05/10/2025
05 October..............
কি যে একটা দিন ছিলো কিভাবে বুঝাই। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিন গুলোর মধ্যে একটি। বিয়ের অনুষ্ঠান নিজের বলে না, এমন বিয়ের অনুষ্ঠান কমই হয়। একটু পিছনের ইতিহাস শুনাই
একটু পিছনের ইতিহাস শুনাই......
আব্বাজান হজ্জের শফরে মক্কায় এক মজলিসে বসে আছেন। বাংলাদেশের মোটামোটি সকল আকিদা, মানহায, মাকসাদের আলেমগন উপস্থিত। শায়েখ আহমাদুল্লাহর আমন্ত্রণে এই আয়োজন। বিভিন্ন কথার মধ্যে কথা উঠলো চরমোনাইর পীর সাহেবের ছেলের বিবাহের। সব দল মতের লোকেরাই উপস্থিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। আব্বা বললেন- আমার ছেলের ও আকদ সম্পন্ন হয়েছে। ওয়ালিমা অনুষ্ঠান এখনো করা হয়নি। দেখি আমিও সকল ঘরানার আলেমদের নিয়ে তার বিবাহের অনুষ্ঠানটি করবো। শায়েখ আহমাদুল্লাহ সাহেব বললেন- আপনি আয়োজন করেন আমার উপর দায়িত্ব দিন আমি সবাইকে দাওয়াত পৌঁছে দিবো। পবিত্র কাজে গিয়ে, পবিত্র স্থানে গিয়ে একটি পবিত্র নিয়ত করা হলো। বাংলাদেশের আলেমদের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বাড়ুক এটাই উদ্দেশ্য।তাই হয়তো আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছিলেন।
একটু খানি আফসোস.........
যার বিয়ের অনুষ্ঠান সে ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ব্যস্ততা ভিন্ন। বাসায় নতুন সদস্যের আগমন উপলক্ষ্যে বেশ অনেক কাজ করা হলো। মিসকিনের রুমকে সাজানো হলো নতুন সাজে। আমার হাসপাতালের সিঙ্গেল বেড পরিবর্তিত হলো কুইন সাইজের বেডে। প্লাস্টিকের ওয়ারবোর্ড চেঞ্জ হলো কাঠের আলমারিতে। ড্রেসিং টেবিলের জন্য বসলো আয়না। আরও কত কত আয়োজন। অবহেলার ধুলো ধুয়ে মুছে সজ্জিত হলো এক নয়া জীবনের আয়োজনে। কিন্তু প্রায় সব কাজেই নিজের থাকতে হয়। নিজের কাজগুলো নিজের করতে হয়। আশে পাশে আছে অনেকেই কিন্তু তবুও আমার ব্যস্ততা কমে না। সবকিছু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গড়ানোয় নিজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলো না। শেষ বেলায় একটু চুল কাটানো ও ফেসিয়ালের জন্য যাবো তাতেও বাঁধা। ঐদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল সব চেয়ে কাছের ও সুবিধার স্থান ওয়ারী তখন পানিতে টইটুম্বুর। তাই যাওয়া লাগলো ধানমণ্ডিতে। ধানমণ্ডি কেন? এছাড়া আর ভালো সেলুন কোথায় কি আছে আমার জানা নেই, পরামর্শ করারও কেউ নেই। অজ্ঞতা ছুটলাম ধানমণ্ডি। সব মিলিয়ে কাজ যখন শেষ হলো তখন অনুষ্ঠান ২ ঘণ্টার মতো পার হয়েছে। আর আমি তখনো বাইকের পিছনের সিটে বসে ফোনে একে তাকে ম্যানেজ করছি। শায়েখ আহমাদুল্লাহ যখন আতিথেয়তা গ্রহন শেষ করে বিদায়ের পথে নিচে নেমে গেছেন। আমি তখন অপ্রস্তুত ড্রেসে (জামাইর সাজে না আর কি) বাইকে করে নিজের বিয়েতে এন্ট্রি নিচ্ছি। এই অবস্থাতেই তার সাথে দেখা করলাম। তিনি খুশি হলেন। বললেন- আমার শরীর খারাপ, আশার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু তোমার কথা ভেবে আসলাম। (শায়েখের সাথে আমার পূর্বের ছোটখাট একটা ইন্ট্রেস্টিং পরিচয় ছিল)। দ্রুত একটি গাড়ির ভিতরে ঢুঁকে ড্রেস চেঞ্জ করলাম, জামাই কে তো জামাইর মতো দেখতে লাগতে হবে। তারপর অনুষ্ঠানে জয়েন করলাম। ততক্ষনে অনেকেই তাশরীফ নিয়ে চলে গেছেন। যাদের দোয়া পেলে হয়তো নিজেকে আরও ধন্য মনে করতাম।
আবেগের এক ভেলা..................
মানুষের জীবনে কিছু ঘটনা এক বারই ঘটে। অনেকবার চাইলেও সেই ঘটনা পুনরায় ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ চায় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। আমার বিয়ের অনুষ্ঠানও এমন এক ঘটনা আমার জীবনে। এমন বিয়ের অনুষ্ঠান আমার পক্ষে আর দ্বিতীয়টি করা সম্ভব নয় (দ্বিতীয় বিয়ে করাই যে আমার পক্ষে সম্ভব নয় সেই কথা আপাতত স্কিপ করলাম, নিজের ব্যডাগিরিটা একটু থাকলো)। তবুও মাঝে মাঝে আবেগ জাগে, ভালো লাগে। স্ত্রী আমাকে হাসতে দেখলে জিজ্ঞেস করে হাসছো কেন? এত খুশি কেন? আমি অবলীলায় উত্তর দেই- 'বিয়ের খুশিতে'। কখনো অতি আবেগে বউকে একান্তেই কানে কানে ফিশ ফিশ করি.........আবার একটা বিয়া করবা নি, আমার লগে? তিনি শুধুই হাসেন। উত্তর দেন না। তারও হয়তো মনে মনে ইচ্ছা এমন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান আবার করার। মেয়েলোক আসলে সাজতে পারলেই খুশি, কনে সাজার অফার তো আরও আকর্ষণীয়।
আরও অনেক কিছু লেখা যাবে চাইলে এই দিনটি নিয়ে। আপাতত এতো টুকুই থাক।