28/08/2025
গুনটানা টান ঘুইচ্চা গেছে, বইসাছি পাছায়
গতসন্ধ্যায় মেয়ে আর আমি কাছেই নির্বাচন কমিশনের রাস্তায় ফুচকা খেতে বেরিয়েছিলাম। বিকেল থেকেই সঙ্গীত কলেজের সামনে থেকে নির্বাচন কমিশনের মোড় পর্যন্ত খাবার দাবার, ছোট ব্যাবসায়ীদের কাপড়, ঘর সাজানোর জিনিস, গৃহস্থালির হাঁড়ি কড়াই, সুঁই-সুতো, জুতো, মালা-ফিতে, শাক-সবজী, ফল-ফুল সহ হরেক দোকান ভ্যানে, টেবিলে, কার্ট নামক একধরনের ভ্যানে মেলার মতো বসে যায়। এক বয়স্ক দম্পতি কেক বানিয়ে টেবিলে সাজিয়ে বসেন, অনেক নারীরা দিনভর সংসারের কাজ সেরে নিজের কাপড়ের বা প্রসাধনীর দোকান সাজিয়ে বসেন। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ চলে, চাঁদা বা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রেক্ষিতে, আবার বসে ধীরে।
কদিন ধরে আমার খুব ফুচকা আর রাজ কচুরি নামক ইয়া ধামসা এক ফুচকা খেতে মন উচাটন বা craving হচ্ছিল, সাধারণত আমরা পাড়ার মোড়ের থেকে আনিয়ে ঘরে খাই, কিন্তু সেখানে রাজ কচুরি হয় না। যাহোক খুঁজে পেতে একটা কম ভীড় ও কিছুটা ফাঁকা ফুচকার দোকানে বসে, দোকানি তরুন তন্ময়কে ফুচকা ও রাজ কচুরি দিতে বলি, কিন্তু ও এখনো পরিপক্ব হয়ে ওঠেনি, তাই বার কয়েক বিট নুন, বোম্বাই মরিচ, চটপটির বিশেষ মসলা চেয়ে নিয়েও ঠিক মনপুত হলো না, তবুও ওকে আশ্বাস দিলাম আর কোথায় গিয়ে খেলে আরো ভালো শিখবে জানিয়ে, মাটির ভাতের হাঁড়ি কিনে, শাক বেচুনি এক বুড়ি খালার কাছে হাঁড়িটা রান্নার আগে কিভাবে প্রস্তুত করবো জেনে ঘরে ফিরলাম।
সকালে মেয়ে ঘুম ভাঙলে খেতে বসে বল্লে, "কাল ফুচকাটা lost project হলো",আমিও, "হ্যাঁরে মনটা ভরলোই না", এমনিতেই আমি নিতান্ত জরুরি কাজ নেহাৎ রোজগারের ব্যাপার না থাকলে বেরই হই না, মাঝে কিছুদিন বেরোতো হয়েছিলো আমি তো ভীষণ রাজনৈতিক সচেতন তাই, পরে দেখলাম সবাই ভীষণ খাবি খাচ্ছে, আমার অত পোষায় না, তাই সটকে ঘরে দোর এঁটে দিলাম। হঠাৎ মেয়ে বল্লো, মোড়ের ওষুধের দোকানীর নাম করে, এ পাড়ায় সকলে তাকে মনির ডাক্তার বলে চেনে, ভীষণ দরদী, অপূর্ব ধৈর্য ও মিষ্টি ব্যাবহার, যদিও ডাক্তারের এসিস্ট্যান্ট থাকায়, প্রেসার মাপা, ডায়াবেটিস চেক, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইনজেকশন দেওয়া, নেবুলাইস করানো এবং হত দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করে, "মা, মনির ডাক্তারের পাশে সবসময় ভ্রু কুঁচকে থাকে যে ফুচকাওয়ালা?" আমি বল্লাম, "যারটা আনিয়ে খাই?" মেয়ে, " হ্যাঁ হ্যাঁ উনিই, জানো মনির ডাক্তারের পাশে ছোট্ট একটা বসার জায়গা করেছেন, এখন বসে ব্যাচেন, বসেও খাওয়া যায়"। এ পাড়ায় আমি এগারো বছর, ঈদ বা কোরোনা ছাড়া তাঁকে টুলের ওপর এ্যালোমোনিয়ামের বিশাল গামলায় ফুচকার সরঞ্জামাদি সাজিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়েই বেঁচতে দেখেছি, মেয়ে নাকি একদিন জিজ্ঞেসই করে ফেলেছিলো ওঁর কিসের দুঃখ বা অসুবিধে। মেয়ের কথা শেষ হতেই হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গাওয়া "সেলাম চাচা, সেলাম তোমার পায়, আরে বড় নাওয়ের মাঝি মোরে বানাইছে আল্লায়, গুন টানা টান ঘুইচ্চা গেছে বইসাছি পাছায়" গানটা বুকে মোচড় দিয়ে বেজে উঠলো, আবেগে কেঁদেই ফেল্লাম। অবশ্য আমার মা আমাকে ওয়াসার ফুটো ট্যাংকি বলতেন। কিন্তু তাঁর দোকানে গিয়ে বসে এবার খেতে হবে, সে যতই ছোট জায়গা হোক। ভালো থেকো পৃথিবী, ভালো থেকো ভালোবাসা, আবেগ, মমতা।