উমর ইবন আল-খাত্তাব রাঃ বলেছিলেন, " জাহিলিয়াত কি তা না জেনেই যখন মানুষ মুসলিম হিসাবে বেড়ে উঠবে তখন ইসলামের বন্ধন আস্তে আস্তে এক এক করে ছুটে যেতে থাকবে।"
এই উক্তিটির বক্তব্য দিতে গিয়ে ইমাম ইবন আল-কায়্যিম রাঃ বলেন:
❝জাহিলিয়্যাহর গতিপ্রকৃতির ব্যাপারে জ্ঞান ও ধারণা থাকার কারণে সাহাবাগণ রাঃ ইসলাম ও এর প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়াদি, এর কর্মপদ্ধতি(methodology) এবং এর আওতাধীন বিষয়গুলো সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ
্ঞান রাখতেন। ইসলামের ব্যাপারে তারাই সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন। তারাই ইসলামকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তারাই ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়াই করেছেন এবং ইসলামবিরোধী মতাদর্শের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সর্তক জিনিসগুলোর ব্যাপারে তাদের পরিষ্কার জ্ঞান থাকার কারণে। ইসলাম যখন তাদের কাছে এসেছিল তখন ইসলামের সব কিছুই তাদের জীবনযাত্রার সাথে সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। তাই, ইসলামের বিপরীতধর্মী জিনিসগুলোর নিকৃষ্টতার সাথে তাদের পূর্বপরিচিতর কারণে তাদের আবেগ আর লড়াই ছিল অন্য সবার চেয়ে তীব্র। আর এ জন্যই ইসলামের প্রতি তাদের জ্ঞান, ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগ ছিল সবচেয়ে বেশি। কেননা তারা ইসলামের বিপরীত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সম্যক অবগত ছিলেন।
এটা অনেকটা এরকম যে, একজন দুঃখে জর্জরিত অসুস্থ, দরিদ্র, ভীত আর একাকী লোক হঠাৎ করেই এসব কিছু থেকে মুক্তি পেয়ে আরামদায়ক, নিরাপদ, ঐশ্বর্যময় এবং উন্নত জীবন লাভ করল। এরকম লোক তাদের পূর্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকার কারণে অপেক্ষাকৃত বেশি সুখী হবে। কারণ যেই ব্যক্তির অতীতে কষ্টের অভিজ্ঞতা নেই সে এই আরামের জীবন আর কষ্টের জীবনের মাঝে যে পার্থক্য সেটা উপলব্ধি করতে পারবে না।❞
ঠিক তদ্রূপ বর্তমান অন্য ধর্মাবলী জীবন, বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থা, বর্তমান উন্নত রাষ্ট্রে সমস্যা, অমুসলিমদের জীবন ব্যবস্থা, তাদের সমস্যা কেন কিভাবে এই গুলো যদি ইসলামের মাধ্যমে তুলনা করি ইসলামের জীবন ব্যবস্থায়। তাহলে আমরাও ইনশাআল্লাহ ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে পাবো। বুঝতে পারবো আল্লাহ আমাদের কতটা মর্যাদা দিয়েছে, বেসেছেন কত ভালো এবং কেনই বা আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম কে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করতে আহবান করছেন। আর সেই জন্য আমাদেরকে জানতে হবে ইসলাম সম্পর্কে।
❝পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।❞(96:01)
জ্ঞানের কারণেই আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সমস্ত ফেরেশতার মধ্যে বিশেষ সম্মান লাভে সমর্থ হয়েছিলেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
এ পড়ালেখা হবে আল্লাহ নামে অর্থাৎ দীন ও শরীয়তের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এতে সাধারণ পড়ালেখা শামিল নয়। যে হাদীসে বলা হয়েছে প্রত্যেক মুসলিমের জ্ঞান অর্জন করা ফরয সে হাদীসটিও দীনি শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে। সাধারণ শিক্ষাকে ইসলাম নিষেধ করেনি বা বাধাও দেয়নি তবে অবশ্যই মুসলিম মাত্রই ফরয জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ মানুষকে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ করেন এমনভাবে যে, তার জ্ঞান বলতে কিছুই থাকে না। জন্মের পর মানুষ যাতে জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা দুটি উপকরণ প্রদান করেছেন। ১.হিফয বা মুখস্থ করে জ্ঞানায়ত্ত করা। এর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও অনুধাবন শক্তি। আর এসব কিছু আল্লাহ তা‘আলা জন্মগতভাবেই দিয়েছেন। ২.লেখনির মাধ্যমে জ্ঞানার্জন। তাই আল্লাহ লেখার উপকরণ হিসাবে কলম দিয়েছেন। মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে অজানা জিনিসকে শিক্ষা দেন। (তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ)
❝আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে।❞ (38:29)
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করেছে, কিন্তু কুরআনের উপর আমল করেনি এবং কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণাও করেনি, তার কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করাতে কোনই লাভ নেই। লোকেরা বলেঃ “আমরা কুর'আন সম্পূর্ণরূপে পড়েছি।” কিন্তু কুরআনের একটি উপদেশ এবং কুরআনের একটি হুকুমের নমুনা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। এরূপ হওয়া মোটেই উচিত নয়। আসল জিনিস হলো চিন্তা-গবেষণা করা, শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা এবং আমল করা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
মুসলিম নিজের জন্য সর্বদা বিদ্যার্জনের দরজা খোলা রাখবে, প্রতিদিন অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের ইলমী যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলবে । আল্লাহর কাছে তার শেখানো দোআ বলে প্রার্থনা করব,
❝হে আমার রব ,আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন।❞ (ত্বা-হা : ১১৪)
বিদ্যার্জনের অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বর্ণনায় তারা যেসব আকর্ষণীয় কথা বলে গেছেন , সেগুলো একাধারে বিদ্যার প্রতি তাদের মনোভাব এবং বিদ্যান্বেষণে তাদের চূড়ান্ত আগ্রহ ও চেষ্টার বিষয়টি আমাদের সামনে তুলে ধরে । যেমন -
ইমাম ইবনু আবদিল বার(র) ইবনু আবী গাসসান থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, "যতদিন তুমি শেখার মাঝে থাকবে, ততদিন তুমি জ্ঞানী । যখনই নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা শুরু করবে ,তোমার মূর্খতাও তখন থেকে শুরু হবে।"
আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারককে প্রশ্ন করা হয়েছিল," আপনি কতদিন পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করবেন ? তিনি বলেন মৃত্যু পর্যন্ত।"
আবূ আমর ইবনুল আলা কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, "কতদিন পর্যন্ত জ্ঞানান্বেষণে থাকা মানুষের জন্য মানাসই। তিনি উত্তর দেন, বেচে থাকাই যতদিন মানানসই ততদিন।"
ইমাম সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,
"মানুষের মাঝে কার জন্য জ্ঞানার্জন করা সবচেয়ে দরকারি?"
তিনি বলেছিলেন, "যে সবচেয়ে জ্ঞানী তার।"
জানতে চাওয়া হলো কেন? তিনি বললেন,"কারণ তার কাছ থেকে কোনো ভুল প্রকাশ পাওয়াটা বেশি বিশ্রী দেখা।"
অতএব, ভুলের উর্ধ্বে থাকার জন্য তাকে সবসময় ইলমের দ্বারস্থ থাকতে হবে।
আলী (রাঃ) বলেন, "জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকেই পাহাড়া দেয় কিন্তু অর্থকে পাহাড়া দিতে হয়। অথচ জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায়।"