29/09/2021
প্রীতিলতা চরিত্রে পরিমনি: কে এই প্রীতিলতা?
মহান বিপ্লবী হিসেবে প্রীতিলতাকে উপস্থাপনের একটা অসুস্থ চর্চা এদেশে রয়েছে। বলতে গেলে শক্ত প্রচেষ্টাই আছে। তারই অংশ হিসেবে 'প্রীতিলতা' নামে মুভি রিলিজ হতে চলেছে বঙ্গদেশে। ছবিতে প্রীতিলতা চরিত্রে অভিনয় করছে সময়ের আলোচিত ভালগার অভিনেত্রী পরিমনি।
প্রীতিলতাকে নিয়ে সেক্যুলার মহল যেভাবে ঢাক ঢোল পেটায় এরফলে তাকে মহান স্বাধীনতাকামী মনে করে বসা অস্বাভাবিক নয়। পাঠ্যবইয়ের পাতায় প্রীতিলতাকে যেভাবে বিপ্লবী হিসেবে তুলে ধরা হয় তাও যথার্থ বলার সুযোগ নেই। সহজ ভাষায় বললে প্রীতিলতা উদার মানবতাবাদী তো ননই সেক্যুলারও ছিলো না, সে ছিল একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দু জঙ্গি। প্রীতিলতা বিচ্ছিন্নতাবাদী রামপন্থী সূর্য সেনের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতভূমে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা, যার জন্য তাদের প্রথম টার্গেট ছিল চট্টগ্রামে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। তাই তারা সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী গড়ে তোলা।
তাদের লক্ষ্য সম্পর্কে ভারতের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মোজাফফর আহমাদ লিখেছেন যে, বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী আন্দোলন নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছিল। কিন্তু তা হিন্দু উত্থানেরও আন্দোলন ছিল। উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুরাজের পূণঃপ্রতিষ্ঠা।[১]
আর এ কাজ করতে ডাকাতি, লুটপাট ও জনভোগান্তিমূলক কার্যক্রম শুরু করে। তাদের দলে মুসলিমদের কোন ঠাঁই ছিল না। 'বন্দে মাতরম' ছিল তাদের মূল শ্লোগান। ছাত্র ও যুবকদের নৈতিক উন্নতির জন্যে নিয়মিত ব্যায়াম, গিতা পাঠ, রামকৃস্ন-বিবেকানন্দের বই ও বঙ্কিমচন্দ্রের চরম মুসলিম বিদ্বেষী“আনন্দমঠ” ইত্যাদি পড়ানো হতো।[২]
কলামিস্ট খন্দকার হাসনাত করিম লিখেছেন,”
“সূর্যসেন যে বিদ্রোহের সুচনা করেন, ভারতের আজাদি অপেক্ষা রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার ইচ্ছাই তার প্রধান চেতনা ছিল। তাছাড়া এই বিপ্লবী তৎপরতার পুরোটাই ছিল লালা লাজপত রায়, বালগঙ্গাধর তিলক, বিপিন পালের দেখানো উগ্র জঙ্গি হিন্দু পুনর্জাগরনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। চট্টগ্রামের এই বিপ্লবিদের মন্ত্র ছিল “বন্দে মাতরম”। সুতীব্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছিল তাদের “বিপ্লবের” অবলম্বন।
বিপ্লবিদের মুখে মুখে উচ্চারিত হত,”বাহুতে মা তুমি শক্তি,হ্রদয়ে তুমি মা ভক্তি,তোমারি প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে,ত্বংহি দুর্গা/দশপ্রহরনধারিণী…ইত্যাদি।
স্বদেশী বা সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের চরিত্র সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে বলেছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্তির প্রতিষ্ঠাতা মুজাফফর আহমাদ। তিনি তার লেখা ”কম্যুনিস্ট পার্টি ও আমার জীবন” বইতে লিখেছেন, ”বিখ্যাত সন্ত্রাসবাদী দল ”অনুশীলন” লিখিত ঘোষণাপত্রে সমিতির একটি উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের পদানত করে রাখা এবং প্রত্যেক সন্ত্রাসবাদী দলের শর্ত ছিল ”অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ”।[৩]
আর এই সাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রতিষ্ঠায় তারা জনবিচ্ছিন্ন গুপ্তহত্যা ও লুন্ঠনের কার্যক্রম শুরু করে। যেমন: চট্টগ্রাম কোর্টের ট্রেজারী থেকে পাহাড়তলীতে অবস্থিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন নিয়ে যাওয়া হতো। ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকার বস্তা ছিনতাই করে।
তাদের হাতে ইংরেজদের পাশাপাশি দেশীয় মুসলিমরাও খুন হয়। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের দায়িত্ব পড়ে প্রীতিলতার উপর। সে ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এভাবে উগ্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রতিষ্ঠা লক্ষ্যে আত্মহত্যা করে মারা যায় প্রীতিলতা। এই সন্ত্রাসী আন্দোলনে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম মূখ্যছিল না। বঙ্গভঙ্গে মুসলিমদের উপকার হওয়ার হিন্দুদের একটি অংশ ইংরেজ বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহ করে, তারই অংশ হিসেবে সূর্যসেন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সূচনা। আর প্রীতিলতারা সে আদর্শের জন্য মারা যায়। এই আদর্শ গণমানুষের মূল্যবোধকে ঘৃণা করতে শেখায়, মুসলিমদের ক্ষতি করতে শেখায়।
এই সব জঙ্গিদের প্রমোট করা জাতির জন্যই ক্ষতিকর। আর যখন ভারতে মুসলমানরা রামপন্থীদের হাতে চরম নির্যাতিত সে সময় পূর্বের এক রামরাজত্বপন্থীকে আইডল হিসেবে উপস্থাপন অবশ্যই অশনি সংকেত।
তথ্যসূত্র:
১. “স্বাধিনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম” পূর্নেন্দু দস্তিদার,পৃষ্ঠা ১০৪
২.“স্বাধিনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম” পূর্নেন্দু দস্তিদার,পৃষ্ঠা ১৮
৩. ভারত কি করে ভাগ হলো, গ্রন্থে উদ্ধৃত,বিমলানন্দ শাসনামল,পৃষ্ঠা ১০৬