10/10/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            চব্বিশ, তুমি কি পথ হারিয়েছো!
দীর্ঘ দেড় দশকের একটি শাসনকাল। নানা অপ্রাপ্তির অসন্তোষ, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম, পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ইত্যাদি নানা কারণে নাকাল সাধারণ মানুষের জীবন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল ও তার কাছের মানুষদের বহুমাত্রিক দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার ও দাম্ভিক রাজনৈতিক উচ্চারণ।
আর্থিক খাতে দুরাবস্থা, কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার রাজনীতির সুবিধা নিয়ে দেশের অর্থনীতিটাকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় খোদ সরকার প্রধান এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বললেন তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, সে হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরে বেড়ায় । এই এক কথাই নিশ্চিত করে সরকারের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো কি পরিমান লুটপাট করেছে । তবে কি তিনি এ ধরনের লুটপাট ঠেকাতে পারছিলেন না ! 
আন্দোলনের পথে সর্বশেষ ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের সংযুক্তি। সম্মুখ সারিতে জীবন বাজিরাখা তরুণ-তরুণী, ছাত্র । আন্দোলনের কাতারে অকাতরে জীবন দিল তারা। একে একে বন্ধুদের লাশ টেনে ক্লান্ত রাজপথের সৈনিকরা, তবু ‘মাথা নোয়াবার নয়’। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে তবু শাসক বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মা তার সন্তানকে এগিয়ে দিলো মিছিলে। 
আন্দোলনকারীদের ব্যপারে সরকার প্রধানের অবজ্ঞা আর অসম্মানজনক উচ্চারণ এবং বিরোধী মতাবলম্বীদের নিষ্পেষন সব মিলিয়ে তীব্র আন্দোলনে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও সাধারণ জনগণ এক সাথে রাজপথে আপোষহীন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ এ উপনীত হলো। ছাত্রদের কোটা-বিরোধী আন্দোলন ক্রমে রূপ নিল সরকার পরিবর্তনের অদম্য সংগ্রামে। 
সরকারি দল, তার সহযোগী রাজনীতিবিদ ও অন্যায্য সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যবসায়ী ছাড়া প্রায় সব শ্রেণী পেশার মানুষ এক কাতারে নেমে এলো রাজপথে। 
দেশে বিদেশে মানুষের আবেগ ভালোবাসা, আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, গুম খুন নির্যাতন ও দেশান্তরিত জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে চব্বিশ অর্জিত হলো। এই চব্বিশ, বাংলাদেশের নতুন রূপ। 
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা নির্লোভ তরুণ-নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সমর্থ হয়। ফলাফল, সরকারের পতন এবং ব্যাংক লুটকারী ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের পলায়ন। 
সেই চব্বিশ আজ দ্বিধাবিভক্ত, দলমত নির্বিশেষে রাজপথে নেমে আসা মানুষের বজ্র কঠিন ঐক্য আজ কোথায় ? 
তাই স্বভাবতই মনে প্রশ্ন আসে, চব্বিশ, তুমি কি পথ হারিয়েছো!
নিজেদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য আর পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে চব্বিশ আজ অদৃশ্য হতে চলেছে। ক্ষুদ্র স্বার্থের চোরাবালিতে হারিয়ে যেতে বসেছে চব্বিশের সকল ন্যায্য আকাঙ্খা। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ে রাজপথে ছুটে আসা তরুণ আজ বিভ্রান্ত, নিজেদের নির্মল ও নির্লোভ চরিত্র আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
মনে রাখতে হবে চারপাশে শকুনের শ্যান দৃষ্টি, আকাশে উড়ছে উদ্যত বাজপাখি। এ অবস্থায় অপরিপক্ষ অপরিনামদর্শী রাজনীতি আমাদের বিপন্ন করতে পারে। 
এই অবস্থা কাম্য নয়, এমন কিছু হলে আগামীর বাংলাদেশকে হতাশায় ফেলে দেবে, তরুণ সমাজ ও ছাত্রদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ চিরদিনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
জীর্ণ পঁচা রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তে আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চব্বিশের প্রত্যাশা । তবে মনে রাখতে হবে কৃষক যত দক্ষই হোক তিন ফসলা জমির সব ফসল একসঙ্গে ঘরে তোলা যায় না। অতএব রাজনৈতিক সব পরিবর্তন একসাথে সম্ভব নাও হতে পারে, সময় লাগবে ।