
06/04/2025
বিসমিল্লাহ
সুরা তাওবার আলোকে গা/যা ও আমরা
—
গা/যা/য় চলছে ভয়াবহতম গণহত্যা। সুরা তাওবার আলোকে আমাদের অবস্থা যাচাই করে নিতে পারি।
যখন ঈমান ও কুফরের লড়াই তীব্র আকার ধারণ করে, তখন মুসলিম সমাজের লোকজন তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে,
প্রথম দল
১. জানমাল দিয়ে জি-হা/দ করে,
لَا یَسۡتَـٔۡذِنُكَ ٱلَّذِینَ یُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡیَوۡمِ ٱلۡـَٔاخِرِ أَن یُجَـٰهِدُوا۟ بِأَمۡوَ ٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِیمُۢ بِٱلۡمُتَّقِینَ
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে, তারা নিজেদের জান-মাল দ্বারা জিহাদ না করার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চায় না। আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন (তাওবা: ৪৪)।
দ্বিতীয় দল
২. যারা জি/হা/দ করতে চায়। উপায়-উপকরণ ও সামর্থ না থাকার কারণে অংশ নিতে পারে না। মুসলিম ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কুফরবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নিতে চায়। তাদের হিম্মত ও কুউয়তে ঘাটতি-কমতি নেই। তারা সাচ্চা দিল, আচ্চা নিয়ত, পোক্ত ঈমান ও শক্ত ইখলাসের অধিকারী। পাকসাফ তাদের ভেতর-বাহির। অর্থিক অসংগতির কারণে জি/হা/দে অংশ নিতে না পেরে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, অশ্রুসজল চোখে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যায়,
وَلَا عَلَى ٱلَّذِینَ إِذَا مَاۤ أَتَوۡكَ لِتَحۡمِلَهُمۡ قُلۡتَ لَاۤ أَجِدُ مَاۤ أَحۡمِلُكُمۡ عَلَیۡهِ تَوَلَّوا۟ وَّأَعۡیُنُهُمۡ تَفِیضُ مِنَ ٱلدَّمۡعِ حَزَنًا أَلَّا یَجِدُوا۟ مَا یُنفِقُونَ
সেই সকল লোকেরও (কোনও গুনাহ) নেই, যাদের অবস্থা এই যে, যখন তুমি তাদের জন্য কোন বাহনের ব্যবস্থা করবে-এই আশায় তারা তোমার কাছে আসল আর তুমি বললে, আমার কাছে তো তোমাদেরকে দেওয়ার মত কোন বাহন নেই, তখন তাদের কাছে খরচ করার মত কিছু না থাকার দুঃখে তারা এভাবে ফিরে গেল যে, তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল (তাওবা: ৯২)।
তৃতীয় দল
৩. মুসলিম সমাজে বাস করে। ঈমান ও কুফরের লড়াইয়ে নিজেদেরকে নিউট্রাল-নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখে। বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন শিশুর খণ্ডিতাংশ ছিটকে আকাশে উড়ে যেতে দেখেও তাদের কোনো বিকার হয় না। ভাবান্তর ঘটে না। উম্মাহর কঠিন দুঃসময়েও তারা দুরবস্থার জন্য উম্মাহকেই দোষী সাব্যস্ত করে। সত্যের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার পেছনে তাদের হাজারো অজুহাত থাকে। হককথা উচ্চারণ না করার জন্য তাদের যুক্তির অভাব হয় না। যে কোনো মূল্যে বেঁচে থাকাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। গলির ঘেয়ো কুকুর মারা গেলেও তাদের শোক উথলে ওঠে, অন্যদিকে লাখো মুসলমান মরে গেলেও তাদের বিবেকে সামান্যতম দোলা জাগে না। তারা বেড়ালের অধিকার নিয়ে সোচ্চার অথচ নিস্পাপ শিশুর খণ্ডবিখণ্ড লাশ তাদেরকে নাড়া দেয় না। এরা বলে, গা/যার মানুষ একাই যুদ্ধে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদেরকে সাহায্য করতে পারত, এমন কোনো ইসলামী দেশের সাথে তারা পরামর্শ করেনি। ইহুদিদের সাথে যুদ্ধে নামার আগে, তাদেরকে জানিয়ে দেয়া জরুরি, তাদের সাথে আমাদের যে চুক্তি আছে, সেটা বাতিল। এদের সম্পর্কেই কুরআন বলছে,
إِنَّمَا ٱلسَّبِیلُ عَلَى ٱلَّذِینَ یَسۡتَـٔۡذِنُونَكَ وَهُمۡ أَغۡنِیَاۤءُۚ رَضُوا۟ بِأَن یَكُونُوا۟ مَعَ ٱلۡخَوَالِفِ وَطَبَعَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ
অভিযোগ তো আছে তাদের সম্পর্কে, যারা ধনবান হওয়া সত্ত্বেও তোমার কাছে অব্যাহতি চায়। পেছনে অবস্থানকারী নারীদের সঙ্গে থাকাতে তারা খুশী। আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন। ফলে তারা প্রকৃত সত্য জানে না (তাওবা: ৯৩)।
তাদাব্বুর: এই দল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে, দেয়ালজুড়ে লাগানো চওড়া এলসিডি স্ক্রীনে গণহত্যার দৃশ্য দেখতে দেখতে মন্তব্য করে, আমরা আগেই বলেছিলাম, যুদ্ধে জড়িয়ো না। আমাদের কথা শুনলে আজ এই অবস্থা হত না,
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ لَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ وَقَالُوا۟ لِإِخۡوَ ٰنِهِمۡ إِذَا ضَرَبُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ أَوۡ كَانُوا۟ غُزࣰّى لَّوۡ كَانُوا۟ عِندَنَا مَا مَاتُوا۟ وَمَا قُتِلُوا۟ لِیَجۡعَلَ ٱللَّهُ ذَ ٰلِكَ حَسۡرَةࣰ فِی قُلُوبِهِمۡۗ وَٱللَّهُ یُحۡیِۦ وَیُمِیتُۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِیرࣱ
হে মুমিনগণ! সেই সব লোকের মত হয়ে যেও না,যারা কুফর অবলম্বন করেছে এবং তাদের ভাইয়েরা যখন কোনও দেশে সফর করে কিংবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, তখন তাদের সম্পর্কে তারা বলে, তারা আমাদের সঙ্গে থাকলে মারা যেত না এবং নিহতও হত না। (তাদের ও কথায়) পরিণাম তো (কেবল) এই যে, এরূপ কথাকে আল্লাহ তাদের অন্তরের আক্ষেপে পরিণত করেন। (নচেৎ) জীবন ও মৃত্যু তো আল্লাহই দেন। আর তোমরা যে কর্মই কর, আল্লাহ তা দেখছেন (আলে ইমরান: ১৫৬)।
বসিরাহ: প্রকৃত ব্যাপার হল,
وَلَوۡ أَرَادُوا۟ ٱلۡخُرُوجَ لَأَعَدُّوا۟ لَهُۥ عُدَّةࣰ وَلَـٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمۡ فَثَبَّطَهُمۡ وَقِیلَ ٱقۡعُدُوا۟ مَعَ ٱلۡقَـٰعِدِینَ
যদি বের হওয়ার ইচ্ছাই তাদের থাকত, তবে তার জন্য কিছু না কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করত। কিন্তু তাদের ওঠাই আল্লাহর পছন্দ ছিল না। তাই তাদেরকে আলস্যে পড়ে থাকতে দিলেন এবং বলে দেওয়া হল, যারা (পঙ্গুত্বের কারণে) বসে আছে তাদের সাথে তোমরাও বসে থাক (তাওবা: ৪৬)।
এই বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিতভাবে আরেকটা লেখা আসছে।
রাব্বে কারীম তাওফিক দান করুন। আমীন।
মুহতারাম Atik Ullah