25/06/2025
--এআই বনাম নুইয়ে পড়া চারাগাছ--
টেবিল-চেয়ারে বসে গুরুগম্ভীর একটা রিপোর্ট পড়ছি। কিছুক্ষণ পর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ফেইসবুকে ঢুকতেই হুমায়ূন আহমেদ এর একটা লেখা চোখে পড়লো। সেই লেখায় আজমীর শরীফের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। লেখক নাকি একবার পরিবার নিয়ে আজমীর শরীফ গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাঁর মেয়ে দোয়া করেছিলেন যেন বস্তা ভর্তি টাকা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই নাকি তাঁদের আর টাকার অভাব হয়নি। আজমীর শরীফের কথা ছোটবেলা থেকে অনেক শুনেছি (বিশেষ করে বাংলা সিনেমায়)। কিছু হলেই মানত করতে মানুষজন আজমীর শরীফের পথে হাঁটা দেয়। এত বছর পর খেয়াল করে দেখলাম আজমীর শরীফ সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানি না। সঙ্গে সঙ্গে গুগলে সার্চ করলাম- আজমীর শরীফ। উইকিপিডিয়াতে ঢুকে পুরো একটা পেইজ পেলাম। কৌতূহল বেড়ে গেলো। যার সমাধি তাঁর নাম সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতি। তাঁকে নিয়েও বিশেষ কিছু জানি না। গেলাম তাঁকে নিয়ে লেখা পেইজে। সেখান থেকে গেলাম সুফিবাদ এর পেইজে। কৌতূহল বেড়েই চললো। রিপোর্ট শেষ করতে হবে দেখে কৌতূহলকে সাময়িক চাপা দিয়ে রাখলাম।
এই যে কৌতূহল, Curiosity বা inquisitiveness- তা মানুষ নামের প্রাণীর মস্ত বড় একটা ব্যাসিক জিনিস। মানুষের মধ্যে আল্লাহতালা জিনিসটা সেট করে দিয়ে বলে দিলেন- যা ব্যাটা, তুই আশরাফুল মাখলুকাত! হয়তো প্রাচীন এক সময়ে যখন মানুষ গুহায় বাস করতো, এই কৌতূহলই তাকে গুহার বাইরে এনে এক রাতে মাথার উপরের আকাশ দেখিয়ে বলেছে, আকাশ দেখেছো ভাল কথা, এবার তারাগুলো দেখো। তারা দেখেছো ভাল কথা, এবার ভাবো কোন তারা কখন ওঠে, কবে ওঠে। এরপর একের পর এক জ্ঞান আমরা পেয়েছি। পৃথিবী এগিয়ে গেছে। আমরা হয়েছি শ্রেষ্ঠ জীব।
এরপর এলো এআই। এলো বলাটা ভুল। আমরাই এনেছি। আমরাই বানিয়েছি। এখন আমরা প্রশ্ন করি- এআই কী মানুষের মতো ভাবতে পারে? কাজ করতে পারে? তাহলে কি মানুষের আর চিন্তা করার দরকার নেই? বাস্তবিকভাবেই মানুষের আর অনেক কিছু করার দরকার নেই। আমার নিজেরই অনেক কাজ এআই করে দেয়। তবে এআই এর কিছু ভুলভাল ব্যবহার আমরা করি। সবথেকে বড় ভুলটা করছে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা। এরা নিজেদের লেখার বদলে এআই দিয়ে রিপোর্ট বানিয়ে নেয়। হোমওয়ার্ক করে নেয়। এতে ভুলটা যেটা হচ্ছে- আমরা চিন্তা করতে ভুলে যাচ্ছি। যে কৌতূহল থেকে মানুষ চন্দ্র-নক্ষত্র জয় করে ফেললো, সেই কৌতূহল দিয়ে কিছু চিন্তা করার বদলে আমরা এআই এর উপর এমনই নির্ভর করে ফেলছি যে, সব চিন্তা তাকেই করতে দিচ্ছি। নিজেরা কিছু ভাবতে চাইছি না। এটাই সমস্যা। এআই এর যে বিপ্লব আমরা ঘটিয়েছি, তাতে এআইকে আরেকটা সত্তা হিসেবে চিন্তা করা কেবল হাতে গোনা দিনের অপেক্ষা। এআই কে মানুষের মতো আরেকটা প্রাণীই চিন্তা করেন। সে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ চিন্তা করা ভুলে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের চিন্তাশক্তিতে আর শান হচ্ছে না। আমার কাছে এআই নিয়ে সবথেকে ভয়ের কারণ এটাই। এইতো দুদিন আগেই MIT এর একটা রিসার্চের কথা জানলাম। এআই দিয়ে যারা রচনা লিখছে, লেখার মাত্র কয়েক মিনিট পরেই এরা কি লিখেছে তার একটি লাইনও ঠিকমতো মনে করতে পারছে না!! এআই এর অনেক ভাল ভাল দিক আছে। আমি নিজেও এআই ছাড়া অনেক কাজ এখন করার কথা ভাবতেও পারি না। তবে সেটা নিজের রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে একদমই রিকমেন্ড করতে পারি না।
পরবর্তী প্রজন্ম এমন একটা অস্ত্র হাতে পেয়ে গেছে, যা দিয়ে অনেক মহৎ কিছু করা সম্ভব। কিন্তু তার আগে এদেরকে এক বিশাল পরিচর্চার মধ্যে দিয়ে নিতে হবে, ঠিক যেমনটি একদম নুইয়ে পড়া চারাগাছকে আমরা করে থাকি।
২৫ জুন ২০২৫