𝐈𝐒𝐊𝐂𝐎𝐍 𝐌𝐔𝐍𝐒𝐇𝐈𝐆𝐀𝐍𝐉 𝐎𝐅𝐅𝐈𝐂𝐈𝐀𝐋 𝐓𝐕

02/09/2025

বৈষ্ণব বিরহ বৈদিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে সবাই আমন্ত্রিত।।
সর্বোপরি, স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবাই প্রভুর জন্য প্রার্থনা অব্যাহত রাখবেন তিনি যেন শ্রীশ্রী রাধা গোপিনাথের চরণে তিনি নিত্যলীলা সেবায় যুক্ত হতে পারেন।।

সার্বিক সিদ্ধান্ত ও অনুরোধক্রমেঃ TeaM OF Youth Kirtaniyas ....

31/08/2025

সুধী
ভক্তসজ্জ্বনমন্ডলী,
মহিমান্বিত রাধাষ্টমীর পূণ্যতিথিতে ইস্‌কনের গুরুবর্গের অন্যতম আচার্য ও দীক্ষাগুরু শ্রীল Jayapataka Swami গুরু মহারাজের অন্যতম যুবক গ্রন্থ প্রচারক ও কীর্তনীয়া শ্রীমান্ নীলাচল প্রাণ দাস (নীল আকাশ) বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরস্থ‌ সিরাজদিখান উপজেলাধীন রশুনিয়া গ্ৰাম ও ইউনিয়নের ঋষিপাড়ার অন্যতম একনিষ্ঠ সেবা পরায়ণ ভক্ত বৈষ্ণবগগনের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন হল। আকস্মিক মানসিক দুর্ঘটনার প্রভাবে প্রভুর অকাল মহাপ্রয়াণে শোকাহত হৃদয়ে গভীরভাবে বিরহ অনুভব করছি।

আর কখনো শুনবো না ~
তোমার সেই সুললিত কন্ঠে, গোপীনাথ মম নিবেদন শুন,
রাধাকৃষ্ণ প্রাণ মোর যুগল কিশোর, জীবনে মরনে গতি আর নাহি মোর।।
তোমার সাথে আর শেষ দেখা হল না....................

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং, জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য, নরং পঞ্চত্বমাগতম্।
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং, লোভ মোহ সমাবৃতম্।
দহেয়ং সর্বগাত্রানি, দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”।।

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভিতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান (ক্রিয়াকাণ্ড বিধি অনুসারে)

শ্রী শ্রী জগন্নাথ ধাম - এ শ্রী শ্রী জগন্নাথ বলদেব ও সুভদ্রা মহারানী এবং সুদর্শন এর নিকট প্রার্থনা করছি কৃপা করে তাকে আপনার নিজধামে স্থান প্রদান করুন।

তথ্য নিশ্চিতকরণে: Team Of Youth Kirtaniyas

14/08/2025

🏵 জন্মাষ্টমী নিয়ে বিভ্রান্তি❓
🏵 *জন্মাষ্টমী কবে ১৫ আগষ্ট নাকি ১৬ আগষ্ট ❓
*================================*
💥 আগামী ১৬ ই আগষ্ট ,শনিবার ২০২৫ , ৩০ ই শ্রাবণ l
শুভ জন্মাষ্টমী। কৃষ্ণ অষ্টমী
🙏

💥 পরমেশ্বর পরমপিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১ তম জন্মদিন শুভ জন্মাষ্টমী। শুভ জন্মাষ্টমীর-২০২৫ উপলক্ষে সবাইকে জন্মাষ্টমীর কৃষ্ণ প্রীতিও শুভেচ্ছা রইল।

💥 ২০ কোটি একাদশী ব্রত পালন করলে যে ফল লাভ হয়, শ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার চেয়ে শতগুণ অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে। যাঁহারা কৃষ্ণকৃপা ও কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন।

পারণ - পরদিন প্রাতঃ ০৬ । ৪৫ মিঃ মধ্যে শ্রীশ্রীকৃষ্ণজন্মাষ্টমী ব্রতের পারণl

💥 মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস*🙏

🏵 আজকের* *আলোচনার বিষয় জন্মাষ্টমীর শুভ সময় এবং শুভ দিন* :-
********************************************
👉 জন্মাষ্টমীর শুভ ব্রতের দিন কখন❓

👉 শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী শুভ মুহূর্ত কখন ❓

👉 জন্মাষ্টমী ব্রত বা*
*উপবাস পালন করার*
*ফল কী ❓

👉 জন্মাষ্টমী ব্রত কিভাবে পালন করা যাবে ❓

👉 জন্মাষ্টমীর মাহাত্ম্য ও পুজোর নিয়ম ❓

👉 শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পুজো বিধি ❓

👉 শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পারণ মন্ত্র ❓

👉 শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পারণ করার সময় কী

👉 শ্রীকৃষ্ণের “জন্মাষ্ট ব্রত”উপবাস পালন না করলে কি হয় ❓

💥 শাস্ত্রীয়মত ও দৃকসিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১৬ ই আগস্ট, শনিবার জন্মাষ্টমী l🙏

এবং ১৭ আগস্ট মঙ্গলবার নন্দোৎসব* ।।🙏🙏

🏵 ১৬ ই আগষ্ট , শনিবার এর তিথি সময় কাল:-
********************************************
💥 জন্মাষ্টমীর দিনটি মূলত ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয়, এবং এই তিথিতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহন করেন. এই কারণে, রোহিণী নক্ষত্রের সময়টি জন্মাষ্টমীর পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ.

💥 বিশেষ করে, জন্মাষ্টমীর পূজা মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত হয়, কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মধ্যরাতে রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেন. তাই, এই বছর জন্মাষ্টমীর পূজা ও আচার-
অনুষ্ঠানগুলি মূলত ১৬
ই অগাস্ট মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত হবে.

👉 ব্রহ্ম মুহুর্ত সময়*: -ভোর ৪ টা ০২ মিনিট থেকে শুরু।

👉 সূর্য উদয় : -
ভোর ৫ টা ৫৯ মিনিট

👉 *অষ্টমী তিথি শুরু* :-- ১৫ ই আগস্ট , শুক্রবার, ২০২৫ রাত্রি
১১ টা ৪৯ মিনিট। 🙏

👉 অষ্টমী তিথি শেষ :- ১৬ ই আগস্ট , শনিবার, ২০২৫
রাত্রি ০৯ টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত।🙏

💥 শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী শুভ মুহূর্ত* :---
******************************************

💥 নিশিতা পূজার মুহূর্ত :---
১৬ ই আগস্ট, শনিবার রাত ১২ টা ০৪ মিনিট থেকে রাত ১২.৪৭ পর্যন্ত l🙏

নিশীথ পূজা (ভগবানের "মধ্যরাত্রির" আবির্ভাব সময়) হবে ১৬ আগস্ট রাত ১২:০৪-১২:৪৭।


🏵 শুভ জন্মাষ্টমী ব্রত বা উপবাস পালন করার ফল কী ❓
******************************************************************
💥 শুভ জন্মাষ্টমী ব্রত বা উপবাস পালন করার ফল, যা প্রত্যেকের জানা উচিত, এই বিষয় নিয়ে শাস্ত্রে অত্যন্ত মহিমান্বিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে -
👉 ১.) *পাপমোচন ও মুক্তি লাভ* :-
“জন্মাষ্টমীর উপবাসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সন্দেহ নেই, ভক্ত বিষ্ণুলোকে গমন করেন।।”
— ভবিষ্যোত্তর পুরাণ, উত্তরখণ্ড, ১৪৪.২৪

জন্মাষ্টমীতে উপবাস করলে জীবনের সকল পাপ দূর হয় এবং ভগবান বিষ্ণুর চিরধামে স্থান লাভ হয়।।

👉 ২. ) *জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন মুক্তি* :-
“যে ভক্ত জন্মাষ্টমীর দিনে ব্রত পালন করে, তার সমস্ত পাপ নাশ হয়। ভগবানের কৃপায় সে আর পুনর্জন্ম লাভ করে না।”
— স্কন্দ পুরাণ, বৈষ্ণবখণ্ড
এই ব্রত ভক্তকে জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি দিয়ে চিরশান্তি প্রদান করে।।

👉 ৩.) *ইচ্ছাপূরণ ও সৌভাগ্য লাভ*
“যে ভক্তি সহকারে জন্মাষ্টমীর ব্রত পালন করে, ভগবান বিষ্ণু তার সমস্ত কামনা পূর্ণ করেন।।”
— পদ্ম পুরাণ, উত্তরখণ্ড
এই ব্রত জীবনের সব শুভ ইচ্ছা পূর্ণ করে এবং অটল সৌভাগ্য প্রদান করে।।

👉 ৪.) *ভগবৎপ্রেম বৃদ্ধি ও অন্তরের পবিত্রতা*
“উপবাসে জন্মানো পুণ্য হৃদয়কে শুদ্ধ করে এবং কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি করে।।”
— নারদ পুরাণ, পূর্বখণ্ড
এই উপবাসে অন্তরের অপবিত্রতা দূর হয়, ভগবৎপ্রেম বৃদ্ধি পায় এবং কৃষ্ণস্মরণ সহজ হয়।।

👉 ৫.) *পরিবারের কল্যাণ ও রক্ষাকবচ*
“যে ব্যক্তি জন্মাষ্টমীর ব্রত যথাযথভাবে পালন করে, সে নিজের এবং তার পরিবারের মঙ্গল নিশ্চিত করে এবং ভগবান বিষ্ণুর কৃপা লাভ করে।।”
—গরুড় পুরাণ
এই ব্রত পালনকারী শুধু নিজের নয়, পূর্বপুরুষ ও পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করেন এবং সংসারের অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে।।

🏵 *শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কি বলা হয়েছে ❓ শ্রীজন্মাষ্টমীব্রতদিন নির্ণয়*: --
********************************************
কৃষ্ণোপাস্যাস্টর্মী ভাদ্রে রোহিণ্যাড্যা মহাফলা। নিশীথেহতাপি কিঞ্চেন্দৌ জে বাপি নবমীযুতা ।।৩২৮

♻️অনুবাদ :- ভাদ্রমাসে কৃষ্ণাষ্টমী উপবাস যোগ্যা, রোহিণী নক্ষত্র যুক্ত। হইলে মহাফলপ্রদা, মধ্যরাত্রে অক্ট রোহিণী যুক্তণ হইলে আরও অধিক ফলপ্রদা, তাহা আরও সোম বা বুধবার যুক্তা হইলে অধিক প্রশস্তা, তাহা হইতে নবমী তিথিযুক্তা হইলে অধিক ফলপ্রদা🙏

🏵 হরি ভক্তি বিলাস :--
******************************************
মাসি ভাদ্রপদেহপ্টম্যাং নিশীথে কৃষ্ণপক্ষকে। শশাঙ্কে বৃষরাশিস্থে ঋক্ষে রোহিণীসংজ্ঞকে। যোগেহস্মিন্ বসুদেবাদ্ধি দেবী দেবমজীজনৎ ॥৩৪৮ তস্মাৎ সম্পজয়েদন্ন শুচিঃ সম্যগুপোষিতঃ ॥৩৪৯।

✅অনুবাদ-আরও ভাদ্রমাসে কৃষ্ণপক্ষে অষ্টমীতে মধ্যরাতে চন্দ্র রোহিণী নক্ষত্র সহ বৃষরাশিতে অবস্থান কালে এই জয়ন্তী যোগে পিতা বসুদেব হইতে মাতা দেবকীদেবী শ্রীকৃষ্ণদেবকে প্রসব করিয়াছেন, অত- এব ঐ যোগে সম্পূর্ণ উপবাস করিয়া মানব পবিত্র হইয়া পূজা করিবে ।। ৩৪৮-৩৪৯।।🙏

বিনা কক্ষং ন কর্তব্যা নবমীসংযুতা নহি।
কাৰ্য্যা বিদ্ধাপি সপ্তম্যা রোহিণীসংযুতাষ্টমী।
কলাকাষ্ঠামুহূর্তেৎপি যঙ্গ। কৃষ্ণাষ্টমী তিথি।
সবম্যাং সৈধ গ গ্রাহা সপ্তমীসংযুতা ন হি
কিং পুন্ডু 'ধবারেণ সোমেনাপি বিশেষতঃ।কিং পুনর্নবমীযুক্তা কুলকোট্যাস্ত মুক্তিদা।

⛔অর্থাৎ, নক্ষত্র বিনা করিবে না, নবমী সংযুতাও করিবে না; পরস্ত সপ্তমীবিদ্ধা হইলেও রোহিণী সংযুক্তা অষ্টমী করিবে। নবমী দিনে যদি কৃষ্ণাষ্টমী তিথি কলা কাষ্ঠা বা মুহূর্তও থাকে, তবে সেই দিনই গ্রাহ,

বিশেষতঃ যদি সোমবারে বা বুধবারে নবমীযুক্ত হয়, তবে উহা কুলকোটি মুক্তিদায়ক

🔆অরুণোদয়-বিদ্ধন্তু সংত্যাজ্যো হরিবাসরঃ। জন্মাষ্টম্যাদিকং সূর্যোদয়বিদ্ধং পরিত্যজেৎ।"

✅অর্থ:- কেবল একাদশী ব্রতেই অরুণোদয় বিদ্ধা পরিত্যাজ্য, কিন্তু জনন্মাষ্টমী প্রভৃতি, অন্য সমস্ত ব্রত কেবল সূর্যোদয়বিদ্ধা হলেই ত্যাজ্য।

✅ *অর্থাৎ আমরা শাস্ত্রীয়মত ও দৃকসিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ১৬*আগস্ট, শনিবার মধ্য রাত্রিতে* *জন্মাষ্টমী ব্রত উৎসব পালন করব* l🙏

🏵 *শুভ জন্মাষ্টমী পালন কিভাবে করা যাবে* :--
********************************************
💥 আগামী ১৬ ই আগস্ট , শনিবার , ২০২৫ , ৩০ ই শ্রাবণ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , কৃষ্ণ অষ্টমী পরমেশ্বর পরমপিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১ তম জন্মদিন শুভ জন্মাষ্টমী। শুভ জন্মাষ্টমীর-২০২৫ 🙏

💥 শাস্ত্রে আছে কেউ যদি একবার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মষ্টমী উপবাস নিষ্ঠা সহকারে পালন করে তা হলে তাকে আর এই জড় জগতে জন্ম, মৃত্যু, জড়া, ব্যাধি, ভোগ করতে হয় না, ও পূর্নজন্ম গ্রহন করতে হয় না।🙏

💥 *তাই শুভ জন্মাষ্টমীর দিনে কিভাবে আমরা জন্মাষ্টমী ব্রত উৎসবটি পালন আলোচনা করা হলো* :--

👉১) ১৫ ই অগাস্ট , শুক্রবার, সংযম করবেন নিরামিষ খাবার গ্রহন করবেন রাত ১২ টার আগে অন্ন প্রসাদ পাবেন। ঘুমানোর আগে ব্রাশ করে ঘুমাতে হবে।🙏

👉 ২) পরের দিন ১৬ ই আগস্ট , শনিবার সকাল থেকে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ। উপবাস থেকে হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবন, ভগবানকে দর্শন, ভক্ত সঙ্গে হরিনাম কীর্তন,অভিষেক দর্শন করতে হবে এবং ভগবানকে অভিষেক করে একাদশীর দিনের মতো অনুকল্প প্রসাদ সেবন করতে হবে।🙏

👉 ৩) আর যাদের উপবাস পালনে সমস্যা, যারা অসুস্থ, তারা যথানিয়মে ওষুধ গ্রহণ করতে পারবেন, কারণ ওষুধ গ্রহণে ব্রত ভঙ্গ হয় না-
মহাভারতে বিদূর ধৃতরাষ্ট্রকে বলেছেন-
অষ্টৈতান্যব্ৰতঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ।
হরির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম।
[ মহাভারত উদ্যোগপর্ব, ৩৯।৭০ ]
বঙ্গানুবাদ: ফল, মূল, ক্ষীর, ঘৃত, ব্রাহ্মণ কামনা, গুরুর বচন ও ঔষধ এই আটটি ব্রত-নাশক নহে।

👉 ৪) পরের দিন প্রাতস্নান করা শেষে ভগবানের ভোগ দিয়ে কৃষ্ণ প্রসাদ দিয়ে পারন করবেন।🙏

💥 জন্মাষ্টমীর দিন সকালে গোপালের আরাধনা করুন ও রাতে কৃষ্ণের পুজো করুন। এর জন্য ভোরে উঠে আগে পুজোর স্থান পরিষ্কার করুন। তারপর পিঁড়িতে লাল কাপড় বিছিয়ে দিন। সেখানে গোপালকে প্রতিষ্ঠা করুন। গোপালে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক ও গয়না পরিয়ে সাজিয়ে দিন। তার সঙ্গে ফুল ও চন্দনে সাজিয়ে তুলুন গোপালকে। এরপর ফল, মিষ্টি, মাখন, মিছরি, চিনি ও অন্যান্য বস্তু নিবেদন করে তাঁর আরাধনা করুন। গোপালকে দোলনায় বসিয়ে দোলাতে ভুলবেন না। সবশেষ আরতি করুন ও সবার মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করে দিন।

🏵 *জন্মাষ্টমীর*
*মাহাত্ম্যও পুজোর নিয়ম* :-
'''''''''''''’'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
💥 প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণের পূজার্চনা করলে ব্যক্তির সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। পাশাপাশি ব্যক্তির ওপর কৃষ্ণের আশীর্বাদ বজায় থাকে।🙏

💥 জন্মাষ্টমীতে নাড়ু গোপালকে পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করে তাঁর বিশেষ শৃঙ্গার করা হয়। তার পর তাঁর প্রিয় মাখনমিশ্রীর ভোগ নিবেদন করা হয়। কৃষ্ণের বালক রূপের পুজো করলে সন্তান সুখ লাভ করা যায়।।

💥 পৃথিবীতে কংসের ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের অবসান এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এইদিনটিই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালিত। কৃষ্ণকে শ্রী হরি বিষ্ণুর সবচেয়ে অপরূপ অবতার বলে মনে করা হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে , জন্মাষ্টমীতে কৃষ্ণের পুজো করলে অকাল মৃত্যুর ভয় থাকে না এবং পরকালে স্বর্গে স্থান হয়। শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় জগতের সকল সুখ লাভ হয়। সন্তানের মঙ্গলের জন্য এই দিনে কৃষ্ণ পুজো করেন অনেকে। বিশ্বাস করা হয়, যাঁরা জন্মাষ্টমীতে বালগোপালকে মাখন, মিছরি, নিবেদন করতে পারেন। 🙏

🏵 *জন্মাষ্টমী পুজো বিধি* :-
'''''''''''''’'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
💥 জন্মাষ্টমীর দিন রাত ১২টায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এই দিনে উপবাস থেকে, অথবা অসামর্থ্য হলে ফল ও জল সেবা নিতে পারেন। ঐ দিন রাত্রি ১২টায় শ্রীকৃষ্ণকে দুধ ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তার পর পরানো হয় নতুন পোশাক। এরপর ময়ূরের পালক, বাঁশি, মুকুট, চন্দন, মালা, তুলসি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয় গোপালকে। ফল, ফুল, মাখন, মাখন, চিনি, মিষ্টি, শুকনো ফল ইত্যাদি নিবেদন করুন। তার পর শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালান। শেষে শ্রী কৃষ্ণের শিশুরূপের আরতি করুন। সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করুন।🙏

🏵 *জন্মাষ্টমীর পারণ মন্ত্র* :-
'''''''''''''’'''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''
*যস্মিন কৃষ্ণো দিবং যাত তস্মিন্নেব তদাহনি*
*প্রতিপন্নং কলিযুগমিতি প্রাহ পুরাবিদঃ*

🏵 *শ্রীকৃষ্ণের “জন্মাষ্টমী ব্রত”উপবাস পালন না করলে কি হয়* ❓
********************************************
💥 শ্রীবিষ্ণুরহস্যে শ্রীব্রহ্মা নারদমুনিকে বললেন-

“যে ন কুর্ব্বন্তি জানন্তঃ কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম্।
তে ভবন্তি মহাপ্রাজ্ঞ ব্যালা মহতি কাননে॥”
“বর্ষে বর্ষে তু যা নারী কৃষ্ণজন্মাষ্টমীব্রতম্।
ন করোতি মহাপ্রাজ্ঞ ব্যালী ভবতি কাননে॥”🙏

💥 অর্থাৎ,“হে সুবুদ্ধিমান! শুন,জ্ঞানী হয়েও যে পুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করে না,সে অতিগভীর জঙ্গলে ভুজঙ্গ বা
পুরুষ-সর্পযোনি লাভ করে বাস করতে থাকে,এবং যে সধবা নারী জন্মাষ্টমী ব্রত উপবাস করে না,সে ভুজঙ্গী
বা স্ত্রী-সর্পযোনি লাভ করে গভীর জঙ্গলে বাস করতে থাকে।”🙏

💥 আরও বললেন
,“যে,শ্রাবণী কৃষ্ণাষ্টমীতে ব্রত
সাধন না করে,সে অত্যন্ত ক্রুর স্বভাব-যুক্ত রাক্ষস রূপে জন্মগ্রহণ করে এবং বিকট মুুখমণ্ডল ও ভয়ঙ্কর চেহারার যমদূতেরা তীক্ষ্ণ ধারালো
অস্ত্র নিয়ে তার সঙ্গে হিংসাচারণ করে। 🙏

💥 তাই আমাদের প্রতিটি ভক্তবৃন্দের কর্তব্য হচ্ছে
পরমেশ্বর পরমপিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মদিন , শুভ জন্মাষ্টমী ব্রত উৎসবটি পালন করা। ২০২৫ সালের জন্মষ্টমী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫১ তম জন্মাষ্টমী। কারণ, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর প্রকট লীলাবিলাস করেন। ১২৫ বছর ধরাধামে অবস্থান করে গোলকে গমন করেন। মাঘ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ইহধাম ত্যাগ করে অন্তর্ধান করেন সেই দিন কলির আবির্ভাব ঘটে ।

💥 পরমেশ্বর পরমপিতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫২৫০ তম জন্মদিন শুভ জন্মাষ্টমী।
শুভ জন্মাষ্টমীর-২০২৫ 🙏
🙏 🙏 🙏 🙏 🙏
********************************************

💥 সবাই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন।এই নামে শুধু আপনি নই আপনার পুর্ব পুরুষ ও উদ্দার হবে।ভাত খাওয়া যেমন আপনার নিত্যকাজ,স্নান করা যেমন আপনার নিত্য কাজ,ঠিক তেমনি জপটাও আপনার আরও নিত্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ,,তাই এই হরি নামকে অবজ্ঞা করবেন না🙏
জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ 🙏

💥 আমাদের কখনো হরি নাম জপকে হেলার সহিত নেয়া উচিত নয়। হরিনাম সাধারণ কোন মন্ত্র নয়। হরিনাম সাক্ষাৎ শ্রীকৃষ্ণের অভিন্ন রূপ। তাই আমাদের খুব যত্নের সহিত হরিনাম জপ করা উচিত।

💥 সমস্ত বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করতে প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে তৃণ অপেক্ষা হীন হয়ে এবং বৃক্ষ অপেক্ষা সহিষ্ণু হয়ে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে হবে। তাহলে শ্রীকৃষ্ণ, যিনি দীনদয়াল, আমাদের উপর কৃপা বর্ষণ করবেন।🙏🏻 🙏🏻

তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা । 🙏🏻
অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ ॥ ৩ ॥ 🙏🏻

💥 চলুন আমরা সবাই মহামন্ত্র জপ করি এবং জন্ম মৃত্যুর কঠিন চক্র থেকে মুক্তিলাভ করি।

💥 "হরেরনাম হরেরনাম হরেরনামৈব কেবলম
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব নাস্তেব গতিরন্যথা।।"
🙏🙏🙏🙏

💥 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। 🙏
💥 হরে রাম হরে রাম রাম হরে হরে।। 🙏

28/12/2024

28/12/2024

27/12/2024

25/12/2024

যিশুখ্রিস্ট ছিলেন একজন গুরু

শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, ভগবানের বাণীর প্রচারকদের অবশ্যই তিতিক্ষা (সহনশীলতা) এবং করুণা – এই দুটি গুণে গুণান্বিত হতে হবে । যিশুখ্রিস্টের চরিত্রে আমরা এ দুটি গুণই দেখতে পাই । তিনিও এত সহনশীল ছিলেন যে, যখন তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হচ্ছিল, তখনও তিনি কাউকেই দোষারোপ করেননি । আর তার করুণা এতই অসীম ছিল যে, তিনি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যারা তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল, তাদের যেন তিনি ক্ষমা করেন । (তারা অবশ্য তাঁকে হত্যা করতে পারেনি । কিন্তু তারা মনে করেছিল যে, তাঁকে তারা মেরে ফেলতে পারবে, তাই তারা এক মহা অপরাধ করেছিল ।) যিশুখ্রিস্টকে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হচ্ছিল, তখন তিনি প্রার্থনা করেন, “হে পিতঃ, আপনি এদের ক্ষমা করুন । এরা জানে না এরা কি করছে ।”

যিশু ছিলেন এমনই একজন মহাপুরুষ – ভগবানের পুত্র, ভগবানের প্রতিনিধি । তাঁর কোন পাপ ছিল না । কিন্তু তবুও তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হয়েছিল । তিনি ভগবৎ-চেতনা দান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিনামে তারা তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল – তারা ছিল এমনই অকৃতজ্ঞ । তারা তাঁর বাণীর মর্ম উপলব্ধি করতে পারেনি । কিন্তু আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি এবং ভগবানের প্রতিনিধিরূপে তাঁর উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি ।

যিশুখ্রিস্টের বাণী ছিল তখনকার স্থান, কাল, দেশ এবং এক শ্রেণীর মানুষের উপযোগী । কিন্তু নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন ভগবানের প্রতিনিধি । তাই আমরা তার গুণগান করি এবং তাঁর উদ্দেশ্যে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি ।

এক সময় মেলবোর্নে কয়েকজন খ্রিষ্টান পাদ্রী আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন । তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “যিশুখ্রিস্ট সম্বন্ধে আপনার কি ধারনা ?” আমি তাদের বলেছিলাম, “তিনি আমাদের গুরু । তিনি ভগবৎ-চেতনার প্রচার করেছেন, তাই তিনি আমাদের গুরু ।” সেই পাদ্রীরা সেই কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন ।

প্রকৃতপক্ষে, যিনি ভগবানের মহিমা প্রচার করেন, তাঁকেই গুরুরূপে গ্রহণ করতে হবে । যিশুখ্রিস্ট হচ্ছেন এমনই একজন মহাত্মা । আমাদের কখনই তাঁকে একজন সাধারন মানুষ বলে মনে করা উচিত নয় । শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কেউ যদি গুরুদেবকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করে, তা হলে সে নরকগামী হয় । যিশুখ্রিস্ট যদি একজন সাধারণ মানুষ হতেন, তা হলে তিনি ভগবৎ-চেতনা দান করতে পারতেন না ।

(প্রবচনটি প্রদান করেছেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ)

23/12/2024

🙏হরেকৃষ্ণ🙏

#বৈষ্ণব_আচার্য_বিরহ_বার্তা ~ (শ্রীল প্রভুপাদ শিষ্যের মহাপ্রয়াণ)

আমরা অত্যন্ত গভীর বিরহের সাথে জানাতে চাই যে, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ-ইস্‌কন প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য্যঃ কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের কৃপাধন্য প্রিয় শিষ্য, ত্রিদন্ডী সন্ন্যাসী শ্রীল ভক্তি বিশ্বম্ভ মাধব স্বামী গুরুমহারাজ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে শ্রীধাম বৃন্দাবনে বিকাল ৫:০০টায় নিত্যলীলাপ্রবিষ্ট প্রবিষ্ট হয়ে শ্রীশ্রী রাধা-শ্যামসুন্দর, কৃষ্ণ-বলরাম ও গৌর -নিতাই ও শ্রীতুলসী মহারানীর নিত্য সেবার জন্য যুক্ত হয়েছেন।

18/12/2024

আগামী ১৯ শে ডিসেম্বর- "শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের ৮৭তম তিরোভাব তিথি।"~ দুপুর পর্যন্ত উপবাস।

🏷️আজ ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের আচার্যবর্গের অন্যতম শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের শুভ তিরোভাব তিথিতে স্মরণ করি তাঁর অনবদ্য জীবনালেখ্যঃ

নমো ওঁ বিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে।
শ্রীমতে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীতি নামিনে ।।
শ্রীবার্ষভানবীদেবীদয়িতায় কৃপাব্ধয়ে।
কৃষ্ণসম্বন্ধবিজ্ঞানদায়িনে প্রভবে নমঃ ।।
মাধুর্যোজ্জ্বল—প্রেমাঢ্য—শ্রীরূপানুগভক্তিদ।
শ্রীগৌরকরুণাশক্তিবিগ্রহায় নমোহস্তুতে ।।
নমস্তে গৌরবাণী—শ্রীমূর্তয়ে দীনতারিণে।
রূপানুগবিরদ্ধাপসিদ্ধান্তধ্বান্ত হারিণে ।।

♦️শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদের সঙ্গে যাঁদের নিত্য সম্পর্ক ছিল তাঁরা তাঁর অপ্রাকৃত ভজনশীল জীবনের কথা বলতে পারেন। জাগতিক কর্মবীর কিংবা ধর্মবীরের মতো তাঁর জীবন গঠিত হয়নি। শিশুকাল থেকে শুদ্ধ ভাগবত সঙ্গে ভাগবত জীবন গঠিত হয়েছিল। জাগতিক চমৎকারিতায় জগতের লোক মুগ্ধ হয়। কিন্তু তিনি এরূপ জড় বিভূতি দেখানোর পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি বরং তা ঘৃণা করতেন। সর্ববিভূতিময় ভগবান যাঁদের বশীভূত হন, তাঁদের কোনো বিভূতি লাভ করতে কি আর বাকি থাকে? “সর্বসিদ্ধি তাঁর করতলে।”

🔖পরিচয় ও শৈশবকাল:
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ করার সময় যখন শ্রীশ্রীজগন্নাথ পুরীধামে শ্রীমন্দির—নিকটে নারায়ণ ছাতা নামক ভবনে বাস করছিলেন, তাঁর গৃহে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত ঠাকুর ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের (১২৮০ বঙ্গাব্দের ) ৬ ফেব্রুয়ারি শুত্রুবার মাঘী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে আবিভূর্ত হন। তাঁর মায়ের নাম ছিল শ্রীমতি ভগবতী দেবী। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীবিমলা দেবীর প্রসাদ দ্বারা শিশুর অন্নপ্রাশন করিয়ে নামকরণ করলেন বিমলাপ্রসাদ।

শ্রীশ্রীসরস্বতী ঠাকুরের আবির্ভাবের ছয় মাস পর ছিল রথযাত্রা। এই রথযাত্রার সময় তিন দিন শ্রীজগন্নাথের রথ বড় দাঁড়ের উপর সরস্বতী ঠাকুরের জন্মগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। একদিন মাতা ভগবতী দেবী শিশুকে নিয়ে রথোপরি আরোহণ করলেন এবং তাকে শ্রীজগন্নাথের শ্রীপাদপদ্মমূলে ছেড়ে দিলেন। শ্রীজগন্নাথদেব যেন শিশুর কত কালের পরিচিত। আনন্দভরে শিশুটি জগন্নাথকে জড়িয়ে ধরল। ঠিক সে সময় শ্রীজগন্নাথদেবের কণ্ঠ থেকে একটি ফুলের মালা ছিন্ন হয়ে শিশুটির মাথায় এসে পড়লো। তা দেখে পূজারী পাণ্ডাগণ আনন্দে হরি হরি ধ্বনি করে উঠলেন। বললেন— “মা, তোমার এ শিশু কালক্রমে মহাপুরুষে পরিণত হবে। শ্রীজগন্নাথদেব একে আশীর্বাদী মালা দিয়েছেন। এ শিশুটিই জগন্নাথের কথা জগতে প্রচার করবে”। ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ শুনে মা আনন্দে অশ্রম্নসিক্ত নয়নে শিশুকে কোলে নিলেন এবং বারবার ব্রাহ্মণ এবং শ্রীজগন্নাথদেবকে বন্দনা করতে লাগলেন। আবির্ভাবের পর শিশুটি তাঁর মায়ের সাথে ছয় মাস পুরীতে থাকার পর পালকিতে চড়ে স্থল পথে রানাঘাটে উপনীত হয়।

শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় পরম নিষ্ঠাবান সদাচারসম্পন্ন গৃহস্থ ছিলেন। তাঁর পত্নী শ্রীভগবতী দেবীও তেমনি সদগুণসম্পন্না ছিলেন। তাঁরা ছেলেমেয়েদের কখনো ভগবত প্রসাদ ছাড়া অন্যকিছু খেতে দিতেন না। কোনো অসৎ সঙ্গেও মিশতে দিতেন না। ১৮৮১ সালে কলকাতার রামবাগানে ভক্তি ভবনের ভিত্তি খননকালে শ্রীকূর্মদেবের একটি বিগ্রহ প্রকট হয়। সাত বছর বয়স্ক শ্রীসরস্বতী ঠাকুরকে শ্রীভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় শ্রীনাম ও মন্ত্র দিয়ে সেই কূর্মদেবের সেবা করার নির্দেশ দিলেন।

🔖শিক্ষা ও কর্মজীবন:
১৮৮৪ সালের ১ এপ্রিল শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীরামপুরের সিনিয়র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন। এ সময় সরস্বতী ঠাকুরকে শ্রীরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয়। পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তিনি বিকৃন্তি বা ইরপধহঃড় নামে এক নতুন লেখন প্রণালী আবিষ্কার করেন। এ সময় তিনি পণ্ডিতবর মহেশচন্দ্র চূড়ামণির নিকট গণিত ও জ্যোতিষ—শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন। তিনি লাইব্রেরিতে বসে বিভিন্ন দর্শন গ্রন্থ অধ্যয়ন করতেন। এ সময় তিনি পৃথ্বীধর শর্মার নিকট বেদ অধ্যয়ন করতেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর বেশিদিন কলেজে অধ্যয়ন করতে পারলেন না। কলেজ ত্যাগের কারণ সম্বন্ধে তিনি আত্মচরিতে লিখেছেন— “আমি যদি মনোযোগ সহকারে বিদ্যালয়ে পাঠ শিক্ষা করিতে থাকি তাহা হইলে সংসারে প্রবেশের জন্য আমার প্রতি যৎপরোনাস্তি পীড়ন হইবে। আর যদি মূর্খ অকর্মণ্যরূপে প্রতিপন্ন হই, তাহা হইলে সাংসারিক উন্নতির জন্য প্রবৃত্ত হইতে কেহ আর তাদৃশী প্ররোচনা করিবে না।” ছাত্র জীবনে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় পারমার্থিক প্রবন্ধাদি লিখতেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সঙ্গে গৌড়মন্ডলে বিভিন্ন গৌরপার্ষদদের শ্রীপাট দর্শন করেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর ১৮৯৮ সালে সারস্বত চতুষ্পাঠীতে পড়াশোনা করার সময় পৃথকভাবে ‘ভক্তিভবনে’ পণ্ডিত পৃথ্বীধর শর্মার নিকট সিদ্ধান্ত কৌমুদী অধ্যয়ন করেন। অল্প কালের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত কৌমুদীতে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি ভক্তিভবনে স্বতন্ত্র একটি সারস্বত ‘চতুষ্পাঠী’ স্থাপন করেন। তাতে ছাত্রদের ‘জ্যোতির্বিদ’, ‘বৃহস্পতি’ প্রভৃতি মাসিক পত্রিকা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে অনেক প্রাচীন গ্রন্থ প্রকাশিত করেন।

শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর কিছুদিন স্বাধীন ত্রিপুরা এস্টেটে কর্মরত থেকে ত্রিপুরার রাজন্যবর্গের জীবন চরিত ‘রাজরত্নাকর’ গ্রন্থ প্রকাশের সম্পাদনা করতে লাগলেন। পরে তিনি যুবরাজ ব্রজেন্দ্র কিশোরের সংস্কৃত ও বাংলা শিক্ষার ভার গ্রহণ করেন। কিছুদিন পর তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন কার্য পরিদর্শনের ভার নেন। বৈষয়িক কাজের মধ্যে বিবিধ প্রকারের হিংসা—দ্বেষ, মাৎসর্য প্রভৃতি দেখে তিনি তা শীঘ্রই ত্যাগ করতে ইচ্ছা করলেন। মহারাজ রাধাকিশোর মানিক্য বাহাদুর তা অনুমোদন করে তাঁকে পূর্ণ বেতনে পেনশন প্রদান করেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর তিন বছর পেনশন নিয়ে তা নিজেই বন্ধ করে দেন।

🔖সদ্গুরুর অনুসন্ধান ও কৃপা প্রাপ্তি:
১৮৯৮ সালের অক্টোবরে তিনি ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সঙ্গে কাশী, প্রয়াগ ও গয়া প্রভৃতি তীর্থস্থান ভ্রমণ করেন। কাশীতে শ্রীরামমিশ্র শ্রাস্ত্রীর সাথে রামানুজ সম্প্রদায় সম্বন্ধে নানা আলাপ—আলোচনা হয়। তখন থেকে তাঁর অদ্ভুত বৈরাগ্যময় জীবন বিকশিত হতে থাকে। তিনি মনে মনে সদ্গুরুর সন্ধান করতে লাগলেন। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তাঁর মনোভাব বুঝতে পেরে তাঁকে সিদ্ধবাবা শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি মহারাজের শ্রীপাদপদ্ম আশ্রয় করার নির্দেশ দিলেন।
পিতার নির্দেশানুসারে তিনি শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজির নিকট দীক্ষা প্রার্থনা করেন। প্রথম দিন শ্রীল বাবাজি মহারাজ বললেন— “আমি আপনাকে কৃপা করতে পারি কি না মহাপ্রভুকে জিজ্ঞেস না করে বলতে পারব না।” দ্বিতীয় দিন সরস্বতী ঠাকুর শ্রীল বাবাজি মহারাজের নিকট উপস্থিত হলেন। বাবাজি মহারাজ বললেন—“আমি মহাপ্রভুকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।” তৃতীয় দিন সরস্বতী ঠাকুর উপস্থিত হলে বাবাজি মহারাজ বললেনÑ “আমি মহাপ্রভুকে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বললেনÑ সুনীতি ও পাণ্ডিত্য ভগবদ্ভক্তির কাছে অতি তুচ্ছ।” তা শুনে সরস্বতী ঠাকুর বললেনÑ “আপনি কপট চূড়ামণির সেবা করেন তাই বঞ্চনা করছেন, আমায় কৃপা করতে চাননা। গোষ্ঠিপূর্ণের নিকট শ্রীরামানুজ আচার্য আঠারো বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁর কৃপা লাভ করেছিলেন। আমিও একদিন না একদিন আপনার কৃপা লাভ করব। শ্রীল বাবাজি মহারাজ সরস্বতী ঠাকুরের নিষ্ঠা দেখে গোদ্রুমের স্বানন্দ—সুখদকুঞ্জে তাঁকে ভাগবতী দীক্ষা প্রদান করলেন। শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি মহারাজ সাক্ষাৎ বৈরাগ্য মূর্তি। কাউকে মন্ত্র দীক্ষাদি দিতে চাননি। তিনি গঙ্গার তীরবর্তী বৃক্ষের নিচে বাস করতেন। গঙ্গায় পরিত্যক্ত মৃত ব্যক্তির বস্ত্র কৌপিন রূপে ব্যবহার করতেন। কখনো গঙ্গাজলে চাল ভিজিয়ে লঙ্কা ও লবণ দিয়ে তা খেতেন। কখনো পরিত্যক্ত মাটির পাত্র গঙ্গাজলে ধুয়ে তাতে রান্না করে ঠাকুরের ভোগ দিয়ে তা গ্রহণ করতেন।
১৯০০ সালের মার্চে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের সঙ্গে তিনি বালেশ্বর, রেমুনা, ভুবনেশ্বর ও পুরী প্রভৃতি স্থান পরিভ্রমণ করেন। স্থানে স্থানে ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের নির্দেশমতো শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত আদি ব্যাখ্যা করেন।

🔖প্রচার কার্যক্রম:
১৩২১ বঙ্গাব্দের ৯ আষাঢ় (১৯১৬ খ্রি.) গৌরশক্তি শ্রীগদাধর পণ্ডিতের তিরোভাব তিথির দিন শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর অপ্রকট হন। ঠাকুর মহাশয় নিত্যলীলায় প্রবেশ করার পূর্বে সরস্বতী ঠাকুরকে বললেনÑ “ষড় গোস্বামী গ্রন্থ ও শ্রীগৌরসুন্দরের শিক্ষা বিশেষভাবে সর্বত্র প্রচার করো। মহাপ্রভুর জন্মস্থানের উন্নতিও করা চাই।” জননী শ্রীভগবতী দেবীও কয়েক বছর পর পরলোকগমন করেন। যাবার সময় তাঁর হাত ধরে বললেনÑ “তুমি অবশ্যই আমার গৌরসুন্দরের কথা ও ধাম শ্রীমায়াপুরের সর্বত্রই প্রচার করবে।” শ্রীসরস্বতী ঠাকুর পিতৃমাতৃ আজ্ঞা শিরে ধারণ করে বিপুল উদ্যমে শ্রীগৌরসুন্দরের বাণী প্রচার করতে আরম্ভ করলেন।
ইতোপূর্বে সরস্বতী ঠাকুর মায়াপুরে অবস্থান করে শতকোটি মহামন্ত্র জপ—ব্রত উদ্যাপন করেছিলেন। সমগ্র বাংলাদেশে আচার্য—সন্তানগণ স্মার্তবাদ দিয়ে বৈষ্ণবদের অবজ্ঞা ও নির্যাতন করছিল। এ বিষয়ে মেদিনীপুর বালীঘাই নামক স্থানে এক বিরাট সভার আয়োজন করা হয়। সভাতে শ্রীবৃন্দাবন ধামের শ্রীমধুসূদন দাস গোস্বামী ও গোপীবল্লভপুরের পণ্ডিতবর শ্রীবিশ্বম্ভরানন্দ দেব গোস্বামী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গোস্বামীদের আহ্বানে সরস্বতী ঠাকুরও উপস্থিত হন। সভার কার্য আরম্ভ হলো। স্মার্ত পণ্ডিতগণ নিজ নিজ মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন করতে থাকলে গোস্বামীদ্বয়ের অনমতিক্রমে সরস্বতী ঠাকুর ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণব—তত্ত্ব সম্বন্ধে সুদীর্ঘ বক্তৃতা প্রদান করেন। সরস্বতী ঠাকুরের যথার্থ শাস্ত্রযুক্তিসম্পন্ন সে বক্তৃতা শুনে স্মার্ত আচার্য—সন্তানগণ মোহিত ও আশ্চর্যান্বিত হন। সকলে ব্রাহ্মণ অপেক্ষা বৈষ্ণবের শ্রেষ্ঠ মহিমা উপলব্ধি করতে পারলেন।
১৯১২ সালে কাশিম বাজারের মহারাজ শ্রীমনীন্দ্র নন্দী তাঁর গৃহে একটি বৃহৎ বৈষ্ণব সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে মহারাজ সরস্বতী ঠাকুরকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করেছিলেন। সরস্বতী ঠাকুর চারদিন যাবৎ শুদ্ধভক্তি সম্বন্ধে চারটি বক্তৃতা প্রদান করেন। কিন্তু সেখানে তথাকথিত প্রাকৃত সহজিয়াদের সমাবেশ ও কেবল লোকদেখানো ভাব দেখে তিনি চারদিন কিছু ভোজন করেননি। এ চারদিন উপবাস শেষে শ্রীমায়াপুরে এসে মহাপ্রভুর প্রসাদ গ্রহণ করেন। সেখানে কোনো কোনো লোক তাঁকে ভোজনের জন্য অনুরোধ জানালে তিনি বলেছিলেন- “অভক্তি বিচার পর বারোয়ারী স্থানে ভোজন করতে নেই।” পরে মহারাজ মনীন্দ্র নন্দী বিষয়টি বুঝতে পেরে দুঃখিত হন এবং মায়াপুরে আগমন করে তাঁর চরণে অনেক অনুনয় বিনয় করেন।

🔖স্বপ্নযোগে মহাপ্রভু ও ষড়গোস্বামীর দর্শন লাভ:
তখন সারা বাংলাদেশ আউল, বাউল, কর্তাভজা, নেড়া—নেড়ী, দরবেশ ও সাঁই প্রভৃতি প্রাকৃত সহজিয়ারূপ অপসম্প্রদায়ের খুব বাড়াবাড়ি ছিল। সরস্বতী ঠাকুর এসব অপসম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অনেক সংগ্রাম করেন। মহাপ্রভুর নামের কলঙ্ককারী এসব অপসম্প্রদায়কে তিনি কখনোই প্রশ্রয় দিতেন না। এ সময় অনেক প্রসিদ্ধ গোস্বামী নামধারী ব্যক্তিও এই প্রাকৃত সহজিয়াদের প্রশ্রয় দিতেন। প্রাকৃত সহজিয়াবাদীর দল যখন পরমহংস গোস্বামী গুরুবর্গের পরমহংস বেশ ধারণপূর্বক জগতকে প্রবঞ্চনা করতে লাগল, তখন সরস্বতী ঠাকুর দুঃখে অসৎসঙ্গ বর্জনপূর্বক নির্জনে ভজন করতে লাগলেন। হঠাৎ একদিন দিব্য মূর্তিতে মহাপ্রভু ও ষড়গোস্বামী তথা পূর্বতন আচার্যগণ আবিভূর্ত হয়ে বললেনÑ “তুমি নিরুৎসাহী হয়ো না। উৎসাহের সাথে পুনরায় দৈব বর্ণাশ্রম ধর্ম স্থাপন করো ও বৈধমার্গের ক্রমবিধিতে ভগবৎ—ভজন প্রণালী প্রচার করো। তিনি সেই দিব্য প্রেরণা পেয়ে সেদিন থেকে বিপুল উদ্যমে জগতে গৌরবাণী পুনরায় প্রচার করতে শুরু করলেন। শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর ১৯১৮ সালের ৭ই মার্চ শ্রীগৌর জয়ন্তীবাসরে শ্রীধাম মায়াপুরে ভাগবত ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাসলীলা প্রবর্তন করলেন। সেদিন শ্রী চন্দ্রশেখর ভবনে ‘শ্রীচৈতন্য মঠ’ স্থাপন করলেন ও শ্রীগুরু গৌরাঙ্গ এবং শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দ বিগ্রহ স্থাপন করলেন।

🔖ঠাকুরের অলৌকিক লীলা:
বরিশালের ভোলা নিবাসী হাইকোর্টের বিচারপতি চন্দ্রমাধব ঘোষের ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীরোহিনী কুমার ঘোষ হরিভজন করার আশায় সংসার ত্যাগ করে নবদ্বীপের কুলিয়ায় আসেন এবং এক বাউলের চরণাশ্রয় করে তাঁদের শিক্ষাদীক্ষানুসারে চলতে লাগলেন। কিন্তু বাউলদের সেবাদাসীর ব্যাপার দেখে তাঁর মনে ঘৃণা হতে লাগল। রোহিনীবাবু একদিন মায়াপুরে যোগপীঠ দর্শনে এলেন। সেদিন শ্রীল সরস্বতী ঠাকুর যোগপীঠে হরিকথা বলছিলেন। রোহিনীবাবু সরস্বতী ঠাকুরের অপূর্ব তেজপুঞ্জ বিশিষ্ট শ্রীমূর্তি এবং অদ্ভুত সিদ্ধান্তপূর্ণ বাণী শ্রবণ করে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করলেন। সেদিন সরস্বতী ঠাকুরের সমস্ত কথা শুনে তিনি কুলিয়ার বাউল গুরুর আশ্রমে ফিরে এলেন। একটু রাত হয়েছিল। রোহিনীবাবু সরস্বতী ঠাকুরের কাছে যেসসব শুদ্ধভক্তিময়ী কথা শুনেছেন তা চিন্তা করতে করতে শুয়ে পড়লেন। কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। তিনি স্বপ্নে দেখছেন সেই বাউলটি একটি বাঘ ও সেবাদাসী বাঘিনী হয়ে তাঁকে খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে। রোহিনী বাবু ভয়ে কম্পিত কলেবরে মহাপ্রভুকে ডাকছেন। এমন সময় দেখলেন শ্রীসরস্বতী ঠাকুর তাঁকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করছেন। রোহিনীবাবু সেদিনই চিরতরে বাউল গুরুকে ত্যাগ করে সরস্বতী ঠাকুরের চরণকমলে আশ্রয় করলেন।

শ্রীশ্রীঅন্নদাপ্রসাদ দত্ত (সরস্বতী ঠাকুরের বড় ভাই) দেহত্যাগের কিছুদিন পূর্বে ভীষণ মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। তাঁর নির্যাণ দিবসে সরস্বতী ঠাকুর সারা রাত তাঁর কাছে থেকে তাঁকে হরিনাম শুনান। তারপর দেহত্যাগের কিছুপূর্বে তাঁর জ্ঞান ফিরে এলো। তখন তিনি সরস্বতী ঠাকুরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলেন। সরস্বতী ঠাকুর তাঁকে শ্রীহরির স্মরণ করতে বললেন। সে সময় এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে। অন্নদাপ্রসাদ বাবুর ললাটে এক অপূর্ব রামানুজীয় তিলক চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখা যেতে লাগল। তিনি সকলের সামনে পূর্ব জীবনের কথা বলতে লাগলেন। তিনি রামানুজীয় বৈষ্ণব ছিলেন। শ্রীসরস্বতী ঠাকুরের চরণে কিছু অপরাধ থাকার ফলে তাঁর আবার জন্ম হয়। পূর্বকৃত সুকৃতির ফলে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের ঘরে আগমন হয়। এসব কথা বলার পর অন্নদা প্রসাদ বাবু দেহত্যাগ করেন।

একসময় মায়াপুরে শ্রীব্রজপত্তনে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ভজন করছিলেন। ভাদ্রমাসে জন্মাষ্টমীর আগের দিন ঠাকুরের নৈবেদ্য দুগ্ধাদির কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। সরস্বতী ঠাকুর চিন্তা করতে লাগলেনÑ “আজ দুধ পাওয়া গেলে মহাপ্রভুকে ভোগ দেয়া যেত। পরক্ষণেই তিনি চিন্তা করতে লাগলেন, আমার নিজের জন্য এ চিন্তা হলো নাকি? অন্যায় হলো।” তখন ছিল বর্ষাকাল। গৌর জন্মভিটা জলমগ্ন। নৌকা ছাড়া চলা দুষ্কর। এ অবস্থায় দুপুরবেলায় এক গোয়ালা সেই জল—কাদা ভেঙে প্রচুর পরিমাণে দুধ, ক্ষীর, মাখন ও ছানা প্রভৃতি নিয়ে উপস্থিত হলো। জানা গেল যে, গোয়ালিটিকে জমিদার হরিনারায়ণ চক্রবর্তী মহাশয় মহাপ্রভুর প্রেরণা দিয়ে এসব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঠাকুরের ভোগের পর সেই প্রসাদ শ্রীসরস্বতী ঠাকুরের কাছে নেয়া হলো। এত প্রসাদ দেখে তিনি অবাক হলেন। তারপর সব কথা শুনলেন। তারপর তিনি প্রসাদ নিয়ে মহাপ্রভুকে বলতে লাগলেনÑ “আমি আপনাকে কত কষ্টই না দিলাম। কেন আমার এ দুর্বুদ্ধির উদয় হলো? আপনি আমার জন্য অন্যের হৃদয়ে প্রেরণা দিয়ে এ সকল দ্রব্য পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন।”

🛕গৌড়ীয় মঠ প্রতিষ্ঠা:
শ্রীল সরস্বতী ঠাকুরের অলৌকিক প্রভাবে জগৎ মুগ্ধ হলো। তাঁর আকর্ষণে বহু সম্ভ্রান্ত কুলের বিদ্যান ব্যক্তি শ্রীগৌরসেবায় আত্মনিয়োগ করলেন। ১৯১৮ সাল থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে শ্রীনবদ্বীপ, মায়াপুর, কলকাতা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মেদিনীপুর, রেমুনা, বালেশ্বর, পুরী, আলালনাথ, মাদ্রাজ, কভুর, দিল্লি, পাটনা, গয়া, লক্ষ্মৌ, কাশী, হরিদ্বার, এলাহাবাদ, মথুরা, বৃন্দাবন, আসাম, কুরুক্ষেত্র, ভারতের বহির্দেশে রেঙ্গুন ও লন্ডন প্রভৃতি স্থানে ৬৪টি গৌড়ীয় মঠ স্থাপন করেন। মন্দার পর্বতোপরি শ্রীনৃসিংহাচল এবং দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানেও শ্রীগৌরপাদপীঠ স্থাপন করেন। প্রাচ্য তথা পাশ্চাত্য উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ২৫ জন ব্যক্তিকে ভাগবত ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাস প্রদান করেন। তিনি জগতে বৈকুণ্ঠবাণী প্রচারের জন্য বহু শুদ্ধভক্তিময় পত্রিকা প্রকাশ করেন। যেমন: (১) সজ্জনতোষণী বা (ঞযব ঐধৎসড়হরংঃ) পাক্ষিক পত্রিকা, (২) সাপ্তাহিক গৌড়ীয় পত্রিকা, (৩) হিন্দি পাক্ষিক ভাগবত নামক পত্রিকা, (৪) দৈনিক নদীয়া প্রকাশ, (৫) আসামি ভাষায় মাসিক কীর্তন নামক পত্রিকা, (৬) উড়িষ্যা ভাষায় পরমার্থী নামক পত্রিকা। এছাড়াও বহু বৈষ্ণব গ্রন্থও প্রকাশ করেন। তিনি পারমার্থিক জগতে এক নতুন যুগ আনয়ন করেছিলেন।

📍নিত্যলীলায় প্রবেশ:
তিনি পৃথিবীর সর্বত্র গৌরবাণী প্রচারের জন্য শুদ্ধ—আচরণশীল ত্রিদণ্ডী সন্ন্যাসীদের প্রেরণ করলেন। মহা উদ্যমে শ্রীগৌরকৃষ্ণের বাণী পৃথিবীতে প্রচার হতে লাগল। তিনি ছয় বছর পর্যন্ত এভাবে উদ্যমে গৌরবাণী প্রচার করে যখন সংকল্প কিছুটা সিদ্ধি হয়েছে দেখলেন তখন হৃষ্ট মনে শ্রীগৌরকৃষ্ণের নিত্য সেবায় প্রবেশ করতে ইচ্ছা করলেন। নিত্যলীলায় প্রবেশ করার কিছুদিন পূর্বে তিনি প্রধান শিষ্যগণকে সমবেত করে তাঁদের অনেক আশীর্বাদ প্রদান করলেন। পরিশেষে উপস্থিত অনুপস্থিত ভক্তগণকে আশীর্বাদ করে বললেন— “সকলে রূপরঘুনাথের কথা পরমোৎসাহের সাথে প্রচার করবেন। শ্রীরূপানুগগণের পাদপদ্ম ধূলি হওয়া আমাদের চরম আকাক্সক্ষা। আপনারা সকলে এক অদ্বয় জ্ঞানের অপ্রাকৃত ইন্দ্রিয় তৃপ্তির উদ্দেশ্যে আশ্রয় বিগ্রহের আনুগত্যে মিলেমিশে থাকবেন।” শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ এভাবে বহু মূল্যবান উপদেশ, নিয়মনীতি প্রভৃতি প্রদান করে, ৪ নারায়ণ গৌরাব্দ ৪৫০, ১৭ই পৌষ বঙ্গাব্দ ১৩৪৩, ১ জানুয়ারি ১৯৩৭ সালের শুক্রবার নিশান্তকালে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের নিত্যলীলায় প্রবেশ করেন।

উৎস: ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের গুরুপরম্পরা, অমৃতের সন্ধানে প্রকাশন।