04/07/2025
বাংলার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ভালবাসায় মুগ্ধ,
ডলামিমের বয়স মাত্র পনেরো। একটু আগে ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে দেখা হল। সেখান থেকে কিছু দূরেই সে আন্দোলন করেছিল গত বছর।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন গিয়েছিলে আন্দোলনে? বন্ধুরা ছিল তোমার সঙ্গে?”
সে মাথা নাড়ল। না, কেউ ছিল না। সে একাই গিয়েছিল।
“কেন গিয়েছিলে?”
উত্তরে সে বলল, বড় ভাইয়ের ফোনে আর টেলিভিশনে আন্দোলনের দৃশ্য দেখছিল। দেখছিল যে তার ভাইদেরকে কীভাবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এক সাথে মিলে তাড়া করছে, মারছে। ভেতর থেকে তাগিদ এসেছিল যে ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
বাবা-মা মানা করেছিল রাস্তায় নামতে। কিন্তু ৪ আগস্ট মা-বাবাকে ফুটবল খেলার কথা বলে যোগ দেয় আন্দোলনে। সেখানে সারা দিন ছিল। বিকেলের দিকে গুলি লাগে তার বাম চোখে।
লামিম সেই বাম চোখ দিয়ে আর দেখতে পায় না। “স্বপ্ন তো অনেক ছিল,” বলল সে, “কিন্তু এখন জানি না কী হবে। মনোযোগ দিতে পারি না ঠিকমতো।”
জানতে চাইলাম দেশ নিয়ে ওর চাওয়া কী। লামিম বলল, “আমি চাই দেশ যাতে সুন্দর হয়। কোনো চুরি-বাটপারি যাতে না থাকে।”
পনেরো বছরের একটি ছেলে। যার একটি চোখ রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে। আর তার একমাত্র চাওয়া, একটা সৎ দেশ চাই।
এই সহজ কথাটাই সংস্কারের মুল আকাঙ্ক্ষা। এমন দেশ গড়া যেখানে নিজের প্রাপ্য পেতে কোনো নাগরিককে ঘুষ দিতে হবে না। যেখানে পনেরো বছরের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনী তার চোখ কেড়ে নেবে না।
আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক সচেতন। অনেকে ধরতে পারছেন না এই প্রজন্মের ভেতরে কী ধরনের রুপান্তর ঘটে গেছে। তারা জানে কোনটা ভাঙা, কোনটা পচা, আর সেসব সরাসরি বলতে তারা সংকোচ করে না। একধরনের নির্মল স্পষ্টতা তাদের মধ্যে আছে, যেটা কপটতা দিয়ে ঢেকে যায়নি, ভয় দিয়ে বিকৃত হয়নি। তাই প্রথম প্রতিবাদ তারাই করে, আবার প্রথম বলিও হয়।
তাদের সাহসের মতোই সাহসী এক দেশ আমরা গড়তে পারি কি না, এখন প্রশ্ন সেটা।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, ঠাকুরগাঁও
৪ জুলাই, ২০২৫