19/09/2025
✨ ঢাকার ওয়ারী খ্রিস্টান কবরস্থান: ৪০০ বছরের পুরনো নীরব ইতিহাস ✨
ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ির হর্ন, দোকানের ভিড়, মানুষের আনাগোনা। কিন্তু এই ভিড়ভাট্টার মাঝেই আছে একদম অন্যরকম এক জায়গা—
ওয়ারীর খ্রিস্টান কবরস্থান।
৪০০ বছরের পুরনো এই কবরস্থান শুধু একটি সমাধিক্ষেত্র নয়, বরং এটি ঢাকার ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী।
ঢাকার ওয়ারী বা নারিন্দার খ্রিস্টান কবরস্থান হয়তো অনেকেই নাম শুনেছেন, কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখেছেন কজন?
বাহির থেকে হয়তো এটিকে কেবলই একটা কবরস্থান মনে হবে। কিন্তু ভেতরে পা দিলেই যেন ইতিহাসের এক গুদামঘরে ঢুকে পড়েন।
এই কবরস্থান শুধু মৃতদেহের বিশ্রামস্থল নয়, বরং এখানে ঘুমিয়ে আছেন ঢাকার প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো নানা ঘটনার নীরব সাক্ষীরা।
---
🕰
ধারণা করা হয়, ১৭শ শতাব্দীর শুরু থেকেই (অর্থাৎ প্রায় ৪০০ বছর আগে) এই কবরস্থানের যাত্রা শুরু। তখন বাংলায় আসত পর্তুগিজ, ডাচ, আর্মেনিয়ান আর পরবর্তীতে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও মিশনারিরা। যারা কেউ এখানে ব্যবসা করতে এসে ধনী হয়েছেন, আবার কেউ রোগ, দুর্ঘটনা বা জলবায়ুর কারণে এখানে মৃত্যুবরণ করেছেন।
---
⚰️
প্রথম দিকে মূলত পর্তুগিজ ব্যবসায়ী, ইউরোপীয় ধর্মযাজক আর তাদের পরিবারের সদস্যদের সমাহিত করা হতো।
পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা, ইউরোপীয় সেনাসদস্য, আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী, এমনকি চাইনিজ খ্রিস্টান রূপান্তরিতদেরও এখানে দাফন করা হয়েছে।
---
🌟
এখানে অনেক বিশিষ্ট ও অজানা মানুষ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। যেমন:
রেভারেন্ড জোসেফ প্যাজেট (১৭২৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন) – তাঁর কবরকে সবচেয়ে পুরনো কবরগুলোর একটি ধরা হয়।
Columbo Sahib নামে পরিচিত বিশাল সমাধি, যা নিয়ে আজও রহস্য আছে।
জেন ভ্যান টাসেল, যিনি ১৮৯২ সালে ঢাকায় এক বেলুন দু-র্ঘটনায় মারা যান।
পোগোস পরিবারের কবর – যাদের মধ্যে আছেন বিখ্যাত পোগোস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার পরিবার।
আরও অনেক ব্রিটিশ কর্মকর্তা, আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী, মিশনারি এবং উপনিবেশিক যুগের অচেনা নাম।
=======================
🎈 জেন ভ্যান টাসেলের রহ-স্যময় মৃত্যু
১৮৯২ সাল। ঢাকার নবাবরা তখনও আভিজাত্যের চূড়ায়। একদিন ঢাকার আকাশ রঙিন হতে চলেছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে—
ঢাকার প্রথম বেলুন উড্ডয়ন----
একজন বিদেশিনী মহিলা, নাম জেন ভ্যান টাসেল।
কথিত আছে, নবাব পরিবারের (খাজা আহসান উল্লাহ) বিশেষ অনুরোধে এবং সামান্য বাড়তি অর্থের লোভে খারাপ আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও ল্যান্ডিং পয়েন্ট আহসান মঞ্জিলের ছাদকে বেছে নেয়া হয়। নবাবের সাথে তাদের ১০ হাজার টাকার চুক্তি হলেও আহসান মঞ্জিলের ছাদে নামার জন্য তাকে আরো ৪,৫০০ টাকা অফার করা হয়,তারপর তিনি রাজি হন বেলুনে উঠে আকাশে ভেসে যেতে।
ঢাকার মানুষ সেই সময় ছুটে এসেছিল এই অভিনব দৃশ্য দেখতে।
বেলুন যখন আকাশে উঠল, সবার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।
কিন্তু সেই বিস্ময় মুহূর্তেই পরিণত হলো আতঙ্কে।
হঠাৎই বেলুনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেয়েটি জঙ্গলে একটি গাছের উপর পড়ে। তারপর তাকে নামানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি চলে,, একপর্যায়ে বাশের সাহায্যে গাছ থেকে নামতে গিয়ে দু-র্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি,, গাছ থেকে নামতে গিয়ে সরাসরি মেয়েটি পড়ে যায় নিচে,,
মুহূর্তেই প্রা-ণ হারালেন জেন ভ্যান টাসেল।
আজও তাঁর সমাধি আছে এই কবরস্থানে।
অনেকে বলেন, ভ্যান টাসেলের সমাধির সামনে দাঁড়ালে এখনো সেই অদ্ভুত শীতলতা শরীরে ভর করে।
কেউ কেউ দাবি করেন, গভীর রাতে কবরস্থানের ভেতর থেকে শোনা যায় মৃদু ফিসফাস—যেন কারো দীর্ঘশ্বাস
👻 ভৌতিক গুজব ও বাস্তবতা
দিনে গেলে এই কবরস্থান শান্ত, নিরিবিলি, বরং ঐতিহাসিক।
কিন্তু রাতে?
লোকমুখে শোনা যায় নানা গল্প—
মাঝরাতে সমাধির ভেতর থেকে কারো পায়ের শব্দ,
বাতাসে ভেসে আসা মোমবাতির গন্ধ,
কিংবা ছায়ার মতো কারো হেঁটে যাওয়া।
যদিও এসবের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তবুও পুরনো কবর, নিস্তব্ধতা আর রহস্যময় পরিবেশের কারণে অনেকেই রাতে এই জায়গায় পা দিতে ভয় পান।
⏳ সবচেয়ে পুরনো কবরগুলো
১৭২৪ সালের কবরফলকগুলোই সবচেয়ে পুরনো প্রমাণ। সেই কবরগুলো দেখে বোঝা যায়, ঢাকায় ইউরোপীয়দের ইতিহাস কতটা প্রাচীন।
---
👻
অনেকে মনে করেন কবরস্থান মানেই ভৌতিক! কিন্তু দিনের বেলায় এখানে গেলে ভয় নয়, বরং অদ্ভুত শান্তি আর ইতিহাসের ছোঁয়া পাবেন।
শত শত পুরনো পাথরের সমাধি, শ্যাওলা ঢাকা দেয়াল আর নিস্তব্ধ পরিবেশ – এগুলো মনে হয় যেন আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে ৩০০-৪০০ বছর আগের ঢাকায়।
রাতে অবশ্য জায়গাটা নির্জন, গা ছমছম করে – তবে সেটা ভয়ের জন্য নয়, বরং নীরবতার জন্য।
---
🙏 Souls’ Day এর রীতি
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে "All Souls’ Day" বা সোলস ডে-তে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষরা এখানে আসেন।
তারা তাদের প্রিয়জনদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দেন, মোমবাতি জ্বালান।
যারা বিদেশি হয়ে এখানে ঘুমিয়ে আছেন, হয়তো তাদের স্বজনরা কোনোদিন ফুল দিতে পারেননি। কিন্তু ঢাকার মানুষ আজও সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রেখেছেন।
---
🏛
ঢাকার উপনিবেশিক যুগের ইতিহাস জানতে চাইলে এই কবরস্থান এক জীবন্ত দলিল।
এখানে শুয়ে আছেন বণিক, মিশনারি, সেনাসদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ ইউরোপীয় নাগরিক পর্যন্ত।
এটি প্রমাণ করে, ঢাকা শুধু বাঙালিদের শহর নয়, বরং এখানে বহু জাতি ও সংস্কৃতির পদচিহ্ন রয়ে গেছে।
---
✨
ওয়ারীর খ্রিস্টান কবরস্থান কোনো ভৌতিক গল্প নয় – এটি আমাদের শহরের বহু পুরনো স্মৃতির ভাণ্ডার।
ঢাকার ব্যস্ততার ভেতর এই নীরব জায়গাটি মনে করিয়ে দেয়, সময়ের স্রোতে সবকিছু বদলায়, কিন্তু ইতিহাস কখনো হারায় না।
📌 তাই একদিন সময় করে ঘুরে আসতে পারেন এই কবরস্থান থেকে। হয়তো নিস্তব্ধতার মাঝে দাঁড়িয়ে আপনিও শুনতে পাবেন পুরনো ঢাকার অজানা কাহিনি।
---
👉 আপনার কি মনে হয়, এই ধরনের ঐতিহাসিক স্থানগুলো কি আমাদের সংরক্ষণ করা উচিত?
কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
===========================
লেখা-মোঃনাঈম ভুইয়া ||
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন ||
=======================
#নারিন্দ্রাখ্রিস্টানকবরস্থানএরইতিহাস #খ্রিস্টানকবরস্থান
#খ্রিস্টানসিমেট্রি
#ঢাকারগনপরিবহন #নাঈম