31/12/2024
থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপনের মূল শেকড় পশ্চিমা সংস্কৃতিতে নিহিত। এই উদযাপনের ধারণা আসলে নতুন বছরের সূচনাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে, যা মূলত প্রাচীন রোমান এবং ইউরোপীয় ঐতিহ্যের অংশ। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন রূপে উদযাপিত হলেও এর মূল ভিত্তি ছিল ধর্মীয়, পৌত্তলিক এবং পরে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার সমন্বয়।
নতুন বছর উদযাপনের ধারণা প্রথম দেখা যায় প্রাচীন ব্যাবিলনে, প্রায় ৪০০০ বছর আগে। তারা বসন্তকালে ফসল কাটার মৌসুমে নতুন বছর শুরু করত। তবে আধুনিক নতুন বছর উদযাপনের ধারণা মূলত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ৪৫ খ্রিস্টপূর্বে "জুলিয়ান ক্যালেন্ডার" চালু করার সময় শুরু করেন। তিনি ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন ঘোষণা করেন। রোমানরা এই দিনটিকে তাদের দেবতা জানুসের প্রতি উৎসর্গ করত, যিনি ছিলেন দ্বিমুখী দেবতা এবং নতুন শুরুর প্রতীক। জানুসের নামে জানুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়। জানুসের একটি মুখ অতীতের দিকে এবং অন্যটি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকে, যা প্রতীকী অর্থে পুরনো বছরের সমাপ্তি এবং নতুন বছরের সূচনাকে নির্দেশ করে।
প্রাচীন রোমানদের মধ্যে জানুসের সম্মানে নতুন বছর উদযাপনের সময় বিশেষ প্রার্থনা, উৎসব এবং উপহার বিনিময়ের রীতি ছিল। এই সময়ে মানুষ নিজেদের ঘর সাজাতো এবং মিষ্টান্ন ও উপহার বিনিময় করত। তবে নতুন বছরের উদযাপনটি তখন ছিল একটি ধর্মীয় রীতি।
মধ্যযুগে খ্রিস্টানরা এই প্রথার উপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। নতুন বছরের উদযাপনকে খ্রিস্টান ধর্মীয় রীতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এটি ধীরে ধীরে সেন্ট সিলভেস্টারের উৎসব এবং চার্চের প্রার্থনার মাধ্যমে পালিত হতে শুরু করে। তবে মধ্যযুগে নতুন বছর উদযাপনের সময় ১ জানুয়ারির পরিবর্তে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে উদযাপিত হতো। উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডে নতুন বছর উদযাপিত হতো ২৫ মার্চ।
পশ্চিমা বিশ্বে আধুনিক থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপনের ধারা মূলত ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে। এটি ইউরোপ এবং আমেরিকায় প্রাধান্য পায়, যেখানে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক উৎসবে রূপান্তরিত হয়। এই সময়ে আতশবাজি, মদ্যপান এবং আনন্দ-উল্লাসকে উদযাপনের অংশ হিসেবে দেখা যেতে শুরু করে। বিশেষত শিল্পবিপ্লবের পর এবং ২০শ শতাব্দীতে গণমাধ্যমের উত্থানের ফলে এটি একটি বাণিজ্যিক উৎসবে রূপ নেয়।
১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীতে, থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপন ধীরে ধীরে একটি গ্ল্যামারাস ইভেন্টে পরিণত হয়। বড় বড় শহরগুলিতে জনসমাবেশ, আতশবাজি প্রদর্শনী এবং উৎসবের আয়োজন করা শুরু হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে "বল ড্রপিং" ইভেন্ট ১৯০৭ সালে প্রথম চালু হয়, যা নতুন বছরের রাতের একটি বৈশ্বিক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আজকের থার্টি-ফার্স্ট নাইট উদযাপন পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট অংশ। এটি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত হয়ে গেছে। এটি শুধু আনন্দ আর উদযাপনের রাত নয়; বরং এটি ভোগবাদী মানসিকতা এবং বিলাসবহুল জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখা যায়।
পশ্চিমা সংস্কৃতির এই উদযাপন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষত কলোনিয়ালিজম এবং গ্লোবালাইজেশনের মাধ্যমে। মিডিয়া, হলিউড, এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি একটি 'মাস্ট উদযাপন' হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও এটি একটি প্রভাবশালী সংস্কৃতি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এসব দেশে এটি প্রায়ই স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।
আমাদের প্রকাশিতব্য বই থেকে...
°
বই : ডার্ক গ্লিমার—থার্টি ফার্স্ট নাইটের অন্ধকার
লেখক : রিদওয়ানুল্লাহ তানিম
প্রকাশনী : আল - হিবা পাবলিকেশন