30/07/2025
চিঠি
বৃষ্টি পড়ছিল সারাদিন। আকাশ যেন কাঁদছে কারও জন্য, কারও হারানোর যন্ত্রণায়।
মেহরাব জানালার পাশে বসে ছিল। তার চোখে কোনো অভিব্যক্তি নেই, শুধু নিঃশব্দে সময় গড়িয়ে চলছিল। হাতে এক টুকরো পুরনো কাগজ—একটা চিঠি, যেটা সে প্রায় প্রতিদিন পড়ে।
চিঠিটা রূপার লেখা।
তাদের বিয়ের প্রথম বছর পূর্ণ হওয়ার আগে রূপা তাকে এই চিঠিটা দিয়েছিল।
চিঠিতে লেখা ছিল—
“তুমি জানো মেহরাব, আমি খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না। কিন্তু তোমার চোখে যখন আমি তাকাই, মনে হয় আমি নিরাপদ। মনে হয়, আমার সব ভয়, সব দুঃখ, সব ভুলভ্রান্তি তুমিই ঠিক করে দেবে।
তুমি থাকলেই আমার দুনিয়া পূর্ণ, আর না থাকলে সবই ফাঁকা…”
রূপা এখন আর নেই।
একটা সড়ক দুর্ঘটনা সব কিছু শেষ করে দিল। সেই দিন সকালে রূপা বলেছিল,
“দুপুরে ফিরেই তোমার প্রিয় খিচুড়ি রান্না করব, মনে রেখো!”
কিন্তু দুপুরে খিচুড়ির গন্ধ আসেনি।
এসেছিল একটা ফোন কল।
“রূপাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
মেহরাব ছুটে গিয়েছিল, কিন্তু রূপা তখন প্রায় নিস্তেজ।
শেষবার চোখ খুলে মেহরাবের মুখের দিকে তাকিয়েছিল,
চেষ্টা করেছিল কিছু বলার, কিন্তু কেবল ঠোঁট নড়েছিল... শব্দ হয়নি।
তারপর, শূন্যতা।
---
তিন বছর কেটে গেছে।
মেহরাব এখনো রূপার প্রিয় কাপটা তুলে রাখে, যেন কখনো ফিরে এলে খুঁজে পাবে।
তার আলমারিতে রূপার চুড়ি, চুলের ক্লিপ, পছন্দের সেই নীল শাড়ি, সবকিছু ঠিকঠাক রাখা।
বাগানে এখনও সেই গোলাপ গাছ আছে, যা রূপা নিজ হাতে লাগিয়েছিল।
প্রতিদিন সকালে মেহরাব সেই গাছে পানি দেয়—যেন রূপার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখে।
চিঠিটার কাগজ পুরনো হয়ে গেছে, কিন্তু কথাগুলো এখনো আগের মতোই কাঁপিয়ে দেয় মেহরাবকে।
বৃষ্টি থেমে আসে।
জানালার পাশে বসে থাকা মেহরাব ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে।
তার ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি—
রূপার কথা মনে পড়ছে।
parinita pari