05/11/2025
নিজেকে বদলে ফেলতে চাইলে সাব-কনসাস ( অবচেতন ) আর কনসাস ( সচেতন ) মাইন্ডের পার্থক্য জানাটা খুব জরুরী ।
⚜️ কারণ আমাদের চরিত্রের অভ্যাসগুলো আমাদের সাব-কনসাস মাইন্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।
⚜️ অথচ আমাদের মনের সচেতন এবং অবচেতন অংশের ব্যপারে জানলেও এদের ফাংশন অথবা কার্যপ্রণালীর ব্যপারে আমরা আসলে খুব একটা জানিনা বললেই চলে ।
সচেতন এবং অবচেতন মনের গুরুত্বপুর্ণ পার্থক্যগুলো জানতে আপনাকে সাইকোলজির টিচার হতে হবে না।
⚜️ অবচেতনের সবথেকে বড় চাবি হলো পুনরাবৃত্তি ( repetition )। মনে রাখবেন যে, অবচেতন মনের কাছে সত্য মিথ্যা বলে কিছু নেই, সে বরং সবকিছুকে সত্য বলে ধরে মেমোরী তে জমা রেখে দেয় । এজন্যই কোন একটা অভ্যাস বা চর্চা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে একসময় আমাদের চরিত্রের একটা অংশে পরিণত হয় ।
⚜️ এমনকি আপনার মনের সচেতন অংশ যখন বলছে যে সিগারেট আপনার জন্য খারাপ, আপনার অবচেতন মন অভ্যাসটাকেই তার জন্য সত্য বা আনন্দ বলে ধরে নিয়েছে । যেদিন আপনার অবচেতন মনকে আপনি বোঝাতে পারবেন যে সিগারেট সত্যিই আপনার জন্য খারাপ সেদিন থেকে সিগারেট ছাড়বার অ্যাকটিভ ক্ষমতা আপনার সাব-কনশাস মাইন্ড গ্রহণ করে নেবে।
⚜️ নিজেকে যখন আপনি একটি সিরিয়াস প্রশ্ন করেন – “আমি কিভাবে গাড়ি চালাই ?” তখন আপনার সাব-কনশাস মাইন্ড স্মৃতি থেকে উত্তর খুঁজতে শুরু করে আর কনশাস মাইন্ড উত্তর দেবার ডিসিশন নেয়।
⚜️ নিজেকে যদি একটি নেগেটিভ প্রশ্ন করেন – “এত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম ?” কনশাস মাইন্ড যদি এটার উত্তর এই মুহুর্তে নাও দেয় আপনার অবচেতন মনে শুরু হয়ে যাবে উত্তরটি খোঁজার কাজ ।
⚜️ নিজেকে আরেকটু কম সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করুন – “আমি এই বোকামীটা কিভাবে করলাম ?” আপনার সচেতন মন খুব সম্ভব এটাকে সুন্দর মত এড়িয়ে যাবে অথচ অবেচেতন মন ঠিকই উত্তর খুঁজতে শুরু করবে ।
⚜️ আবার হয়তবা আপনার সাথে এমনও হয়েছে যে, আপনি আপনার স্বাভাবিক নিয়ম মত কিছু করছেন, এরই মাঝে আপাত কোন কারণ ছাড়াই কোন একটা বাজে ঘটনা আপনার মনে পড়ে গেলো !
⚜️ এর দুটো কারণ থাকতে পারে- হয় আপনার বর্তমান পরিবেশের কোন একটা জিনিস আপনার অবচেতন মনকে পুরোনো সেই স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে এবং আপনার মেমোরী থেকে এই পার্টিকুলার ঘটনাটি রিপ্লে করছে অথবা আপনি অতীতে কোন একটা সময় নিজেকে এমন একটা প্রশ্ন করেছিলেন যার উত্তরটি অবচেতন হটাত করেই খুঁজে পেয়েছে । আপনার সচেতন মন প্রশ্নটি ভুলে গেলেও অবচেতন মন ঠিকই উত্তরটা বের করবার জন্য কাজ করে গেছে ।
⚜️ এবার সচেতন এবং অবচেতন মনের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখে নেওয়া যাক -
১। সচেতন মন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারে । টাইমলাইনের বিভিন্ন সময়ের ঘটনাগুলোকে আলাদা করতে পারে । বর্তমানের ঘটনাকেই শুধুমাত্র বর্তমান বলে ধরে নিতে পারে সে । আপনি যখন ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন তখন তাকে ফ্যান্টাসি বলে ধরে নিচ্ছে সচেতন মন ।
অবচেতন মনের কাছে অতীত, বর্তমান অথবা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই । আপনার টাইমলাইনকে আলাদা করতে পারে না । বর্তমানে ঘটনার সাথে সাথে আপনি যে ঘটনা মনে করছেন সেটাও তার কাছে এই মুহুর্তে বাস্তব অথবা বর্তমান । ভবিষ্যত নিয়ে আপনার চিন্তা অবচেতন মনের কাছে বাস্তব ।
২। সচেতন মন বুঝতে পারে যে কিছু ব্যপার আছে সত্য আর কিছু ব্যপার আছে মিথ্যা । আপনার কনশাস মাইন্ড জানে ভূত বলে কিছু নেই ।
অবচেতন মনের কাছে সত্য মিথ্যা বলে কিছু নেই, তাই তার শোনা প্রতিটা জিনিস তার কাছে সত্য । ভূতের অস্তিত্ব স্বীকার করে ।
৩। নেগেটিভ এবং পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্স অথবা ভাষার পার্থক্য বুঝতে পারে সচেতন মন ।
নেগেটিভ এবং পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্সের পার্থক্য বোঝবার ক্ষমতা সাব-কনশাস মাইন্ডের নেই।
৪। বাস্তবতা এবং স্বপ্নের মাঝে পার্থক্য জানে আমাদের সচেতন মন ।
বাস্তবতা এবং স্বপ্নের মাঝে কোন পার্থক্য সে জানে না আমাদের অবচেতন মন। স্বপ্ন এজন্য তার কাছে বাস্তব একটা ব্যপার ।
৫। সচেতন মনকে নতুন করে প্রোগ্রাম করা যায় নতুন তথ্য এবং জ্ঞ্যান দ্বারা । যে কোন সময় নতুন কিছু শিখবার ক্ষমতা রাখে সে ।
নতুন করে প্রোগ্রাম করা একটু কঠিন, সচেতনতার থেকেও বেশি এফোর্ট দরকার অবচেতনকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য ।
কিন্তু রিপিটেশন এবং হিপনোসিস, মেডিটেশন এর মাধ্যমে অবচেতন মনে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
৬। সচেতন মনের ধারনা আপনার সার্বিক পরিচালনার ক্ষমতা যেমন গাড়ি চালানো, হাটা, সাঁতার কাটা, রান্না করা, দৈনন্দিন কাজ করা ইত্যাদি তার হাতে , যদিও সেটা ভুল। আর আমাদের সচেতন মন ভাবে এ সমস্তই তার অধীনে।
আপনার সার্বিক পরিচালনার ক্ষমতা অবচেতন মনের অধীনে থাকে।
৭। সচেতন মন শুধুমাত্র সেই সমস্ত বিষয়ের প্রতি আগ্রহী যাকে সে সচেতনভাবে দেখবার বা শুনবার বা ধরবার অথবা ঘ্রাণ নেবার ক্ষমতা রাখে । গভীর কোন অর্থের প্রতি আর তেমন আগ্রহ নেই বললেই চলে ।
দেখবার, ধরবার, শুনবার বা ঘ্রাণ নেবার ক্ষমতা থেকে তৈরি আবেগের প্রতি অবচেতন মন অধিক আগ্রহী এবং সে প্রতিনিয়ত সবকিছুর মাঝে গভীর কোন অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে থাকে । এজন্য আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু কিছু প্রতীকের সাথে গভীর কোন অর্থ অথবা আবেগ জড়িয়ে থাকে।
৮। এককথায় সচেতন মনকে বলা যায় পুতুল । আর অবচেতন মন হলো পুতুল নিয়ন্ত্রনকারী ।
ফ্যান্টাসি বা স্বপ্ন আমাদের অবচেতনের কাছে সত্য হবার সবচাইতে বড় সুবিধা হলো আপনি একটি স্বপ্ন যত গভীর ভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখতে পাবেন সেটা আপনার অবচেতনের কাছে ততটাই সত্য হয়ে উঠবে , ফলাফল হিসাবে সে আপনাকে এমনভাবে গাইড করতে থাকবে যেন আপনার সচেতন মন ধীরে ধীরে সেই টারগেটের আরো কাছে আপনাকে পৌছে দেবার যোগ্য হয়ে ওঠে ।
তাহলে বুঝতেই পেরেছেন আমাদের অবচেতন মন কতখানি শক্তিশালী।
⚜️ এক কথায় আমাদের সচেতন মন ( ১০% ) শর্ট টার্ম মেমোরী, চিন্তা, পরিকল্পনা, কোনো কিছু বিশ্লেষণ এগুলি নিয়ন্ত্রণ করে।
⚜️ আর আমাদের অবচেতন মন ( ৯০% ) দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি, আবেগ, অনুভূতি, সম্পর্ক, শারীরিক কার্যকলাপ, অভ্যাস, মাইন্ড পাওয়ার, ইনটিউশন, ক্রিয়েটিভিটি এই সমস্ত নিয়ন্ত্রণ করে।
⚜️ আমরা শুধু সচেতন মনের ব্যবহার করে থাকি দৈনন্দিন জীবনে কিন্তু আমরা যদি এই অবচেতন মনের বিরাট ভান্ডারকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে বহু কিছু প্রাপ্তির পথ আমাদের সামনে এক এক করে খুলে যাবে।