21/10/2025
ইসলামে পারেন্টিং- পর্ব ১(Islamic Parenting)
ইসলামে সন্তান লালন-পালন শুধু দায়িত্ব নয়—এটি একটি ইবাদত, আমানত এবং কিয়ামতে জবাবদিহির বিষয়। আল্লাহ বাবা–মাকে সন্তানের প্রথম শিক্ষক, পথপ্রদর্শক ও আদর্শ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাই ইসলামী পারেন্টিং-এর ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে আকিদা, আদব, আখলাক, ইলম এবং দায়িত্ববোধের ওপর।
★★প্যারেন্টিং ইসলামে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সন্তান পবিত্র আমানত: “হে মুমিনগণ! নিজেদের ও আপনজনদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সূরা তাহরিম: ৬)
সন্তান বাবা–মায়ের দোআ, সাদকা-য়ে-জারিয়ার কারণ হতে পারে। (হাদিস)
সন্তান সঠিক পথে না চললে বাবা-মায়েরও হিসাব দিতে হবে।
★ ইসলামী প্যারেন্টিং-এর ৫টি মূল স্তম্ভ হল
১. আকিদা ও ঈমান ছোটবেলা থেকেই “আল্লাহ আমাকে দেখেন”, “আল্লাহ সবচেয়ে দয়ালু” — এমন ঈমানি বোধ তৈরি করা
২. আদব ও আখলাক সালাম, ধন্যবাদ, সত্যবাদিতা, নম্রতা, মিথ্যা-বর্জন, বড়দের সম্মান, ছোটদের দয়া
৩. নামাজ ও ইবাদত ৭ বছরে নামাজ শেখানো, ১০ বছর বয়সে অভ্যাস দৃঢ় করা (হাদিস)
৪. হালাল–হারাম শিক্ষা খাবার, আচরণ, বন্ধুত্ব, পোশাক, আয়–রোজগার—সব জায়গায় হালাল চেতনা
৫. বাবা–মায়ের রোল মডেল হওয়া বাবা–মায়ের চরিত্রই সন্তানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা
★ ইসলামি প্যারেন্টিং-এ বাবা-মায়ের করণীয়
১. প্রচুর দোআ করা
সন্তান صالح/صالحা করার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায় দোআ।
رَبِّ اجۡعَلۡنِي مُقِيمَ الصَّلٰوةِ وَمِنۡ ذُرِّيَّتِيۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلۡ دُعَآءِ
উচ্চারণ:
“রব্বিজ্ আল্নী মুআক্বীমাস-সালাতি ওয়া মিন যুররিয়্যতী, রব্বানাা ওয়াতাক্বাব্বাল্ দু‘আ।”
অর্থ:
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী করুন এবং আমার সন্তান-সন্ততিকেও (নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী করুন)। হে আমাদের প্রতিপালক, আমার দোয়া কবুল করুন।" (সূরা ইব্রাহিম: ৪০)
২. ভালোবাসা ও আদরে বড় করা
রাসুল ﷺ শিশুদের চুমু দিতেন, কোলে নিতেন, খেলতেন—এটাই সুন্নাহ।
৩. মারধর বা অপমান নয়
গালাগাল, তুলনা, মারধর—ইসলামে নিরুৎসাহিত। এতে হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়।মা বাবা থে বাচ্চা দূরে সরে যায়।
৪. হালাল রিজিক খাওয়ানো
হালাল খাবার চরিত্রকে পবিত্র করে, হারাম খাবার অবাধ্যতা বাড়ায়।
৫. সুন্নাহভিত্তিক অভ্যাস তৈরি করা
ডান হাতে খাওয়া
বাথরুমের আদব
ঘুমের দোআ
সালাম দেওয়া
মসজিদপ্রেমী করা
★সন্তানের বয়সভেদে ইসলামি গাইডলাইন (সংক্ষেপে)
বয়স গুরুত্ব
(০–৭) বছর ভালোবাসা, খেলাধুলা, শুনতে শেখানো, basic দোআ ও আল্লাহ পরিচয়
(৭–১০) বছর নামাজ অনুশীলন, শৃঙ্খলা, আদব, দায়িত্ববোধ
(১০–পর) পর্দা, চরিত্র, বন্ধুত্ব সচেতনতা, জবাবদিহি, আত্মনিয়ন্ত্রণ
(যে ভুলগুলো প্যারেন্টিংয়ে উচিত নয়)
সন্তানকে ভয় দিয়ে ধর্ম শেখানো
“মানুষ কী বলবে” ভিত্তিক লালন-পালন
অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা
শুধু দুনিয়ার শিক্ষা, আখিরাতের শিক্ষা।
আসলে ইসলামি প্যারেন্টিং মানে—
দুনিয়ার সফলতা + আখিরাতের মুক্তি
সন্তানের ঈমান, আদব, আখলাক, আমলের ভিত্তি গড়ে দেওয়া—এটাই বাবা-মায়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য।