11/07/2024
🕋 ফজরের সলাতের গুরুত্ব ও ফযীলত :-
✍ ফজরের সলাত আদায়কারী আল্লাহর যিম্মায় থাকে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ سِيرِينَ، قَالَ سَمِعْتُ جُنْدَبًا الْقَسْرِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ "مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فَهْوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَىْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَىْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبَّهُ عَلَى وَجْهِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ".
আনাস ইবনু সীরীন রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব (ইবনে আবদুল্লাহ) আল ক্বাসরীকে বলতে শুনেছি, রাসূলুলাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের সলাত আদায় করলো, সে আল্লাহর যিম্মায় চলে গেল। সুতরাং এমন যেন না হয় যে আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর যিম্মাহভুক্ত কোন বিষয়ে তলব না করে বসেন; কেননা তিনি তাঁর যিম্মাহভুক্ত কোন ব্যাপারে কাউকে তলব করলে নিশ্চিত তাকে ধরে মুখের উপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।”
[সহীহ মুসলিম- ৬৫৭]
👉🏻 ফজরের সলাত আদায়কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবূ বকর ইবনে আবূ মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আসরের) সলাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
[সহীহ বুখারী- ৫৭৪]
👉🏻 ফজরের সলাত আদায়কারী জাহান্নামে যাবে না।
عَنِ ابْنِ عُمَارَةَ بْنِ رُؤَيْبَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ "لاَ يَلِجُ النَّارَ مَنْ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا". وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ فَقَالَ آنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنَ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ نَعَمْ أَشْهَدُ بِهِ عَلَيْهِ. قَالَ وَأَنَا أَشْهَدُ لَقَدْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُهُ بِالْمَكَانِ الَّذِي سَمِعْتَهُ مِنْهُ.
উমারাহ ইবনে রুয়াইবাহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে সলাত আদায় করবে সে জাহান্নামে যাবে না। এ সময় তার কাছে বাসরার অধিবাসী জনৈক ব্যক্তি বসেছিলো। সে বললো, ‘তুমি কি সরাসরি নবী ﷺ এর নিকট থেকে এ হাদীসটি শুনেছো?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি এ হাদীসটি নবী ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি।’ এ কথা শুনে বাসরার অধিবাসী লোকটি বললো ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এ হাদীসটি আমিও নবী ﷺ এর নিকট থেকে যে স্থানে তুমি শুনেছো সে স্থানেই শুনেছি।’”
[সহীহ মুসলিম- ৬৩৪]
👉🏻 মুনাফিক্বদের জন্য ফজরের সলাত অত্যন্ত ভারী সলাত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ الْمُؤَذِّنَ فَيُقِيمَ ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً يَؤُمُّ النَّاسَ ثُمَّ آخُذَ شُعَلاً مِنْ نَارٍ فَأُحَرِّقَ عَلَى مَنْ لاَ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ بَعْدُ.
আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, “মুনাফিক্বদের জন্য ফজর ও ইশার সলাত অপেক্ষা অধিক ভারী সলাত আর নেই। এ দুই সলাতের কী ফযীলাত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো। (রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন) আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, মুয়াযযিনকে ইক্বামাত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে যারা সলাতে আসেনি, তাদের ওপর আগুন ধরিয়ে দেই।”
[সহীহ বুখারী- ৬৫৭]
✍ ফজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করলে সারারাত সলাত আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যায়।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ، قَالَ دَخَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ الْمَسْجِدَ بَعْدَ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ فَقَعَدَ وَحْدَهُ فَقَعَدْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ يَا ابْنَ أَخِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ "مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ".
আবদুর রহমান ইবনে আবূ উমরাহ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মাগরিবের সলাতের পর উসমান ইবনু আফফান রাদ্বি. মাসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন, ভাতিজা, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ইশার সলাত আদায় করলো সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত সলাত আদায় করলো, আর যে ব্যক্তি ফজরের সলাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলো সে যেন সারা রাত জেগে সলাত আদায় করলো।”
[সহীহ মুসলিম- ৬৫৬]
✍ ফজরের সলাতের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে ফেরেশতাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الْفَجْرِ وَصَلاَةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ.
আবূ হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “ফেরেশতাগণ পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। আসর ও ফজরের সলাতে উভয় দল একত্রিত হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে আসলে?’ অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক অবগত। উত্তরে তাঁরা বলেন, ‘আমরা তাদের সলাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সলাত আদায়রত অবস্থায় ছিলেন।’”
[সহীহ বুখারী- ৫৫৫]
👉🏻 ফজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা অবধি নিজ মুসাল্লায় বসে আল্লাহর যিকির করে দুই রাকা‘আত সলাত আদায়কারী ব্যক্তি একটি পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সাওয়াব লাভ করেন।
ٍعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ "مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ"
আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের সলাত জামা‘আতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে, তারপর দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করে, তার জন্য একটি হজ্জ ও একটি উমরার সাওয়াব রয়েছে; পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।”
[সহীহুল জামে‘- ৬৩৪৬]
👉🏻 হাশরের দিন/জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলাকে দেখার জন্য ফজরের সলাত আদায় করতে বলা হয়েছে।
عَنْ جَرِيرٍ قَالَ كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنْ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَصَلاَةٍ قَبْلَ غُرُوبِ الشَّمْسِ فَافْعَلُوا
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী ﷺ এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা শীঘ্রই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে, যেমনি তোমরা এ চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছো, অথচ এটিকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না; অতএব, তোমরা সক্ষম হলে সূর্য উঠার আগের সলাত ও সূর্য ডুবার পরের সলাত (যথাযথভাবে) আদায় করতে তোমরা যেন পরাজিত না হও, তাহলে তাই করো।”
[সহীহ বুখারী- ৭৪৩৪]
👉🏻 ফজরের সলাতে অন্ধকার রাতে যাতায়াতকারীর জন্য রয়েছে পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ।
عَنْ بُرَيْدَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ "بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ"
বুরাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, “যারা অন্ধকার রাতে মাসজিদে যাতায়াত করে তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও।”
[সহীহ আবূ দাঊদ- ৫৬১]
👉🏻 ফজরের দুই রাকা‘আত সুন্নাত সলাত দুনিয়া ও তার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।
عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ "رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا".
আয়িশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, “ফজরের দুই রাকা‘আত সলাত (সুন্নাত) দুনিয়া ও তার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।”
[সহীহ মুসলিম- ৭২৫]
👉🏻 ফজরের সলাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকলে শয়তান কানে প্রস্রাব করে দেয়।
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ رَجُلٌ نَامَ لَيْلَهُ حَتَّى أَصْبَحَ قَالَ ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ أُذُنَيْهِ أَوْ قَالَ فِيْ أُذُنِهِ
আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ এর নিকট এমন এক লোকের ব্যাপারে উল্লেখ করা হলো যে সারা রাত এমনকি ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলো। তখন তিনি ﷺ বললেন, “সে এমন লোক যার উভয় কানে অথবা তিনি বললেন, তার কানে শয়তান প্রস্রাব করেছে।”
[সহীহ বুখারী- ৩২৭০]
🤲 মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে যথাসময়ে ফজরের সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।
আমীন।
সম্পাদনায়,
শাইখ ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ,
১৮ যুলহিজ্জাহ ১৪৪৫ হিজরী; ২৫ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্
Sajedur Biswas