওয়ার্কশপে।
এই ওয়ার্কশপে এক বিরতির সময় তাঁর দৃষ্টি আটকে যায় একটি ভিন্ন ধাঁচের স্টলের দিকে। অন্যরা যেখানে ক্লাবের ব্র্যান্ডিং, স্পন্সরশিপ বা ডেভেলপমেন্ট মডেল নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে একজন ডাক্তার ব্যস্ত ছিলেন প্লেয়ারদের ইঞ্জুরি নিয়ে কথা বলতে। তিনি কিছুক্ষণ আগেই একটি ৩০ মিনিটের প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন, যার মূল বিষয় ছিল, ইনজুরি ডেটা ও প্রিভেনশন।
আহমেদ শায়েক নিজেও একজন ভুক্তভোগী, যিনি ইনজুরির ধকল জানেন হাড়ে-হাড়ে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আগ্রহ নিয়ে কথা বলেন ঐ ডাক্তারের সঙ্গে। জানতে পারেন, এএফসি একটি কেন্দ্রীয় ইনজুরি ডেটাবেস গঠন করছে, যাতে ৪৭টি দেশের ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের ইনজুরি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে তাদের উন্নয়নে সহায়তা করা যায়।
ঢাকায় ফিরে এসে তিনি এই পুরো ইনিশিয়েটিভ এবং ধারণা ভাগ করেন বসুন্ধরা কিংসের ফিজিও ও মেডিকেল অফিসার আবু সুফিয়ান সরকারের সঙ্গে। একজন নিবেদিতপ্রাণ পেশাদার হিসেবে সুফিয়ান এই ইনজুরি ডেটা এবং প্রিভেনশন মডেলের ওপর নিরবিচারে কাজ করে যান পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে, সরাসরি এএফসি মেডিক্যাল ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে।
২৫ জুলাই, ২০২৫। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এএফসি’র ৮ম মেডিক্যাল কনফারেন্স-এর মূল মঞ্চে বিশাল স্ক্রিনে যখন ৪৭টি দেশের মধ্য থেকে মাত্র ২৩টি ক্লাব/ফেডারেশনকে ইনজুরি প্রিভেনশনের “Benchmark Model” হিসেবে ঘোষণা করা হলো, বাংলাদেশের নাম ভেসে ওঠে বসুন্ধরা কিংস এর ব্যাজসহ।
এটা শুধু একটি ক্লাবের অর্জন নয়, এটা বাংলাদেশ ফুটবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ। যেখানে সায়েন্টিফিক ফুটবল ম্যানেজমেন্টের একটি অধ্যায়ে বাংলাদেশের নাম উঠে এলো, ইনজুরি ডেটা ব্যবস্থাপনা, রিপোর্টিং এবং প্রিভেনশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে যেখানে ফুটবল উন্নয়নের গল্প এখনও ইনফ্রাস্ট্রাকচার, অর্থায়ন কিংবা প্রশিক্ষকের অভাবে ঘুরপাক খায়, সেখানে বসুন্ধরা কিংস দেখালো, বিজ্ঞাননির্ভর পরিকল্পনা, নিয়মিত ডেটা বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী মনোযোগ আমাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিতে পারে।
অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা -আবু সুফিয়ান সরকার, যার অবিচল অধ্যবসায় আজ বাংলাদেশকে মেডিক্যাল সাইডে এশিয়ার রোল মডেল করে তুলেছে।
বসুন্ধরা কিংস, আধুনিক ফুটবলের সবদিককে গুরুত্ব দিয়ে দেশের ক্লাব ফুটবলের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মানে পৌছানোর এক সাহসী যাত্রাপথের পথিকৃৎ।
এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয়, বাংলাদেশ ফুটবলকে উন্নত করতে হলে কেবল খেলোয়াড় নয়, মাঠের বাইরের প্রতিটি ক্ষেত্র, ফিজিওথেরাপি, সায়েন্স, রিসার্চ, ম্যানেজমেন্ট, সবকিছুর উন্নয়ন জরুরি। বসুন্ধরা কিংস সেই পথ দেখিয়েছে।