
25/02/2024
শবেবরাতের নামায ও আমল
শবে বরাত। শবে বরাত হচ্ছে সৌভাগ্যের রাত বা রজনী। ‘শব’ শব্দের অর্থ ‘রাত’ আর ‘বরাত’ হচ্ছে ‘ভাগ্য বা সৌভাগ্য’। মহিমান্বিত এই রজনীতে পরম করুনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সৃষ্ট জীবের গুনাহ মাফ ও ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাই এই রাতকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালন করেন।
হযরত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
যখন শাবানের ১৫তম রাতের আগমন ঘটে তখন তাতে কিয়াম (ইবাদত) করো আর দিনে রোজা রাখো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষণ করেন এবং ইরশাদ করেনঃ কেউ আছ কি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব! কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি জীবিকা দান করব! কেউ কি আছ মুসিবতগ্রস্ত? তাকে আমি মুসিবতমুক্ত করব! কেউ এমন আছ কি! কেউ এমন আছ কি! এভাবে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তার বান্দাদেরকে ডাকতে থাকবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত)
অপর এক হাদিসে হযরত আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত, একরাতে প্রিয় নবীজি কে না পেয়ে তাকে খোঁজ করলাম অবশেষে তাকে জান্নাতুল বাকীর কবরস্থানে পেলাম এবং উনার মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। প্রিয় নবী বলেন- হে আয়েশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছ যে, আল্লাহ ও তার রাসুল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়েশা রাঃ বললেন- তা নয়, বরং ভাবলাম আপনি আপনার কোন স্ত্রীর ঘরে গেছেন। প্রিয় নবীজি বলেন- আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। (১। সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত। ২। সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-৭৩৯। ৩। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০২৮)
শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন। এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫, আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং-১৩৯০ ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত)
এই দুইটি হাদিস থেকে শবেবরাতের আমল সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে-
১। রাতে কিয়াম করা অর্থাৎ নফল নামায, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরুদ শরীফ ইত্যাদি বেশি বেশি পাঠ করা।
২। দিনে নফল রোজা রাখা
৩। শবে বরাতে কবরস্থান জিয়ারত করা।
১। রাতে কিয়াম করা
শবেবরাতের রাতে কিয়াম করা অর্থাৎ নফল নামায, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরুদ শরীফ ইত্যাদি কতবার কিভাবে পাঠ করতে হবে এ ব্যাপারে হাদিসে নির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় না। এই জন্য এই রাতে আপনি নফল নামায সহ তওবা ইস্তেগফার, দোয়া ও দরুদ ইত্যাদি যতটুকু চান আদায় করতে পারেন।
শবেবরাতের নামায
শবেবরাতের নামায হচ্ছে নফল নামায যার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম উল্লেখ পাওয়া যায় না। এজন্য আপনি সূরা ফাতিহার সাথে কোরআনের কিছু আয়াত অথবা যে কোন সুরা পাঠ করে দুই রাকাত করে যে কয় রাকাত পড়তে মন চায়, সেই কয় রাকাত নামায এই রাতে পড়তে পারেন।
তবে বুর্জুগানে দ্বীন, উলামায়ে হক ও আউলিয়া কেরাম তাদের কিতাবে কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন, আমি এখানে সেগুলো উল্লেখ করিতেছি মাত্র।
নামাযের নিয়তঃ
নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লা-হি তায়ালা রাকআতি ছালা-তি লাইলাতিল বারাতিন -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
আপনি দুই রাকাতের এই নিয়ত পাঠ করে নিচের যে কোন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন অথবা আপনি আপনার মত করে যে কয় রাকাত নামায পরতে চান আদায় করতে পারেন। যথা-
পদ্ধতি- একঃ
শুধুমাত্র যারা দুই রাকাআত নফল নামাজ পরতে চান, তারা এই নিয়মে পরতে পারেন-
প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা ইখলাস পাঠ করে নামায শেষ করুন।
নামায শেষে ১১ বার বা ৪১ বার বা ১০০ বার অথবা বেজোড় সংখ্যায় আপনি যতবার পাঠ করতে চায় দুরুদ শরীফ পাঠ করতে পারেন। এরপর মুনাজাত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন।
পদ্ধতি- দুই
যারা আট রাকাআত নফল নামাজ পরতে চান, তারা এই নিয়মে পরতে পারেন-
নামায দু রাকাআত করে পড়তে হবে। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ৫ বার পাঠ করে নামায শেষ করবেন। একই নিয়মে বাকি নামায শেষ করবেন।
নামায শেষে ১১ বার বা ৪১ বার বা ১০০ বার অথবা বেজোড় সংখ্যায় আপনি যতবার পাঠ করতে চায় দুরুদ শরীফ পাঠ করতে পারেন। এরপর মুনাজাত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন।
পদ্ধতি- তিন
যারা বারো রাকাআত নফল নামাজ পরতে চান, তারা এই নিয়মে পরতে পারেন-
নামায দুই রাকাআত করে পড়তে হবে। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করে নামায শেষ করবেন। একই নিয়মে বাকি নামায শেষ করবেন।
নামায শেষে ১১ বার বা ৪১ বার বা ১০০ বার অথবা বেজোড় সংখ্যায় আপনি যতবার পাঠ করতে চায় দুরুদ শরীফ পাঠ করতে পারেন। এরপর মুনাজাত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন।
২। দিনে নফল রোজা রাখা
রাতে নফল নামায, ইস্তেগফার, দোয়া ও দরুদ যতটুকু সম্ভব আদায় করে ১৫ শাবান দিনে নফল রোজা রাখতে পারেন। যে রোজার ব্যাপারে লেখার শুরুতে উল্লেখিত হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
৩। শবে বরাতে কবরস্থান জিয়ারত করা
শবে বরাতে কবরস্থানে যেতে হবে কারণ, এ রাতে প্রিয় নবীজি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে দোয়া করেছেন। এবং উপরোক্ত হাদিসে উল্লেখ আছে এই রাতে আল্লাহ তায়ালা কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। সুতরাং
আপনি কবরস্থানে গিয়ে অথবা যে কোন স্থান থেকে ফাতিহা শরীফ পাঠ করে মৃত আত্মীয়স্বজন ও কবরবাসীদের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতে পারেন। কেননা কবর জিয়ারত করা সুন্নাত।
এছাড়াও আপনার বাড়িতে হালুয়া রুটিসহ মিষ্টান্ন দ্রব্য ও যে কোন ভালো খাবার রান্না করে পরিবারবর্গসহ নিজেরা খেতে পারেন এবং গরীব দুখি, প্রতিবেশি ও বন্ধুবান্ধবদের দিতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। কেননা হালাল খাদ্য পরিবারকে খাওয়ানো ও অপরকে দেওয়া সদকা। হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে- মানুষকে খাওয়ানো ইসলামে সবচেয়ে একটি উত্তম কাজ।
এছাড়া আপনি আপনার সাধ্যমত গরীব দুখিকে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারেন অথবা দান খয়রাত করতে পারে। কেননা সদকা করা উত্তম ইবাদত। ওয়াস সালাম।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে নেক আমল বা সৎকর্ম করার তৌফিক দিন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ। আমীন। সুম্মা আমীন।
সংগৃহীত