11/01/2025
ভূমির অবস্থান এবং গঠনের সময়ক্রমিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
• টারশিয়ারি যুগের পাহাড় সমূহ
• প্লাইস্টেসিনকালের সোপান সমূহ
• সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ
ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ভূমিরূপ হচ্ছে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার দীর্ঘকালের প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়ের ফলে পাহাড়ি এলাকার উচ্চতা কমে ক্ষয়িত অংশের দ্বারা সংলগ্ন এলাকা ভরাট হয়ে নতুন মৃত্তিকার সমতল ভূমি সৃষ্টি করছে।
রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১২% এলাকা নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ অবস্থিত।
★ এসকল পাহাড়কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক)দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ
(খ)উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড় সমূহ
(ক)বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের (রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম) পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। আসামের লুসাই ও মিয়ানমারের আরাকান এলাকার পাহাড়ের সাথে এদের মিল দেখা যায়। এ সকল পাহাড় বেলে পাথর, স্লেট পাথর ও কর্দমের সংমিশ্রণে গঠিত। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিনডং(বিজয়)-র উচ্চতা ১২৩১ মিটার। এটি বান্দরবন জেলায় অবস্থিত।
(খ)উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায়) ছোট বড় বিচ্ছিন্ন কতগুলো পাহাড় অবস্থিত। এ অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য পাহাড় হল সুনামগঞ্জের ছাতক পাহাড়। ছাতক (উপজেলা) শহরের উত্তরে প্রায় ৪০ কি.মি. স্থান জুড়ে এই টিলা পাহাড়টি অবস্থিত। এছাড়া মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সীমানায় অবস্থিত পাহাড়গুলো কোনোরূপ গিরিশ্রেণী গঠন করেনি। এদেরকে ত্রিপুরার পাহাড় বলা হয়।
২. প্লাইস্টেসিনকালের সোপানসমূহ
বাংলাদেশের প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ প্রায় ২৫০০০ বছরের পুরোনো। অনুমান করা হয় যে, প্লাইস্টোসিস যুগের অন্তঃবরফগলা পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে এ ভূমি গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৮% জায়গা জুড়ে এ ভূমিরূপ অবস্থিত।
★ এ উচ্চভূমিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: বরেন্দ্রভূমি, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং লালমাই পাহাড়।
(ক) বরেন্দ্রভূমি
বরেন্দ্রভূমি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এ এলাকার মাটি ধূসর ও লাল। আয়তন ৯৩২০ বর্গ কি. মি.। রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। এটি প্লাস্টেসিনকালের সর্বোচ্চ উঁচু ভূমি। বরেন্দ্র এলাকা প্লাবন সমভূমি অঞ্চলের চেয়ে ৬ থেকে ১২ মিটার উঁচু।
(খ) মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত এ অঞ্চল বিস্তৃত যা আয়তনে ৪১০৩ বর্গ কি. মি.। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের উত্তরাংশ মধুপুর গড় এবং দক্ষিণাংশ ভাওয়ালের গড় নামে পরিচিত। বরেন্দ্রভূমির মত এখানেও মাটির রং লাল এবং মাটি কঙ্করময়।
(গ) লালমাই পাহাড়
কুমিল্লা শহড়ের ৮ কি. মি. পশ্চিমে অবস্থিত। আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গ কি. মি.। এর গড় উচ্চতা ২১ মিটার বা ৭০ ফুট।
৩. সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি
এ অঞ্চলটি প্রধান নদীগুলো দ্বারা পরিবাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত। প্লাবন সমভূমির আয়তন ১, ২৪, ২৬৬ বর্গ কি. মি.। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ভূমি এরূপ ভূমিরূপের। বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমিকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় –
• কুমিল্লার (বা ত্রিপুরার) সমভূমি
• সিলেট অববাহিকা
• পাদদেশীয় পলল ভূমি
• গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি
• ব-দ্বীপ অঞ্চলীয় সমভূমি
• চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমি
পাদদেশীয় সমভূমি: পাহাড়ী নদী দ্বারা পর্বতের ঢাল হতে ক্ষয়প্রাপ্ত প্রস্তর ও শিলাখন্ড, কাঁকর, নুড়ি ও বালুকণা প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়। নদী দ্বারা এভাবে অবক্ষেপণের ফলে পর্বতের পাদদেশে সমভূমির সৃষ্টি হয়। একে পাদদেশীয় সমভূমি বলে। যেমন- বাংলাদেশের দিনাজপুর এবং রংপুর জেলার অধিকাংশই পাদদেশীয় সমভূমি।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা প্লাবন সমভূমি: এটিই বাংলাদেশের মূল প্লাবন সমভূমি। বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে এ সমভূমি গঠিত।
বদ্বীপ অঞ্চলীয় সমভূমি: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সমভূমিকে সাধারণত বদ্বীপ বলা হয়। বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, বরিশাল. পটুয়াখালী অঞ্চল এবং রাজশাহী, পাবনা ও ঢাকা অঞ্চলের কিছু অংশ জুড়ু এ অঞ্চল বিস্তৃত।
#বাংলাদেশ #ভূপ্রকৃতি